ভেজাল খাবার হতে পারে নানাবিধ জটিল ও কঠিন রোগের কারণ। ভেজাল খাবারের কারণে অকালে প্রাণও যায় অনেকের। তাই এ সমস্যা এড়িয়ে চলতে খাবারে ভেজাল শনাক্ত করা জরুরি
সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। কিন্তু বর্তমানে বাজারে যেসব খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায় তার একটি বড় অংশেই থাকে ভেজালের আশংকা। আর এ ভেজাল খাবার হতে পারে নানাবিধ জটিল ও কঠিন রোগের কারণ। ভেজাল খাবারের কারণে অকালে প্রাণও যায় অনেকের।
তাই এ সমস্যা এড়িয়ে চলতে খাবারে ভেজাল শনাক্ত করা জরুরি। এতে করে আপনি অনেক ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
সহজ কিছু কৌশল অনুসরণ করে খাবারে ভেজাল শনাক্ত করা সম্ভব-
শাক-সবজি
ভেজাল নির্ণয়ের জন্য প্যারাফিনের মধ্যে সামান্য তুলা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর এই তুলা দিয়ে ফলমূল, শাকসবজি একটি অংশ অথবা যে কোনো সবুজ সবজির এক অংশে লাগিয়ে ঘষুন। তুলাটি সবুজ হয়ে গেলে বুঝতে হবে যে এর মধ্যে কৃত্রিম সবুজ রঙ মেশানো ছিল।
ফল
ফলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর খবর প্রায়ই শোনা যায়। উদাহরণস্বরূপ, হলুদ রংয়ের (পাকা) আম কাটার পর ছোলার ঠিক নিচের অংশ কাঁচা পাওয়া যেতে পারে। কখনো কখনো ঝুড়ি বা দোকানের সব আম একই সময়ে একইরকম পাকা দেখা যায় এবং দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ফলের চামড়ায় আঁচিল বা তিলের মতো রং দেখা যায়। প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় যে ফল পাকে তাতে মাছি বসে কিন্তু কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো ফলে মাছি বসে না। প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলের ছোলা সরানোর পর এক ফোঁটা আয়োডিন দিলে তা গাঢ় নীল অথবা কালো বর্ণ ধারণ করে। কিন্তু কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো ফলে এই আয়োডিনের রং অপরিবর্তিত থাকে।
দুধ
দুধে সাধারণত অপরিশোধিত পানি, চকের গুঁড়া, সাবানের গুঁড়া বা ডিটারজেন্ট, স্টার্চ, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও ইউরিয়া ভেজাল হিসেবে মেশানো হয়। এই দুধ খাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব হচ্ছে – ফুড পয়জনিং, হৃদপিণ্ডের সমস্যা, ক্যান্সার, বমি ও বমিভাব হওয়া। দুধের ভেজাল নির্ণয়ের জন্য একটি খাড়া/ঢালু স্থানে ১ ফোঁটা দুধ ফেলুন। যদি দুধের ফোঁটা সোজা গড়িয়ে পড়ে তাহলে এটি বিশুদ্ধ দুধ। আর যদি সোজা হয়ে না পড়ে তাহলে তাতে ভেজাল আছে বলে বুঝে নিতে হবে।
এছাড়া, তাপ দেওয়ার পরে দুধ হলুদবর্ণ ধারণ করলে এবং স্বাদ তেতো বা সাবানের মতো মনে হলেও বুঝতে হবে যে এর মধ্যে কৃত্রিম উপাদান মেশানো হয়েছে।
চিনি
চিনির ভেজাল নির্ণয়ের জন্য এক গ্লাস পানিতে চিনি মেশানোর পর তা সরাসরি নিচে চলে গেলে তা বিশুদ্ধ চিনি। আর চিনিতে ভেজাল মিশ্রিত থাকলে এটি পানির ওপরে ভাসতে থাকবে।
চা
একটি নষ্ট ব্লটিং পেপারের ওপর কিছু চায়ের গুঁড়া ছিটিয়ে দিন। যদি ব্লটিং পেপারের রঙ হলুদ, কমলা বা লাল হয়ে যায় তাহলে বোঝা যায় যে, এর মধ্যে কৃত্রিম রঙ মেশানো আছে।
কফির গুঁড়া
কফিতে ভেজাল শনাক্ত করার জন্য এক গ্লাস পানির উপরিভাগে সামান্য কফির গুঁড়া ছিটিয়ে দিন। ভেজাল মিশ্রিত কফি প্রথমে পানির ওপর ভাসতে থাকলেও ধীরে ধীরে পানির নিচে চলে যাবে।
আইসক্রিম
আইসক্রিমের ভেজাল নির্ণয়ের জন্য এর ওপর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ফেলুন। এতে ফেঁপে উঠলে বুঝতে হবে আইসক্রিমে ওয়াশিং পাউডার মেশানো হয়েছে।
ঘি
একটি টেস্টটিউবে এক মিলিলিটার পানি নিয়ে এর মধ্যে ০.৫ গ্রাম ঘি মেশান এবং মিশ্রণটিতে তাপ দিন। ঠাণ্ডা হওয়ার পরে এর মধ্যে ১ ফোঁটা আয়োডিন যোগ করুন। রং নীল হয়ে গেলে বুঝতে হবে, এর মধ্যে ভেজাল আছে।
মরিচের গুঁড়া
মরিচের গুঁড়ার ভেজাল শনাক্ত করার জন্য এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ মরিচের গুঁড়া মেশান। যদি পানির রং পরিবর্তিত হয়ে গেলে বুঝে নিতে হবে যে, তাতে ভেজাল মেশানো হয়েছে।
হলুদের গুঁড়া
ভেজাল নির্ণয়ের জন্য একটি টেস্ট টিউবে হলুদের গুঁড়া নিয়ে তার মধ্যে কয়েক ফোঁটা গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক এসিড দিন। যদি হলুদের রঙ গোলাপি, রক্তবর্ণ বা বেগুণী হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায় যে এতে ভেজাল আছে।
সবুজ মরিচ
“মেলাসাইট গ্রিন” নামের কৃত্রিম রং মেশানো হয় সবুজ মরিচে। এটি এক ধরনের কার্সিনোজেনিক উপাদান। ভেজাল নির্ণয়ের জন্য প্যারাফিনের মধ্যে সামান্য তুলা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর এই তুলা দিয়ে মরিচের একটি অংশ অথবা যে কোনো সবুজ সবজির এক অংশে লাগিয়ে ঘষুন। তুলাটি সবুজ হয়ে গেলে বুঝতে হবে তাতে কৃত্রিম সবুজ রং মেশানো হয়েছে।
সরিষা বীজ এবং তেল
সরিষার ভেজাল নির্ণয়ের জন্য কয়েকটি সরিষা বীজ নিয়ে চূর্ণ করুন। ভেতরের অংশ সাদা হলে সেটি সরিষা নয়। সরিষা বীজের ভেতরের রং হলুদ বর্ণের।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন