ইসলাম
নামাজে সুরা ফাতেহার আগে কী পড়বেন?
লেখক
জাগোনিউজ২৪.কমরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজে তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে উভয় হাত বাঁধতেন তখন তিনি ক্বিরাআত শুরু করার আগে কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। এ সময় তিনি সুন্দর ও উত্তম কথার বিশেষ কিছু দোয়া পড়তেন। হাদিসের বর্ণনায়ও একাধিক দোয়া ওঠে এসেছে। নামাজের শুরুতে সুরা ফাতেহার আগে পড়ার সেই দোয়াগুলো কী?
নামাজ শুরু করার পর যে দোয়া পড়া হয় তাকে ইসতিফতাহ বা নামাজ শুরুর দোয়া বলা হয়। অনেকেই একে ছাড়া হিসেবেও জানে। নামাজে দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদার স্থানের দিকে তাকিয়ে শুরুতেই আল্লাহর প্রশংসাসহ সুন্দর ও উত্তম দোয়া তথা ছানা পড়তেন।
নামাজের শুরুতে সুরা ফাতেহার আগে এ দোয়া/ছানা পড়া খুবই জরুরি। এ সম্পর্কে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
নামাজ ভুলকারী সাহাবিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, ‘কোনো ব্যক্তির নামাজই ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তকবির দিয়েছে; আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেছে এবং যথাসম্ভব কুরআন পাঠ করেছে।’ (আবু দাউদ, মুসতাদরাকে হাকেম)
নামাজের শুরুতে পড়ার একাধিক দোয়া
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজে (তাহরিমার) তকবির দিতেন, তখন কিরাআত শুরুর আগ পর্যন্ত কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার বাবা-মা আপনার জন্য কোরবান হোক। আপনি তকবির ও ক্বিরাআতের মাঝে চুপ থেকে কী পড়েন? (তা) আমাকে বলে দিন।’ তিনি বললেন, ‘আমি বলি-
اَللّــهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَـمَا بَاعَــدْتَّ بَيْنَ الْمَشــْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اَللّهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اَللّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَاىَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ।
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বায়িদ বাইনি ওয়া বাইনা খাত্বাইয়াইয়া কামা বাআত্তা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব; আল্লাহুম্মা নাক্বিনি মিনাল খাত্বিইয়া, কামা ইউনাক্বিস সাওবুল আবইয়াদু মিনাদ-দানাস; আল্লাহুম্মাগসিল খাত্বাইয়াইয়া বিলমায়ি ওয়াছ-ছাল্লাঝি ওয়াল বারাদি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার মাঝে ও আমার গোনাহসমূহের মাঝে এতটা ব্যবধান রাখ যেমন তুমি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে ব্যবধান রেখেছো। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে গোনাহসমূহ থেকে পরিষ্কার করে দাও যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার গোনাহসমূহকে ঠান্ডা-শীলতল পানি দ্বারা ধুয়ে দাও।’ (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, দারেমি, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)
২. হজরত আবু সাঈদ ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের শুরুতে এই দোয়া পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اللّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالى جَدُّكَ وَلاَ إِلهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ : ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা ঝাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি। তোমার নাম অতি বরকতময়, তোমার মাহাত্ম অতি উচ্চ এবং তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, বায়হাকি, মুসতাদরাকে হাকেম, নাসাঈ)
হাদিসের পরিভাষায়, নিঃসন্দেহে বান্দার নামাজে সুরা ফাতেহার আগে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কথা হল ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা…’ বলা।’ (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)
৩. ফরজ ও নফল নামাজে তাকবিরে তাহরিমার পর প্রিয় নবি আরও পড়তেন-
وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيْفاً وَّمَا أَناَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ، إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَ مَحْيَاىَ وَمَمَاتِيْ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذلِكَ أُمِرْتُ وَ أَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ اَللّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لاَ إِلهَ إَلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ أَنْتَ رَبِّيْ وَ أَنَا عَبْدُكَ ، ظَلَمْتُ نَفْسِيْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِيْ، فَاغْفِرْ لِيْ ذَنْبِيْ جَمِيْعاً إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ وَاهْدِنِيْ لأَحْسَنِ الأَخْلاَقِ لاَ يَهْدِيْ لأَحْسَنِهَا إِلاَّ أَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّيْ سَيِّئَهَا لاَ يَصْرِفُ عَنِّيْ سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِيْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ وَالْمَهْدِيْ مَنْ هَدَيْتَ، أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ، لاَ مَنْجَا وَلاَ مَلْجَأَ مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ، تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَ أَتُوْبُ إِلَيْكَ।
উচ্চারণ : ওয়াঝঝাহ্তু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাঁউ ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়াবি জালিকা উমিরতু ওয়া আনা আউয়ালুল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা আন্তাল মালিকু লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ওয়া বিহামদিকা আন্তা রাব্বি ওয়া আনা আব্দুকা। জালামতু নাফসি ওয়াতারাফতু বিজাম্বি, ফাগফিরলি জাম্বি ঝামিআন; ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা। ওয়াহদিনি লিআহসানিল আখলাক্বি লা ইয়াহদি লি-আহ্সানিহা ইল্লা আন্তা। ওয়াসরিফ আন্নি সাইয়্যিআহা লা ইয়াসরিফু আন্নি সাইয়্যিআহা ইল্লা আন্তা। লাব্বাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহু ফি ইয়াদাইকা। ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা ওয়াল মাহদি মান হাদাইতা; আনা বিকা ওয়া ইলাইকা; লা মাংঝা ওয়ালা মালঝাআ মিনকা ইল্লা ইলাকা; তাবারাকতা ওয়াতা আলাইতা; আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইমাইকা।
অর্থ : ‘আমি একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর প্রতি মুখ ফিরিয়েছি যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি এ সম্বন্ধেই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের প্রথম। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ তুমি ছাড়া কেউ সত্য উপাস্য নেই। আমি তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি। তুমি আমার প্রভু ও আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর অত্যাচার করেছি এবং আমি আমার অপরাধ স্বীকার করেছি। সুতরাং তুমি আমার সমস্ত অপরাধ মার্জনা করে দাও, যেহেতু তুমি ছাড়া অন্য কেউঅপরাধ ক্ষমা করতে পারে না। সুন্দরতম চরিত্রের প্রতি আমাকে পথ দেখাও, যেহেতু তুমি ছাড়া অন্য কেউ সুন্দরতম চরিত্রের প্রতি পথ দেখাতে পারে না। মন্দ চরিত্রকে আমার কাছ থেকে দূরে রাখ, যেহেতু তুমি ছাড়া অন্য কেউ মন্দ চরিত্রকে আমার কাছ থেকে দূর করতে পারে না। আমি তোমার আনুগত্যে হাজির এবং তোমার আজ্ঞা মানতে প্রস্তুত। যাবতীয় কল্যাণ তোমার হাতে এবং মন্দের সম্পর্ক তোমার প্রতি নয়। আমি তোমার অনুগ্রহে আছি এবং তোমারই প্রতি আমার প্রত্যাবর্তন। তুমি বরকতময় ও মহিমময়; তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি। (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান)
৪. নফল নামাজে সুরা ফাতেহর আগে
اَللهُ أَكْبَرُ كَبِيْراً، اَلْحَمْدُ للهِ كَثِيْراً، وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَّأَصِيْلاً
উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার কাবিরা, আলহামদুলিল্লাহি কাসিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাঁও ওয়া আসিলা।’
অর্থ : ‘আল্লাহ অতি মহান, আল্লাহর অনেক অনেক প্রশংসা, আমি সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি।’
এ দোয়ার ফজিলত
এই দোয়াটি দিয়ে নফল নামাজ শুরু করতে হয়। জনৈক সাহাবি এই দোয়া দিয়ে নামাজ শুরু করায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘দোয়াটির জন্য আমি বিস্মিত হয়েছি। কারণ ওর জন্য আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হলো।’ (সুবহানাল্লাহ)
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ওই কথা শোনার পর থেকে আমি কোনো দিন এ দোয়া পড়তে ছাড়িনি।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি)
হজরত জুবাইর বিন মুত্বইম থেকে হজরত আবু নুআইম বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ দোয়া নফল নামাজে পড়তে শুনেছেন। (আখবারু আসবাহান)
৫. তাহাজ্জুদের নামাজের শুরুতে এ দোয়াগুলো পড়তেন-
اَللّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُوْرُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَ مَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ مَلِكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ الْحَقُّ وَ قَوْلُكَ الْحَقُّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌ وَالنَّارُ حَقٌّ وَالسَّاعَةُ حَقٌّ وَالنَّبِيُّوْنَ حَقٌّ وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، اَللّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، أَنْتَ رَبُّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ، فَاغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ أَنْتَ إِلهِيْ، لاَ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِكَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকালহামদু আন্তা নুরুস সামাওয়াতি ওয়ালআরদি ওয়া মান ফিহিন্না; ওয়া লাকালহামদু আন্তা কাইয়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না; ওয়া লাকালহামদু আন্তা মালিকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না; ওয়া লাকাল হামদু আন্তাল হাক্কু, ওয়া ওয়াদুকাল হাক্কু, ওয়া ক্বাওলুকাল হাক্কু, ওয়া-লিক্বাউকাল হাক্কু, ওয়াল-জান্নাতু হাক্কু, ওয়ান-নারু হাক্কু, ওয়াস-সাআতু হাক্কু, ওয়ান-নাবিয়্যুনা হাক্কু, ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কু। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া ইলাইকা আনাবতু, ওয়া বিকা খাসামতু, ওয়া ইলাইকা হাকামতু। আন্তা রাব্বুনা ওয়া ইলাইকাল মাসির। ফাগ্ফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়া মা আখখারতু ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আলানতু ওয়া মা আন্তা আলামু বিহি মিন্নি। আন্তাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আন্তাল মুআখখিরু আন্তা ইলাহি। লা ইলাহা ইল্লা আন্তা। ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিকা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা শুধু তোমারই। তুমি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যে অবস্থিত সব কিছুর জ্যোতি। তোমারই সব প্রশংসা, তুমি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও উভয়ের মধ্যে অবস্থিত সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। তোমারই সব প্রশংসা। তুমি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও উভয়ের মধ্যে অবস্থিত সব কিছুর অধিপতি। তোমারই সব প্রশংসা। তুমিই সত্য, তোমার প্রতিশ্রুতিই সত্য, তোমার কথাই সত্য, তোমার সাক্ষাৎ সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, কিয়ামত সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য। হে আল্লাহ! আমি তোমারই কাছে আত্মসমর্পণ করেছি, তোমার উপরই ভরসা করেছি, তোমার উপরই ঈমান (বিশ্বাস) রাখছি, তোমার দিকে অভিমুখী হয়েছি, তোমারই সাহায্যে বিতর্ক করেছি, তোমারই কাছে বিচার নিয়ে গেছি। তুমি আমাদের প্রতিপালক, তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তনস্থল। অতএব তুমি আমার আগের, পরের, গোপন, প্রকাশ্য এবং যা তুমি অধিক জান সে সব পাপকে ক্ষমা করে দাও। তুমিই প্রথম, তুমিই শেষ। তুমি আমার উপাস্য, তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নাই এবং তোমার তাওফিক ছাড়া পাপ থেকে ফেরার ও সৎকাজ করার সাধ্য নাই। (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, দারেমি, মিশকাত)
اَللّهُمَّ رَبَّ جِبْرَآئِيْلَ وَ مِيْكَائِيْلَ وَإِسْرَآفِيْلَ، فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ، عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ، اِهْدِنِيْ لِمَا اخْتُلِفَ فِيْهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِيْ مَنْ تَشَاءُ إِلى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা জিবরাইলা ওয়া মিকিইলা ওয়া ইসরাফিলা। ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল-আরদি; আলিমাল গাইবি ওয়াশ-শাহাদাতি আন্তা তাহকুমু বাইনা ইবাদিকা ফিমা কানু ফিহি ইয়াখতালিফুনা। ইহদিনি লিমাখতুলিফা ফিহি মিনাল হাক্কি বি-ইজনিকা ইন্নাকা তাহদি মান তাশাউ ইলা সিরাতিম মুসতাক্বিম।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! হে জিবরিল, মিকাল ও ইসরাফিলের প্রভু! হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃজনকর্তা! হে দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা! তুমি তোমার বান্দাদের মাঝে মীমাংসা কর যে বিষয়ে ওরা মতভেদ করে। যে বিষয়ে মতভেদ করা হয়েছে সে বিষয়ে তুমি আমাকে তোমার অনুগ্রহে সত্যের পথ দেখাও। নিশ্চয়ই তুমি যাকে ইচ্ছা সরল পথ দেখিয়ে থাক। (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, মিশকাত)
৬. এ ছাড়াও তাহাজ্জুদ নামাজের শুরুতে তিনি আরও যেসব দোয়া পড়তেন-
‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা…’ (২নং দোয়া) পড়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ৩ বার এবং ‘আল্লাহু আকবার কাকিরা’ ৩ বার।’ (আবু দাউদ, মুসতাদরাকে হাকেম)
৭. এ তাসিবহগুলো পড়া-
‘আল্লাহু আকবার’ ১০ বার; ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ১০ বার; ‘সুবহানাল্লাহ্’ ১০ বার, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ১০ বার, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ ১০ বার।
اَللهُمَّ اغْفِرْلِىْ وَاهْدِنِىْ وَارْزُقْنِىْ وَعَافِنِىْ
‘আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়াহ্দিনি ওয়ারযুক্বনি ওয়া আফিনি।’
‘হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, হেদায়াত কর, রুজি ও নিরাপত্তা দাও) ১০ বার;
اَللهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنَ ضَّيكِ يَوْمَ الْحِسَابِ
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাজ্জাইক্বি ইয়াওমাল হিসাব।’
‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি হিসাবের দিনে সংকীর্ণতা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) ১০ বার। (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, তাবারানি)
৮. ‘আল্লাহু আকবার’ ৩ বার পড়ে অতঃপর এই দোয়া পড়া-
ذُو الْمَلَكُوْتِ وَالْجَبَرُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ
উচ্চারণ : ‘জুল মালাকুতি ওয়ালঝাবারুতি ওয়ালকিবরিয়ায়ি ওয়ালআযামাতি।’
অর্থ : ‘(হে আল্লাহ! আপনি) সার্বভৌমত্ব, প্রবলতা, গর্ব ও মাহাত্মের অধিকারী।’ (আবু দাউদ)
হাদিসের বর্ণনায় নামাজের নিয়ত বাধার পর সুরা ফাতেহা পড়ার আগে উল্লেখিত দোয়া তথা ছানা পড়া প্রত্যেক নামাজির জন্য খুবেই প্রয়োজন। কারণ এ দোয়াগুলোতে রয়েছে প্রত্যেকের জন্য কল্যাণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার আবেদন। পাশাপাশি নামাজ কবুল হওয়ার জন্য সহায়ক।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ ও নফল নামাজে তাকবিরে তাহরিমার পর সুরা ফাতেহা পড়ার আগে উল্লেখিত দোয়া/ছানাগুলো পড়ার তাওফিক দান করুন। নামাজে সুন্নাতের এই বিশেষ আমল বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।
সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।
শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান।
সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।
নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:
নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)
যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)
তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)
প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।
স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-
كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه
‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।
প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-
لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا
‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)
আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত
কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-
كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج
‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেন, তবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)
ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-
لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم
‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!
মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-
من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض
‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো না, তার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।
প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।
মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-
رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا
উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)
উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।
কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।
আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।
ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।
কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।
হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।
সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)
আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!
কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন