ভারতের লকডাউন ছিল নি:সন্দেহে বিশ্বে অন্যতম সবচেয়ে কঠোর লকডাউন। মার্চের শেষ দিকে জারি করা লকডাউন প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে ভারত শিথিল করতে শুরু করেছে। এবং দেশটিতে কোভিড-১৯এর প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হবার চার মাস পর এখন আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
ভারতে করোনা সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগের জায়গাগুলো কোথায়?
শনাক্তের আকস্মিক সংখ্যাবৃদ্ধিতে ভারতের কি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?
অনেকে হয়ত বলবেন ভারতের পরিসংখ্যান খুব খারাপ তো নয়।
ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা তিন লাখ বিশ হাজারের বেশি। আক্রান্তের বিশ্ব তালিকায় আমেরিকা, ব্রাজিল ও রাশিয়ার পর চতুর্থ স্থানে আছে ভারত। কিন্তু আমেরিকায় কর্নেল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক কৌশিক বসু বলছেন মাথা পিছু সংক্রমণের হিসাবে ভারতের স্থান তালিকায় অনেক নিচে- ১৪৩ নম্বরে।
এছাড়াও রিপ্রোডাকশান হার- যা ‘R’ নম্বর হিসাবে পরিচিত, যেটা দিয়ে এই ভাইরাসের বিস্তার ছড়ানোর ক্ষমতা নিরূপণ করা হয়- ভারতে সেটাও কমেছে। সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে বেশি এবং শনাক্তের হারও বেড়েছে।
কিন্তু ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা একটু খতিয়ে দেখলে দেখবেন ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা খুবই ঊর্ধ্বমুখী। এবং হটস্পট শহরগুলো যেমন মুম্বাই, দিল্লি ও আহমেদাবাদে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এবং মৃত্যুর হারও বেড়েছে। “সংক্রমণ যদি এই হারে বাড়া অব্যাহত থাকে, তাহলে হাসপাতালগুলোকে রোগী সামলাতে নিউ ইয়র্কের মত হিমশিম খেতে হবে, ” বলছেন ভারতের একজন কোভিড চিকিৎসক।
এই শহরগুলোতে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পেরে মৃত্যুর ভয়ঙ্কর সব খবর আসছে। একটি ঘটনায় একজন অপেক্ষমান রোগীর টয়লেটে মারা যাবার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। ল্যাবগুলোর ওপর চাপের কারণে পরীক্ষার জন্য হয় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে অথবা ফল পেতে অনেক দেরি হচ্ছে।
ভারতের অর্থনীতি মহামারির আগেই কিছুটা ধুঁকতে শুরু করেছিল। কাজেই আবার একটা কঠোর লকডাউনে যাওয়া ভারতের জন্য কঠিন। তাতে ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে, আরও মানুষ কর্মহীন হবে। কাজেই ভারতকে এখন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পুরো মনোযোগ দিতে হবে।
“সংখ্যা নিয়ে আমি রীতিমত উদ্বিগ্ন,” বলছেন হার্ভাড গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আশীষ ঝা।
“সংক্রমণ চূড়ায় উঠে আপনাআপনি কমে যায় বিষয়টা তো এমন নয়। পরিবর্তন আনতে আপনাকে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
অন্যভাবে বলতে গেলে, ভারতে ৬০% মানুষ আক্রান্ত হলে দেশের জনসংখ্যায় ‘হার্ড ইমিউনিটি’ আসবে এবং ভাইরাস ঠেকানো যাবে এই মনোভাব নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। বলছেন ড. ঝা: “এর অর্থ হবে লাখ লাখ মানুষকে মরতে হবে, সেট তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
ভারতে সংক্রমণের গ্রাফের ঊর্ধ্বমুখী লাইন এখনও নেমে আসেনি, একটা স্থায়ী ও নির্দিষ্ট নিম্নমুখী চিত্র দেখা যায়নি, বলছেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োস্ট্যাটিসটিক্সের অধ্যাপিকা ভ্রমর মুখার্জি।
“আমার মনে হয় দুশ্চিন্তার কারণ আছে, কিন্তু সেটা নিয়ে ত্রাস তৈরি করা ঠিক হবে না,” তিনি বলছেন।
ভারতে কম মত্যুর হার কি বিভ্রান্তিমূলক?
হ্যাঁ এবং না দুটোই। ভারতে কোভিড শনাক্ত রোগীদের মধ্যে আনুপাতিক মৃত্যুর হার প্রায় ২.৮%।
কিন্তু এই সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। যেমন আছে সংক্রমণের বিভিন্ন পরিসংখ্যান নিয়েও। লন্ডনের স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের অঙ্কবিদ অ্যাডাম কুচারস্কি বলছেন, এখানে সমস্যা তৈরি হচ্ছে কারণ অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে না বা আক্রান্ত হওয়া থেকে মারা যাবার মধ্যে যে সময়টা, সেটাকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ‘কেস ফেটালিটি রেট বা সিএফআর’ যেটা হল আক্রান্তের মধ্যে মৃতের হার- সেটার গড় পরিসংখ্যান দেখে মহামারির এই পর্যায়ে, ভারত মনে করতে পারে, পরিস্থিতি তেমন ভয়াবহ নয়। দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
“সিএফআর এমন একটা বিষয় যেটা বিভ্রম সৃষ্টি করতে পারে,” বলছেন ড. মুখার্জি। “আমি যদি শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এবং মৃতের সংখা সঠিক বলে বিশ্বাস করি এবং মৃতের সংখ্যাকে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা দিয়ে ভাগ করি- যদি অবশ্য রোগীর সুস্থ হওয়ার তথ্য সঠিক হয়, তাহলে কিন্তু মৃতের শতকরা হিসাব অনেক বেশি হবে।”
মাথা পিছু মৃত্যুর হিসাব নির্ধারণ করাও কিন্তু কঠিন। কারণ ভাইরাস, ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় কোথায় কীভাবে ছড়িয়েছে সে তথ্য তো এখনও জোগাড় করা যায়নি।
সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হল ভারতে কোভিড-১৯য়ে যে নয় হাজারের বেশি মৃত্যুর হিসাব দেয়া হচ্ছে তার তিন চতুর্থাংশ এসেছে তিনটি রাজ্য থেকে – মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও দিল্লি। কোন কোন রাজ্য তথ্য নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে তাদের গাফিলতির কারণে সংখ্যা কম করে দেখিয়েছে। যেমন চেন্নাই শহরে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সরকারিভাবে দেয়া সংখ্যার দ্বিগুণ। এর কারণ দুটি আলাদা মৃত্যু নথিভুক্ত করার সনদে গরমিল। এছাড়াও কোভিড-১৯এ মৃত্যুর সংজ্ঞা নিয়েও রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্নমত।
অর্থনীতিবিদ পার্থ মুখোপাধ্যায় বলছেন ভারতে মৃত্যুর হিসাব, বয়সের বিবেচনায় বিশ্লেষণ করে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে ভারতে তরুণরা আনুপাতিক হারে বেশি মারা যাচ্ছে।
মহারাষ্ট্রে দেখা যাচ্ছে ৩০শে এপ্রিলের হিসাব অনুযায়ী মৃতের ৪%এর বয়স ৪০ থেকে ৪৯এর মধ্যে। ইতালিতে এই বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল এর দশভাগের এক ভাগ।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারতে মৃতের গড় হার সব কিছুর পরেও কমই থাকবে এবং মৃতদের অধিকাংশই হবে বয়স্করা।
ভারতের জন্য কোন্ বিষয় আমলে নেয়া জরুরি?
আটলান্টিক সাময়িকীর বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক এড ইয়ং বলছেন ভারতের উচিত এই সংক্রমণকে তার ভাষায় “প্যাচওয়ার্ক প্যানডেমিক” হিসাবে দেখা। অর্থাৎ এই মহামারি ভারতের একেক অংশে একেকভাবে প্রভাব ফেলেছে- কোথাও কম, কোথাও বেশি, কিছুটা খাপছাড়া ভাবে, যেটাকে তিনি বলছেন প্যাচওয়ার্ক প্যানডেমিক।
মি. ইয়ং বলছেন এই মহামারি কোথায় কতটা ব্যাপক, তা নির্ভর করছে অনেকগুলো বিষয়ের ওপর, যেমন সামাজিক দূরত্ব রক্ষা, টেস্টিংএর সক্ষমতা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, বয়সের কাঠামো, আর্থিক স্বচ্ছলতা, সামাজিক গোষ্ঠীবদ্ধতা এবং ভাগ্য এসবের ওপর।
ভারতে এই ভাইরাস ছড়ায় যখন বিশৃঙ্খলভাবে জারি করা একটা লকডাউনের কারণে হঠাৎ কর্মহীন ও কপর্দকহীন হয়ে পড়া লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ শহর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে। তারা কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে এবং বাসে করে রওনা দেয় তাদের গ্রামের উদ্দেশ্যে। ওড়িশাতে এখন যত মানুষ করোনা আক্রান্ত তাদের ৮০ শতাংশই এই গ্রামে ফেরা শ্রমজীবী মানুষ।
“আমার মতে এটাকে ভারতের মহামারি হিসাবে না দেখা উচিত,” বলছেন দিল্লির সার গঙ্গা রাম হাসপাতালের চিকিৎসক অম্বরীশ সাতউইক। “এখানে বলা উচিত দিল্লি মহামারি, মুম্বাই মহামারি, আহমেদাবাদ মহামারি।”
এই শহরগুলোতে প্রতি ১০০টি নমুনার মধ্যে পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা জাতীয় গড়ের চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশি।
“এই ভাইরাস যখন ভারতের এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে যাচ্ছে, তখন সেই রাজ্যে সংক্রমণের চূড়াটা দেখা যাচ্ছে, ” বলছেন ড. মুখার্জি। “আর সে কারণে স্বাস্থ্য সেবার সক্ষমতা ভারতকে আসলে বাড়াতে হবে।”
ভারতকে যেটা করতে হবে সেটা হল যেখানে সংক্রমণ কমছে সেখান থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবার সক্ষমতা অর্থাৎ ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী, সরঞ্জাম, ওষুধপত্র, ভেন্টিলেটার সব কিছু সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে যেখানে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করছে সেখানে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারত যেটা করতে পারে, যেমন সেনাবাহিনীর যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, যেখানে খুবই দক্ষ ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মী আছে তাদের প্রস্তুত রাখা, যাতে নতুন হটস্পটে দ্রুত তাদের সাহায্যের জন্য নিয়ে যাওয়া যায়।
ভারতের দীর্ঘ লকডাউন কি কাজে এসেছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারত ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বেশ দক্ষতার সঙ্গে প্রথমদিকেই লকডাউন জারি করেছিল- ২৫শে মার্চ তারিখে। “অন্য কোন দেশ এত তাড়াতাড়ি লকডাউন দেয়নি। এতে করে সরকার প্রস্তুতি নেবার সময় পেয়েছিল। এতে ভারত অনেক মৃত্যু ঠেকাতে পেরেছে,” বলছেন ডা. ঝা।
কিন্তু এই লকডাউন দেয়া হয় মাত্র চার ঘন্টার নোটিশে এবং বিশৃঙ্খলভাবে এটা কার্যকর করার ফলে শ্রমজীবী মানুষরা শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেন।
অনেকেই প্রশ্ন তুলছে সরকারগুলো হাতে যে প্রস্তুতির সময় পেয়েছিল তা ঠিকমত কাজে লাগিয়ে টেস্টিংএর ব্যবস্থা করতে এবং স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সুসংহত করতে তারা সক্ষম হয়েছিল কিনা। দেখে মনে হয় কোন কোন রাজ্য যেমন কেরালা ও কর্নাটকের প্রস্তুতি গুজরাত, মহারাষ্ট্র এবং দিল্লির তুলনায় ভাল ছিল।
ভারতের সার্বিক প্রস্তুতি যদি ভাল হতো, তাহলে মুম্বাই, আহমেদাবাদ আর দিল্লিতে শনাক্তের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে সরকারের এই ব্যর্থতা চোখে পড়ত না বলেই বিশেষজ্ঞদের মত।
এসব শহরে দেখা যাচ্ছে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাব, সরকারি হাসপাতালে উপযুক্ত শয্যা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব। ফলে আস্থার সংকট ও রোগী সামাল দিতে তাদের হিমশিম অবস্থা। এ কারণে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির জন্য হুড়োহুড়ি- যদিও এসব বেসরকারি হাসপাতাল কখনই এই জরুরি সেবা দেবার জন্য পুরো প্রস্তুত ছিল না।
আগামীতে কী?
টেস্টিং এখন ভারতের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। দেশটিতে এখন দিনে প্রায় দেড় লাখ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। লকডাউন শুরুর সময় এই সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। তারপরেও জনসংখ্যার মাথাপিছু হিসাবে ভারতে টেস্টিংএর হার খুবই কম।
অনেকে মনে করে ভারতে ৩০শে জানুয়ারি প্রথম রোগী শনাক্ত হবার পর পরীক্ষার সুযোগ আরও আগে বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল।
“আমরা অনায়াসে এটা করতে পারতাম। আমাদের সুযোগ ছিল, সামর্থ্য ছিল, কিন্তু অগ্রিম পরিকল্পনা ছিল না,” বলছেন অধ্যাপক মুখোপাধ্যায়।
“আমরা আগেভাগে লকডাউন দেয়ার সুযোগের সদ্বব্যবহার করিনি, সময় নষ্ট করেছি “।
এই দীর্ঘসূত্রিতা, সময় নষ্ট করা এবং পরিকল্পনার অভাবের দৃষ্টান্ত হল দিল্লি। সেখানে যে হারে সংক্রমণ বেড়েছে, আর তৈরি হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি হবার সমস্যা আর মৃত্যুর ঘটনা, তা পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে দিয়েছে। ।
সামনের কয়েক সপ্তাহে রোগীর ঢল নামার আশংকা থেকে স্থানীয় সরকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে তারা যেন কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য শয্যা তৈরি রাখে। শুধু তাই নয়, বিয়ের হল, স্টেডিয়াম এবং হোটেলেও শয্যা প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা কিন্তু আস্থা রাখতে পারছেন না।
তারা বলছেন, বিয়ের হল বা স্টেডিয়ামে প্রয়োজন হলে দ্রুত সময়ে পাইপের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা কি সম্ভব? ডাক্তার আর নার্স আসবে কোথা থেকে? শহরের প্রতিটা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র যদি ভর্তি হয়ে যায়, তাহলে ব্যাঙ্কোয়েট হলের শয্যায় রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা সেবা কীভাবে দেয়া হবে?
ড. সাতউইক বলছেন, “আপনার দরকার নতুন অবকাঠামো, সক্ষমতা আরও বাড়ানো। রোগীকে সরিয়ে নিয়ে শুধু নতুন কোভিড ওয়ার্ড তৈরি করলেই তো চলবে না।
হঠাৎ পরিকল্পনা আর আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে কোন জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করা সম্ভব নয় বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এর ওপর সরকার যদি সংক্রমণের অব্যাহত ঝুঁকির কথা মানুষকে স্পষ্ট করে জানাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রথম দিকে যে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছিল মানুষের সেই উৎসাহেও ভাঁটা পড়বে।
“পরিস্থিতি খুবই কঠিন,” বলছেন ড. ঝা। “মহামারি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, এবং এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে অন্তত আরও এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগবে। প্রশ্ন হল, এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য আগামী ১২ থেকে ১৬ মাস ভারত কি পরিকল্পনা নিচ্ছে?”
লকডাউনের পর কাজ হারানো লক্ষ লক্ষ মানুষ শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেন।
ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা যখন শীর্ষে উঠছে তখন মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করেছে
৮০০০এর বেশি মানুষ করোনা সংক্রমণের শিকার হয়ে মারা গেছে
ভারতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় পরীক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে কম
ভারত এখনও সরকারিভাবে কম্যুনিটি সংক্রমণের কথা অস্বীকার করছে।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন