বেকিং করে বাড়িতে সহজেই বানাতে পারেন মজার নানা পদ। সময়ও কাটবে, খাবারও হবে স্বাস্থ্যকর। রেসিপি দিয়েছেন জেবুন্নেসা বেগম
আমের ক্রিম ব্রোলে
উপকরণ: পাকা আমের ক্বাথ বা পাল্প আধা কাপ, ডিম ৩টা, কুকিং ক্রিম আধা কাপ, চিনি ৩ টেবিল চামচ ও আইসিং সুগার ৩ টেবিল চামচ।
প্রণালি: ২ টেবিল চামচ চিনি আধা কাপ আমের পাল্পের সঙ্গে মিশিয়ে চুলায় জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে নিন। ডিম ফেটে এর সঙ্গে কুকিং ক্রিম মেশান। আমের পাল্প মিশিয়ে ছোট ছোট ব্রোলের বাটিতে ঢেলে নিন। ওভেনের পাত্রে পানি দিয়ে এর ওপর বাটিগুলো রাখুন। প্রি–হিট ওভেনে ১৮০ ডিগ্রিতে ১৫ মিনিট বেক করুন। এবার ওভেন থেকে বের করে এর ওপর আইসিং সুগার ছড়িযে দিন। ব্লো টর্চ দিয়ে চিনি বাদামি রং করে নিন। আইসিং সুগার না থাকলে চিনি গুড়া করে দিতে পারেন। ব্লো টর্চ যদি না থাকে ওভেনের ওপরে হিট দিয়ে ব্রোলের ওপর আইসিং সুগার দিয়ে ৫ মিনিট বেকড করে নিবেন। ঠাণ্ডা হলে পরিবেশন করবেন। ওপরের অংশটা ক্রাঞ্চি কেরামেল আর ভেতরটা নরম পুডিংয়ের মতো হবে।
লেবুর কেক
উপকরণ: ময়দা ১ কাপ, বেকিং পাউডার ১ চা-চামচ, বেকিং সোডা ১ চা-চামচ, ডিম ৩টা, আইসিং সুগার পৌনে ১ কাপ, মাখন সিকি কাপ, লেবুর রস দেড় চা-চামচ, লেমন ইমালশান ১ চা-চামচ, লেমন জেস্ট (লেবুর ওপরের সবুজ অংশ কুচি) আধা চা-চামচ, লেমন খাবার রং আধা চা-চামচ, সাজানোর জন্য হুইপড মিল্ক ১ কাপ, আইসিং সুগার পৌনে ১ কাপ, জেলোটিন ১ টেবিল চামচ, লেমন জেলি রং কয়েক ফোটা, লেবুর টুকরা ও লেবুর খোসা ইচ্ছামতো।
প্রণালি: ময়দা, বেকিং পাউডার ও বেকিং সোডা একসঙ্গে মিশিয়ে ঢেলে রাখুন, ৩টা ডিমের সাদা অংশ ফোম করে আইসিং সুগার দিয়ে বিট করতে থাকুন।
এগ বিটার না থাকলে হুইপ বা চামচ দিয়ে ফেটিয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সময় বেশি লাগবে। আইসিং সুগার মিশে গেলে ৩টা কুসুম দিয়ে আবার ফেটিয়ে নিন। এবার মাখন, লেবুর খোসা, খাবার রং, লেমন ইমালশান দিয়ে বিট করুন। মাখন না থাকলে সমপরিমাণ তেল ব্যবহার করতে পারবেন। ময়দার মিশ্রণ অল্প অল্প করে মেশান।
কেক মোল্ডে পেপার বসিয়ে তেল বা মাখন ব্রাশ করে মিশ্রণ ঢেলে দিন। ১৬০ ডিগ্রিতে ৩০ মিনিট বেক করুন। হুইপড ক্রিম বিট করে আইসিং সুগার দিয়ে আবার বিট করুন। গরম পানিতে জেলোটিন গলিয়ে ঠাণ্ডা হলে এর সঙ্গে বিট করে ক্রিম তৈরি করে নিন, কেক তৈরি হয়ে গেলে ৩ অথবা ৪টা স্তরে কেটে নিন। প্রতিটি স্তরের কেকে চিনির সিরা বা সিরাপ ব্রাশ করে নিন ( চিনি ২ টেবিল চামচ, পানি ২ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ চা-চামচ দিয়ে সিরা তৈরি করতে হয়)। প্রতিটি স্তরে ক্রিম লাগিয়ে ওপরে চারপাশ ক্রিম দিয়ে ঢেকে দিন। ক্রিমের সঙ্গে সামান্য লেমন জেলি রং মিশিয়ে ওপরে সাজাতে পারেন। লেবুর পাতলা টুকরা বা খোসা দিয়ে আপনার পছন্দমতো সাজিয়ে নিতে পারেন।
পাউরুটি
উপকরণ: ময়দা ২ কাপ, ইস্ট ২ চা-চামচ, চিনি ১ টেবিল চামচ, ডিম ১টা (সাদা অংশ), তরল দুধ আধা কাপ, মাখন বা তেল ১ টেবিল চামচ, লবণ ও পানি পরিমানমতো।
প্রণালি: ইস্ট ১ টেবিল চামচ কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে নিন। চিনি, ফেটানো ডিমের অর্ধেক অংশ, মাখন অথবা তেল এবং ভিজিয়ে রাখা ইস্ট ফুলে উঠলে ময়দায় দিয়ে দিন। সবশেষে পরিমানমতো লবণ দিয়ে মাখুন। সামান্য পানি মিশিয়ে রুটির ডোয়ের মতো তৈরি করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট খুব ভালোভাবে মথতে হবে। চুইংগামের মতো টেনে যখন দেখবেন লম্বা হচ্ছে, তবে ছিড়ে আসছে না, তখন বুঝবেন ডো ভালোভাবে তৈরি হয়ে গেছে। এখন একটা গরম জায়গায় ঢেকে রাখুন।
১ ঘণ্টা পর যখন দেখবেন ময়দার ডো ভালোভাবে ফুলে উঠেছে, তখন বড় করে একটা রুটি বেলে নিন। এবার রুটিটাকে রোল করে ভাজ করে পাউরুটির ডাইসে দিয়ে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। কিছুটা ফুলে উঠলে প্রি–হিট ওভেনে ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ৩০ মিনিট বেকড করুন। ওভেন থেকে বের করে আরও ১০ মিনিট ঢাকনা বন্ধ রাখবেন। এবার ডাইস থেকে পাউরুটি বের করে কেটে পরিবেশন করুন।
চিকেন কাপ বান
উপকরণ: বানের জন্য: ময়দা ২ কাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, ইস্ট ২ চা-চামচ, গুড়া দুধ ১ টেবিল চামচ, ফেটানো ডিম অর্ধেক, লবণ আধা চা-চামচ, মাখন ১ টেবিল চামচ, মাখন ১ টেবিল চামচ, পানি পরিমানমতো।
পুরের জন্য: মুরগির মাংস ২ কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, কাঁচা মরিচকুচি ২ টেবিল চামচ, সাদা গোল মরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, তেল ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, ময়দা ১ টেবিল চামচ, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও গুড়া দুধ ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি: ময়দার সঙ্গে চিনি, ইস্ট, গুঁড়া দুধ, ফেটানো ডিমের অর্ধেক, লবণ ও পরিমানমতো পানি দিয়ে ডো তৈরি করুন। সবশেষে মাখন দিয়ে আরও একটু মথে একটা বাটিতে ডো রেখে ঢেকে দিন। গরম জায়গায় রেখে ডো ফুলে উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
মুরগির বুকের মাংস অথবা হাড় ছাড়া মুরগির মাংস সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ মাংস ছোট ছোট টুকরা করে নিন। প্যানে অল্প তেল দিয়ে আদাবাটা, মুরগির মাংস, পেঁয়াজ কয়েক মিনিট ভাজুন। বাকি উপকরণ দিয়ে ২ মিনিট ভেজে চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
ময়দার ডো ফুলে গেলে ছোট ছোট রুটি বেলে নিন। কাপের মোল্ডে তেল ব্রাশ করে রুটি দিয়ে ভেতরে চিকেনের পুর দিয়ে ওপরে আরেকটি ছোট রুটি দিয়ে সামান্য পানি লাগিয়ে আটকে দিন। ওপরে ডিমের কুসুম অথবা দুধ ব্রাশ করে দিন। ১৮০ ডিগ্রি প্রি–হিট ওভেনে ২০ মিনিট বেক করুন। অনেক ওভেনে সময় বেশি লাগে। সেক্ষেত্রে আরও ৫ মিনিট বাড়িয়ে নিবেন। ওভেন থেকে বের করে ওপরে সামান্য মাখন ব্রাশ করে নিবেন।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন