ঝাল আর মসলার সঙ্গে বাঙালির আবেগের সম্পর্ক থাকলেও অন্যরা পিছিয়ে নেই। পৃথিবীর অনেক দেশেই রয়েছে ঝাল আর মসলাদার খাবারের জনপ্রিয়তা। নানান দেশের মসলাদার খাবার।
মসলার সঙ্গে বাঙালির রয়েছে আবেগের সম্পর্ক। মসলা বলতে আমরা পাগল! খাবারে এর পরিমাণের হেরফের হলে আমাদের মাথা ঠিক থাকে না। জীবনটাই যেন পানসে হয়ে যায়। শুধু বাঙালিই নয়, বিশ্বের আরও অনেক দেশের মানুষই আমাদের মতো ঝাল আর মসলাদার খাবার খেতে পছন্দ করেন। আমরা ছাড়াও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে
এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকার দেশগুলো। আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষও অনেক ঝাল-মসলা দেওয়া খাবার খেয়ে থাকে। কারণ, দাসপ্রথার জের ধরে সেসব অঞ্চলে আফ্রিকানদের আগমন হয়েছে। আর তাদের হাত ধরে এসেছে নানা রকমের মসলাযুক্ত আফ্রিকান খাবার। তাদের সঙ্গে মিশে এখন অনেক সাদা চামড়ার আমেরিকান মজেছে ঝালের জলসায়।
অন্যদিকে, ইউরোপীয়দের জিহ্বা এখনো ঝাল–মসলার জন্য নাবালক। সামান্য গোলমরিচ আর ক্যাপসিকাম ছেঁচে বানানো পাপরিকাই সই! এর ঝাল আমাদের সবুজ কাঁচা মরিচ আর লাল মরিচের গুঁড়ার কাছে নস্যি। যদিও ইউরোপীয়দের হাত ধরেই সারা বিশ্বে মসলা ছড়িয়ে পড়েছিল। জানেন তো, চতুর্দশ শতকের পর পৃথিবীর ইতিহাসে যে বিশাল বিবর্তন হয়েছে, তার জন্য দায়ী একমাত্র এই মসলা।
এই মসলার খোঁজেই কলম্বাস ভারত আবিষ্কার করতে গিয়ে আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে পেয়েছিলেন মরিচ। এর কয়েক বছর পরেই ওই একই উদ্দ্যেশে ভাস্কো দা গামা ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন; এরপর আসতে থাকে ইউরোপীয় বণিকেরা আর একদম শেষে ব্রিটিশরা। ভাবতে কত অবাক লাগে তাই না? যা হোক, ইতিহাস পাঠ তো অনেক হলো। এবার জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ কীভাবে ঝাল–মসলা দিয়ে রসনাবিলাস করে থাকে।
থাইল্যান্ড
থাই কুজিন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কুজিন। বাংলাদেশের মতো প্রায় সব দেশেই থাই রেস্টুরেন্ট আছে। স্টার ফ্রাই, স্যুপ, কারি—এ ধরনের খাবার তৈরি করতেই থাইরা অনেক বেশি পাতা বা হার্ব এবং মরিচ ব্যবহার করে। এর মধ্যে লাল মরিচের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া খাবারকে মসলাদার করতে রান্নায় প্রচুর পেঁয়াজ, রসুন, আদা, লেমনগ্রাস, পুদিনাপাতা দেওয়া হয়। ‘কায়েং তাই প্লা’ নামের সবজি ও শুঁটকি দিয়ে বানানো তরকারিকে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি ঝাল খাবার বলে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া লাল মরিচের পেস্ট দিয়ে তৈরি মাছ, মাংস বা সবজির বিভিন্ন রেড কারিও বেশ ঝাল হয়ে থাকে।
মেক্সিকো
জানেন কি, খোদ মেক্সিকোতেই জন্মায় ১৪০ জাতের মরিচ! উত্তর আমেরিকার এ দেশের কোনো খাবারই মরিচ ছাড়া হয় না। এমনকি অ্যালকোহলেও অনেক মেক্সিকান মরিচ মিশিয়ে খান। এ দেশেই বিখ্যাত হালেপিনো, পবলানো, সেররানো, আঞ্চো আর কুখ্যাত হাবানেরো মরিচের জন্মস্থান। মেক্সিকোতে অতিরিক্ত ঝাল খাবার খাওয়া আর এর ঝাল সহ্য করাকে শৌর্যবীর্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। মোলে, সালসা, চিলেস রেয়েনো, সোপা দে কামারোন, আগুয়াচিলে, চিলাতে দে পইয়ো ইত্যাদি এ দেশের সবচেয়ে ঝাল খাবারগুলোর মধ্যের অন্যতম।
মালয়েশিয়া
মালয় কুজিন চাইনিজ আর ভারতীয় কুজিনের এক দারুণ সংমিশ্রণ। এ দেশের বিভিন্ন রান্নায় প্রচুর পরিমাণে মরিচ এবং বিভিন্ন রকমের মসলা ব্যবহার করা হয়। ওটাক ওটাককে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে ঝাল খাবার বলা হয়। এটি আমাদের দেশের বিন্নি চালের পিঠার মতো। মাছের কিমার সঙ্গে অনেক মরিচের গুঁড়া আর মসলা মিশিয়ে কলার পাতায় মুড়িয়েই ওটাক ওটাক তৈরি করা হয়।
কোরিয়া
বিশ্বায়নের ফলে কোরিয়ান খাদ্য সংস্কৃতি আজ আমাদের অনেকেরই জানা। কোরীয়দের ঝাল খাওয়া দেখলে যেকেউ অবাক হতে পারে। সব খাবারেই তারা গচুজাং নামের একধরনের লাল মরিচের পেস্ট ব্যবহার করে। গচুজাং পেস্ট ছাড়া কোনো কোরিয়ান খাবার কল্পনাই করা যায় না।
আফ্রিকা
আফ্রিকার প্রায় সব দেশের রান্নায় ঝাল আর মসলা ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। যেমন ইথিওপিয়ান কুজিনে বিভিন্ন মসলার সঙ্গে ‘বেরবেরে’ নামের লাল মরিচের গুঁড়া দেওয়া হয়। আবার ঘানা, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়াতে রান্নায় ‘শিটো’ নামের পেস্ট দিতে দেখা যায় যা, কালো গোলমরিচ, পাম তেল, প্রায় গোলমরিচের মতো দেখতে এনিস পেপার দিয়ে বানানো হয়।
জ্যামাইকা
জ্যামাইকার বেশির ভাগ মানুষ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত হওয়ায় ঝালের সঙ্গে আছে এদের দারুণ সখ্য। এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত জার্ক চিকেন বানাতে অনেক মরিচ আর মসলা দিয়ে ম্যারিনেট করা হয়। তবে এ দেশের সবচেয়ে ঝাল খাবারটি বানানো হয় ছাগলের মাংস দিয়ে। জ্যামাইকান গোট কারি বানাতে লাগে কুখ্যাত স্কচ বনেট মরিচ, যা বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচগুলোর একটি। এর স্কোভিল হিট ইউনিট (ঝালের মাত্রা পরিমাপের একক) এক মিলিয়নের বেশি।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন