বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। অনেক কূটনীতিকই এসব খাবার খেয়ে প্রশংসা করছেন।
বিশেষ করে বাংলাদেশের মিষ্টিজাত খাবার খেয়ে মুগ্ধ হচ্ছেন তারা।
ঢাকায় দায়িত্ব পালনে এসে বিদেশি কূটনীতিকরা সাধারণত তিন বছর অবস্থান করেন। তারপর অন্য কোনো তৃতীয় বা নিজ দেশে চলে যান। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন বছর মেয়াদের কম বেশিও হয়ে থাকে। তবে এই সময়ের মধ্যেই অনেক কূটনীতিকই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের ভক্ত হয়ে যান।
তাদের মধ্যে অনেকেই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি, দই, সন্দেশ, রসমালাই, বিরিয়ানি, বাখরখানি, ফুচকা খেতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা এসব খাবার খেয়ে ব্যাপক প্রশংসাও করেছেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার
ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির প্রশংসায় আর্ল মিলার: ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা সফর করেছেন। এসব জেলা সফরকালে তিনি ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে প্রশংসা করেছেন।
আর্ল রবার্ট মিলার ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে খুলনা সফরে গিয়ে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি চেখে দেখেছিলেন। খুলনার সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী পুরনো মিষ্টির দোকান হিসেবে পরিচিত ইন্দ্রমোহন সুইটসে স্বশরীরে গিয়ে এই মিষ্টির স্বাদ নিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি মিলার কুমিল্লা সফরকালে সেখানকার বিখ্যাত রসমালাই খেয়েছেন। রসমালাই খেয়ে এর প্রশংসাও করেছেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত মিলার এর আগে পুরনো ঢাকায় গিয়ে হাজী বিরিয়ানি ও বাকরখানি খেয়ে সে খাবারের প্রশংসা করেন। রাজশাহী গিয়ে মিলার ঐতিহ্যবাহী কালাই রুটি খেয়েছেন। গোপালগঞ্জে গিয়ে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী দত্ত মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের রসগোল্লা ও সন্দেশ খেয়ে প্রশংসা করেন।
মিলারের আগে ঢাকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন ড্যান মজেনা। তিনি বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা ঘুরে দেখেছিলেন। সে সময় তিনিও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার চেখে দেখেন, ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করেন।
দইয়ে মুগ্ধ জার্মানির আখিম ট্রোস্টার: ঢাকায় যোগ দিয়েছেন নতুন জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার। তিনি বাংলাদেশের দই খেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন। মাত্র ১০ সেকেন্ডে এক হাড়ি দই শেষ করেছেন। জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার সম্প্রতি টুইটারে এক হাড়ি দইয়ের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ঢাকায় মোটা হওয়ার হাত থেকে বাঁচার কোনো সুযোগ নেই। তবে জীবনে প্রথমবার এই মিষ্টি দই কেউ অফার করলো। এটা অনেক সুস্বাদু। ‘কিছুক্ষণ পর তিনি দইয়ের খালি হাড়ির ছবি পোস্ট করে লিখেন, ‘মাত্র ১০ সেকেন্ড পর’।
ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেল
ফুচকাও আছে পছন্দের তালিকায়:বিদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে কেউ কেউ ফুচকা খেতেও ভীষণ পছন্দ করছেন। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেল জীবনে প্রথম বারের মতো ফুচকা খেয়ে এর খুব প্রশংসা করেন।
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেনবাকরখানিও বাদ যায়নি: কোনো কোনো কূটনীতিক পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি খেয়েও মুগ্ধ হয়েছেন। ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন ঢাকায় এসেছেন এক বছর আগে। সম্প্রতি তিনি গিয়েছিলেন পুরনো ঢাকায়। সেখানে গিয়ে বাকরখনি খেয়ে খাবারটির ব্যাপক প্রশংসা করেন।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন