পরিবেশ
বছরজুড়ে প্রশাসনের কাজের কেন্দ্রে ছিল করোনা
লেখক
জাগোনিউজ২৪.কমপ্রশাসনের জন্য ২০২০ ছিল মহামারি করোনাভাইরাসে সঙ্কটময় চ্যালেঞ্জের এক বছর। দেশের মানুষকে সেবা দিতে সামনে থেকে চিকিৎসক, পুলিশসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা মোকাবিলা করেছেন আতঙ্কময় মহামারিকাল। অতি ক্ষুদ্র এক জীবাণুর কাছে পরাজয় বরণ করে জীবন দিয়েছেন একজন প্রতিমন্ত্রী, দু’জন সচিবসহ অনেক কর্মকর্তা। আক্রান্ত হয়েছেন এক ডজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ শীর্ষ ও মাঠ পর্যায়ের বহু কর্মকর্তা।
বছরের শুরু থেকে চলা মহামারিকে মোকাবিলায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভূমিকাকে সফল বলছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মহামারির কারণে টানা ৬৬ দিন সরকারি ছুটির রেকর্ড হয়েছে এ বছরই। এছাড়া বছরের শুরুতে ছোট আকারে হয়েছে মন্ত্রিসভার রদবদল, শেষের দিকে যুক্ত হন একজন প্রতিমন্ত্রী।
করোনার কারণে সম্ভব হয়নি জেলা প্রশাসক সম্মেলনও। তবে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচিত ছিলেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার বিষয়টিও বছরের আরেক আলোচিত ঘটনা।
প্রশাসনের ২০২০ সালের কার্যক্রম মূল্যায়ন করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সব দেশেই জনপ্রশাসন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের জনপ্রশাসনের ভূমিকা ছিল চমৎকার। কোভিডে আমাদের মাঠ প্রশাসন, চিকিৎসক, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে এবং তারা এক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, মানুষের বাড়ি বাড়ি ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, চিকিৎসা দেয়াসহ করোনাকালে প্রশাসনের কর্মকর্তারা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে বলছিলাম জনমুখী জনপ্রশাসন; সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে কাজ করা- কোভিড পরিস্থিতিতে আমরা এর দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। এসব কারণে ছোট ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে রয়েছে।’
ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘চরম আতঙ্কের মধ্যে যখন কেউ এগিয়ে আসছে না, তখন আমাদের ইউএনও, ওসি জানাজা পড়িয়েছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা আক্রান্ত হন, জীবন দেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, তিনি করোনা মোকাবিলায় যে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে সেটা বাস্তবায়ন করেছি।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শুধু করোনাই নয়, এ বছরই ৬ দফা বন্যা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। সেগুলোর মোকাবিলাও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের করতে হয়েছে। আন্তরিকতা ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এত কিছুর মধ্যে আমাদের উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়নি। এটা আমাদের প্রশাসনের বড় সফলতা।’
মহামারিতে ৬৬ দিনের দীর্ঘতম ছুটি
চলতি বছরটিই ছিল টানা দীর্ঘতম ছুটির বছর। মহামারির কারণে চলতি বছর ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন ছুটি থাকে।
করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে ২৩ মার্চ সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন। পরে বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরনের গণপরিবহনও। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা এবং সাধারণ মানুষের জীবিকার কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন শর্ত পালন ও নির্দেশনা মানা সাপেক্ষে আবার ৩১ মে থেকে অফিস খুলে দেয় সরকার। ধীরে ধীরে খুলে দেয়া হয় গণপরিবহনও।
করোনায় এক প্রতিমন্ত্রী, দুই সচিবের মৃত্যু
গত ১৩ জুন রাতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ মারা যান। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। পরে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় তার ফলাফল পজিটিভ আসে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ জুন প্রাণ হারান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ জুলাই প্রাণ হারান আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব নরেন দাস।
আক্রান্ত হয়েছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা
করোনা আক্রান্ত হয়েছেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
এছাড়া নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও করোনায় আক্রান্ত হন।
সম্ভব হল না ডিসি সম্মেলন
সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সরাসরি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রতিবছর জুলাইয়ে ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এবার তা সম্ভব হয়নি। মহামারি পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের ডিসি সম্মেলনের জন্য ২০২১ সালের ৫ থেকে ৭ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছিল। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সেটিও আর সম্ভব হচ্ছে না।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৪ থেকে ১৮ জুলাই জেলা প্রশাসক সম্মেলন হয়।
মন্ত্রিসভার রদবদল, নতুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দফতর বদল করা হয়। এর মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে দফতর পরিবর্তন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ পান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরুকে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ মারা যাওয়ার পর গত ২৫ নভেম্বর নতুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান জামালপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হক খান দুলাল। এর আগে ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।
কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানাকে নিয়ে বিতর্ক
চলতি বছর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য মাঠ প্রশাসনে কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীন আলোচিত ছিলেন। ১৩ মার্চ মধ্যরাতে স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাড়িতে হানা দেন। এরপর তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এক বছরের কারাদণ্ড দেয় জেলা প্রশাসন। তখন ঘরে কোনো তল্লাশি চালানো না হলেও পরে ডিসির কার্যালয়ে নেয়ার পর তারা দাবি করেন, আরিফুলের বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে।
অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সুলতানা পারভীনের নির্দেশে এসব ঘটেছে বলে আরিফুলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এই ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। পরে সুলতানা পারভীনকে সরিয়ে দেয়া হয়। ১৬ মার্চ সুলতানাকে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একইসঙ্গে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। উপসচিব সুলতানা পারভীন ও জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত এখনও চলছে।
পদোন্নতি
চলতি বছর মহামারির মধ্যেও অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিব পদে দুটি বড় ধরনের পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে গত ৫ জুন ১২৩ উপসচিবকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব করা হয়। এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর ৯৮ জন যুগ্ম সচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যদিও দুটি স্তরেই স্থায়ী পদের চেয়ে আগে থেকেই অতিরিক্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া চলতি বছরই ২৬ জন কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন সংশোধন
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ সংশোধন করা হয় ২০২০ সালেই। ৪ অক্টোবর নোয়াখালীতে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জড়িতদের অধিকাংশকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
আন্দোলনকারীরা ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি জানায়। এ সময় অন্যান্য স্থানেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার।
গত ১২ অক্টোবর ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরে সংসদের অধিবেশন বসলে অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত করতে সংসদে বিল আকারে পাস হয়।
ইউএনওর ওপর হামলা
গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সরকারি বাসভবনে সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী। ওয়াহিদা খানমের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয়। প্রায় এক মাসের চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ার পর ১ অক্টোবর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। তবে এর মাঝেই ১৬ সেপ্টেম্বর ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় আনতে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
এক প্ল্যাটফর্মে সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা
কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে গত ১২ ডিসেম্বর সারাদেশে সরকারি কর্মচারীরা ‘জাতির পিতার সম্মান রাখবো মোরা’ স্লোগান সামনে রেখে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সরকারি কর্মকর্তা ফোরাম এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে সরকারি শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি
-
ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।
২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।
৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।
৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।
৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।
৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।
৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।
১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।
১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।
১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷
বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
অশ্বগন্ধা –
বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
শতমূলী –
শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
যষ্টিমধু –
জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী –
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি –
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷
পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।
মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)
কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।
রোপন (Planting)
দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।
ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।
মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।
গাছের পরিচর্যা (Caring)
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন