আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

দৈনন্দিন

ঢাকাই মসলিনের ঐতিহ্য

বাংলা মসলিন শব্দটি এসেছে ‘মসুল’ থেকে। ইরাকের এক বিখ্যাত ব্যবসাকেন্দ্র হলো মসুল। এই মসুলেও অতি সূক্ষ্ম কাপড় প্রস্তুত হতো। এই মসুল ও সূক্ষ্ম কাপড়—এ দুয়ের যোগসূত্র মিলিয়ে ইংরেজরা অতিসূক্ষ্ম কাপড়ের নাম দেয় ‘মসলিন’। অবশ্য বাংলার ইতিহাসে ‘মসলিন’ বলতে বোঝানো হয় তত্কালীন ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে উত্পাদিত অতি সূক্ষ্ম একধরনের কাপড়কে। ফুটি কার্পাস নামক গাছের তুলা থেকে তৈরি করা হতো এই সূক্ষ্ম মসলিন কাপড়।

মসলিনের তুলা ছিল অন্যান্য জাতের চেয়ে ভিন্ন। আর মসলিন কাপড় বোনার ক্ষেত্রে তুলা থেকে সুতা তৈরি ও সুতা দিয়ে কাপড় বোনা প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামক ছিল। ঠান্ডা ও শীতল আবহাওয়ার আর্দ্রতা মসলিনের সুতা কাটার জন্য বেশ উপযোগী। ফলে নাতিশীতোষ্ণ বাংলার এই আবহাওয়া মসলিন কাপড় বোনার জন্য বেশ উপযোগী ছিল।

মসলিনের পথ চলা শুরু হয়েছিল আজ থেকে ৪০০ বছর আগে থেকে। বঙ্গদেশ, অর্থাত্ বাংলাদেশসহ ভারতের পশ্চিম বাংলার উত্পাদিত মসলিন সুদূর চীন, আমেরিকা, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, মিশর, ইউরোপসহ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। ‘পেরিপ্লাস অব দ্য এরিথ্রিয়ান সি’ শীর্ষক গ্রন্থে মসলিন সম্পর্কে বিশেষ ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। রোমানরা মসলিনের খুব কদর করত। রোমানরাই ইউরোপে প্রথম মসলিন কাপড়ের ব্যবসা চালু করে এবং ধীরে ধীরে এটি প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করে। মসলিনের সূক্ষ্মতার দিকটি ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা থেকে জানা যায়। ইতিহাসে আছে, মোগল আমলে তৈরি করা ঢাকাই মসলিন ঘাসের ওপর রাখলে এবং তার ওপর শিশির পড়লে কাপড় দেখাই যেত না। কয়েক গজ মসলিন কাপড় ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া যেত বলে জনসাধারণ একে ‘হাওয়ার কাপড়’ বলত। এমনকি একটি আংটির ভেতর দিয়ে এক থান কাপড় অনায়াসে টেনে বের করা যেত। দেশলাইয়ের বাক্সেও এই সূক্ষ্ম মসলিন রাখা যেত।

বাংলার মসলিনশিল্প তার সোনালি সময়ে ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। একটি শিল্প গড়ে ওঠা, টিকে থাকা কিংবা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পেছনে কাজ করে অনেক ভৌগোলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক নিয়ামক। বাংলায় গড়ে ওঠা মসলিনশিল্পও এর ব্যতিক্রম নয়। মোগলদের পরাজিত করে ব্রিটিশ বেনিয়ারা বাংলা দখলের আগেই বুঝতে পেরেছিল যে তাদের বিলেতি শাড়ির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ঢাকার মসলিন। তাই তারা মসলিনকে চিরতরে দূর করে দিতে চাইল। প্রথমেই তারা মসলিন কাপড়ের ওপর অত্যধিক শুল্ক বা ট্যাক্স চাপিয়ে দিল। বিলেত থেকে আমদানি করা কাপড়ের ওপর শুল্ক ছিল ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ। কিন্তু মসলিনসহ দেশি কাপড়ের ওপর তারা ট্যাক্স বসাল ৭০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ। তাই দেশে যেমন বিলিতি কাপড় সুলভ হলো, একই সঙ্গে ব্যয়বহুল হয়ে উঠল মসলিনসহ দেশি কাপড়। প্রতিযোগিতায় তাই মসলিন টিকতে পারছিল না। কিন্তু তার পরও টিকে ছিল মসলিন। এবার ইংরেজ শাসকগণ নিষেধাজ্ঞা জারি করল মসলিন তৈরির ওপর। তাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও চলল মসলিনের উত্পাদন। তখন ব্রিটিশরাজ চড়াও হলো মসলিনের কারিগরদের ওপর। তারা মসলিন কারিগরদের ধরে ধরে তাদের হাতের আঙুল কেটে দেওয়া শুরু করল, যাতে গোপনে গোপনে তারা মসলিন তৈরি করতে কিংবা এর নির্মাণকৌশল অন্যদের শিক্ষা দিতে না পারে। আর এভাবেই একদিন বাঙালিরা হারিয়ে ফেলল তাদের গর্বের মসলিন তৈরির প্রযুক্তিজ্ঞান।

এরপর বহুকাল বাংলার মসলিনের সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধুলোয় চাপা পড়ে ছিল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি গবেষক দল মসলিন কাপড় ফিরিয়ে আনার একটি প্রকল্প হাতে নেয় ২০১৪ সালে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে গবেষকেরা ছয় বছর প্রচেষ্টা চালিয়ে ঢাকাই মসলিনকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। সত্যিই নতুন বছরে জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দের খবর!

আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মসলিনশিল্পের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। বাঙালি নারীর অস্তিত্বের সঙ্গে জামদানি শাড়ির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এই শিল্প আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। বিশ্বদরবারে বাঙালিকে একটি সংস্কৃতিসমৃদ্ধ জাতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় এই ঐতিহ্যের ঢাকাই মসলিন। তাই সুযোগ এসেছে আবারও বাঙালির সমৃদ্ধ এই শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার। সরকারের সজাগ দৃষ্টি, কার্যকর পদক্ষেপ এবং আমাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করতে হবে এই শিল্পকে এবং ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের গৌরবান্বিত ঐতিহ্য ও নিজস্বতার ধারক এই মসলিনশিল্পকে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

কই মাছে বাঁধাকপির ছেঁচকি – দা এগ্রো নিউজ

কই মাছে বাঁধাকপির ছেঁচকি
কই মাছে বাঁধাকপির ছেঁচকি

উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।

প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

ধনেপাতা ও টমেটোয় শোল মাছ – দা এগ্রো নিউজ

ধনেপাতা ও টমেটোয় শোল মাছ
ধনেপাতা ও টমেটোয় শোল মাছ

উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।

প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

লাউ টাকি – দা এগ্রো নিউজ

লাউ-টাকি
লাউ-টাকি

উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।

প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

বাঁধাকপির পাতায় চিংড়ি – দা এগ্রো নিউজ

বাঁধাকপির পাতায় চিংড়ি
বাঁধাকপির পাতায় চিংড়ি

উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com