ফুল
পাখি নামের ফুল
লেখক
প্রথম আলোসবুজ পাতার আড়ালে বাদুড়ের মতো উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে পাখি। তবে এই পাখি পক্ষীকূলের কেউ নয়, এটি একটি ফুলের নাম। পাখিফুলের বৈজ্ঞানিক নাম (Brownea Coccinea)। জন্মস্থান ভেনেজুয়েলায়। তাই এর প্রচলিত নাম রোজ অব ভেনেজুয়েলা। প্রজাতিটি গায়ানা, ভেনেজুয়েলা, ব্রাজিল এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর স্থানীয়। পাখি ফুল আমাদের দেশে বেশ দুর্লভ। জানা মতে, ঢাকার সবচেয়ে পুরোনো গাছটি আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের পাশে। বর্তমানে রমনা পার্ক, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানে নতুন কিছু গাছ লাগানো হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরসহ চট্টগ্রামের বৌদ্ধ বিহারগুলোতেও এই গাছ চোখে পড়ে।
-
উজ্জ্বল লাল রঙের ফুলগুলো ফোটে বসন্তকালে। তবে এই ফুলের কোনো গন্ধ নেই।
-
পারিজাত মান্দার নামের অপর একটি ফুল অনেক বছর ধরেই আমাদের প্রকৃতিতে আছে। পারিজাত মান্দার নামের অপর একটি ফুল অনেক বছর ধরেই আমাদের প্রকৃতিতে আছে।
-
গাছের কচিপাতা পাখির লেজের মতো ঝুলে থাকে বলেই হয়তো ফুলটির নাম পাখিফুল।
-
পাখিফুল মূলত চিরসবুজ গাছ, যা ৫ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কাণ্ড ও ডালপালার দিক থেকে এটি কিছুটা অশোক গাছের মতো। এ কারণে অনেকে ফুলটিকে বিলাতি অশোক বলেন।
-
ফুল ফোটার অপেক্ষায়।
-
কুঁড়ি অবস্থায় এটি গুটি আকৃতির হয়। এই কুঁড়ি ফেটে একগুচ্ছ ফুলের কলি বেরিয়ে আসে। এরপর কলি থেকে পাপড়ি ছড়িয়ে পূর্ণ রূপ পায় ফুলটি।
-
পাবনার শালগাড়িয়া হাসপাতাল সড়কের পাশে রয়েছে এই ফুলের গাছ। ২০০২ সালে ড. ইফতেখার মাহমুদ এই দুর্লভ ফুলগাছ নিজের বাসভবনে লাগান। পাবনায় পাখিফুলের একমাত্র এই গাছ দেখার জন্য অনেকেই এখানে আসেন।
-
একসঙ্গে ৩০ থেকে ৪০টি ফুল রঙ্গনের মতো থোকা ধরে ফুটে থাকে। সব ফুল মিলিয়ে ফুলের যে গুচ্ছবদ্ধ রূপ, তাকেও একটি পরিপূর্ণ ফুল মনে হয়।
-
নিসর্গী বিপ্রদাশ বড়ুয়ার ‘গাছপালা তরুলতা ও নগরে নিসর্গ’ বইয়ে ফুলটিকে ‘পাখি ফুল’ (Brownea coccinea) নামেই উল্লেখ করা হয়েছে।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
-
পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি
-
দেশের কৃষিতে নতুন সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে
শীতে গাঁদা ফুলের চাষ
শীতকালের ফুলের মধ্যে গাঁদা অন্যতম। বিবাহ, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, গৃহসজ্জা, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও শহীদ দিবসসহ সব অনুষ্ঠানেই গাঁদা ফুলের বিকল্প নেই। কেটে যাওয়া ত্বকের রক্ত পড়া বন্ধ করতে, কাটা ঘা শুকাতে ও জীবাণুনাশক হিসাবে গাঁদা পাতার রস খুব উপকারী।
জাতঃ
চাইনিজ , রাজগাঁদা, আফ্রিকান ও ফরাসি জাতের গাঁদা আমাদের দেশে বেশি চাষ হয়। রঙ ভেদে গাঁদার জাত হচ্ছে হলুদ, লাল, কমলা, গাঢ় খয়েরি, লাল হলুদের মিশ্রণ ইত্যাদি। আফ্রিকান জাতের গাছ সোজা ও লম্বা, ৩০-১০০ সেমি লম্বা হয়। ফুল কমলা, হলুদ ও গাঢ় খয়েরি রঙের ছিটা দাগযুক্ত হয়। ফরাসি গাঁদার গাছ খাট ও ঝোপালো, ১৫-৩০ সেমি লম্বা হয়। ফুল আকারে ছোট, প্রচুর ধরে ও রঙ লাল। কমলা সুন্দরীর গাছ খুব শক্ত। ফুল গাঢ় কমলা। শাখা প্রশাখা বেশি হওয়ায় ফুল বেশি ধরে। ফুলের আকার ৪.৫ থেকে ৫ সেমি। অনেক দিন পর্যন্ত ফুল ধরে। প্রতি গাছে ৫৫-৬০ টি ফুল পাওয়া যায়। রোগ সহনশীল।
চারা তৈরিঃ
শাখা কলম ও বীজের মাধ্যমে গাঁদা ফুলের চারা তৈরি করা যায়। নভেম্বরে বীজতলায় বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করতে হয়। সারা বছর চাষ করা গেলেও শীতকালে ফলন ভাল হয়। শাখা দিয়ে কলম করার জন্য গাঁদা গাছের শাখা ৮-১০ সেমি লম্বা করে কাটতে হবে। বীজতলায় শাখা ডালের টুকরাগুলো দু একটি পর্বসহ রোপন করতে হবে। উপযুক্ত সময় হচ্ছে মার্চ মাস। নিয়মিত সেচ দিয়ে বীজতলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ২০-২৫ দিনের মধ্যে পাতা গজায়।
জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ
উঁচু, সুনিষ্কাশিত দো আঁশ ও উর্বর মাটি গাঁদা চাষের উপযোগী। চার পাঁচবার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে। টবে বা পাত্রে চাষ করলে তিন ভাগ দো আঁশ এঁটেল বা দো আঁশ মাটির সাথে একভাগ গোবর মিশিয়ে সার মাটির মিশ্রন তৈরি করতে হবে। এই সার মাটি টবে বা পাত্রে বা পলিব্যাগে ভরতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
প্রতি শতক জমিতে পঁচা গোবর, ৪০ কেজি ইউরিয়া ২ কেজি, টিএসপি ৩ কেজি এবং এমওপি ২ কেজি সার প্রয়োজন । এ সারগুলো মাটির সাথে মিশাতে হবে।
চারা রোপনঃ
বীজ থেকে অথবা শাখা থেকে তৈরি একমাস বয়সের চারা রোপন করতে হয়। ডিসেম্বর মাসে চারা রোপন করতে হয় । সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০-৫০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত ৩০-৪০ সেমি হওয়া উচিত। চারা উৎপাদন না করে সরাসরি বীজ থেকেও গাঁদা চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে প্রতি শতকে ৫-৬ গ্রাম বীজ জমিতে বপন করতে হবে।
পরিচর্যাঃ
মাটি শুকনোর আগেই সেচ দিতে হয়। গাছের গোড়াই পানি জমলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। আগাছা জন্মালেই নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। গাঁদা ফুলে রোগ বালাই তেমন হয়না। তবে জাব পোকা আক্রমণ করলে ২ মিলি ম্যালাথিয়ন ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। গাছ বড় হলে খুটির সাথে বেধে দিলে গাছ সোজা থাকে। এতে ফুলের গুনগত মান ভাল হয়। গাছে ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য ফুল আসার একমাস আগে গাছের ডগা ভেঙে দিতে হবে। একটি শাখায় ঘন হয়ে অনেকগুলো ফুল বা কুঁড়ি ধরলে উপরের একটি বা দুইটি রেখে বাকিগুলো ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে ফুল বড় হয়। চারা রোপনের ১৫ দিন পর প্রতি শতাংশে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করা যেতে পারে। চারা মারা গেলে সেখানে চারা রোপন করা উচিত। চারা ঘন হলেও পাতলা করতে হবে।
ফুল সংগ্রহ ও ফলনঃ
ফুল কাঁচি বা ব্লেড দিয়ে বোটাসহ কেটে সংগ্রহ করতে হবে। খুব ভোরে ফুল তুলতে হয়। চারা রোপনের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে ফুল সংগ্রহ করা যায়। গড়ে একটি গাছে জাত ভেদে ১৫-৪০ টি ফুল ধরে।
জাতঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চন্দ্রমল্লিকা ফুলের বারি চন্দ্রমল্লিকা -১ ও বারি চন্দ্রমল্লিকা -২ জাত দুইটি উদ্ভাবন করেছে।
জলবায়ু ও মাটি-
চন্দ্রমল্লিকা তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং রৌদ্রজ্জল জায়গা পছন্দ করে। বাংলাদেশে শীতকালই এই ফুল চাষের উত্তম সময়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সুনিস্কাশিত দো আঁশ ও বেলে মাটি চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উপযোগী। মাটির পি এইচ ৬.০-৭.০ হওয়া বাঞ্জনীয়।
চারা তৈরিঃ
বীজ, সাকার ও শাখা কলম থেকে চন্দ্রমল্লিকার চারা তৈরি করা যায়। বীজ থেকে চারা করলে তা থেকে ভাল ফুল পাওয়া যায় না এবং ফুল পেতে অনেক দিন লেগে যায়। অন্য দিকে ডাল কেটে শাখা কলম করলে বা সাকার থেকে চারা করলে এ সমস্যা থাকে না। এদেশে শাখা কলম করেই সাধারনত চারা তৈরি করা হয়। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শাখা কলম করা শুরু হয়। এক বছর বয়সী সতেজ সবল ডাল থেকে ৮-১০ সেমি লম্বা ডাল তেরছাভাবে কেটে বেডে বা বালতিতে বসিয়ে দিলে তাতে শিকড় গজায়। ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে যখন ফুল দেওয়া শেষ হয়ে যায় তখন গাছগুলোকে মাটির উপর থেকে ১৫-২০ সেমি রেখে কেটে দেয়া হয়। কিছু দিন পর ওসব কাটা জায়গার গোড়া থেকে কিছু সাকার বের হয়। এসব সাকার ৫-৭ সেমি লম্বা হলে মা গাছ থেকে ওদের আলাদা করে ছায়াময় বীজতলায় বা টবে লাগানো হয়। মে- জুলাই মাসে চারাকে বৃষ্টি ও কড়া রোদ থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
চারা রোপনঃ
শেষবারের মত নিদিষ্ট স্থানে কিংবা টবে রোপনের পূর্বে চারাগুলোকে স্বতন্ত্র জমিতে কিংবা টবে পাল্টিয়ে নিয়ে তাদের ফুল উৎপাদনের উপযুক্ততা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। জমি কিংবা টবে চারা রোপনের উপযুক্ত সময় অক্টেবর- নভেম্বর। জাতভেদে ৩০ x ২৫ অন্তর চন্দ্রমল্লিকা রোপন করতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
চন্দ্রমল্লিকা গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমানে খাদ্যোপাদন শোষন করে থাকে। এ কারণে জৈব ও রাসায়নিক খাদ্যযুক্ত মাটিতে এ গাছ খুব ভালভাবে সাড়া দেয়। ভাল ফলন পেতে হলে জমিতে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি হেক্টরে ১০ টন পঁচা গোবর/কম্পোস্ট, ৪০০ কেজি ইউরিয়া, ২৭৫ কেজি টিএসপি, ৩০০ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ১৬৫ কেজি জিপসাম, ১২ কেজি বোরিক এসিড ও জিংক অক্সাইড সার প্রয়োগ করতে হবে। সাকার রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে পঁচা গোবর/কম্পোস্ট এবং ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সার ৭-১০ দিন পূর্বে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সাকার রোপণের ২৫-৩০ দিন পর ইউরিয়া সারের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে এবং বাকি অর্ধেক সার সাকার রোপণের ৪৫-৫০ দিন পর গাছের গোড়ার চারপাশে একটু দূর দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। উপরি প্রয়োগের পর সার মাটির সাথে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।
কুঁড়ি ভাঙ্গাঃ
চন্দ্র মল্লিকার বেড ও টব আগাছা মুক্ত রাখা উচিত। চারা লাগানোর মাস খানেক পর গাছের অগ্রভাগ কেটে দিতে হয়। এতে করে গাছ লম্বা না হয়ে ঝোপালো হয়। চারা গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসলে তা সঙ্গে সঙ্গে অপসারন করতে হয়। বড় আকারের ফুল পেতে হলে ডিসবাডিং করা উচিৎ অর্থাৎ মাঝের কুঁড়িটি রেখে পাশের দুটি কুঁড়ি কেটে ফেলতে হয়। আর মধ্যম আকারের ফুল পেতে চাইলে মাঝের কুড়িটি অপসারন করা উচিত।
সেচঃ
চন্দ্রমল্লিকার চারা বিকালে লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর হালকা সেচ দিতে হবে। চন্দ্রমল্লিকার গাছ কখনো বেশি পানি সহ্য করতে পারেনা। তাই পানি এমনভাবে দিতে হবে যেন গোড়ায় বেশিক্ষণ পানি জমে না থাকে। চারা রোপনের পূর্বে এবং পরে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পরিমানমত পানি সেচ জরুরি।
অন্যান্য পরিচর্যা
ঠেস দেয়াঃ
চন্দ্রমল্লিকার ফুল সাধারনত ডালপালার তুলনায় বড় হয়। তাই গাছের গোড়া থেকে কুঁড়ি পর্যন্ত একটা শক্ত কাঠি পুঁতে দিতে হবে।এতে ফুল নুয়ে পড়বেনা। চারা লাগানোর সময় কাঠি একবারেই পুঁতে দেয়া ভাল। এজন্য জাত বুঝে চন্দ্রমল্লিকা গাছের উচ্চতা অনুযায়ী বাঁশের কাঠি চারার গোড়া থেকে একটু দুরে পুঁতে দিতে হবে।একবারে গোড়াই পুতলে বা গাছ বড় হয়ে যাওয়ার পর পুতলে অনেক সময় শিকড়ের ক্ষতি হতে পারে, এমনকি শিকড়ে ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার ফলে রোগ জীবানুও গাছে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
শোষক পোকা দমনঃ
শোষক পোকা অতি ক্ষুদ্র আকৃতির। ছাই রঙের এ পোকাকে খালি চোখে দেখা যায়না। এপোকা পাতা ও ফুলের রস শোষন করে। ফলে আক্রান্ত পাতা ও ফুলে দাগ পড়ে। পাতা ও ফুল শুকিয়ে যায় এবং আক্রমণ বেশি হলে গাছও শুকিয়ে যায়। এ পোকা দমনের জন্য ২ মিলি ম্যালাথিয়ন ১ লিটার পানিতে তিশেয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
জাব পোকা দমনঃ
জাব পোকা ফুলের প্রধান ক্ষতিকর পোকা। জাব পোকা গাড় সবুজ, বেগুনি বা কাল রঙের হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় অবস্থাতেই গাছের নতুন ডগা বা ফুলের রস চুষে খায় এবং গাছের বৃদ্ধি এবং ফলনে মারাত্বক ক্ষতি করে।নোভাক্রন(০.১% ) বা রগর ( ১% ) প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা যায়।
পাউডারী মিলডিউ রোগ দমনঃ
এরোগ হলে গাছের পাতা ধূসর রং ধারন করে এবং পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায়। টিল্ট ২৫০ইসি ০.৫ মিলি বা ২ গ্রাম থিয়োভিট প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করে এরোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ফুল সংগ্রহঃ
চন্দ্রমল্লিকা ফুল কুঁড়ি অবস্থায় তুললে ফোঁটেনা। বাইরের পাপড়ি গুলো সম্পূর্ণ খুলে গিয়েছে এবং মাঝের পাপড়ি গুলো ফুটতে শুরু করেছে এমন অবস্থায় খুব সকালে অথবা বিকেলে ধারালো ছুরি দিয়ে দীর্ঘ বোঁটাসহ কেটে ফুল তোলা উচিত।
ফলনঃ
জাত ভেদে ফলন কম বেশি হয়। তবে গাছ প্রতি বছরে গড়ে ৩০-৪০ টি ফুল পাওয়া যায়।
পরিচিতিঃ
জারবেরা এ্যাসটারেসী পরিবারভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক ফুল । জার্র্মান পরিবেশবিদ ট্রগোট জার্বার এর নামানুসারে এ ফুলটির নামকরন করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক ফুল বানিজ্যে কাট ফ্লাওয়ার (Cut flower) হিসেবে উল্লেখযোগ্য ১০টি ফুলের মধ্যে অন্যতম কাট ফ্লাওয়ারের জন্য ও বেশী দিন ফুলদানীতে সতেজ রাখতে জারবেরার জুড়ি নেই।
জাত
জারবেরা গণের আওতায় ৪০টির মত প্রজাতি আছে।এ গুলির মধ্যে জারবেরা জ্যামেসোনি প্রজাতিটি চাষাবাদ হচেছ সংকরায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে Gerbera jamesonii এর অনেক জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট জারবেরা ফুলের বারি জারবেরা-১ ও বারি জারবেরা-২ দুইটি জাত উদ্ভাবন করেছে।
জলবায়ু
জলবায়ু জারবেরা কষ্টসহিষ্ণু গাছ এবং সব ধরনের জলবায়ুতে কমবেশী জন্মায়।গ্রীষ্মমন্ডলীয় (Temperate) অঞ্চলে উন্মুক্ত স্থানে পলিসেডে এবং নাতিশীতোষ্ণ (Tropical) অঞ্চলে এ ফুলটিকে গ্রীনহাউজে চাষাবাদ করার পরামর্শ দেয়া হয়।
নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ (Protective condition)
বাংলাদেশে জারবেরা শীতকালীন সময়ে খোলা মাঠে বা উন্মুক্ত স্থানে চাষ করা হয়। গ্রীষ্মকালীন সময়ে পলিসেডে চাষ করা হয়। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষাবাদ করলে যদিও খরচের প্রধান্য অধিক পড়ে তথাপিও ফুলের গুনগতমান ও ফলন বৃদ্ধি এবং রোগপোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জারবেরা চাষ করা জরুরী প্রয়োজন ।উজ্জ্বল সূর্যালোক জারবেরা গাছের বৃদ্ধি ও গুনগতমান সম্পন্ন ফুল উৎপাদনে সহায়ক। কিন্তু গ্রীষ্মকালে উন্নত ফুল উৎপাদনের জন্য হালকা ছায়া (৩০%) প্রদান করতে হয়। জারবেরা চাষে অনুকূল দিবাকালীন তাপমাত্রা ১৬-২০০ সেন্টিগ্রেড এবং রাত্রিকালীন তাপমাত্রা ১০ – ১২০ সেন্টিগ্রেড । উচচ তাপমাত্রায় গাছে ফুল আসে ঠিকই, কিন্তু ফুল ততটা গুনগত মান সম্পন্ন হয় না
মাটিঃ
সুনিষ্কাশিত, উর্বর দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি জারবেরা চাষের জন্য উত্তম। মাটির পি এইচ মান ৫.৫-৭.০ এর মধ্যে থাকা উচিত । জারবেরার জমিতে প্রচুর জৈব সার থাকা দরকার এজন্য পরিমিত পরিমানে গোবর সার, পাতাপচা সার, Cocodust ইত্যাদি প্রয়োগ করতে হবে ।
বংশবৃদ্ধিঃ
(ক) বীজের মাধ্যমে (By seed)
বীজের মাধ্যমে জারবেরার বংশবৃদ্ধি করা যায়। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত গাছে মাতৃগাছের সকল গুনাবলী বজায় থাকে না, তবে পদ্ধতিটি সহজ। এ পদ্ধতির সুবিধা হলো বীজের মাধ্যমে রোগ-পোকা আক্রমনের সম্ভাবনা কম থাকে ।
(খ) ডিভিশন (Division of clumps)
মাতৃগাছের ক্লাম্প বিভক্ত করে বংশবৃদ্ধি করা যায়। এজন্য মাঠের সুপ্রতিষ্ঠিত ও পরিপূর্ণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত গাছগুলিকে ছোট ছোট ভাগে ধারালো ছুরি দিয়ে ভাগ করা হয়।
উক্ত সাকার (Sucker) গুলির পাতা ও শিকড় হালকা প্রুনিং (Pruning) করে পরবর্তীতে নতুন বেডে (Bed) লাগানো হয়।
(গ) মাইক্রোপ্রোপাগেশন (Micropropagation)
বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে উপরের পদ্ধতি দুটি খুব উপযোগী নয়। অল্প সময়ে প্রচুর সংখ্যায় রোগমুক্ত জারবেরার চারা পাওয়ার জন্য টিসুকালচার পদ্ধতিটি উত্তম। এ জন্য প্রথমে সঠিক জাত নির্বাচন করতে হবে। পরে ঐ গাছের কান্ডের বর্ধিত অগ্রাংশ (growing shoot tips), ফুল কুড়ি (Flower bud), পাতা (Leaf) ইত্যাদিকে এক্সপ্লান্ট (Explants) হিসাবে নিয়ে বার বার সাব-কালচার (Sub-culture) করে অসংখ্য চারা উৎপাদন করা সম্ভব।
চাষাবাদ (Cultivation)
(ক) জমি তৈরী (Land preparation)
জমিতে পরিমানমত জৈব সার দিতে হবে। তারপর ৪০-৪৫ সেঃ মিঃ গভীর করে আড়াআড়ি ও লম্বা ভাবে পরপর কয়েকটি চাষ দিয়ে জমিটি ঝুরঝুরা (fine tilth) করে তৈরী করতে হবে। ফলে সকল জৈব সার মাটির সাথে সুন্দরভাবে মিশে যাবে
(খ) বেড তৈরী (Bed preparation)
জারবেরার জন্য বেডের উচ্চতা ২০ সেঃ মিঃ এবং প্রশস্ততা ১.০-১.২ মিঃ হলে ভাল হয়। জমিতে যেন পানি জমে না থাকে সেজন্য দুই বেডের মধ্যবর্তী ৫০ সেঃ মিঃ পানি নিষ্কাশন নালা থাকতে হবে। সাধারনতঃ একবার লাগিয়ে পর্যায়ক্রমে ২ বৎসর ফুল আহরন করা হয় বলে জমি ও বেড তৈরীর সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়।
(গ) চারা লাগানো (Planting)
বেড (Bed) তৈরী হলে জাত ও এর বৃদ্ধির ধরন বুঝে সাকারগুলি (Sucker) সারি থেকে সারি ৫০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছ ৪০ সেমি দূরত্ব রেখে রোপন করতে হবে। চারাগুলি এমনভাবে মাটিতে স্থাপন করতে হবে যেন চারার ক্রাউন (Crown or Central growing point) মাটির (Surface level) উপরে থাকে । ক্রাউন মাটির নীচে গেলে গোড়া পচা (Foot rot) রোগ সংক্রমনের সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়।
(ঘ) লাগানোর সময় (Planting time)
জারবেরা সারা বৎসর লাগানো যায় তবে উন্নত ফুল ও বেশী উৎপাদন পেতে সাধারনতঃ অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চারা লাগানো উচিত।
(ঙ) পানি দেয়া (Irrigation)
জারবেরার শিকড় গভীরে প্রবেশ করে বিধায় বার বার হালকা স্প্রিংকলার (Sprinkler) সেচের পরিবর্তে প্লাবন সেচ (Flood Irrigation) দেয়া উত্তম। পানি সেচের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়। কারণ জারবেরা ক্ষেতে জলাবদ্ধতা মাটিবাহিত রোগ সংক্রমণ ত¦রানি¦ত করে। আবার মাটিতে পানির অভাব হলে গাছ ঢলে (Wilting) পড়ে, সেক্ষেত্রে ফুলের পুষ্পদন্ড ছোট হয়ে যায়। বায়ু চলাচলের সুবিধার জন্য প্রতিবার সেচ দেয়ার পর মাটিতে জো আসলে নিড়ানী দিয়ে উপরের শক্ত আস্তরণ (Hard crust) ভেঙ্গে দিতে হবে।
(চ) সারপ্রয়োগ (Fertilization)
জারবেরা দ্রুত বর্ধনশীল একটি ফুল ফসল।
গাছের বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ ও গাছ থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে পরিমিত পরিমান সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর পর নতুন শিকড় গজানো শুরু হলে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতি হেক্টরে ১০ টন পঁচা গোবর/কম্পোস্ট, ২ টন কোকোডাষ্ট, ৩৫০ কেজি ইউরিয়া, ২৫০ কেজি টিএসপি ও ৩০০ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ১৬৫ কেজি জিপসাম, ১২ কেজি বোরিক এসিড ও জিংক অক্সাইড সার প্রয়োগ করতে হবে। সাকার রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে পঁচা গোবর/কম্পোস্ট এবং ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সার ৭-১০ দিন পূর্বে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সাকার রোপণের ২৫ দিন পর ইউরিয়া সারের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে এবং বাকি অর্ধেক সার সাকার রোপণের ৪৫ দিন পর গাছের গোড়ার চারপাশে একটু দূর দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। উপরি প্রয়োগের পর সেচ দিতে হবে।
রোগ ও পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনাঃ
মুল পচা রোগঃ
মাটি বাহিত এক প্রকার ছত্রাকের আক্রমণে এরোগ হয়। এরোগে আক্রান্ত হলে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়এবং অবশেষে সম্পূর্ণ গাছটি শুকিয়ে যায়। মাটি জীবাণুমুক্ত করে চারা লাগালে এরোগ কম হয়।
গোড়া পঁচা রোগঃ
এটি মাটি বাহিত রোগ। এ রোগের ফলে গাছের কেন্দ্রীয় অংশ প্রথমে কালো রং ধারণ করে ও পরে পচে যায়। পরবর্তীতে পাতা ও ফুল মারা যায়।
প্রতিকারঃ
১. রিডোমিল অথবা ডায়থেন এম-৪৫ ছত্রাকনাশক ০.২% হারে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
২. টপসিন ০.০৫% হারে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করেও এরোগ দমন করা যায়।
পাউডারি মিলডিউঃ
দুই ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এরোগ হয়। এরোগে আক্রান্ত গাছেরর উপরে সাদা পাউডারের আস্তরণ দেয়া হয়েছে বলে মনে হয়।
প্রতিকারঃ
১। বেনোমিল ৫০ডব্লিউপি ০.০১% হারে সেপ্র করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
পোকামাকড়ঃ
মাকড়ঃ
শুস্ক ও উষ্ণ আবহাওয়ায় মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায়। এর আক্রমণে পাতা ও ফুলকুঁড়ির বৃদ্ধি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। ফুলের অস্বাভাবিক আকার ও আকৃতির কারণে বাজার মুল্য থাকেনা।
প্রতিকারঃ
১. আক্রমনের প্রথম দিকে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. যে কোন মাকড় নাশক যেমন ভারটিম্যাক বা ওমাইট ৫৭ইসি ১.৫ মিঃলিঃ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে
হবে।
সাদা মাছি পোকা ঃ
সাদা মাছি গাছের বিভিন্ন অংশের রস চুষে মারাত্মক ক্ষতি করে। এ পোকা ভাইরাস রোগ ছড়ায়।
দমনঃ
১. আঁঠালো হলুদ রংয়ের ফাঁদ ব্যবহার করা ।
২. ৫০ গ্রাম আধা ভাঙা নিমবীজ ১ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি ছেকে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার পাতার নীচের দিকে স্প্রে করা।
৩. চারা রোপনের ১০-১৫ দিন পর থেকে এসাটাপ ৭৫ (এসপি) ও কুমুলাস ডিএফ এক সঙ্গে ২ গ্রাম করে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
ফুল তোলা (Harvesting)
পূর্ন বিকশিত জারবেরা ফুলের বাহিরের দু’সারি ডিস্ক ফ্লোরেট (Disc floret) পুষ্প দন্ডের সাথে সমকৌনিক অবস্থানে আসলে ফুল তোলা হয়। কর্তনের সময় পুষ্পদন্ড যথাসম্ভব লম্বা রেখে ফুল সংগ্রহ করা হয়। ধারালো চাকু দ্বারা তেরছা ভাবে খুব সকালে বা বিকালে ফুল তোলা উত্তম। ফুল কাটার পর পুষ্পদন্ড এক ইঞ্চি পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। পানির সাথে অল্প চিনি এবং কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে দিলে ফুল সতেজ থাকে।
ফলন (Yield)
জাত ভেদে ফলন কম বেশি হয়। তবে প্রতি গাছে ২০-২৫ টি ফুল বছরে সংগ্রহ করা যায়।
পরিচিতি ও ব্যবহারঃ
রজনীগন্ধা Amaryllidaceae পরিবারের সদস্য। এর ইংরেজী নাম Tuberose এবং বৈজ্ঞানিক নাম Polianthes tuberosa. এ ফুলের আদি বাসস্থান মেক্সিকো। ফুলদানীতে এ ফুল ৭-১০ দিন সজীব থাকে এবং প্রতি রাতেই সুগন্ধ ছড়িয়ে ঘরের পরিবেশকে বিমোহিত করে।বাংলাদেশে এ ফুলের উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে এর যথেষ্ট চাষাবাদ হচ্ছে।
সুগন্ধি ফুল হিসেবে রজনীগন্ধা খুবই জনপ্রিয়। এ ফুল সন্ধ্যারাতে ফোঁটে এবং সুগন্ধ ছড়ায় বলে এর রজনীগন্ধা নামকরন হয়েছে। চাহিদার দিক দিয়ে এবং বানিজ্যিক দৃষ্টিকোন থেকে এ ফুলের জুড়ি নেই। কাটফ্লাওয়ার হিসেবে ফুলদানীর জন্য এটি অনন্য। এ ছাড়া মালা, পুষ্পস্তবক, বেনী ও মুকুট তৈরীতে এ ফুল ব্যবহৃত হয়। এ ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধী দ্রব্য প্রস্তুত করা হয়।
জাত/শ্রেণীঃ
ফুলের আকার ও পাঁপড়ির উপর ভিত্তি করে ৩ শ্রেণীর রজনীগন্ধা পাওয়া যায়।
ক) সিংগেল : এ ধরনের জাতের ফুলে পাঁপড়ি একটি সারিতে থাকে। ফুল সম্পূর্ন সাদা রং এর হয় এবং ফুল গুলি খুবই সুগন্ধযুক্ত হয়।
খ) সেমি-ডাবল: এ ধরনের জাতের ফুলে পাঁপড়ি দুই/তিন সারিতে সাজানো থাকে ।
গ) ডাবল : এ ধরনের জাতের ফুলে তিন-এর অধিক পাপঁড়ির সারি থাকে । পাঁপড়ির কিনারায় হালকা লাল রং এর আভা থাকে এবং ফুল গুলি কম সুগন্ধযুক্ত হয়।
বাংলাদেশে সিংগেল ও ডাবল শ্রেণীর রজনীগন্ধা পাওয়া যায়। তবে এখন পর্যন্ত কোন জাত উদ্ভাবিত হয়নি।
বংশবিস্তারঃ রজনীগন্ধা বীজ ও কন্দ উভয় মাধ্যমেই বংশবিস্তার করে থাকে। তবে আমাদের দেশে সাধারণত কন্দ দ্বারাই রজনীগন্ধার চাষ হয়ে থাকে। প্রতিটি গাছের গোড়ায় পেঁয়াজের মত যে বাল্ব পাওয়া যায় তাকে কন্দ বা বাল্ব বলে। পুরাতন গাছের গোড়ায় ঝাড় আকারে অনেক বাল্ব থাকে। মাঝের বাল্বটি বড় হয়। সাধারনত: মাঝারী থেকে বড় আকারের বাল্ব বংশবিস্তারের জন্য ব্যবহার করা হয়। বড় ধরনের বাল্ব থেকে স্বাস্থ্যবান গাছ হয় ও গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসে কিন্তু ছোট বাল্ব থেকে দূর্বল প্রকৃতির গাছ হয় ও দেরীতে ফুল আসে। কন্দ থেকে উৎপন্ন গাছে মা-গাছের সব বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন থাকে এবং স্বল্প সময়ে গাছে ফুল আসে। শীতকালে কন্দগুলি সাধারণত মাটির নিচে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। শীতের শেষে কন্দগুলি লাগানোর জন্য উপযোগী হয়।
জলবায়ু ও মাটিঃ
রজনীগন্ধা উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া পছন্দ করে এজন্য আমাদের দেশে গ্রীষ্ম কালে এ ফুলের চাষ করা হয়। এ ফুলের সফল চাষের জন্য গড় তাপমাত্রা ২০-৩০০ সেন্টিগ্রেড ও আর্দ্র আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। সুনিস্কাশিত, জৈবপদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি রজনীগন্ধা চাষের জন্য উত্তম।
জমি তৈরী ও সার প্রয়োগঃ
জমি ৪-৫ বার চাষ দিয়ে ভালভাবে তৈরী করতে হয়। শেষ বার চাষের সময় হেক্টর প্রতি উর্বরতা ভেদে ৫-১০ টন গোবর, ২৫০ কেজি ফসফেট ও ২০০ কেজি এম পি সার মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দেয়া উচিত। বাল্ব রোপনের ৩ সপ্তাহ পর যখন নতুন গাছের বৃদ্ধি শুরু হয় তখন হেক্টর প্রতি ৩০০ কেজি ইউরিয়া সার এর অর্ধেকটা প্রথম উপরি প্রয়োগ এবং বাকী অর্ধেক পুষ্পদন্ড বের হওয়ার সময় উপরি প্রয়োগ করা উচিত। ভালো মানের ফুলের জন্য হেক্টর প্রতি ১২ কেজি বরিক এসিড এবং ৮ কেজি জিন্ক সালফেট প্রয়োগ করা যেতে পারে।
বাল্ব রোপনঃ
বাঁছাইকৃত বাল্বগুলি মার্চ-এপ্রিল মাসে জমিতে লাগানো উচিত। লাগানোর সময় পুরানো শিকড়গুলি কেটে দিতে হয়। সাধারনভাবে ভাল ফুল পাওয়ার জন্য লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩০ সে: মি: এবং প্রতি লাইনে বাল্ব থেকে বাল্বের দূরত্ব ২০ সে: মি: নির্ধারণ করা যেতে পারে। কন্দগুলি এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে এর অগ্রভাগ ঠিক মাটির নিচে সমতলে অবস্থান করে।প্রতিটি বাল্ব (১.৫ – ৩.০ সে মি.) সোজা করে ৭-১০ সে:মি: মাটির গভীরে লাগানো উচিত। মাটিতে রসের অভাব থাকলে কন্দ লাগানোর পূর্বে সেচ প্রদান করা উচিত। এছাড়া কন্দ রোপণের পর মাটিতে কন্দ বসার জন্য হালকা সেচ দেওয়া ভাল।
অন্তর্বর্তী পরিচর্যাঃ
রজনীগন্ধার ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখা উচিত। শুকনো মৌসুমে প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে এবং বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি সুনিস্কাশনের জন্য নিস্কাশন নালা তৈরি করতে হবে। গাছের গোড়া থেকে শুকনো বা মরা পাতা সরিয়ে ফেলা উচিত। শীতকালে গাছের উপরের অংশ সম্পূর্ন ভাবে কেটে দেয়া ভাল।এফিড, থ্রিপস পোকা দমনের জন্য ২মিলি লিটার ম্যালাথিয়ন প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করা ভাল।
রোগের নামঃ বোট্রাইটিস পাতায় দাগ ও ব্লাইট
রোগের কারণঃ Botrytis sp.
রোগের লক্ষণঃ
এই রোগটি বর্ষা ঋতুতে দেখা যায়। প্রথমে আক্রান্ত ফুলে গাড় বাদামী রং এর দাগ পড়ে এবং পড়ে সমস্ত পুষ্পমঞ্জুরী শুকিয়ে যায়। পাতায় এবং কান্ডেও এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়।
প্রতিকারঃ
এই রোগ দমনে রোভরাল (ম্যানকোজেব) .২% হারে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ফুল কাটা ও প্রক্রিয়াজাতকরণঃ
রজনীগন্ধার একই ক্ষেত থেকে পরপর ৩ বছর ফুল উৎপাদন করা যায়। রজনীগন্ধা লম্বা ডাটার মাথায় মঞ্জরী আকারে হয়। রজনীগন্ধার পুষ্পদন্ডের প্রথম ফুল ফুটলেই ডাঁটিসহ ফুল কাটতে হয়। ভোরের ঠান্ডা আবহাওয়ায় অথবা পড়ন্ত বিকেলে ফুল কাটতে হয়। ধারালো ছুরি বা সিকেচার দিয়ে মাটি থেকে ৪-৬ সেমি উপরে ফুলের ডাঁটি কাটতে হয় যাতে গোড়ার বাড়ন্ত কুঁড়ির ক্ষতি না হয়। প্রস্বেদনের কারণে জলীয় ক্ষতি (Transpiration loss) এড়ানোর জন্য যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি অপ্রয়োজনীয় পাতা অপসারণ করে সুবিধামত বান্ডিল তৈরি করে প্রথমে বালতিতে চিনি সহ পানিতে ২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরে ছিদ্র যুক্ত পলিথিনে জড়িয়ে দূরবর্তী বাজারে প্রেরণ করা যেতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় ফূলের জীবনকাল (Vase life) দীর্ঘায়িত হয়।
বাল্ব বা কন্দ উত্তোলন ও সংরক্ষণঃ
ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে গাছের বৃদিধ বন্ধ হয়ে গেলে কন্দগুলি মাটি থেকে তুলে এনে পরিস্কার করে ছায়াযুক্ত শুষ্ক মেঝেতে ছড়িয়ে রাখতে হয়। প্রয়োজনমত পরিপক্ক কন্দ বাছাই করে পরবর্তীতে বংশবিস্তারের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। রজনীগন্ধার কন্দ বেশ কষ্টসহিষ্ণু এবং সাধারণ অবস্থায় এর কন্দ সহজেই সংরক্ষণ করা যায়।
রেটুন ফসলঃ
রজনীগন্ধার পূর্ববর্তী বছরের ফসল মাঠে রেখে দিয়ে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে মৌসুমে পুনরায় ফুল উৎপাদন সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় ফুলের পুষ্পদন্ডের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেলেও সবদিক দিয়ে ফুলের মান নিম্নতর হয় বিধায় বাজার মূল্য কমে যায়। তবে দ্বিগুণ সার ও যথেষ্ট সেচের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত অন্তর্বর্তী পরিচর্যার মাধ্যমে অমৌসুমে ফুল উৎপাদন করে যথেষ্ট লাভবান হওয়া যায়।
টবে চাষঃ
বড় টবে রজনীগন্ধার চাষ করা যায়। উপযুক্ত টব মিশ্রণ দিয়ে পাশাপাশি কয়েকটি কন্দ লাগিয়ে নিয়মিত সেচ ও মাঝে মাঝে সামান্য খৈল ও গোবর পচানো মিশ্রণ দিলে উন্নত মানের ফুল পাওয়া যায়।
ফলনঃ
রজনীগন্ধার চাষ অত্যন্ত লাভজনক। বিশেষতঃ বিদেশে এর রপ্তানি বাজার বেশ সম্ভাবনাময়। দেখা গেছে যে, প্রতি হেক্টরে প্রায় ১ লক্ষ কন্দ লাগিয়ে ৩.৫ লক্ষ ফুলের ডাঁটি পাওয়া যায়। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি ডাঁটির খুচরা মূল্য ২-৪ টাকা। তবে ঋতু বিশেষে এর মূল্য বেশ পরিবর্তনশীল। তথাপি এ ফসল উত্তরোত্তর একটি লাভজনক ফসল হিসেবে আমাদের দেশে স্থান করে নিয়েছে। এ কারণে এর চাষ ও বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
পরিচিতি
সৌন্দর্য্য ও লাবন্যের প্রতীক গোলাপ। এটি একটি শীতকালীন মৌসুমী ফুল । তবে বর্তমানে গোলাপ সারা বছর ধরেই চাষ করা হচ্ছে। বর্ণ, গন্ধ, কমনিয়তা ও সৌন্দর্যের বিচারে গোলাপকে ফুলের রানী বলা হয়। পুষ্প প্রেমীদের সবচেয়ে প্রিয় ফুল গোলাপ। এটি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জলবায়ুতে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে বলে পৃথিবীর সব দেশেই সারাবছর কমবেশি গোলাপের চাষ হয়। গোলাপ সাধারণত কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, বাগান, লন, কেয়ারী, বারান্দা সাজাতে গোলাপের জুড়ি নাই। আতর ও সুগন্ধি শিল্পেও গোলাপের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
জলবায়ু ও মাটিঃ
গোলাপ শীত ও নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের ফুল। অধিক উষ্ণ ও আর্দ্রতায় গোলাপ ভাল হয়না। ২২-৩০ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা, ৮৫% আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং ১০০-১২৫ সেমি গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত গোলাপ চাষের জন্য উপযোগী। গোলাপ চাষের জন্য ৬.০-৬.৫ pH মানযুক্ত সুনিষ্কাশিত এবং উর্বর দোঁ-আশ মাটি উত্তম।ফুলের গুনগতমান সূর্যালোকের উপস্থিতির উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। এক্ষেত্রে বিকাল অপেক্ষা সকালের রোদ বেশি কার্যকর।
জাতঃ
পৃথিবীতে অনেক জাতের গোলাপ আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে চাষ হয় এমন কতকগুলো জাত হলোঃ মিরান্ডি, পাপা মেলান্ড, ডাবল ডিলাইট, তাজমহল, প্যারাডাইস, ব্লু-মুন, মন্টেজুমা, টাটা সেন্টার, সিটি অব বেলফাষ্ট ইত্যাদি
রোপণ সময়ঃ
বাংলাদেশে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত গোলাপের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
বংশবৃদ্ধিঃ
গোলাপ সাধারণতঃ বীজ, কাটিং, গুটি কলম এবং চোখ কলমের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে। বীজের মাধ্যমে বংশ বি¯তার শুধুমাত্র প্রজনন বা ফসল উন্নয়ন কর্মসূচীতে ব্যবহৃত হয়। নতুন গাছ উৎপন্নের প্রধান পদ্ধতি বাডিং বা চোখ কলম, যার মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে কাটা ফুলের উৎপাদন করা হয়ে থাকে।যে জাতটির বংশবৃদ্ধি করা হয় তার চোখ অপর একটি সুবিধামত আদিজোড় বা (rootstock) এর উপর স্থাপন করা হয়। আদিজোড় গাছের সজীবতা, উৎপাদনশীলতা, ফুলের গুনাবলী, ঝোপের স্থায়ীত্ব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মাটি ও আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আদিজোড়ের কাটিং সমূহ (পেন্সিল আকৃতি) গ্রীষ্মের শেষে তৈরী করা হয়ে থাকে এবং নার্সারীতে সারি করে ২৫ -৩০ সেঃ মিঃ দুরত্বে রোপন করা হয়। প্রায় ৬ মাস পর এইসব কাটিংসমূহ বাডিং এর জন্য উপযুক্ত আকৃতির কান্ড তৈরী করে থাকে। গোলাপে প্রধানতঃ T-বাডিং করা হয়।
টবে গোলাপের চাষ
টবের স্থানঃ
খোলা-মেলা আলো বাতাসপূর্ণ এমন স্থানে টব রাখতে হবে যাতে সকালের সূর্য কিরণ পায় এবং অন্ততঃ ৬-৮ ঘন্টা রোদ পায়। বিকেলের রোদ (বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে) না লাগানোই ভাল, কেননা এতে ফুলের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। গোলাপ গাছটিতে যাতে চারিদিক হতেই আলো পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তা না হলে গাছটি কেবল আলোর দিক দিয়েই বাড়বে। এজন্য টবসহ গাছটি মাঝে মাঝে ঘুরিয়ে নিতে হয়। গ্রীষ্মের প্রখর রোদ থেকে টবের গোলাপ গাছকে রক্ষা করার জন্য পর্যায়ক্রমে রোদ ও ছায়ায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টব রাখলে গাছ ভাল থাকবে। ফুলও বেশি দিন ধরে পাওয়া যাবে।
মাটি তৈরিঃ
এঁটেল মাটি গোলাপ চাষের জন্য ভাল নয়। টবের জন্য সার মাটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে মাটি বেশ ফাঁপা থাকে এবং পানি না দাঁড়ায়। ১ ভাগ দো-আঁশ মাটি, ৩ ভাগ গোবর সার বা কম্পোষ্ট, ১ ভাগ পাতা পচা সার, আধ ভাগ বালি (নদীর সাদা বালি হলে ভাল হয়) দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তাতে এক মুঠো সরিষার খৈল ও এক চামচ চুন মিশিয়ে ১টি ২০ সেঃমিঃ (৮ ইঞ্চি) টবে একমাস রেখে দিতে হবে। এই একমাস টবেপানি দিয়ে মাটি উল্টে পাল্টে দিতে হয়। এতে মাটির মিশ্রণ ভাল হবে। অনেকে মাটির মিশ্রণে ব্যবহৃত চা পাতা ব্যবহার করেও ভাল ফল পেয়েছেন। টবে নিচের কয়েক সেঃমিঃ পরিমাণ অংশে ইট বা মাটির হাড়ি পাতিলের ভাংগা টুকরা এমন ভাবে বিছিয়ে দিতে হয় যাতে টবের মাটি এগুলোর উপর থাকে। এতে বাড়তি পানি নিকাশের সুবিধা হবে।
টবের আকারঃ
টবের আকার নির্ভর করে যে গোলাপের চাষ করা হবে তার জাতের উপর। ছোট জাতের জন্য ২০ সেঃমিঃ (৮ ইঞ্চি) টব ভাল, বড় জাতের জন্য ৩০ সেঃমিঃ (১২ ইঞ্চি) বা আরো বড় টব ব্যবহার করতে হয়। তবে প্রথম বছর যে আকারের টবে গাছ বসানো হবে পরের বছর বড়- আকারের টবে গাছ স্থানান্তর করলে বড় আকারের বেশী ফুল পাওয়া যায়।
টবে চারা বসানোর সময়ঃ
বছরের যে কোন সময়ই টবে গোলাপের চারা বসানো যায়। তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস চারা লাগানোর উত্তম সময়। এসময় চারা লাগালে বেশী দিন ধরে ফুল পাওয়া যায়, গাছের পরিচর্যা করতে সুবিধা হয, রোগ পোকার আক্রমণও কম থাকে।
চারা সংগ্রহঃ
চারা সংগ্রহের সময় সুস’-সুন্দর চারা সংগ্রহ করা উচিত। চারা সংগ্রহের সময় এর গোড়ার মাটির গোল্লাটি অবিকল আছে কিনা তা ভাল করে দেখে নিতে হবে। মাটির গোল্লাসহ চারার গোড়ার শিকড় বেরিয়ে থাকা অবস’ার চার গাছ না নেয়াই ভাল। বিশ্বস- এবং পরিচিত নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করা উচিত ।চারা সংগ্রহের ব্যাপারে অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
টবে চারা বসানোঃ
চারাগাছ বা কলমচারা মাটির গোল্লাসহ পলিথিন ব্যাগে অথবা ছোট মাটির টবে কিনতে পাওয়া যায়। চারাটি যদি টবের হয়, তাহলে টব থেকে পুরো মাটিসহ চারাটি এমনভাবে নিতে হবে যাতে ভেংগে না যায় বা শিকড়ের কোন ক্ষতি না হয়। ভেজা মাটির গোল্লাসহ চারা সংগ্রহ করলে তা একটু শুকিয়ে নিতে হয়। চারা বসাবার আগেই গাছের অপ্রয়োজনীয় পুরোনো বা মরা ডাল পালা হালকা ভাবে ছেঁটে দিতে হবে। এরপর চারাটি টবের মাঝখানে সোজা করে বসিয়ে টবের ওপরে কিছু কম্পোষ্ট সার দিয়ে গাছের গোড়ারমাটি হালকা চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে। চারা এমনভাবে বসাতে হবে যাতে কুঁড়ি বের হবার গিট/ পর্ব টি মাটির ওপরেই থাকে।
সেচঃ
টবে বসানোর পর অন্তত ২/৩ বার পানি সেচ দিতে হবে। চারা অবস্থায় গাছ যাতে প্রখর রোদ বা বৃষ্টির ঝাপ্টা থেকে রক্ষা পায় সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার। প্রথম অবস্থায় ৩/৪ ঘন্টা এবং ধীরে ধীরে বাড়াতে বাড়াতে ৭/৮ ঘন্টা রোদ পাওয়ার ব্যবস্থা করলে গোলাপ ভাল হবে। পানি সেচের সময়লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি দাঁড়িয়ে না যায়। কচি পাতা ও কুঁড়ি ছাড়ার সময় একটু বেশী পানি দরকার। এ সময় সকাল সন্ধ্যা সেচ দেয়া উচিত। ঝাঁঝরি দিয়ে ডাল-পালাসহ সমস্ত গাছটিই পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
টব বসাবার পর গাছ ধরে গেলে একমাস পর থেকে ১৫ দিন বা এক মাস পর পর সার দিতে হয়। শীতের ঠিক পরেই অর্থাৎ মার্চের শেষে বা এপ্রিলের প্রথম দিকে টবের উপরের ৮/১০ সেঃমিঃ মাটির স্তর তুলে দিয়ে খালি জায়গায় পচা গোবর সার ও নতুন ফাঁপা মাটি দিয়ে ভরে দিতে হয়। এর পর খড় বা পাতা দিয়ে ঢেকে গ্রীষ্মের প্রখর রোদ থেকে গাছের শিকড়কে রক্ষা করতে হয়। শীতকালে গাছ ছাটার পর, প্রতি টবে ৩ মুঠা গুঁড়া গোবর সার ও ১ মুঠা স্টিমড্ হাড়ের গুঁড়া বা স্টেরামিল প্রয়োগ করিতে হইবে। এরপর পুরো শীতকাল ধরে ১ মাস অন-র অন-র ১ মুঠা করে স্টিমড্ বোন মিল বা স্টেরামিল প্রয়োগ করতে হবে।
গোলাপের ভাল ফুল উৎপাদনের জন্য পাতার সার ও ফলিয়ার স্প্রের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েকটি রাসায়নিক সার মিশিয়ে এই সার প্রস্তুত করতে হয়। শীতকালে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সকাল ৮টার মধ্যে ফলিয়ার স্প্রে করতে হয়। দুই প্রকারের পাতা সার গাছে ব্যবহার করা হয়, ১টি গাছের স্বাস্থ্য ও ফুল ভাল করার জন্য অপরটি ট্রেস এলিমেন্টের জোগান দেয়ার জন্য, যেমন- ইউরিয়া, ডাই-অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ডাই-পটাশিয়াম ফসফেট প্রতিটি ১০ গ্রাম করে ১০ লিটার পানিতে গুলে স্প্রে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। ট্রেস এলিমেন্টের জন্য ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ২০ গ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট ১৫ গ্রাম, ফেরাস সালফেট ১০ গ্রাম, বোরাক্স ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে প্রতি লিটার পানিতে উল্লেখিত মিশ্রণটির ২ গ্রাম করে গুলিয়ে স্প্রে করতে হবে। দুইটি পাতা সারের সাথেই কীটনাশক বা বালাইনাশক মিশিয়ে স্প্রে করা যায় কিন্তু দুটি সার এক সাথে মিশিয়ে স্প্রে করা যাবে না। পাতার সার টবের গোলাপের জন্য অপরিহার্য এবং জমির গোলাপের জন্য উপকারী। সেপ্র করার সময় যেন পাতার দু’দিকেই ভালভাবে লাগে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। টবের গাছে সারা বছরই তরল সার প্রয়োগ করতে হবে। সঠিক মাত্রা বা প্রয়োগ বিধি না জেনে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই ভাল। কেননা, মাত্রায় বা ব্যবহার-বিধিতে একটু ব্যতিক্রম হলে গাছের ক্ষতির আশংকা থাকে। রাসায়নিক তরল সারের পরিবর্তে গোবর ও সরষের খৈল ৪/৫ দিন পানিতে পচিয়ে তরল করে সপ্তাহে দু’দিন করে ব্যবহার করা যায়। গাছের নতুন ডাল-পালা বাড়াতেও ফুলের আকার বড় করতে এ ধরনের তরল সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তরল সারের অভাবে ছোট মাছপঁচা পানি গাছের গোড়ায় দেয়া যায়। দুর্বল গাছে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হিসারে ইউরিয়া মিশিয়ে সকাল বিকাল পাতায় স্প্রে করলে গাছ তাজা হয়।
চুন-পানি প্রয়োগঃ
প্রতি লিটার পানিতে ১ চামচ গুড়ো চুন পরিস্কার পািনতে ভাল করে গুলে পাতলা ন্যাকড়ায় ছেঁকে প্রতি ৩ মাস পর পর দিতে হয়। চুন-পানি দেবার ১৫ দিনের মধ্যে অন্য কোন সার না দিয়ে শুধু পানি দিতে হয়।
গাছ ছাঁটাইঃ
মৃত ও রোগগ্রস-ডাল অপসারনের জন্য, গাছের উপযুক্ত আকৃতি প্রদানের জন্য, প্রতিটি ডালে ফুল আসবার জন্য এবং প্রয়োজনীয় রোদ্র পাবার জন্য নিয়মিত গাছ ছাটাইয়ের প্রয়োজন হয়। গোলাপ প্রচুর শাখা বিস্তারকারী গুল্ম জাতীয় গাছ। গাছের ফুল দেয়া শেষ হলেই গাছ ছেঁটে দিতে হবে। নিয়মিতগাছ ছাঁটাই করলে বেশী ও বড় আকারের ফুল পাওয়া যায়। বর্ষার পর অক্টোবর-নভেম্বর মাস ছাঁটাইয়ের জন্য ভাল সময়। সাধারনত ২০-২৫ সেঃমিঃ (৮-১০ ইঞ্চি) বড় রেখে ডাল ছেঁটে দিতে হয়। ডাল এমনভাবে কাটতে হবে যাতে থেঁতলে বা ছিঁড়ে না যায়। এ জন্য ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হয়। সাদা, হলুদ, হালকা হলুদ ও দো-রঙা জাতের গোলাপ গাছ খুব হালকা ছাঁট আর লাল জাতের গোলাপ গাছে শক্ত ছাঁট দিতে হয়।
গাছ ছাঁটাইয়ের পর ডাইব্যাক রোগের আক্রমণ হতে পারে। সুতরাং গাছ ছাঁটাইয়ের আগে ও পরে কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক দুইই প্রয়োগ করা দরকার।
রোগ-পোকা দমনঃ
শুঁয়ো পোকা বা অনিষ্টকারী অন্য যে কোন পোকা দেখা মাত্র ধরে মেরে ফেলা উচিত। লাল মাকড়সার আক্রমণ ও ডাইব্যাক রোগই বেশ মারাত্মক।
সেচের সময় টবে জল জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করলে লোহার শিক দিয়ে টবের মাটি ছিদ্র করে পানি বের হবার পথ করে দিতে হবে। এ কাজটা একটু সাবধানে করা দরকার যাতে শিকড়ের কোন ক্ষতিনা হয়। পানি দেবার আগের দিন প্রতিবারই টবের ধারের কাছের মাটি বেশী করে এবং মাঝখানের মাটি কম করে খুঁচিয়ে দিতে হয়।
গ্রীষ্মকালীন পরিচর্যাঃ
টব ছাদে বা পাকা স্থানে রাখলে পুরু খড় বিছিয়ে তার উপর ইট বা কাঠের টুকরা রেখে সেগুলোর ওপর টব রাখা উচিত । গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড তাপের সময় পানি না দিয়ে রাতের দিকে যখন তাপমাত্রা কমতে থাকে (রাত ৮ টার পর) ছাদের টবে তখন জল দেয়াই ভাল। এসময় পানির তাপমাত্রা আবহাওয়ার সঙ্গে মোটামুটি সামঞ্জস্য পূর্ণ থাকে।
বর্ষাকালীন পরিচর্যাঃ
টবের নিচের খড় কুটো, ইট এসব সরিয়ে টবগুলো কেবল ছাদ বা পাকা স্থানেই রাখতে হবে এবং ঝড় থেকে টব ও গাছকে রক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। টবের মাটি মাঝখানের দিকে উচিয়ে কোণাকৃতি করে দিলে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করতে পারবে না। অতিরিক্ত মাটি বর্ষা শেষে সরিয়ে ফেলতে হয়।
প্রদর্শনী ফুলের জন্য করণীয়ঃ
প্রদর্শনীর জন্য বর্ষাকালে উন্নত জাতের গোলাপ গাছ নির্বাচন করে টবে রোপণ করতে হবে। নিয়মিত সেচ ও সার প্রয়োগের দ্বারা গাছটিকে এমন করে তুলতে হবে যেন গাছে প্রচুর ও সুন্দর পাতা জন্মায় এবং প্রস্ফুটিত ফুল বেশ বড় আকারের হয়। প্রদর্শনীর সময় থেকে অন্ততঃ আড়াই মাস আগে গাছটিকে বিবেচনারসহিত ছাঁটাই করা উচিত। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি গাছ ছাঁটাই করলে ফেব্রুয়ারী মাসে গাছে ফুল ফোটে। মাঝে মাঝে কচি ডালগুলো এমনভাবে ছেঁটে দিতে হবে যেন গাছটি বেশ ঝোপালো হয়। গাছের প্রতিটি শাখায় দু’টো কুঁড়ি রেখে বাকি কুঁড়িগুলো ছিড়ে ফেলে দিতে হবে। যাতে বড় ফুল ফোটে সেদিকে যত্ন রেখে পরিচর্যার কাজ করতে হয়। যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কুঁড়ি জন্মায়,তাহলে কুঁড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। ফুলের ঔজ্বল্য বড়াতে হলে ৪ লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম আয়রন সালফেট গুলে ফুলে প্রয়োগ করতে হয়। প্রদর্শনী আরম্ভ হবার অন্ত ১ সপ্তাহ পূর্বে ছায়াযুক্ত স্থানে টব রাখলে ভাল হয়। এতে দুপুরের প্রখর রোদ্রে ফুলের পাপড়ি নষ্ট হয় না।
জমিতে গোলাপ চাষ
জমি, গর্ত ও বেড তৈরীঃ
প্রচুর রোদ ও খোলা বাতাসপূর্ণ উঁচু সমতল স্থানে গোলাপ চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত। জমিকে গভীরভাবে কুপিয়ে বা লাংগল দিয়ে এর মাটি ওলট-পালট করে দিতে হয়। জমি থেকে আগাছা, ইটের টুকরা ইত্যাদি বেছে ফেলে বার বার চাষ দিয়ে মাটিকে বেশ ঝুরঝুরা, নরম ও সমতল করে নিতে হয়। উন্নতমানের বড় বাগান করতে হলে বর্ষার ঠিক আগে মে-জুন মাসে বেড তৈরি করতে হয় যাতে বেডের খৈল ও অন্যান্য উপাদান ভালভাবে পচে অক্টোবর গাছ লাগানোর উপযোগী হয়। বেডের আশে পাশে যাতে পানি না জমে সে জন্য জল নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হয়।
ছোট বাগানের জন্য গাছ রোপণের অন্তত ৩ সপ্তাহ আগে বেড তৈরি করলেই চলে। আবহাওয়া শুকনো থাকলে বেড তৈরীর পর পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিলে খৈল ও জৈব সার পচে যাবে এবং বেড গাছ লাগানোর উপযোগী হবে।
বেড তৈরির পর চারা রোপণের জন্য বিভিন্ন জাতের জন্য বিভিন্ন দূরত্বে গর্ত করতে হয়, যেমন- ডোয়ার্ফ পলিয়েন্থা ০.৫ মিটার, ফ্লোরিবান্ডা ও চায়না ০.৬৫ মিটার, হাইব্রিড টি ১ মিটার, হাইব্রিড পারপেচুয়েল, মন ও দামাস্ক ও টি ১.৫০ মিটার, নয়সেট-২.০ মিটার ও লতা গোলাপ ২.৫০ মিটার।
বিভিন্ন জাতের গাছ সারিতে লাগাতে হয়, এতে সার প্রয়োগ, পানি সেচ ও অন্যান্য পরিচর্যার কাজের সুবিধা হয়। রোপণের জন্য ১ মিটার গভীর ও ০.৬৫ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট গোলাকার গর্ত করতে হয়। গর্ত করার সময় উপরের ২০-২২ সেঃমিঃ মাটি আলগা করে রেখে বাকী মাটির সাথে মাটির পরিমানের এক তৃতীয়াংশ সমান পচা গোবর, আধা কেজি গুঁড়ো খৈল, ১৮ কেজি টি.এস.পি ভালভাবে মিশিয়ে দিয়ে গর্তটি ভরাট করতে হবে। তারপর আলাদা করে রাখা মাটির সাথে কম্পোস্ট, সবুজ সার ইত্যাদি জৈব সার মিশিয়ে গর্তে দিতে হবে এবং দেখতে হবে যাতে গর্তের স্থান পাশের জমি থেকে উঁচু হয়।
যদি বেড তৈরি দু’একদিনের মধ্যে গাছ লাগানো প্রয়োজন হয়, তাহলে কম্পোস্ট বা পচা গোবর সার বেশি করে দিয়ে গাছ লাগানো উচিত। গাছ লেগে যাবার পর খৈল ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। গোবর সার বেশি ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার না দিলেও চলবে। এ ক্ষেত্রে খৈল ৪/৫ দিন ভিজিয়ে জলের সাথে মিশিয়ে গোড়ার চারপাশে দিয়ে ৩/৪ দিন হালকা করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
চারা রোপণঃ
সাধারণত গোলাপের চারা পলিথিনের ব্যাগে থাকে বলে চারা রোপণের সময় ব্যাগটি ছিঁড়ে ফেলে দিতে হয়। তারপর গর্তের মধ্যে গাছটি এমনভাবে ঢুকাতে হবে যাতে চারাটির গোড়া আগে যতটুকু মাটির নীচে ছিল, গর্তে লাগানোর পরও যেন ঠিক ততটুকুই মাটির নীচে থাকে। চারা গাছ গর্তের মধ্যে বসানোর পর কিছু পচা গোবর ও ভিটির বালি বা দো-আঁশ মাটি ভাল করে মিশিয়ে শিকড়ের চারিপাশে ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে ভাল করে চেপে দিয়ে পানি দিতে হয়। চারা লাগানোর পর প্রথম রোদ থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়। গাছ লেগে গেলে মাটি বুঝে পানি দিতে হয়। বেলে মাটির বেলায় ঘন ঘন আর এঁটেল মাটি বা ভারি মাটির বেলায় ২/৩ দিন পর পর পানি দেয়া দরকার। তবে কোনক্রমেই যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গোলাপের শিকড়ে যদি শক্ত মাটি থাকে, তাহলে গাছ লাগানোর আগে পানি দিয়ে ভিজিয়ে মাটি নরম করে নিতে হয় যাতে শিকড় ঠিকমত বাড়তে পারে।
যেসব চারার গোড়ায় মাটি থাকে না, সেসব চারা মাটিতে লাগানোর আগে ২/৩ ঘন্টা পানি ভিজিয়ে তারপর লাগাতে হয়।
পুরানো গাছ জায়গা বদল করে লাগাতে হলে প্রথমত কচি ডগা, মরা ডাল ইত্যাদি ধারালো ছুরি বা সিকেচার দিয়ে ভাল করে ছেঁটে নিতে হয়। তারপর শিকড়ের চারপাশে বেশ জায়গা নিয়ে খুঁড়ে গাছটিকে এমন ভাবে উঠাতে হবে যাতে খুব কম সংখ্যক শিকড় কাটে। গাছটিকে একই পদ্ধতিতে গর্তে লাগিয়ে প্রচুর পানি দিতে হবে এবং অন্তত ২/৩ দিন ছায়া দিতে হবে। শুকনো মৌসুমে গরমের দিনে পুরানো গাছের জায়গা বদল না করাই ভাল।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ
সার প্রয়োগঃ
গাছের প্রয়োজন অনুসারে সময় সময় সার দিতে হয়। তবে অক্টোবওে গাছ ছাঁটাইয়ের সময়ে একবার শীতের শেষে মার্চ মাসে আরেক বার সার দিতে হয়। ছাঁটাইয়ের সময় সার না দিয়ে ছাঁটাইয়ের ১০-১২ দিন পরে সার প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ছাঁটাইয়ের আগে প্রতি ২/৩ কেজি শুকনো গোবর সার, ৫০ গ্রাম টি.এস.পি ও ৫০ গ্রাম পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। বেডের উপরের ১০ সেঃমিঃ পরিমাণ মাটি সরিয়ে নিচের মাটি কিছুটা আলগা করে সার গুলো মাটির সাথে সাবধানে মিশিয়ে দিতে হবে যেন শিকড়ের কোন ক্ষতি না হয়। গোলাপের জন্য হাঁস-মুরগি বা কবুতরের বিষ্ঠা উত্তম সার।
সার পানি দিয়ে গুলে ব্যবহার করলে ভেজা মাটিতে দিতে হয়। রাসায়নিক সার গাছ খুব তাড়াতাড়ি গ্রহন করে। শুকনো মাটিতে তরল সার দিলে অতিরিক্ত কড়া হবার দরুন গাছের ক্ষতি হতে পারে। তাই তরল সার দিতে হবে মাটি ভেজা অবস্থায়। তরল সার দেবার পর পানি সেচ দিতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় মাটিতে পর্যাপ্ত সার থাকা সত্ত্বেও ছাঁটাইয়ের পর গাছের পাতা সতেজ হচ্ছে না বা গাছ ঠিকমত বাড়ছে না। এ ক্ষেত্রে পাতার মাধ্যমে সার প্রয়োগ করে ভাল ফল পাওয়া যায়।
অঙ্গ ছাঁটাইকরণঃ
গোলাপ গাছের পুরানো ডাল বেশি দিন ফুল দিতে চায় না। প্রতি বছরই গাছের গোড়া থেকে বা পুরানো ডাল থেকে নতুন ডাল বের হয়। গাছের অঙ্গ ছাঁটাই করে এসব নতুন ডালকে সুষ্টুমত বাড়তে দিতে হয়। ফুলের মৌসুমের আগেই অর্থাৎ অক্টোবর মাসেই অঙ্গ ছাটাই করার ভাল সময়। ফুলের আকার বড় করতে, নতুন শাখাকে ভাল করে বিস্তৃত করতে সাহায্য করার জন্য এবং ক্ষত ও রোগাক্রান্ত ডাল কেটে বাদ দেবার জন্য অঙ্গ ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন। ধারালো সিকেচার বা বিশেষ এক প্রকার ছুরি দিয়ে অঙ্গ ছাঁটাই করতে হয়। ডাল কাটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন থেঁৎলে না যায়। এতে গাছে ছত্রাক রোগের আক্রমণ হতে পারে।
সাধারনত তিন রকমের ছাঁটাই করা হয়, হালকা ছাঁটাই, মাঝারি ছাঁটাই ও কঠোর ছাঁটাই। লম্বা ডালের এক তৃতীয়াংশ কাটা বা মরা ও অসুস্থ ডাল কেটে ছেঁটে ফেলাকে হালকা ছাঁটাই, মাটির উপরে ৩০-৩৫ সেঃমিঃ রেখে ছাঁটাই করাকে মাঝারি ছাঁটাই ও মাটির উপরে ডালের উচ্চতা ১৪-২০ সেঃমিঃ রেখে ছাঁটাই করাকে শক্ত ছাটাই বলা হয়। কোন ধরনের ছাঁটাই হবে তা নির্ভর করে পারিপার্শ্বিকতা, গাছ ও মাটির রকম ভেদের উপর। বালি প্রধান মাটিতে ক্রমাগত কঠোর ছাঁটাই করলে গাছ মারা যেতে পারে। তবে মাটি যদি ভাল হয় এবং প্রদর্শনীর জন্য বড় ফুল ফোটাতে হয় তাহলে কঠোর ছাঁটাই প্রযোজ্য। অন্য ক্ষেত্রে মাঝারি ছাঁটাই করতে হয়। মাঝারি ছাঁটাইয়ের ফুল খুব বড় হয় না বটে, তবে বেশী ফুল পাওয়া যায়। ছাঁটাইয়ের পর কাটা অংশে ‘প্রুনিং পেইন্ট’ লাগাতে হবে, নতুবা কাটা অংশ দিয়ে পোকার আক্রমন ও তৎপরে ছত্রাকের আক্রমন ঘটতে পারে। দেশীয় গোলাপে কাটা স্থানে অবশ্য গোবর লাগানোই উত্তম। প্রুনিং পেইন্ট তৈরির ফরমূলাঃ পাইরিফস বা পাইরিবান ১ ভাগ, কপার কার্বনেট ৪ ভাগ, লাল লেড ৪ ভাগ এবং তিষির তেল ৫ ভাগ।
পোকা-মাকড় দমনঃ
যেসব উল্লেখ যোগ্য পোকা-মাকড় গোলাপ গাছকে আক্রমণ করে তা নিন্মে আলোচনা করা হলো।
উইপোকাঃ কাটিং লাগাবার পর নতুন শিকড় বের হবার আগেই পুরান শিকড়গুলোকে নষ্ট করে দেয়।
দমন ব্যবস্থাঃ মাটিতে উই পোকা থাকার সম্ভাবনা থাকলে পাইরিফস বা উপযুক্ত কীটনাশক দিয়ে মাটি শোধন করে নিলে উই পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।
লাল ক্ষুদে মাকড়সাঃ এ পোকা পাতার নিচের পিঠে থেকে পাতার রস চুষে খায় বলে গাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পাতর উপরের পিঠে পিন ফোটানো দাগ এবং আক্রান্ত পাতা ও ডালে সুক্ষ্ম জাল দেখা গেলে এদের আক্রমণ সনাক্ত করা যায়। আক্রমণ বেশী হলে সবুজ রং হালকা হয়ে যায় এবং পাতা কুঁকড়িয়ে যায়। অনেক সময় গাছ মারাও যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ সংখ্যায় কম থাকতেই লাল খুদে মাকড়সা দমন করতে হয়, নতুবা পরে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। কেলথেন-৪২, থিওভিট-৮০, ইথিওন-৪৬.৫ ইসি প্রভৃতি কীটনাশকের যে কোন একটি পানির সংগে নির্দিষ্ট পরিমাণ মিশিয়ে পাতার উল্টো পিঠে স্প্রে করে এদের দমন করতে হয়। শুধুমাত্র ঠান্ডা পানি জোরে সেপ্র করেও এদের দমন করা যায়।
শ্যাফার বিটলঃ এ পোকা বড় ও লালচে রং এর। রাতের বেলা গাছের পাতা খেয়ে ঝাঁঝরা করে দেয়, ফুলের পাপড়ি ও রেনু খায় এবং চারা গাছের বৃদ্ধিতে বিশেষ ক্ষতি করে। বর্ষাকালেই এ পোকার আক্রমন বেশী হয়। এ পোকা মাটিতে ডিম পাড়ে এবং ক্রীড়া গোলাপের শিকড় খেয়ে ক্ষতি করে।
দমন ব্যবস্থাঃ পাইরিফস, পাইরিবান বা উপযুক্ত কীটনাশক দিয়ে কীটনাশক দিয়ে মাটি শোধন করলে কীড়া মারা যায়। রাতের বেলা হাতে বেছে পোকা ধরে মেরেও এ পোকা দমন করা যায়।
শুঁয়ো পোকাঃ এরা গাছের পাতা খেয়ে ক্ষতি করে।
দমন ব্যবস্থাঃ পোকা অল্প ও বড় আকারের হলে ধরে মেরে ফেলা সহজ। কিন্তু আকারে ছোট ও সংখ্যায় বেশি হলে রিপকর্ড ১০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ১.১ মিলি বা যেকোন স্পর্শ বিষ স্প্রে করতে হয়। একবারে দমন না হলে ২/৩ দিন পর আবার স্প্রে করার সময় আশে পাশের গাছ ও ঘাসে স্প্রে করতে হয়।
ডিগার বোলতাঃ ছাঁটাইয়ের পর অনেক সময় এরা ডালের কাটা অংশ দিয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ভিতরে গিয়ে বাসা বাঁধে। এই ক্ষত দিয়ে গাছ ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং পরে ডাইব্যাক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।
দমন ব্যবস্থাঃ ডাল ছাঁটাইয়ের পর কাঁটা অংশে প্রুনিং পেইন্ট লাগিয়ে এ পোকা প্রতিরোধ করা যায়।
থ্রিপসঃ মার্চ হতে এপ্রিল পর্যন্ত গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় থ্রিপসের আক্রমণ হয়। এরা ঝাঁক ধরে এসে আক্রমণ করে এবং অল্প সময়েই ফুলের কুঁড়ি ও অপরিণত ডগার রস চুষে খেয়ে গাছের বিশেষ ক্ষতি করে। ফলে ফুর কুঁচকানো অবস্থায় ফোটে বা ফুটতেই পারে না। কচি ডগার পাতা কুঁকড়ে যায়। আক্রান্ত ডগা ও ফুল পরীক্ষা করলে পরিণত ও অপরিণত থ্রিপস দেখা যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ আক্রান্ত ডগা এবং ফুল কেটে পুড়িয়ে ফেলে এবং মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি নামক কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২.০ গ্রাম হারে পানিতে মিশিয়ে সপ্তাহে একবার করে ২/৩ বার পরে দু সপ্তাহ পর একবার করে নিয়মিত স্প্রে করতে হয়।
জাব পোকাঃ জাব পোকা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে পাতা, কচি ডগা ও ফুলের রস চুষে খেয়ে ক্ষতি করে।
দমন ব্যবস্থাঃ এ পোকা দমনের জন্য ২মিলি লিটার ম্যালাথিয়ন প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
রোগঃ
গোলাপ গাছে ছত্রাকজনিত ও খাদ্যের অভাবজনিত রোগ দেখা যায়। ছত্রাকজনিত রোগ ও প্রতিকার নিন্মরূপঃ
ডাইব্যাকঃ রোগাক্রান্ত গাছের ডাল বা কান্ড মাথা থেকে কালো হয়ে মরতে শুরু করে। এ লক্ষণ ক্রমেই কান্ডের মধ্য দিয়ে শিকড় পর্যন্ত পৌঁছে এবং সম্পূর্ণ গাছ মারা যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ ডাইব্যাক শুরু হলে রোগাক্রান্ত বেশ নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলে দিয়ে কাটা মাথায় প্রুনিং পেইন্ট লাগিয়ে দিতে হয়, আক্রান্ত অংশ কেটে পুড়িয়ে দিতে হয় এবং যে সিকেটিয়ার বা ছুরি দিয়ে আক্রান্ত গাছ কাটা হয় তা স্পিরিট দিয়ে মুচে দিয়ে অন্য গাছ কাটতে হয়।
পাউডারী মিলডিউঃ শীতের শেষের দিকে পাতায় সাদা সাদা পাওডারের মত দেখা যায়। এগুলো ছত্রাকের অনুজীব। রোগ বেশী হলে আক্রান্ত গাছের কচি পাতা ও ডগা এসব অনুজীব দ্বারা একেবারে ঢেকে যায়। কুঁড়ি ফোটে না, নষ্ট হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ রোগাক্রান্ত ডগা ও পাতা তুলে পুড়িয়ে দিতে হবে এবং হেকোনাজল ৫ ইসি বা ডাইথেন এম-৪৫ অথবা ইন্ডোফিল এম-৪৫ দিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফুল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনাঃ
সদ্য ব্যবহারের জন্য আধফোটা গোলাপ ফুলের কুড়ি কাটা উচিত। কিন্তু কয়েক দিন পর ব্যবহারের লক্ষ্যে গোলাপ ফুলের কুঁড়ির পর্যায়ে আসার পর কাটা উচিত। কাটা ফ্লাওয়ার হিসাবে ফুল লম্বা পুষ্প দন্ড কয়েকটি পাতা সহ ধারালো ছুরি দিয়ে কাটতে হয়। ফুল কাটার কাজটি খুব সকালে অথবা শেষ বিকেলে করা উচিত। ফুলদানীর পানিতে ৩% চিনি ও ৬০০ পিপি এম ৮- HQC এর দ্ররণে ফুল রেখে আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করা সম্ভব। বাজারের চাহিদার উপর ফুলের প্যাকেজিং নির্ভরশীল। অনেক উৎপাদনকারী নিকটস্থ স্থানীয় বাজারের জন্য প্যাকেজিং ছাড়াই ফুলের আঁটি বা গোছা বাজারে সরবরাহ করে থাকে।কিছু কিছু ক্ষেত্রে আঁটিসমূহ খবরের কাগজ দ্বারা আবৃত থাকে।
ফলনঃ
গোলাপের ফলন প্রধানতঃ আবহাওয়া ও জাতের উপর নির্ভরশীল। আদর্শ উৎপাদন পরিবেশে লম্বা কান্ডযুক্ত জাত প্রতি বছর গাছ প্রতি প্রায় ১৫ থেকে ৩০ টি ফুল উৎপন্ন করে। গ্রীষ্মকালীন সময়ে বিশেষ করে যখন ফুলের মান এবং বাজার দর কমে যায়, তখন কুঁড়ি ছাঁটাই করে গাছের দৈহিক গঠন ও বৃদ্ধি ঠিক রাখতে হয়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন