আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

ভারতের পাটবীজের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে নতুন প্রকল্প

সরকার পাটবীজ সরবরাহে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আগামী ৫ বছরেই পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায় বাংলাদেশ। অর্থাৎ ২০২৫ সালের মধ্যে পটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রতিবছর ভারত থেকে চাহিদার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ পাটবীজ আমদানি করে বাংলাদেশ। যার পরিমাণ সাড়ে ৪ হাজার টন। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৫-২৬ এই ৫ বছরের মধ্যে দেশে ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পাটবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পাটবীজ উৎপাদনের জন্য ৮ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে চাষের প্রয়োজন হবে।-কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাটআঁশ এবং পাটবীজ ফসল দুইটি আলাদা ফসল। পাটবীজ রবি মৌসুমের (আগষ্ট-ডিসেম্বর) ফসল। তোষা পাটবীজ সাধারণত আগস্ট-ডিসেম্বর মাসের ফসল। এ সময়ে উচ্চমূল্যের রবি ফসলের পরিবর্তে কৃষক পাটবীজ উৎপাদনে আগ্রহী হয় না। দেশে মূলত দেশি ও তোষা এ দুই জাতের পাটের চাষ হয়। বর্তমানে ১৫ শতাংশ দেশি পাট ও ৮৫ শতাংশ তোষা পাট উৎপন্ন হয়। তোষা পাটবীজের চাহিদার প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ ভারত থেকে আমদানিকৃত জেআরও-৫২৪ জাতের মাধ্যমে মেটানো হয়।

অথচ, জিনোম গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিটউট (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত পাটের জাত রবি-১ (তোষা পাট-৮) এর ফলন জেআরও-৫২৪ জাতের চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বেশি। এটি ফরিদপুর ও যশোর অঞ্চলের কৃষকের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। যথাযথভাবে রবি-১ পাট জাতকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে পাট বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে কৃষি মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, পাটবীজ উৎপাদনের মৌলিক ধাপ তিনটি। এগুলো হচ্ছে- ১. প্রজনন বীজ। ২. ভিত্তি বীজ ও ৩. প্রত্যায়িত বীজ। প্রথমত প্রজননবিদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে উৎপাদিত শতভাগ কৌশলিত্বাত্তিক দিক থেকে বিশুদ্ধ বীজকেই প্রজনন বীজ নামে পরিচিত। দ্বিতীয়ত প্রজনন বীজকে বাড়িয়ে যে বীজ পাওয়া যায় তাকে বলা হয় ভিত্তি বীজ। সরাসরি বা গবেষণা খামারে গবেষক বা কৃষিতত্ত্ববিদ এবং বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সির কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে এই বীজ উৎপাদন করা হয়। তৃতীয়ত, ভিত্তিবীজ বর্ধিত করে যে বীজ পাওয়া যায় তাকে বলা হয় প্রত্যায়িত বীজ। এই বীজই কৃষকদের মাঝে চাষের জন্য বিতরণ করা হয়। বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সি এই বীজের সনদ প্রদান করে।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে ৬ থেকে ৭ লাখ হেক্টর জমিতে সব মিলিয়ে প্রতিবছর ৭০ থেকে ৭৫ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়। দেশি, ও তোষা এই দুই জাতের পাট চাষ করা হয়। তবে কেনাফ ও মেসতা জাতের পাটও বাংলাদেশে চাষ করা হয়। যার মান ততটা উন্নত নয়। বাংলাদেশে এই পরিমাণ পাট উৎপাদনে পাটবীজের প্রয়োজন ৬ থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন। চাহিদার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ পাটবীজ আমদানি করা হয় ভারত থেকে। এর মধ্যে তোষাপাট উন্নত জাতের হওয়ায় এর চাহিদা ব্যাপক। যা জেআর-৫২৪ জাতের পাট নামে পরিচিত।

সূত্র জানিয়েছে, উচ্চ ফলনশীল বিজেআরআই রবি-১ জাতটি পাটচাষিদের মধ্যে জনপ্রিয়করণের লক্ষ্যে গত ২০২০ সালের পাট মৌসুমে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবং পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট এর তত্বাবধানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩ হাজার ৪০০টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন এবং পাটচাষিদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঠ দিবস পালন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে কৃষকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় গেছে বলে নিজস্ব পাটের নতুন জাত রবি-১ (বিজেআরআই তোষা-৮) কে কার্যকরভাবে সম্প্রসারিত করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণেই ৫ বছরের জন্য রোডম্যাপ তৈরি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, অন্য ফসলের তুলনায় কম লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা পাটবীজ চাষ করতে চায় না। কৃষকরা মনে করে পাট বীজ উৎপাদনের চেয়ে বাজার থেকে কিনে আনাই লাভজনক। উচ্চমূল্যের রবি ফসলের দাম বেশি পায় বলে কৃষক পাটবীজ উৎপাদনে তেমন আগ্রহী হয় না। হিসেব করে দেখা গেছে, তোষা পাটবীজ চাষ করে একর প্রতি কৃষকের নীট লাভ ৪৮ হাজার টাকা, একই জমিতে ফুলকপি চাষে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, বাধাকপি চাষে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নীট লাভ হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ কারণেই পাটবীজে কৃষকদের আগ্রহী করতে ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সমন্বিত উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি কৃষি মন্ত্রণালয় ‘উচ্চফলনশীল পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে রোডম্যাপ বাস্তবায়ন’ বিষয়ে মতবিনিময় সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও মন্ত্রণালয়ের সেই সময়কালের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বর্তমানে (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত) এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নাসিরুজ্জামান সংযুক্ত ছিলেন। সভাটি সঞ্চালনা করেন বর্তমান কৃষিসচিব মেসবাহুল ইসলাম।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে বছরে কৃষক পর্যায়ে প্রত্যায়িত পাট বীজের চাহিদা ৫ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন। আর চাহিদার বিপরীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সরবরাহ করে ৭৭৫ মেট্রিক টন (এর মধ্যে তোষা পাট ৫১৫ টন ও দেশি পাট ২৬০ টন)। তোষা পাটবীজের প্রায় পুরোটাই ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এই বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্যই কৃষি মন্ত্রণালয় ৫ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৫-২৬ এই ৫ বছরের মধ্যে দেশে ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পাটবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই তোষা পাটবীজ উৎপাদনের জন্য ৮ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে চাষের প্রয়োজন হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অণুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কোনও এক সময় দেশের কৃষকরাই পাট ক্ষেতের একাংশ পাট বীজ উৎপাদনের জন্য রাখতো। এ পদ্ধতিতে বীজ সংগ্রহে সময় লাগে ১০ থেকে ১১ মাস। এই সমস্যা সমাধানে বিজেআরআই ‘নাবী পাট বীজ উৎপাদন প্রযুক্তির’ মাধ্যমে বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাত্র এই চার মাসে উন্নত মানের বীজ উৎপাদনে সক্ষম। কিন্তু এই সময়ে রবিশস্য রেখে পাটবীজ চাষে আগ্রহী হয় না। এ কারণে দেশে তোষাপাট বীজ উৎপাদন বাড়েনি। এ কারণেই অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করার উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। এর ফলেই তোষা-৮ বা রবি-১ নামের পাটের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ জুট রিসার্স এনস্সিটটিউট (বিজেআরআই)। বিজেআরআই বলেছে,  এই জাতের পাট ১৫ থেকে ২০ ফুট লম্বা হয় বলে উৎপাদনের পরিমাণ বেশি। এতে কৃষকরাই লাভবান হবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বরাদ দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে অর্থাৎ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সরকার যে মহপরিকল্পনা নিয়েছে তা হলো- গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর ৭ দশমিক ৫৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। সে হিসেব অনুযায়ী ২০১৭-১৮ সালের জমির পরিমাণকে ভিত্তি ধরে বীজ উৎপাদনের চাহিদা এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি হিসাব করা হয়েছে। ভিত্তিবছর অনুযায়ী তোষাপাট বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য প্রতি হেক্টরে ৬ দশমিক ৫ কেজি হিসেবে ধরে ৬ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে চার হাজার ৩৯১ টন প্রত্যায়িত বীজের প্রয়োজন হবে। এই চার হাজার ৩৯১ মেট্রিকটন বীজের জন্য প্রয়োজন হবে ৫৮ দশমিক ৫৪ মেট্রিক টন ভিত্তি বীজের। বিএডিসি এই পরিমাণ বীজ উৎপাদন করবে। এ ক্ষেত্রে বিএজআরআই প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে।

পাটবীজ উৎপাদনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অণুবিভাগ ৫ বছর মেয়াদি রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রথম বছর ২০ মেট্রিক টন ভিত্তিবীজ উৎপাদন করা হবে। এর জন্য পাট উৎপাদন এলাকায় ৩ হাজারটি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রজনন বীজ বিজেআরআই সরবরাহ করবে।

দ্বিতীয় বছর ৪০ মেট্রিক টন ভিত্তিবীজ উৎপাদন করা হবে। এ দিয়ে ১ হাজার ৪৬৪ মেট্রিক টন প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করা হবে। একইভাবে এ ক্ষেত্রেও নিবিড় পাট উৎপাদন এলাকায় ৩ হাজারটি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে এবং উৎপাদিত বীজ বিনামূল্যে পাটচাষিদের কাছে বিতরণ করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রজনন বীজ বিজেআরআই সরবরাহ করবে।

তৃতীয় বছর বাড়িয়ে ৫৯ মেট্রিক টন ভিত্তিবীজ উৎপাদন করা হবে যা দিয়ে ২ হাজার ৯২৭ মেট্রিক টন প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করা হবে। একইভাবে ৩ হাজারটি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে এবং উৎপাদিত বীজ একই পদ্ধতিতে পাটচাষীদের বিতরণ করা হবে। প্রজনন বীজ বিজেআরআই সরবরাহ করবে।

চতুর্থ বছর একইভাবে বিজেআরআই’র সরবরাহ করা প্রজনন বীজের মাধ্যমে ৫৯ মেট্রিক টন ভিত্তিবীজ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে শতভাগ অর্থাৎ প্রয়োজনীয় ৪ হাজার ৩৯১ মেট্রিক টন প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে সরকার। যা বিনামূল্যে না দিয়ে কিছুটা ভর্তুকি মূল্যে প্রতিকেজি বীজের মূল্য ১০০ টাকা দরে পাটচাষীদের কাছে বিক্রি করা হবে। এ ক্ষেত্রেও ৩ হাজারটি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে।

সরকারের রোডম্যাপ অনুযায়ী সর্বশেষ পঞ্চম বছর আরও ৫৯ মেট্রিক টন ভিত্তিবীজ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে শতভাগ অর্থাৎ প্রয়োজনীয় চার হাজার ৩৯১ মেট্রিক টন প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদনের সক্ষমতা নিশ্চিত করা হবে। এটিও ভর্তুকি মূল্যে ১০০ টাকা কেজি দরে পাটচাষীদের কাছে বিক্রি করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী জানিয়েছেন, ভর্তুকি দিয়ে হলেও পাটবীজের উৎপাদন বাড়ানোর কোনও বিকল্প নাই। অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে সবসময় অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও সময়োপযোগী উদ্যোগে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাটের জিনোম আবিষ্কার করেছে। সেই জিনোম ব্যবহার করে আমাদের বিজ্ঞানীরা উচ্চফলনশীল পাটবীজ রবি-১ জাত উদ্ভাবন করেছে। এর ফলন ভারতের পাটজাতের চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বেশি। কৃষক পর্যায়ে এটির চাষ বাড়াতে পারলে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব। আমরা পাটবীজের জন্য অন্যদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারি না।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com