আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বাংলাদেশ

ফুটবলের সেই নান্দনিকতা কি হারিয়ে গেল?

সম্প্রতি গ্রামের বাড়ি থেকে একটি ছেলে আমার বাসায় এসেছে। নাম মুক্তার। চাঁদপুরের হাইমচরে তার বাড়ি। একেবারেই গ্রামীণ পরিবেশে বড় হওয়া এক তরুণ। চাষাবাদের কাজে সহযোগিতা করাই তার কাজ। খুব বেশি বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে তার ধারণা নেই। এমনকি ফুটবল নিয়ে বিশ্বব্যাপী এ মাতামাতি তার মোটেই গায়ে লাগে না। আমি গত সংখ্যার লেখায় বলেছিলাম, ফুটবল বিশ্বকাপের জ্বরে আক্রান্ত হয় না, এমন মানুষ নেই। ওকে দেখার পর বুঝলাম, এমন মানুষও আছে বিশ্বকাপের বাতাস যার গায়ে লাগে না। ওকে নিয়ে বেশ মজাই হলো।

বিশ্বকাপ এলে আমার একান্নবর্তী বাসার সবাই মিলে উৎসব করে খেলা দেখতে বসি। আমার ভাই-ভাবী, ছেলেপেলে, ভাস্তে-ভাস্তি, ভাগ্নে-ভাগ্নি সবাই মেতে উঠি আনন্দে। আমরা যে যে দলই সমর্থন করি না কেন খেলা দেখার আনন্দ সবাই সমানতালে উপভোগ করি। ফুটবল নিয়ে মুক্তারের একেবারেই নিরাসক্তিতে আমরা সবাই অবাক। মনে হলো জীবনে ফুটবল খেলাও ও দেখেনি। এ বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা দূরের কথা, ও যেন কিছুই টের পাচ্ছে না। ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত দেশে ও যেন ব্যতিক্রমী এক চরিত্র।

যাই হোক, গত ১৬ জুনের কথা। ওইদিন ছিল আইসল্যান্ড আর আর্জেন্টিনার খেলা। ঘরে বেশ কয়েকটি বিশ্বকাপের রেপ্লিকা ফুটবল ছিল। আমার ছোট ছেলে বিজয় ফুটবলের বিশেষ ভক্ত। সারাবছরই ও ফুটবল উত্তেজনায় মত্ত থাকে। ওর জন্যই রেপ্লিকার ওই সংগ্রহ। একটি বল এনে মুক্তারের হাতে দিলাম। বললাম, এই বল নিয়ে বসে তুই খেলা দেখবি। মুক্তার যথা আজ্ঞা হয়ে খেলা দেখতে বসল। বললাম, মাঠে যে ২২ জন খেলোয়াড় খেলছে এর মধ্যে একজন বিখ্যাত খেলোয়াড় আছে, যে সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়। নাম মেসি। তুই খেলা দেখে বলবি, ওই খেলোয়াড় কোনটা। যাই হোক, খেলার শেষ দিকে এসে আমরা আহত হলাম। এত হাঁকডাক আর অপেক্ষা করে খেলা দেখে আমরা নিজেরাই যেন আর্জেন্টিনাকে খুঁজে পেলাম না। মুক্তারকে জিজ্ঞাসা করলাম, বল সবচেয়ে ভালো খেলেছে কে? তার মানে মেসি কোনটা? মুক্তার যে খেলোয়াড়টিকে দেখাল সেটি হচ্ছে আইসল্যান্ডের গোলকিপার। সবাই হল্লা দিয়ে হেসে উঠল। আমিও যারপরনাই মজা পেলাম। মুক্তারের কাছে ওইটিই ‘মেসি’। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো ফুটবলে শতভাগ নিরাসক্ত এই গ্রামীণ তরুণ খেলা না বুঝলেও ভালোটাকে চিনে নিতে জানে। সত্যিই তো, আমরা কেউই কি সেই মেসিকে খুঁজে পেয়েছি, যেই মেসিকে নিয়ে এত হাঁকডাক? খুঁজে পাইনি। পাঠক! আমার মনে হয় মুক্তারের মতো এই ফুটবলে গেঁয়ো ছেলেটির মূল্যায়নই ফুটবলের এখনকার পরিস্থিতি বোঝার জন্য যথেষ্ট।

সত্যি সত্যিই একের পর এক খেলা দেখছি, কিন্তু ২০১০, ২০১৪ বা তারও আগের বিশ্বকাপ ফুটবলের সেই মজা পাওয়া যাচ্ছে না। যে ক্রীড়ানৈপুণ্য, ফুটবলের যে ছন্দ দেখেছিলাম তা যেন হারিয়ে গেছে। যে দল বা যে খেলোয়াড়ের কাছে যত বেশি আশা তত বেশি হতাশ হতে হচ্ছে। বার বারই আমার মনে হচ্ছে ষাটের দশকে আমাদের ঢাকার মাঠে যখন খেলা দেখতে যেতাম তখনকার খেলোয়াড়দের নৈপুণ্যের কথা। সেই সময় থেকে স্বাধীনতার পর পর্যন্ত বাঘা বাঘা সব ফুটবলারের যে নৈপুণ্য দেখতাম, তার কাছে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় এ আয়োজনও যেন ম্লান মনে হচ্ছে। যদিও এটি একেবারেই আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আমার মনে পড়ে সেই মাখরানি ফুটবলারদের কথা। বিশেষ করে জব্বার, কালা গফুর, হাশেম দীন, আব্বাস, ওমর আর আমাদের বলাই, টিপু থেকে শুরু করে জাকারিয়া পিন্টু পর্যন্ত। স্বাধীনতার পর তো আধুনিক ফুটবল নিয়ে এলেন সালাউদ্দিন, নান্নু, চুন্নু থেকে শুরু করে আসলাম, মুন্না, কায়সার হামিদ পর্যন্ত। যাদের খেলা এ প্রজন্মের তরুণরাও অনেকে দেখে থাকবে। আমি ষাটের দশকে স্কুল বয়স থেকে ঢাকা স্টেডিয়ামের একজন নিয়মিত দর্শক ছিলাম। তখন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ছিল আজকের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জায়গাটিতে। তার পাশেই সুইমিং পুল। তার পরই স্টেডিয়াম। মোহামেডানের খেলোয়াড়রা সুইমিং পুলের পাশে গেটটি দিয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকত। অন্য সব খেলোয়াড় ঢুকত পল্টন প্রান্ত দিয়ে। এটিই ছিল প্লেয়ার্স গেট। সেই সময় আমি নিয়মিত মোহামেডান ক্লাবে যেতাম। অধিকাংশ প্লেয়ারের সঙ্গে আমার জানাশোনা ছিল। মাঝেমধ্যেই আমি খেলা দেখার জন্য ক্লাব পাস পেতাম। ফুটবলের এত বেশি ভক্ত ছিলাম যে, টিকিট থাক বা না থাক স্টেডিয়ামে যেতাম। স্টেডিয়ামের পেছন দিক থেকে রশিতে ঝুলেও গ্যালারিতে উঠেছি। দু-এক বার ছোটখাটো দুর্ঘটনারও শিকার হয়েছি। যাই হোক, তখনকার খেলা গ্যালারিতে দেখতাম বিধায় কোথায় ফাউল হলো বা অঘটন ঘটল তা খুব বেশি চোখে পড়ত না। আজ প্রযুক্তির উৎকর্ষ আর গণমাধ্যমের বিকাশের যুগে মাঠের কোনো দৃশ্যই চোখের আড়াল হয় না। যারা মাঠে বসে খেলা দেখেন তাদের চেয়ে অনেক বেশি ভালো দেখেন যারা টেলিভিশন সেটের সামনে বসে খেলা দেখেন। কিন্তু বার বারই মনে হচ্ছে খেলোয়াড়দের অবস্থানটা কোথায়? তাদের কাছে যে নৈপুণ্যের প্রত্যাশা, নেই নৈপুণ্য কোথায়? সেই সৌন্দর্য কোথায়?

ষাটের দশকে ঢাকার মাঠে জব্বার, কালা গফুরদের দেখেছি মধ্যমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের চার-পাঁচ জনকে কাটিয়ে নিয়ে একেবারে ডি এলাকার ভিতরে গিয়ে গোল করতে। আর এখন দেখছি বড় বড় দলের নামি নামি (বিশেষ করে জনপ্রিয়তা লাভকারী খেলোয়াড়রা) দুজনকে কাটাতে গিয়েই হিমশিম খায়, কখনো কাটাতে গিয়ে সামান্য ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। কখনো এই পড়ে যাওয়া সত্যি সত্যি আবার কখনো অভিনয়ও। এক ধরনের ভান। এবারই বেশি লক্ষ্য করছি নামি নামি খেলোয়াড়দের নামে অভিনয়, নাটক বা ভানের অভিযোগ উঠছে। ষাটের দশকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে এক জাদু নিয়ে আবির্ভূত হন পেলে। সেই সময় তো এসব অভিনয় আর ভান ছিল না! আবার ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনাও তো উপহার দিলেন চরম এক জাদু। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছয়জনকে কাটিয়ে বিস্ময়কর গোল তিনি উপহার দিলেন। এখনো দর্শকের চোখে সে দৃশ্য লেগে আছে। আবার ঢাকার ফুটবল মাঠের জাদুকর সামাদকে দেখেছি। জাদুকর সামাদের পায়ে এমন জাদু ছিল যে, একেবারে মেপে শট দিয়ে গোলপোস্টে বল করেছেন। কথিত আছে— একবার জাদুকর সামাদ বার বার শট দিচ্ছেন বার বারই বল গোলপোস্টের বারে লেগে ফিরে আসছে। তখন তিনি চ্যালেঞ্জ করলেন গোলপোস্টের বারের মাপে গণ্ডগোল আছে। পরে মেপে দেখা গেল তার কথাই ঠিক। মনে পড়ে মোহামেডানের খেলোয়াড় প্রতাপের কথা। মাঠে কখনো মোহামেডানের পক্ষে যদি কর্নার হতো, আর শটটা যদি প্রতাপ করত তাহলে গোল ছিল অবধারিত। স্টেডিয়ামের গ্যালারি বা মাঠে তখন পিনপতন নীরবতা বিরাজ করত। প্রতাপের সেই শটটা ছিল রংধনুর মতো। বল ঘুরে গোলপোস্টের ত্রিকোণাকৃতির মতো জায়গা দিয়ে জালে ঢুকত। যেখান থেকে বল রক্ষা করা গোলকিপারের জন্যও ছিল কঠিন এবং বেকায়দার ব্যাপার। যাই হোক, ফুটবলে যারা মাঠ মাতাতেন তাদের ঐশ্বর্য ছিল অন্যরকম। তারা যখন বল নিয়ে ছুটতেন তখন এক নান্দনিক দৃশ্যের অবতারণা হতো। সেখানে থাকত গতিময়তা, থাকত ছন্দ। দিনে দিনে এ ছন্দই যে হারিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, বিশ্বকাপে নান্দনিক ফুটবল উপহার দেওয়ার মতো বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই অবসরে চলে গেছেন। তা ছাড়া এখন খেলার ধরনেও এসেছে নানামুখী পরিবর্তন। দীর্ঘস্থায়ী নান্দনিকতা দিয়ে মাঠে খেলোয়াড়দের সেই উপস্থিতি আর চোখে পড়ে না। সত্যিকার অর্থে বলের সঙ্গে লেগে থেকে শেষ পর্যন্ত নান্দনিকতা প্রদর্শনের মতো সেই ‘ফিনিশার’ এখন আর নেই।  চ্যানেল আইতে এবার আমরা বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে বেশকিছু আয়োজন করেছি। এর মধ্যে রয়েছে সংবাদের ভিতরে ও বাইরে নিয়মিত মতামত ও বিশ্লেষণ। এ আয়োজনগুলোয় যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাদের মধ্যে একজন গোলাম সরোয়ার টিপু। তিনি ষাট ও সত্তরের দশকে ঢাকার মাঠ কাঁপানো এক ফুটবলার। মোহামেডানে খেলতেন, স্টপার হিসেবে। তখন ডিফেন্ডারকে স্টপার বলা হতো। তিনি কাউকে আঘাত করতেন না। বল নিজের আয়ত্তে রাখতে নিজের পেশিবহুল পাকে দৃঢ়ভাবে দাঁড় করাতেন। সেটিই যেন হয়ে যেত প্রতিরক্ষার এক প্রাচীর। ওই দৃঢ় পায়ের প্রতিরক্ষাকে পরাস্ত করে বল কেড়ে নেওয়া ছিল কঠিন ব্যাপার। বরং ওই পায়ে ধাক্কা খেয়েই প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় ছিটকে পড়ত। সেদিন ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা নেইমারকে দেখলাম তার প্রতিপক্ষ কোস্টারিকার খেলোয়াড়ের হাতস্পর্শেই চিৎপটাং হয়ে পড়ে যেতে। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির মাধ্যমে বার বার দেখানোর ফলে সবাই বুঝেছে সেটি ছিল নিছক অভিনয়। এ নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমগুলোও রসিয়ে রসিয়ে লিখেছে। এখন প্রযুক্তির অনেক উন্নয়ন ঘটেছে, মাঠে থার্ড আম্পায়ার ফোর্থ আম্পায়ার যুক্ত হয়েছে। কোনো কিছুই দর্শকদের জানতে বা দেখতে বাকি থাকে না। এবার বিশ্বকাপ অন্যবারের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম এজন্য, অনেক দর্শকের আশা-ভরসায় পূর্ণ অনেক বড় দলও এবার হতাশ করেছে। খেলায় হার-জিৎ আছে, তার পরও মানুষের আশা-ভরসার একটি গণ্ডি থাকে। সেই গণ্ডিও যেন এবার পেরিয়ে গেল। গতবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিদায় তেমনই একটি ঘটনা। অনেকেই বলেছেন অবিশ্বাস্য। কারও মতে, জার্মানির কাছে এটি আশা করা যায় না। তার মানে বিশ্বাস করেই নিতে হয় যে, দক্ষিণ কোরিয়া ততটাই ভালো করেছে, জার্মানি যতটা খারাপ করেছে। জার্মানির ভক্ত-সমর্থক তো এবার চরমভাবেই হতাশ।

খেলোয়াড়রা মাঠে আসেন ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখাতে, তার দলকে জেতাতে। কিন্তু আজকালকার অনেক খেলোয়াড়ের আচরণ দেখে মনে হয় তার মাঠে আসার উদ্দেশ্য আলাদা। তাদের গ্ল্যামার প্রদর্শনটা খেলার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। চুলের বিভিন্ন রকমের কাটিং আর রঙের ব্যবহার দেখে প্রশ্ন জাগে তারা খেলতে না নিজেকে প্রদর্শন করতে এসেছেন? লক্ষ্য করি, তারা ফুটবলে লাথি দিয়েই পর্দার দিকে তাকান। লক্ষ্য করেন, ক্যামেরা তাকে ধারণ করেছে কিনা। তাহলে খেলোয়াড়ের মনোযোগ অন্য জায়গায় থাকলে, খেলার প্রতি মনোযোগের কী হবে? এখন ‘ফেয়ার প্লে’র কথা বলা হয়। কিন্তু খেলায় এখন ধাক্কাধাক্কি আর অযাচিত আক্রমণের হার দিনে দিনে বাড়ছে। এখন খেলায় প্রায় প্রতি মিনিটেই অপ্রীতিকর এ ধাক্কাধাক্কি আর একজন আরেকজনকে আক্রমণের দৃশ্য দেখা যায়। ফুটবলের চেয়ে যেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের শরীরে আক্রমণেই এখন আগ্রহ অনেক বেশি। আমার লেখাটি পড়ে অনেক দর্শক ব্যথিত হতে পারেন বা আমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। বাল্যবেলা থেকেই আমি ফুটবল-অন্তঃপ্রাণ হওয়ার কারণে এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের খেলাগুলো দেখে আমার যা মনে হয়েছে তা-ই লেখার তাগিদ বোধ করেছি। প্রিয় পাঠক! আপনার কাছেও আমার প্রশ্ন থাকল, বিশ্বের অন্যতম ফুটবলভক্ত দেশের নাগরিক হিসেবে আপনি নিজেই কি কাঙ্ক্ষিত ফুটবল-নৈপুণ্য দেখতে পাচ্ছেন? আপনার প্রিয় দল বা প্রিয় খেলোয়াড়ের কাছে আপনার যা প্রত্যাশা, তা কি পূরণ হচ্ছে? হচ্ছে না। সত্যিকার অর্থে সারা বছর ক্লাব ফুটবল নিয়ে খেলোয়াড়রা যতটা ব্যস্ত থাকেন, সে হিসেবে স্ব স্ব দেশের জাতীয় দলটির জন্য মনোযোগী থাকেন না। তাদের জন্য ক্লাব ফুটবলই অনেক বেশি লাভজনক। বিশ্বকাপের আগে নিজের দেশের দলটির জন্য মাত্র ১৫ দিন থেকে এক মাস সময় তারা দিয়েছেন। এটি বিশ্বকাপের মতো বিশাল আয়োজনের জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। আমি ঢাকার ফুটবলের অনেক উদ্ধৃতি দিয়েছি। এতে অনেকেই হয়তো বলবেন, বাংলাদেশ ষাটের দশকে এত ভালো খেলেও কেন বিশ্বকাপে যেতে পারল না। আমি বলব, আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ, লিয়াজোঁ ও উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ছিল। কিন্তু এর ভিতরেও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেক ভালো খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে যারা বিদেশের মাটিতে অন্য দেশের হয়ে খেলে নৈপুণ্য ও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। আশির দশকের শেষের দিকে আমাদের মুন্না, আসলাম ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে খেলতে গিয়ে সাফল্যের নজির গড়েন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের স্বপ্ন নিয়ে নিজেদের ফুটবল দলকে গড়ে তুলতে পারিনি। ভারত ঠিকই নিজেকে প্রস্তুত করছে। চীন চেষ্টা করে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। পৃথিবীজুড়েই ফুটবল ও ক্রিকেট নয় শুধু সব খেলাই বাণিজ্যিক রূপ পাচ্ছে। মনে হচ্ছে, যতটা না খেলা, তার চেয়ে বেশি টেলিভিশন শো। ক্রিকেটের পর ফুটবলও বাণিজ্যিক দিকে এগিয়ে যাওয়ার কারণে মান শেষ হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। একজন ফুটবলভক্ত হিসেবে ষাট থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত স্টেডিয়ামে গিয়ে যেমন খেলা দেখেছি, একইভাবে যখন টেলিভিশনে বিশ্বকাপ প্রচার শুরু হলো সেই ১৯৮৬ থেকেই নিয়মিত বিশ্বকাপ দেখে আসছি। এখনো রাত জেগে প্রতিটি খেলাই দেখার চেষ্টা করি। দেখতে বসেই নানাভাবে হতাশ হচ্ছি। মনে হচ্ছে প্রতি চার বছর পর পর একটি নির্দিষ্ট হারে ফুটবল তার নৈপুণ্য হারাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ফসল

লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com