ফল
পেয়ারার চাষে পুষ্টি অর্থ দুটোই আসে
লেখক
নিজস্ব প্রতিনিধিবকুল হাসান খান
পেয়ারা ফলটি স্বাদ ও আকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এ ফলের স্বাদের পরিধি মিষ্টি থেকে অম্ল টক পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া এ ফলের কস্তরির মতো গাঢ় গন্ধ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতে দেখতে পাওয়া যায়। এ রসালো ফলটির উপরের চামড়াটি দেখা যায় পাতার সবুজ রঙ্গের বলয় দিয়ে ঘেরা রয়েছে। এজন্য এ ফলকে বাংলাদেশের আপেল বলা হয়। এ ফলের আকার কখনো গোলাকৃতি আবার কখনো ডিম্বাকৃতি হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। পেয়ারার আকার সাধারণত ৪ থেকে ১২ সেঃ মিঃ পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে থাকে।
এ ফলের বাহিরের অংশের রং হালকা সবুজ থেকে গাঢ় হলূদ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া পেয়াারার ভিতরের শাঁসযুক্ত মাংসাল অংেশের পরিমাণ বিভিন্ন জাতে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এর রংও কোনো ফলে সাদা বা হলুদ আবার কোনো ফলে লাল বা গোলাপী হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। এ ফলের বীজগুলো শাঁসের সাথে খুবই দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকে। পেয়ারা ফলের ভিতরে প্রচুর পরিমাণে হলুদাভ শক্ত বীজ থাকে। এসব বীজের আকার ৩ থেকে ৫ মি. মি. এবং এর সাথে একটি বাকানো ভ্রুণও দেখতে পাওয়া যায়।
পেয়ারা ফলটির মাংসাল অংশে এবং বীজে সাধারণত শতকরা ৮০ ভাগ পানি, এক ভাগ আমিষ, ১৩ ভাগ শ্বেতসার এবং প্রায় ৬ ভাগ আঁশ থাকে। এছাড়া পেয়ারা ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। এতে ভিটামিন-সি পাওয়া যায় ১৪৬ থেকে ৪৯২ মিঃ গ্রঃ পর্যন্ত যার গড় পরিমান প্রায় ২৬০ মিঃ গ্রাম। ভিটামিন-সি ছাড়াও পেয়ারাতে ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম, লোহা এবং ফরফরাস ও অনেক পাওয়া যায়। পেয়ারা ফলের ভিতরে শাঁসালো অংশ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পেকটিন। তা দিয়ে বীজগুলো ছাড়ানোর পর এ থেকে জ্যাম, , জেলি এসব তৈরি করা যায়।
এছাড়া পেয়ারার পাতার অনেক ভেষজগুণ ও রয়েছে। পেয়ারা পাতা সাধারণত ডায়রিয়া রোগের প্রতিষোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেক সময় পেয়ারা পাতা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রং শিল্পেও ব্যবহৃত হয়। পেয়ারার বৈজ্ঞানিক নাম Psidium guajava এবং এ ফলটি Myrtaceae পরিবার ভুক্ত। পেয়ারা আমাদের গ্রীষ্ম মন্ডলীয় এলাকা বিশেষ করে বাংলাদেশের একটি অন্যতম জনপ্রিয় ফল। তবে বাংলাদেশে উৎপাদিত ফলসমূহের মোট আবাদকৃত জমি ও মোট উৎপাদনের পরিমান বিশ্লেষণে পেয়ারার অবস্থান রয়েছে পঞ্চম স্থানে। বিগত কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষ পুস্তিকা- থেকে দেখা যায় বাংলাদেশে পেয়ারার আবাদকৃত জমির পরিমাণ প্রায় ২৪.৫১৫ হেক্টর এবং এর সর্বমোট উৎপাদন হয় ৪৫.৯৯০ মেট্রিক টন।
উৎপত্তি ও বিস্তার: আমেরিকা মহাদেশের উষ্ণ তাপযুক্ত এলাকা পেয়ারার উৎপত্তিস্থান বলে চিহ্নিত। সাথে সাথে অষ্ট্রেলিয়ার উষ্ণ অঞ্চলেও বিভিন্ন জাতের পেয়ারা হয়ে থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, আমেরিকা মহাদেশ থেকে প্রাচীনকালের নাবিকদের মাধ্যমে আমাদের দেশে পেয়ারা চাষের বিস্তার ঘটে থাকে। বাংলাদেশসহ ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে পেয়ারার উৎপাদন হয়ে থাকে। এখন বাংলাদেশের সব জেলাতেই পেয়ারার আবাদ হয়। তবে এর মধ্যে বরিশাল, চট্টগ্রাম গাজীপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার উন্নতজাতের পেয়ারার ফলন বেশি হয়ে থাকে।
জাতঃ পেয়ারার জাত বিচারকালে যে বিষয়গুলোকে মুখ্য উপাদান হিসেবে ধরা হয় তাহলে বিভিন্ন গাছের বৃদ্ধি, ফলের উপাদন এবং এর সার্বিক গঠন প্রণালী। দেশে বিদেশে পেয়ারার প্রচুর জাত রয়েছে। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে যেসব উন্নতজাতের আবাদ হয়ে থাকে, তা হচ্ছে কাঞ্চন নগর, স্বরূপকাঠি, মুকুন্দপুরি, লালশাঁক, কাজি পেয়াারা, বারি পেয়ারা-২, ইপসা পেয়ারা এসব। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএ আর আই) উদ্ভাবন করেছে কাজি পেয়ারা এবং বারি পেয়ারা-২ জাতটি এবং বঙ্গবন্ধু এস, এম, আর কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় (ইপসা) সালনা উদ্ভাবন করেছে ইপসা পেয়ারা জাতটি। এসব উন্নতজাতের পেয়ারা দেশের বিভিন্নস্থানে জাতভেদে খবই ভাল ফলন দিয়ে থাকে। এর মধ্যে এজন্য কাঞ্চন নগর জাতটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য আবাদ করতে সুপারিশ করা হয়েছ্ েএছারা কুমিল্লা ও বি, বাড়িয়া এলাকায় আবাদ করার জন্য স্বীকৃত দেয় হয়েচে মুকুন্দপুরি জাতকে। অপরদিকে বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলে চাষ করতে বলা হয়ে:েছ স্বরূপকাঠি জাতটিকে। তবে বাংলাদেশের সব এলাকাতেই বিশেষ করে লবণাক্ত অঞ্চল বাদে বি এ আর আই উদ্ভাবিত পেয়ারার জাত দুটি (কাজি পেয়ারা ও বারি পেয়ারা-২) আবাদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
পেয়ারার জাতের গুণাবলি ও উৎপাদনঃ বাংলাদেশের উন্নতজাতের পেয়ারার গুণাবলি এবং উৎপাদন বৈশিষ্ট্য এ দেখানো হলো।
১। কাঞ্চননগর ১০৮.৬ ১৩১০ ১৪২.২৭
২। মুকুন্দপুরি ১০০.৮ ১০৯৫ ১১০.৩৭
৩। স্বরূপকাঠি ১১৬.৬ ১২২০ ১৩৬.১৫
৪। কাজি পেয়ারা ৩৬৬.৬ ৩৪৭ ১২৭.২২
৫। বারি পেয়ারা-২ ২৫০.১ ৪০৫ ১০১.২৫
মাটি ও আবহাওয়াঃ পেয়ারা ফলটি বেশ জলবায়ু সহনশীল। এছাড়াও এ ফলের খরা সহিষ্ণুতা ও লবনাক্ততা সহ্য শক্তি রয়েছে। পানি নিকাশের উত্তম ব্যবস্থা যুক্ত উর্বর দো-আশ পলিমাটি পেয়ারা চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
সারণি-১ঃ উন্নতজাতের পেয়ারার গুণাবলি ও উৎপাদন
জলাবদ্ধতা পেয়ারার আবাদের জন্য ক্ষতির করণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া এ ফলটি অম্ল বা ক্ষার এ উভয় ধরনের মাটিতেই ভাল ফলন দিয়ে থাকে।
উষ্ণ বা নাতিশীতোষ্ণ উভয় অঞ্চলেই পেয়ারার আবাদ ভাল হয়ে থাকে । এছাড়া পেয়ারা ফলটি সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে শুরু করে প্রায় ১৫০০ মিটার উচ্চতায়ও আবাদ করা যায়। যেসব এলাকায় বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ১০০০ মি. মি. থেকে ২৫০০ মি.মি. পর্যন্ত সেসব জায়গা এমনকি ৩৫০০ মি. মি. থেকে ২৫০০ মি.মি পর্যন্ত সেস্ব জায়গা এমনকি ৩৫০০ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয় এমন এলাকাতেও পেয়ারার আবাদ হয়ে থাকে। এছাড়া পেয়ারার আবাদের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা থাকতে হবে ২৩ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগেডের মধ্যে। তবে পেয়ারার চারা বা ছোট ছোট গাছ খরা ও ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রতি খুবই সংবেদনশীল। পেয়ারা ফল গছের ফুল ধরা এবং ফলের বৃদ্ধির সময় শুনো আবহাওয়ার প্রয়োজন হলেও, ফলের বৃুদ্ধকালে তাপমাত্রার আধিক্যতা আবার কখনো ফল ঝরার কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। এছা ফল বৃুদ্ধর প্রাক্কালে অনেক সময় আর্দ্র আবহাওয়ায় ফলের মিষ্টতাও হ্রাস পায়।
বংশ বিস্তার: পেয়ারার বীজ বা কলমের চারা ঊভয় পদ্ধতিতেই গাচের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। বীজ থেকে যেসব গাছ হয় , সেগুলেঅতে সাধারণত দেরীতে ফুল আসে। এছাড়া এ সব রোগে বিভিন্ন আকারের বা বিভিন্ন ধরনের ফল ধরে। তবে এ ধরনের গাছগুলো বেশির ভাগই দীর্ঘজীবী হয়ে থাকে। সাধারণত বীজতলায় বা পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদনের জন্য চলতি বৎসরের সম্পূর্ণ পরিপক্ব বীজ ব্যবহার করতে হয়। এরপর এসব চারা গাছে যখন ৬ থেকে ৮টি পরিপক্ব্ পাাতা থাকে, তখন তা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।
গাছে কলম তেরির মাধ্যমে চারা করা হলে সেসব গাছের মাতৃ গুণাগুণ পুরোপুরি বজায় থাকে। এছাড়াও কলমের গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসে, আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় আবার অপরদিকে গাছ ছোাট থকে। বেশ কয়েকটি কলম পদ্ধতিতে পেয়ারার চারা ুৎপাদন করা যায়। সেগুলো হচ্ছে-
ক) কাটিং বা অঙ্গচ্ছেদন পদ্ধতি- এটি সবচেয়ে সহজ বা সরল পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সব আবহাওয়াতেই গাছ থেকে কাটিং করা সম্ভব। তবে এর উন্নত কৌশল বের হবার কারণে বর্তমানে এ পদ্ধতিটি খুব বেশি কার্যকর নয়।
খ) লেয়ারিং বা গুটি কলম পদ্ধতি- এ পদ্ধতির মাধ্যমে মাতৃগােছের ডালে শিকড় গজানো হয় এবং তা সময়মত আলাদা করে অন্যত্র রোপণ করা হয়। পেয়ারার আবাদের জন্য এ পদ্ধতিটি বর্তমানে খবই জনপ্রিয়। সাধারণত বর্ষাকারৈই অন্যান্য সমেেয়ের চেয়ে এভাবে চারা উৎপাদনের জন্য উত্তম।
গ) গ্রাফটিং বা জোড়কলম পদ্ধতি- জোড়কলম পদ্ধতিটি ব্যবহার করে বর্তমানে আরো একটি উন্নত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিটি ব্যবহার করে এ থেকে প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগ সুফল পাাওয়া যায়। তাবে এসবের মধ্যে ক্লেফট গ্রাফটিং করা খুব বেশি সহজ ও সরল।
চাষ পদ্ধতি- জমিতে চারা রোপণের জন্য খুবই ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। এরপর চাষ করা জমিতে পেয়ারার চারা রোপনের জন্য গর্ত বা গিট তৈরি করতে হয়। প্রতিটি গর্ত থেকে গর্তের দুরত্ব থাকবে ৫-৬ মিটার। এর পর প্রতিটি গর্তের চওড়া রাখতে হবে ৬০ সে. মি. হিসেবে এবং গভীরতা রাখতে হবে ৪৫ সে; মিটার করে। চারা রোপণের জন্য এভাবে গর্ত তৈরি করে নিয়ে এসব গর্ত প্রায় ১৫-২০ দিন পর সার মিশানো মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। প্রতিটি গর্ত এসব সার সহ মাটি দিয়ে ভরাট করার প্রায় ১০ ১৫ দিন পর এতে চারা রোপণ করতে হয়। এসব গর্তে যেসব সার মিশানো মাটি দেয়া হয়। তাহলো ১০-১৫ কেটি গোবর, ১-২ কেজি খৈল এবং ০.৫ কেজি পটাশ। পেয়ারার চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হচেছ বর্ষার শুরতে অর্থাৎ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে তবে চারা শ্রাবণ মাসে পর্যন্তও রোপণ করা যায়।
জৈব ও রাসায়নিক সার পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, পেয়ারা গাছে জৈব সারের সাথে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হলে ভাল ফলন দিয়ে থাকে। গাছে সার প্েরয়াগ করা হলে শুধুমাত্র পেয়ারার উৎপাদনই বৃদ্ধি হয় না এ সাথে ফলের গুণাগুণও উন্নত করে। প্রতি বছরেই পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ করতে হয়। তবে এসব সার দু কিস্তিতে প্রতি বছরে দু’বার হিসেবে প্রতি গাছে প্েরয়াগ করতে হবে। বছরে এভাবে প্রয়াগের নিয়ম হচ্ছে প্রথম অর্ধেক সার প্রয়োগ করতে হবে চৈত্র -বৈশাখ মাসে এবং বাকী অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে শ্রাবণ ভাদ্র মাসে। প্রতি গাছে সার প্রয়াগের আগে গাছের চার পাশে কোদাল বা ছোট লাঙ্গল দিয়ে জমি কুপিয়ে নিতে হবে। তারপর এভাবে শিকড়ের চারপাশের মাটির সাথে এ সার মিশিয়ে মাটিতে সেচ দিয়ে দিতে হবে। দসার ব্যবহারের বাৎসরিক মাত্রাঃ বছর প্রতিটি পেয়ারা গাছে সুপারিশকৃত জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার।
পরিমান সারণি-২ বছরওয়ারি জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগমাত্রা
উৎস: প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, জুলাই/ ২০০২, সমম্বিত উদ্যান ও পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প, খামার বাড়ি।
পেয়ারা গছে থেকে যে বছর নতুন শাখা গজায় তাতেই ফু-ফল ধরে। এজন্য গাছে যেনো নতুন গাল ঠিকতো গজায় এবং সেসাথে এসব ডালে যাতে বেশি বেশি ফুল আসে সেদিকে লক্ষ্য রাকতে হবে। তবে ফুল ধরার অন্তত একমাসে আগে গাছে সার প্রয়াগ করতে হয়।
পানি সেচ ঃ জমিতে চারা রোপণের প্রথমদিকে পেয়ারা গাছে ৮-১০ বার সেচ দিতে হয়। পেয়ারা গছে চৈত্র -জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রতি সপ্তাহেই এ সেচ দেয়া প্রয়াজন। এভাবে সেচ দেয়া হলে এতে গাছের ফল ঠিকমতো ঘরে এবং সাথ সাথে ফল ঝরাও রোধ হয়। গাছে এভাবে সেচ দেয়া হলে শীত মৌসুমে পেয়ারা ফল আকারেও বড় হয়।
পোকামাকড় ও এর দমন: পেয়ারা গাছ ও ফল পোকা মাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে মাছি পোকা ফলের গা ছিদ্র করে সেখানে ডিম পাড়ে। পরে ডিম থেকে মাছির কীড়া পেয়ারা ভিতরের অংশ খেয়ে ফেলে। এভাবে মাছি আক্রান্ত ফলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার হিসেবে কিটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করা হলে এ পোকা দমন করা যায়। এ জন্য যেসব কীটনাশক ছিটানো হয়, তাহলো রক্রিয়ন. পারফেকথিয়ন মার্শাল/ এজেড্রিন/ নুভাক্রন এসব। মিলিবাগের আক্রমণে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়া পাতাও ঝরে যায়। এ পোকা দেখতে অনেকটা সাদা তুলার মত এরা পাতার সাথে জড়িয়ে থকে এবং এ থেকে রস চুষে খায়। এ পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি লিটার করে ডায়াজিনন ৬০ ইসি ভালভাবে স্প্রে করতে হয়।
রোগবালাই দমন: পেয়ারা গাছ পোকা মাকড় ছাড়া রোগবালাই দিয়েও আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ্যান্থ্রাকনোজ পেয়ারা গাছের একটি মারাত্মক রোগ। এ রোগে গাছ আক্রান্ত হলে ডায়াথেন এম ৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫৪ গ্রাম অথবা টিল্ট প্রতিলিটার পানিতে ২ মিলি লিটার হারে ¯েপ্র করা হলে এ রোগ থেকে গাছকে বাঁচানো যায়। এছাড়া উইল্টা ঢলে পড়া রোগেও অনেক সময় পেয়ারা গাছ আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে গাছের পাতা বাদামি রং হয়ে পুরো গাছ ঢলে পড়ে। এ ছাড়া কান্ডের রং এর পরিবর্তন হয়। পরে আস্তে আস্তে গাছ মারা যায়। এটা একটা মাটি বাহিত রোগ। এ রোগের এখনো কোন ভাল দমন ব্যবসথা নেই। এজন্য গাছ এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে তা তুলে নষ্ট করে ফেলা ভাল।
গাছে ফুল ধরার নিয়ম: পেয়ারা গাছে সাধারণত বছরে দু’বার ফুল ধরে। একবার ধরে শ্রাবণ মাসে এবং আরেকবার ফুল ধরে পৌষ মাসের দিকে। বছরে পেয়াারা গাছে দু’বারই ফুল ধরে তবে এসময় গাছের পরিচর্যা সঠিকভাবে করতে হয়।
গাছের ফল হ্রাস করা: পেয়ারার অনেক জাত যেমন কাজি পেয়ারা বারি পেয়ারা-২ ধরনের জাতগুলো আকারে অনেক বড় এবং ওজনেও বেশি হয়। তাই গাছে এসব পেয়ারা ধরলে সময় মতো গাছ থেকে কিছু পেয়ারা ফেলে দিতে হয়। এতে পেয়ারার আকার বড় হবে। এছাড়া সে সাথে অতিরিক্ত ফল ধরার কারণে গাছের ভেঙ্গে পড়া এবং গাছ বাকানো রোধ হবে।
গাছে ফল বেঁধে দেয়া: পেয়ারা ফলকে রোগ বালাই বা পোকা মাকড় থেকে রক্ষা করতে হলে ফলকে প্রাথমিক অবস্থায়ই বেঁধে দিতে হয়। এতে ফল তার সুবিধামতো ভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয। সাধরণত বাদামি রংয়ের কাপড় দিয়ে পেয়ারা ফলকে এভাবে বেঁধে রাখতে হয়।
পেয়ারা ফল সংগ্রহ: সাধারণত পেয়ারা পাকার সময় ফলের রং এর পরিবর্তন হয়। এসব ফলের রং হলদাভ সবুজ থেকে হলুদ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এধরণের রং ধরার সময়েই গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
পেয়ারার উৎপাদন: পেয়ারা চারা রোপণের ১-২ বছরের মধ্যেই গাছে ফল দিয়ে থাকে। এছাড়া পেয়ারা প্রায় ১৫-২০ বছর পর্যন্ত গাছে ভাল ফলন দিয়ে থাকে। পেয়ারা গাছে ফুল আসার পাঁচ মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়। ফল সংগ্রহের সময় লক্ষ রাখতে হবে যাতে ফল মাটিতে না পড়ে। এতে গাছ থেকে ভাল ফল সংগ্রহ করা সহজ হয়।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলোডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’
সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।
কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।
সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় ফল কাঁঠালের জ্যাম, চাটনি ও চিপস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহের প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। তাঁরা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মোট ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
গত শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।
কর্মশালায় ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠাল স্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশ কাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।’
কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মুখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।
ফল
কমলা চাষে সার ব্যবস্থাপনা, সেচ, আগাছা ব্যবস্থাপনা ও ফসল তোলা- দা এগ্রো নিউজ
লেখক
নিজস্ব প্রতিনিধিসার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।
ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন