ঋতুচক্রে গরমকাল হলেও, ফলের বিবেচনায় জ্যৈষ্ঠ মাস হলো মধুমাস। কারণ মধুমাসে এই মাসে বিভিন্ন ধরনের রসাল ও মিষ্টি, সুগন্ধি ফল উঠতে শুরু করে। এক কথায় পুরো গ্রীষ্মকালই যেন এক ফলের মহোৎসব।
নানা ফলের রয়েছে নানান পুষ্টিগুণ। ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ফাইবারসহ নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান। তাই সুস্থ থাকতে হলে ফল খেতে হবে নিয়মিত। তবে বয়স, শারীরিক অবস্থা, রোগ ভেদে নিয়মিত ও সঠিক মাত্রায় ফল খেলে তা শারীরিক অনেক রোগব্যাধির ক্ষেত্রেও উপকারী। আবার যাদের ডায়াবেটিস ও কিডনির রোগ রয়েছে, তাদের ফলমূল খাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয়।
আবার ফলের রস বানিয়ে খাওয়ার চেয়ে গোটা ফল খাওয়া বেশি উপকারী। কেননা ফলের রসে এর খোসা ও অন্যান্য অংশ বাদ পড়ে, ফলে বাদ পড়ে যায় কিছু গুণাগুণও। আঁশের পরিমাণও যায় কমে। অন্যদিকে ভিটামিন সম্পূর্ণ পেতে তাজা ও কাঁচা ফল খোসাসহ খাওয়াই ভালো। বেশি দিন ফ্রিজে রাখলে অনেক সময় ফলের গুণাগুণ কিছু নষ্ট হয়। তাই ফ্রিজে রাখলে মুখ বন্ধ পলিথিন ব্যাগে রাখা উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, ফলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি রান্না করতে হয় না। আর সব ফলের মধ্যেই পানির পরিমাণ বেশি থাকে। সেই কারণে গরমের সময় শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে এটি সহায়তা করে।
তবে ফল ও সবজি মানেই স্বাস্থ্যকর খাবার- প্রচলিত ধারণা এমন হলেও টক, মিষ্টি বা সাধারণ স্বাদের ফল একসাথে খেলে নানান সমস্যা হতে পারে। এছাড়া ফল খাওয়া নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা ধারণা। নিম্নে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:
যেকোনো ফল ইচ্ছামতো খাওয়া
পুষ্টিবিদ ড. খালেদা এ বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেন, ফলমূল শরীরের জন্য উপকারী হলেও সব ফল ইচ্ছামতো খাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ বয়স, অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরিমিতভাবে ফল খেতে হবে। যেমন ডায়াবেটিস রোগীদের মিষ্টি ফল হিসাব করে খেতে হবে, তেমনি কিডনি রোগীদের ফলমূল বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।
কিডনি রোগীদের অনেক সময় বেশি পটাশিয়ামযুক্ত ফল খেতে নিষেধ করা হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ভালো। এমনিতে পটাশিয়াম রক্ত চলাচল বাড়ায় ও হৃদরোগীদের জন্য উপকারী। শর্করাযুক্ত ফলমূল ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই বলে ডায়াবেটিসের রোগীদের ফল খাওয়া একেবারে নিষেধ নয়। আমড়া, পেয়ারা, জাম্বুরা, জাম, বরই ইত্যাদি বেশ খানিকটাই খাওয়া যাবে। মিষ্টি ফলগুলো খেতে হবে হিসাব করে।
ফল খেয়ে পানি খাওয়া ঠিক নয়
ড. খালেদা বলেন, শুধু ফল নয়, সব ধরনের খাবার খাওয়ার পরে সাথে সাথে পানি খেতে না বলা হয়। এর কারণ হলো- পেটের ভেতরের এনজাইম যেন সেটাকে ভেঙে হজমে সহায়তা করে। ফলে এমনিতেই ৭০% পানি থাকে। তখন সাথে সাথে পানি খেলে সেটা হজমে কিছুটা সমস্যা তৈরি করে। তখন এনজাইম ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। সেই কারণে ফলমূল খাওয়ার পর পর পানি খেতে না বলা হয়।
রাতের বেলায় ফল না খাওয়া ভালো
পুষ্টিবিদ অধ্যাপক ড. খালেদা বলেন, আগে যেভাবে বলা হতো- রাতে ফল খাওয়া যাবে না, এখন আর সেভাবে বলা হয় না। তবে কিছু ফল খেয়ে হজম হতে সময় লাগে। ফলে সেসব ফল খেয়ে শুয়ে পড়লে অনেকের অস্বস্তি ভাব হতে পারে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু রাতে যে একেবারে ফল খাওয়া যাবে না, তা নয়। বিশেষ করে যারা অনেক রাত জেগে কাজ করেন, তারা অবশ্যই খেতে পারেন।
আনারস খেয়ে দুধ খাওয়া যাবে না
ড. খালেদা বলেন, এটার বৈজ্ঞানিক একটা ব্যাখ্যা রয়েছে। আনারস বা টকজাতীয় কিছু জিনিস খেয়ে দুধ খেলে সেটা পেটে গিয়ে দুধটাকে ভেঙে কঠিন এক ধরনের ছানা তৈরি করে। ফলে সেটা হজম হতে অনেক সময় লাগে। এই কারণে আনারসের সাথে দুধ খেতে না বলা হয়।
ফলের মিষ্টি শরীরের জন্য খারাপ নয়
এটি একটি ভুল ধারণা বলে জানান অধ্যাপক খালেদা। তিনি বলেন, ফলের মিষ্টি চিনির মতো ক্ষতিকর নয়, কিন্তু এটিও শরীরে মিষ্টির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই হিসাব করে মিষ্টি ফল খেতে হবে। সাধারণ মানুষদেরও অতিরিক্ত ফল খাওয়া ঠিক নয়।
ফল-সবজির সাথে লেবুর রস আর লবণ ছিটিয়ে দিলেই স্বাস্থ্যকর
খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ফ্রিজে যত ফল-সবজি আছে সব কেটে, অল্প লেবুর রস আর লবণ ছিটিয়ে দিলেই তা স্বাস্থ্যকর হয়ে যাবে’- তবে এমন নাও হতে পারে। কারণ এতে হজমের সমস্যা হতে পারে। সালাদ বানানোর ক্ষেত্রে ফলকে ভাগ করতে হবে টক, মিষ্টি ও পানসে এই স্বাদ অনুযায়ী। ফল ও সবজি একত্রে মেশানো উচিত নয়। নির্দিষ্ট কিছু ফলও একত্রে মেশানো উচিত নয়। বিষয়টা নির্ভর করবে বিভিন্ন ফল হজম হওয়ার গতির উপর। তাই উল্টা-পাল্টা উপকরণ মিশিয়ে সালাদ তৈরি করলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
ফলের সাথে সবজি নয়
ফল ও সবজি হজম হয় ভিন্নভাবে। ফল হজম হয় দ্রুত। অনেক পুষ্টিবিদ বলেন, পাকস্থলিতে পৌঁছানোর আগেই ফল অর্ধেক হজম হয়ে যায়। এছাড়াও ফলে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে যা সবজি হজম প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এই কারণে কমলার সাথে গাজর মেশানো উচিত হবে না। কারণ এতে বুক জ্বালাপোড়া ও পিত্তরসের প্রবাহ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া শ্বেতসারজাতীয় ফলের সাথে প্রোটিন-সমৃদ্ধ ফল নয় মেশানোও ঠিক নয়। ‘স্টার্চ’ বা শ্বেতসারজাতীয় ফলের মধ্যে কাঁচাকলা, ভুট্টা, আলু, পানিফল। এদের সাথে প্রোটিনসমৃদ্ধ ফল ও সবজি যেমন- কিশমিশ, পেয়ারা, পালংশাক, ব্রকলি ইত্যাদি কখনো মেশানো উচিত নয়। কারণ প্রোটিন হজম করতে শরীরে চাই ‘অ্যাসিডিক বেইস’ আর শ্বেতসারজাতীয় খাবার হজম করতে চাই ‘অ্যালকালাইন বেইস’।
আয়ুর্বেদ অনুসারে, রাতে ফল খেলে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৩-৪ ঘণ্টা আগে খেতে হবে। আর ভরপেট খাওয়ার পর পরই ফল খাওয়া উচিত না। খাওয়ার অন্তত ১ ঘণ্টা পর ফল খাওয়া উচিত।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন