পৃথিবীর অবাক সৃষ্টি হল প্রজাপতি। গবেষকদের ধারণা প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর আগেও প্রকৃতিতে প্রজাপতির অস্তিত্ব ছিল। বর্ণিল এ প্রাণীটির বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বিস্ময় জাগায় ওয়েস্টার্ন ব্ল– পিগমি বাটারফ্লাই বা পশ্চিমা নীল পিগমি প্রজাপতি। নীল রঙের এ প্রজাপতির নামের আগে পশ্চিমা শব্দটি থাকলেও উত্তর আমেরিকার পাশাপাশি এদের দেখা মেলে হাওয়াই ও মধ্যপ্রাচ্যে।
তবে ক্ষারীয় অঞ্চল এবং মরুভূমিতে থাকতেই এরা বেশি পছন্দ করে। ধারণা করা হয় বিশ্বে এরাই সবচেয়ে ছোট প্রজাতির প্রজাপতি। এদের ডানার বিস্তৃতি প্রায় ১২ মিলিমিটার। ডানা তামাটে বাদামি রঙের, উপরের দিক নীলাভ এবং নিচের দিকে সাদা চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও ডানার প্রান্তগুলোতে রয়েছে সাদা রঙের চিহ্ন যা নীল পিগমি প্রজাপতিকে করে তুলেছে আকর্ষণীয়। প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী পিগমি প্রজাপতি নিজস্ব হোস্ট প্লান্ট যেমন পিগউইড বা সল্টবুশ গাছে ডিম দেয় এবং তা থেকে হলদে সবুজ রঙের শুঁয়োপোকার জন্ম হয়। জীবনচক্রের পরবর্তী বিভিন্ন ধাপ পার হয়ে অবশেষে নীল ছটার প্রজাপতি হয়ে আকাশে পাখা মেলে। এদের আয়ুষ্কাল মাত্র কয়েকদিন।
বাংলাদেশের এক টিভি অনুষ্ঠানে ‘আল্লাহ হাফেজ’ নিয়ে একজন অধ্যাপকের মন্তব্য নিয়ে অনলাইনে তুমুল আলোচনা-বিতর্ক চলছে।
টিভি চ্যানেল ডিবিসির এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন,”আগে আমরা ‘স্লামালেকুম’ বলতাম … এখন যেভাবে স্ট্রেস দিয়ে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে এটা এই পুরো বিএনপি-জামাত মাসলার মধ্যে শেখানো হয়েছে। কিংবা ‘আল্লাহ হাফেজ’ …. যে ‘খোদা হাফেজ’ আমরা বলতাম খুব সহজে, এটা আল্লাহ হাফেজ… এগুলো দিয়ে কিন্তু একটা ডিসকোর্স তৈরি করা হয়েছে।”
অধ্যাপক জিয়া রহমানের এই মন্তব্য প্রচার হবার পরই শুরু হয় সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা-বিতর্ক।
সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বলছেন, স্পষ্ট করে আসসালামু আলাইকুম বলায় দোষের কিছুই নেই, শুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজি বলা দোষের না হলে শুদ্ধভাবে এই ঐতিহ্যগত সম্ভাষণ উচ্চারণ করা দোষের হবে কেন? তারা বলছেন, ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলাটাও তাদের মতে ‘খোদা হাফেজ’ বলার চাইতে ধর্মীয় দিক থেকে অধিকতর সংগত।
অন্য অনেকের মত, বাঙালি মুসলিমদের সম্ভাষণ ও বিদায় জানানোর যে চিরাচরিত রীতি তা থেকে মানুষ বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে – এবং তার পেছনে আছে সৌদি-অনুপ্রাণিত ওয়াহাবি ভাবধারার ইসলামী মতাদর্শের উত্থান। এর সাথে কেউ কেউ উগ্রপন্থা বা জঙ্গিবাদের সম্পর্কও দেখছেন।
কিন্তু পরস্পরকে সম্ভাষণ ও বিদায় জানাবার এই মুসলিম রীতিগুলো আসলে কোন পটভূমিতে সৃষ্টি হয়েছে?
পৃথিবীর অন্য মুসলিম দেশে কি ‘আল্লাহ হাফেজ’ বা ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলা হয়?
মুসলমানরা কীভাবে পরস্পরকে সম্ভাষণ করেন
সাধারণভাবে বলা যায়, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে মুসলমানদের মাতৃভাষা যাই হোক না কেন সাধারণত: তারা পরস্পরকে সম্ভাষণ করেন ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে।
এটা ঠিক যে কথাটা আগে যেমন একটু সংক্ষেপ করে স্লামালেকুম বলা হতো, আজকাল অনেকে তা না করে পুরো কথাটা স্পষ্ট করে উচ্চারণ করেন।
তা ছাড়া অনেককে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহে ওয়া বারাকাতাহু’ বলতেও শোনা যায়, তবে এটাকে একটু ‘আনুষ্ঠানিক’ বলা যেতে পারে – সাধারণ কথোপকথনের সময় এটা কমই বলতে শোনা যায়।
আর বিদায়ের সময় এ অঞ্চলে ‘খোদা হাফেজ’ বা ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলা হয়।
মরক্কো থেকে ইরাক পর্যন্ত বিশ্বের যে বিস্তীর্ণ ভুখন্ডে আরবি ভাষাভাষীরা বাস করেন – তারা একে অপরের সাথে দেখা হলে ‘আসসালামু আলাইকুম’, এবং বিদায় নেবার সময় ‘মা’সালামা’ বলেন, তবে অঞ্চলভেদে কিছু স্থানীয় রীতিও আছে।
ফারসি-ভাষী ইরানে সাক্ষাতের সময় পরস্পরকে ‘সালাম’ এবং বিদায় নেবার সময় ‘খোদা হাফেজ’ বলা হয়।
আল্লাহ হাফেজ-এর উৎপত্তি কোথায়, কখন, কীভাবে?
বলা যেতে পারে, মুসলিমদের মধ্যে বিদায়ের সময় ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলার রীতি শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই আছে। এখান থেকেই হয়তো তা এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে।
তাহলে প্রশ্ন, ‘আল্লাহ হাফেজের’ উৎপত্তি হলো কোথায়, কখন, কীভাবে?
বাংলাদেশে ১৯৮০র দশকে প্রথম ‘আল্লাহ হাফেজ’ কথাটি শোনা যেতে থাকে। এর আগে বাঙালি মুসলমানরা প্রায় সার্বজনীনভাবেই বিদায়ের সময় খোদা হাফেজ বলতেন।
‘আল্লাহ হাফেজ’ কথাটির উৎপত্তি নিয়ে অনেক লেখক-গবেষকই বিভিন্ন সময় লিখেছেন।
পাকিস্তান ও মধ্য এশিয়া বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক সৈয়দ হামাদ আলি ২০১২ সালে ব্রিটিশ দৈনিক দি গার্ডিয়ানে এক নিবন্ধে লিখেছেন, পাকিস্তানে ১৯৯০এর দশকেও অধিকাংশ লোকই বিদায় নেবার সময় ‘খুদা হাফিজ’ বলতেন, কিন্তু এখন সবাই – ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে ফ্যাশন মডেল বা টিভির উপস্থাপক পর্যন্ত – সবাই ‘আল্লাহ হাফিজ’ বলছেন।
তিনি মন্তব্য করেন, এ পরিবর্তন পাকিস্তানের উদারপন্থীদের অস্বস্তির কারণ হয়েছে, তাদের মতে এটা পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একটা পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে।
সৈয়দ হামাদ আলি বলছেন, ‘আল্লাহ হাফিজ’ কথাটা প্রথম ব্যবহার শুরু হয় পাকিস্তানে ১৯৮০র দশকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের শাসনকালে।
তার মতে, ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল পিটিভিতে একজন সুপরিচিত উপস্থাপক প্রথম ‘আল্লাহ হাফিজ’ কথাটা ব্যবহার করেন। তবে জনসাধারণের মধ্যে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে আরো অনেক পরে।
মি. আলি লিখেছেন, এর পেছনে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, ফারসি শব্দ ‘খোদা’র অর্থ ‘ঈশ্বর’ যা যেকোন ধর্মের ঈশ্বর বোঝাতে পারে, তাই আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করা উচিত যা শুধুমাত্র মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে উক্ত সৃষ্টিকর্তার নাম।
তবে তিনি আরো লেখেন, মধ্যপ্রাচ্যের এক কোটি আরবি-ভাষী খ্রিস্টানও ঈশ্বর বোঝাতে ‘আল্লাহ’ শব্দটিই ব্যবহার করেন এবং আরবরা কখনোই পরস্পরকে বিদায় জানানোর সময় ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলেন না।
আরবরা সম্ভাষণের সময় কি বলেন?
এ নিয়ে কথা হয় বিবিসির আরবি বিভাগের সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-কাসিরের সাথে।
তিনি বলছিলেন, মরক্কো থেকে শুরু করে ইরাক পর্যন্ত এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অনেকগুলো দেশের অভিন্ন ভাষা আরবি, কিন্তু প্রতিটি দেশেই আরবি ভাষা কিছুটা আঞ্চলিক রূপ নিয়েছে। সেটা উচ্চারণের টান এবং শব্দ-বাক্য ব্যবহারের ভিন্নতা থেকেও বোঝা যায়।
কিন্তু সাধারণভাবে সব আরবের মধ্যেই পরস্পরকে প্রথম সম্ভাষণের রীতি হলো ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলা এবং বিদায় জানাবার সময় ‘মা’সালামা’ বলা।
মোহাম্মদ আল-কাসির নিজে মিশরের লোক।
তিনি বলছিলেন, মিশরে এমনকি আরব খ্রিস্টানরাও পরস্পরের সাথে দেখা হলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলেন। সে হিসেবে হয়তো এটাকে কোন বিশেষ ধর্মীয় রীতি না বলে ‘আরব রীতি’ বলা যায়।
আরব বিশ্বের কোথাও কোথাও অন্যভাবেও স্থানীয় রীতিতে সম্ভাষণ বা বিদায় জানানো হয়।
বিদায় নেবার সময় ‘মা’সালামা’ বলা মোটামুটি সব আরব দেশেই প্রচলিত।
বিদায় নেবার সময় ‘মা’সালামা’ বলা ছাড়াও আরবি ভাষাতে ভিন্নভাবে বিদায় জানানোর রীতিও আছে।
মোহাম্মদ আল-কাসির বলছিলেন, বিদায় নেবার সময় আরবরা কখনো কখনো “আল্লাহ ইয়া’আতিক আল’আসিয়া” – এটাও বলে থাকেন।
তবে তারা কেউই বিদায় নেবার সময় ‘আল্লাহ হাফেজ’ ব্যবহার করেন না।
কিন্তু ‘আল্লাহ আপনার হেফাজত করুন’ এরকম বাক্য কথাবার্তার মধ্যে প্রাসঙ্গিক জায়গায় ব্যবহার করা হয়।
আরবদের মধ্যে সম্ভাষণ হিসেবে ‘আহ্লান’ বা ‘আহ্লান ওয়া সাহ্লান’ (অনেকটা ইংরেজি হ্যালো’র মত), বা সাবাহ্ আল-খায়ের (সুপ্রভাত), বা মাসা আল-খায়ের (শুভ সন্ধ্যা) – এগুলোও বলা হয়ে থাকে।
বিদায় নেবার সময় মা’সালামা ছাড়াও আরবে ইলা’লিকা-ও বলা হয় – যার অর্থ খানিকটা ‘আবার দেখা হবে’-র মতো।
ফারসি ভাষীরা কি বলেন?
এ নিয়ে কথা হয় বিবিসি ফারসি বিভাগের সিনিয়র সাংবাদিক আলি কাদিমির সাথে।
তিনি বলছিলেন, ইরানের সর্বত্রই দুজন ব্যক্তির দেখা হলে সম্ভাষণ হিসেবে একে অপরকে বলেন ‘সালাম’, আর বিদায় নেবার সময় বলেন ‘খোদা হাফেজ’।
তবে তিনি বলছিলেন, ইরানে খুব কমসংখ্যক কিছু লোক আছেন – যাদের তিনি বিদায় জানানোর সময় আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করতে শুনেছেন। তারা ফারসি ভাষায় ‘আল্লাহ আপনাকে সুস্থ ও শান্তিতে রাখুন’ এমন একটা বাক্য বলে বিদায় জানিয়ে থাকেন।
ইরানে এবং ফারসি ভাষায় ‘খোদা’ এমন একটি শব্দ – যা সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং তা যে কোন ধর্মের ঈশ্বরকে বোঝাতেই ব্যবহৃত হতে পারে।
মধ্য এশিয়ার যেসব দেশে ফারসি বা তার কাছাকাছি ভাষাগুলো বলা হয়, যেমন আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, আজারবাইজান ইত্যাদি দেশেও বিদায়ের সময় ‘খোদা হাফেজ’ বলার প্রচলন আছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন কায়েম হবার পর থেকে ১৮৩০-এর দশক পর্যন্ত রাজদরবার ও আইন-আদালতের ভাষা ছিল প্রধানত ফারসি।
তাই ফারসি আদব-কায়দার প্রভাবেই হয়তো উপমহাদেশের মুসলিমদের মধ্যে বিদায়ী শুভেচ্ছা হিসেবে ‘খোদা হাফেজ’ বলার’ প্রথা চালু হয়।
১৯৮০র দশকে ‘আল্লাহ হাফেজ’ চালু?
প্রশ্ন হলো, ১৯৮০র দশকে পাকিস্তানে ‘আল্লাহ হাফেজ’ চালু হবার কথাই বা কতটা সঠিক?
পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং উর্দু ভাষাবিদ ড. রউফ পারেখের মতে, ১৮০ বছর আগেও উর্দু ভাষায় ‘আল্লাহ হাফিজ’ কথাটি ছিল ।
সম্প্রতি ডন পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি লেখেন, উর্দু ভাষার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অভিধান উর্দু লুঘাতে বলা হচ্ছে, বিদায়ী শুভেচ্ছা অর্থে ‘আল্লাহ হাফিজ’ কথাটি প্রথম ব্যবহারের নজির পাওয়া যায় ১৯০১ সালে।
ড. পারেখ বলছেন, তারও আগে ১৮৮০ এবং ১৮৪৫ সালের পুরোনো উর্দু অভিধানেও ‘আল্লাহ আপনাকে সুরক্ষা দিন’ অর্থে ‘আল্লাহ হাফিজ’ বাক্যবন্ধটির উল্লেখ আছে, এবং উর্দু কবি হাজিম ১৮৬৮ সালে তার কবিতায় ‘আল্লাহ হাফিজ’ ব্যবহার করেছেন।
ড. পারেখের সাথে আমার যোগাযোগ হয় ইমেইলে।
তিনি জানালেন, উনিশশ’ আশির দশকে ‘আল্লাহ হাফিজ’ কথাটা প্রথম ব্যবহার হয় এমন কথা ভুল, কারণ লোকের মুখে কথাটা ব্যবহৃত না হলে উনবিংশ শতাব্দীর কবি এটা ব্যবহার করতেন না, অভিধানেও তা থাকতো না।
ড. পারেখের কথায় মনে হয়, ‘আল্লাহ হাফেজ’ কথাটার উৎপত্তি সম্ভবত পাকিস্তানেই – উর্দু ভাষার পরিমণ্ডলের মধ্যে।
তবে এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয় সেদেশে প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হকের সময় থেকে।
মুসলিম উম্মাহর স্মৃতি বিজড়িত স্থান ইরাকের নাজাফ ও কারবালা। কারবালায় শাহাদাত বরণ করেন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু। প্রত্যেক বছর ইরাকের নাজাফ থেকে কারবালার পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন অনেক শিয়া-সুন্নি মুসলমান ও দর্শনার্থীরা। নাজাফ থেকে কারবালা পর্যন্ত দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার পথ আরামে ভ্রমণ করার জন্য রাস্তার দুই পাশে গাছ লাগানোর ব্যয় বহুল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী মোহাম্মাদী দরবার।
পাকিস্তানের করাচিতে বসবাসরত সাবেক শিল্পপতি ব্যবসায়ী মোহাম্মদী দরবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ইমাম হুসাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহির স্মৃতির স্মরণে অনেক শিয়া-সুন্নি মুসলমান নাজাফ থেকে কারবালার পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
তিনি জানান, ‘আমার স্ত্রী ও নাতনি ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের এ যাত্রায় অংশগ্রহণ করে। যাত্রাপথে মরুভূমি উষ্ণ বায়ু ও রোদের তাপে তাদের মখু ঝলসে যায়। তাদের দেখেই বুঝতে পারি যে এ পথে যে বাতাস প্রবাহিত হয়, তা কতটা উষ্ণ।
তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নাজাফ থেকে কারবালা পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে ছায়াদানকারী গাছ লাগানো ব্যবস্থা করবো।
কেননা এ পথে প্রত্যেক বছর লাখ লাখ শিয়া-সুন্নি জিয়ারতকারী নাজাফ থেকে কারাবালায় পায়ে হেঁটে যায়। দীর্ঘ এ পথের দুই পাশে তেমন কোনো ছায়াদানকারী গাছ নেই বললেই চলে।
তার আত্মীয়-স্বজনকে দেখেই তার এ বিষয়টি নজরে আসে। তা থেকেই তিনি দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার পথে ছায়াদানকারী গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। যাতে অন্ততঃ দর্শনার্থীদের গরমের কষ্ট দূর হয়।
নাজাফ থেকে কারবালা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি ইরাক সফর করেন। ইতিমধ্যে তিনি এ অঞ্চলের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গাছ লাগানোর অনুমতিও পেয়েছেন।
ব্যবসায়ী মোহাম্মাদি দরবার এ দীর্ঘ পথে শুধু গাছ লাগিয়ে তার দায়িত্ব সম্পন্ন করবেন না, বরং তা রক্ষণাবেক্ষণেরও দায়িত্ব নেবেন তিনি। যাতে গাছগুলো বেঁচে থাকে।
ইতিমধ্যে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে নাজাফে কিছু চারা রোপন করেছেন এবং এগুলোর পরিচর্যাও গ্রহণ করেছেন। নাজাফের বাগানে ও রাস্তার পাশে চারাগুলো সুন্দরভাবেই বেড়ে ওঠছে বলেও জানান তিনি।
পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রথম চালানে ৮ প্রজাতির ৯ হাজার ৮০০ চারা পাঠানো হয়। এসব চারা গাছের কোনো কোনোটির বয় প্রায় ৮ মাস। ইরাকের অভ্যন্তরীন চলমান পরিস্থিতির জন্য গাছের প্রথম চালান পাঠাতে প্রায় একমাস দেরি হয়।
উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানের করাচি থেকে এসব চারা ইরান হয়ে সড়ক পথে ইরাক নেয়া হবে। পুরো শীতকাল ইরাকের রাজধানী বাগদাদের একটি নার্সারিতে রাখা হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মার্চ থেকে শুরু হবে চারা রোপনের কাজ। গাছের চারাগুলোর সঙ্গে ১২ জনের একটি প্রশিক্ষিত কর্মীদলও পাঠানো হয়েছে ইরাকে। যারা চারা গাছগুলো দেখাশোনা করবে।
নাজাফ থেকে কারবালা পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে চারা গাছ রোপনে প্রায় ৩ বছর সময় লাগবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৫০ কোটি পাকিস্তানি রুপী বা প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার মার্কিন ডলার খরচ হবে।
তবে এ প্রকল্প গ্রহণকারী ৮৫ বছরের ব্যবসায়ী মোহাম্মাদি দরবার জানান, ‘রাস্তার দুই পাশে ছায়াদানকারী গাছের সুন্দর দৃশ্য আমি দেখে যেতে পারবো কিনা তা অনিশ্চিত। আল্লাহ তাআলা তাকে এ বিশাল কাজ হাতে নেয়ার সৌভাগ্য দান করায় তিনি আল্লাহ পাকের লাখো শোকরিয়া আদায় করেন।’
তিনি আরও জানান, ‘ প্রকৃতি ও মানুষের উপকারে গাছ লাগানোর মহতি কাজে নিজেকে শামিল করার চেয়ে ভালো কাজ আর কি হতে পারে!’
ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে বাংলাদেশে সৃষ্ট বন্যার জন্য সরকারের পররাষ্ট্রনীতিকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
তিনি বলেছেন, ভারত আন্তর্জাতিক রীতিনীতি উপেক্ষা করে অভিন্ন ১৫৪টি নদীতে বাঁধ ও টানেল নির্মাণ করে নদীর গতিধারা নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশের জনগণ প্রতিবছর ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় আক্রান্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের নীরবতা রহস্যজনক।
মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) লেবার পার্টির দফতর সম্পাদক আমানুল্লাহ মহব্বত স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেন।
মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ভারত বর্ষাকালে ফারাক্কার গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে বন্যায় চুবিয়ে মারে আর শুকনা মৌসুমে ফারাক্কার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে বাংলাদেশকে শুকিয়ে সাহারা মরুভূমিতে পরিণত করে। সরকার এসব জাতীয় স্বার্থ নিয়ে কথা বলছে না।
ইরান বলেন, ভারত অভিন্ন নদীগুলোর বাঁধ-ব্যারেজ খুলে দেয়ায় উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে বাংলাদেশের প্রায় ৩৪টি জেলা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়ে কোটি কোটি মানুষ বাস্তুভিটা, কৃষিক্ষেত, গবাদিপশু হারিয়ে নিস্ব হয়ে পড়েছে। অসহায় বানভাসি মানুষের বুকফাটা কান্না সরকারের দৃষ্টি আর্কষণে ব্যর্থ হয়েছে। বানভাসি মানুষ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তিনি অবিলম্বে বন্যাকবলিত জেলাগুলোকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ব্যাপক ত্রাণতৎপরতা পরিচালনার আহ্বান জানান।
বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতে এবং মূল্যবান প্রসাধনী তৈরিতে জাফরান ব্যবহার করা হয়। তাই প্রতি বছর দেশে উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে জাফরান আমদানি করা হয়। সে জন্য দেশের বাজারে জাফরানের দামও বেশি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মঞ্জুর মোর্শেদ রুমন-
জাফরান হচ্ছে প্রায় বেগুনি রঙের ছয় পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলের পুংকেশর। বৈজ্ঞানিক নাম Crocus sativus। এদের স্থানীয় নামের মধ্যে আছে স্যাফ্রন, জ্যাঁফারান, কেসার, জাফরান। পৃথিবীর সব দেশে জাফরান হয় না। স্পেন, ইতালি, গ্রিস, ইরান, কাশ্মির জাফরানের জন্য বিখ্যাত। তবে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে জাফরান চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।
জাফরান মধ্য হেমন্তের মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ঘরে তুলতে হয়। সকালে সূর্য ওঠার সময় ফুল ফোটে আর দিনের শেষে তা মলিন হয়ে যায়। একটি ফুল থেকে তিনটি পুংকেশর পাওয়া যায়। হাতে করে গাছ থেকে ফুল তুলতে হয়। তা থেকে কেশর আলাদা করতে হয়।
এক গ্রাম জাফরানের জন্য ১৫০টি ফুল দরকার। অন্য হিসাবে ১ কেজি ফুল থেকে ৭২ গ্রাম তাজা কেশর শুকিয়ে ১২ গ্রাম জাফরান পাওয়া যায়। ৪৫০ গ্রাম শুকনো জাফরানের জন্য ৫০-৭৫ হাজার ফুল দরকার। এক কেজির জন্য ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ফুল দরকার। ৪০ ঘণ্টা সময় লাগে ১ লাখ ৫০ হাজার ফুল তুলতে।
পুংকেশরগুলো বের করে তা এয়ারটাইট পাত্রে রাখা হয়। পাইকারি হিসাবে প্রতি পাউন্ড (৪৫০ গ্রাম) ৫০০ থেকে ৫ হাজার ডলারে বিক্রি হয়। এক পাউন্ডে ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ কেশর থাকতে পারে। পুরো কাজটি কায়িক পরিশ্রমে শেষ করতে হয়। অটোমেশনের কোন সুযোগ নেই। যে কারণে জাফরানের দাম বেশি।
তবে স্পেনের লা মাঞ্চা অঞ্চলের জাফরানের সুবাস সবচেয়ে ভালো। এ জাফরান দুটি ক্যাটাগরিতে পাওয়া যায়- মাঞ্চা আর ক্যুপে। মাঞ্চা প্রিমিয়াম গ্রেডে উজ্জ্বল লাল রঙের সুন্দর সুবাস রয়েছে। আর ক্যুপের স্প্যানিশ সরকারি স্বীকৃতি রয়েছে সেরা হিসাবে। ইরানি জাফরানের সুখ্যাতি তার রঙের জন্য। এটি তুলনামূলকভাবে সস্তা। তাই চায়ের মতো এটারও ব্লেন্ডিং হয়।
ইরানের রয়েছে সুপ্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। শুধুমাত্র ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাতেই আছে ইরানের বিশটি সাংস্কৃতিক স্থানের নাম। দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাংস্কৃতিক স্থাপনার ছবি এখানে:
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন