ভালো নিরামিষ জাঁদরেল আমিষকেও যেন হার মানায়। স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ জুতসই। আর অক্টোবরজুড়ে পালিত হয় নিরামিষ মাস। বানানো সহজ, স্বাদে অসাধারণ, জিবে জল আনে, এমন কয়েকটি নিরামিষ থাকছে এখানে। রেসিপি দিয়েছেন রান্নাবিদ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত সাময়িকী সানন্দার সাবেক সম্পাদক শর্মিলা বসুঠাকুর।
আলু নারকেল ঘন্ট
উপকরণ: আলু ৫০০ গ্রাম, নারকেল কোরা আধ মালা, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি সামান্য, গরমমসলাবাটা ১ চা-চামচ, জিরা আধা চা-চামচ, তেজপাতা ২টি, শুকনা মরিচ ২টি, ঘি ১ টেবিল চামচ ও তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: আলু ডুমো করে কেটে নিন। তেলে জিরা, তেজপাতা, শুকনা মরিচ ফোড়ন দিন। আলু দিয়ে ভাজতে থাকুন। লালচে হয়ে এলে মরিচবাটা, নারকেল কোরা, লবণ ও চিনি দিন। সামান্য পানির ছিটে দিন। শুকিয়ে এলে ঘি ও গরমমসলা দিয়ে নামিয়ে নিন।
বাঁধাকপির শুভ্রানি
উপকরণ: বাঁধাকপি ৩৫০ গ্রাম, কড়াইশুঁটি ২ টেবিল চামচ, কালিজিরা ফোড়নের জন্য, তেজপাতা ২টি, গোটা গরমমসলা ২ টেবিল চামচ, ময়দা ১ টেবিল চামচ, লবণ ও চিনি স্বাদমতো, কাঁচা মরিচ ২টি, ঘি ও সাদা তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপি কেটে ও ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। কড়াইতে ঘি ও তেল দিন। তেজপাতা, কালিজিরার ফোড়ন দিন। নাড়াচাড়া করে গরমমসলা দিন। বাঁধাকপি দিন। ভালো করে নেড়ে কড়াইশুঁটি, লবণ ও চিনি দিন। আগুন থাকবে কম আঁচে। ঢেকে দিন। বাঁধাকপি নরম হয়ে এলে কাঁচা মরিচ ও পানিতে গোলানো ময়দা দিয়ে নামিয়ে নিন। সবজিটি দেখতে সাদা সাদা হবে।
ভাতের বাটি চচ্চড়ি
উপকরণ: সুগন্ধি আতপ চাল ৫০০ গ্রাম, ছোট আলু ১০০ গ্রাম, কড়াইশুঁটি ৫০ গ্রাম, টমেটো ২টি, ফুলকপি ১টি, লবণ ও চিনি স্বাদমতো, তেল ১ চা-চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ, গোটা গরমমসলা সামান্য ও কাঁচা মরিচ ৩-৪টি।
প্রণালি: চাল ধুয়ে নিন। সবজি টুকরা করে নিন। সব উপকরণ এক সঙ্গে মিশিয়ে পরিমাণমতো জল দিয়ে চুলায় দিয়ে দিন। কম আঁচে ঢাকা দিয়ে রান্না করুন। পানি শুকিয়ে এলে এবং সবজি সেদ্ধ হয়ে এলে, ঘি ও গরমমসলা দিয়ে নামিয়ে নিন।
চালতায় অড়হর ডাল
উপকরণ: অড়হর ডাল ২৫০ গ্রাম, চালতার পাপড়ি ৪-৫টি, কাঁচা মরিচ ২-৩টি, জিরা ১ চা-চামচ, শর্ষে ১ চা-চামচ, শুকনা মরিচ ২টি, তেজপাতা ১টি, লবণ ও চিনি স্বাদমতো, তেল ১ চা-চামচ ও ঘি ১ চা–চামচ।
প্রণালি: চালতার পাপড়ি ধুয়ে একটু ছেঁচে নিন। লবণ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ডাল সেদ্ধ করুন। ডাল সেদ্ধ হয়ে এলে চালতা দিন। একটু পর নামিয়ে রাখুন। কড়াইতে তেল দিন। তেল গরম হলে ঘি মেশান। শুকনা মরিচ, তেজপাতা, শর্ষে, জিরে ফোড়ন দিন। গরম ডাল ঢেলে দিন। চিনি দিন। মাঝারি ঘন থাকতে নামিয়ে নিন।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন