উঁচু বরেন্দ্র এলাকা নওগাঁর পোরশা। এই উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। জমিতে ধান ও সবজির পাশাপাশি অনেকেই জড়িয়েছেন আম চাষে। তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম আবদুর রহিম। চাষ করেছেন ড্রাগন ফলের। এখানেই শেষ নয়, আবদুর রহিম শাহর ড্রাগন পথ দেখাচ্ছে অন্যদের। তাঁর দেখাদেখি অনেকে শুরু করেছেন ড্রাগন ফলের চাষ।
আবদুর রহিমের (৫০) বাড়ি উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের পোরশা গ্রামে। পেশায় তিনি মাদ্রাসাশিক্ষক। পোরশা বড় মাদ্রাসায় তিনি শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি তিনি কৃষিকাজ করেন। উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কাটপুকুরিয়া এলাকায় নিজের ২৪ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন তিনি।
বুধবার আবদুর রহিমের বাগানে ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতার প্রতিটি কংক্রিটের খুঁটি পেঁচিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন ফলের গাছ। প্রতিটি গাছে ঝুলছে তিনটি থেকে চারটি করে কাঁচা, পাকা ও আধা পাকা ড্রাগন ফল। বাগানে কাজ করছিলেন ২০-২৫ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে ছয়-সাতজন গাছ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করছিলেন। অন্যরা নিড়ানি দিয়ে আগাছা তুলছিলেন। বাগানে কথা হয় আবদুর রহিমের ম্যানেজার ও চাচাতো ভাই তারেকুল ইসলাম শাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, কাটপুকুরিয়ায় আট বিঘা জায়গাজুড়ে রহিম শাহ ২০১৮ সালের আগস্টের দিকে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। এর পাঁচ-ছয় মাস পর সেখানে তিনি আরও ১৬ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চারা লাগান। মোট ২৪ বিঘা জমির এই বাগানে ৪০ হাজারের বেশি ড্রাগনগাছ আছে। চারা লাগানোর ১৫-১৬ মাস পর গত বছরই প্রথম গাছে ফল আসে। প্রথম বছর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিটি গাছে তিনটি থেকে চারটি করে ফল ধরেছিল।
গত বছর প্রায় আট লাখ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে। এবার গাছগুলোতে গত বছরের তুলনায় ফল ধরছে ভালো। মে থেকে ফল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ করা যাবে। এ বছর মৌসুমের শুরুতে আমসহ বাজারে অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন ফল থাকায় ড্রাগনের দাম কিছুটা কম ছিল। মে ও জুন মাসের দিকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি পাইকারি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়েছে। তবে বাজারে অন্যান্য ফল কম থাকায় এখন ড্রাগনের চাহিদা বেড়ে গেছে। এখন বাগান থেকে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি পাইকারি দরে ব্যবসায়ীদের কাছে ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে। ফল সংগ্রহ শুরুর প্রথম চার মাসে ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে। আগামী তিন মাসে আরও ১০-১২ লাখ টাকার ফল বিক্রির আশাবাদ তাঁর।বিজ্ঞাপন
তারেকুল ইসলাম জানান, একটি ড্রাগন গাছ পরিপক্ব হতে তিন থেকে চার বছর লাগে। আর পরিপক্ব একটি গাছে প্রতি মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০টি ড্রাগন ধরে। গাছ পরিপক্ব হয়ে গেলে এই বাগান থেকে প্রতি মৌসুমে কোটি টাকার বেশি ফল বিক্রি হবে। পরিশ্রম বেশি, তবে আমসহ অন্য যেকোনো ফলের চেয়ে ড্রাগন চাষ বেশি লাভজনক। ২৪ বিঘা জমিতে আম চাষ কিংবা ধান চাষ করে এর অর্ধেকও আয় করা সম্ভব নয়। রহিম শাহ এই বাগান দেখে পোরশা ছাড়াও নওগাঁর সাপাহার ও পত্নীতলা উপজেলার অনেক এলাকায় আরও ২০-২৫টি বাগান গড়ে উঠেছে।
বাগানমালিক আবদুর রহিম বলেন, ‘কাটপুকুরিয়া এলাকার ওই জায়গাটিতে আগে আমবাগান ছিল। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আমের দাম কম ছিল। ২০১৮ সালের দিকে আমগাছগুলো কেটে ওই ২৪ বিঘা জমিতে বরইবাগান করার চিন্তাভাবনা করছিলাম। ওই সময় নওগাঁ শহরের একটি মাদ্রাসায় চাকরি করা আমার এক বন্ধুর সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয়। তখন ওই বন্ধু আমাকে ড্রাগন ফল চাষের পরামর্শ দেন। যশোরের এক ড্রাগনচাষির সঙ্গে আমাকে ফোনে কথাও বলিয়ে দেন। তাঁদের দুজনের পরামর্শে সাহস করে ২০১৮ সালে আগস্ট এবং ২০১৯ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে প্রতিটি ড্রাগন চারা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দামে যশোর থেকে কিনে আনি। ২৪ বিঘা জমিতে মোট ৪৫ হাজার ড্রাগন চারা লাগাই। এর মধ্যে খুব কম চারাই নষ্ট হয়েছে। জমি প্রস্তুত, চারা ক্রয় ও লাগানো, কংক্রিটের খুঁটি লাগানো, পরিচর্যাসহ প্রথম বছরেই প্রায় ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গাছ পরিপক্ব হয়ে গেলে প্রতিবছর কীটনাশক ও সার ব্যবহার এবং পরিচর্যা বাবদ ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ করে এই বাগান থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে আমার মনে হচ্ছে।’
আবদুর রহিমের দেখাদেখি কাটপুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক শহিদুল ইসলামও ড্রাগন চাষে নেমেছেন। তিনি বলেন, ‘রহিম শাহর উদ্যোগটি বেশ লাভজনক। বরেন্দ্র এলাকার এই উঁচু জমিতে এই ফল চাষ শুরু করলে প্রথম দিকে আমরা এটিকে পাগলামি বলেছিলাম। কিন্তু এখন তাঁর বাগান ও ফল দেখে ধারণা পাল্টে গেছে। আমিও বাড়ির পাশের ৪০ শতাংশ জমিতে জানুয়ারি মাসে ২ হাজার ড্রাগন গাছ লাগিয়েছি।’ পোরশা উপজেলার নিতপুর সদর ইউনিয়ন ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, ‘বরেন্দ্র ভূমি উঁচু হওয়ায় নওগাঁর পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলার কিছু এলাকা ড্রাগন ফলের জন্য খুবই উপযোগী। এখানকার ফলের আকারও বেশ বড় ও সুমিষ্ট। রহিম শাহর ড্রাগন ফলের চাষ শুরুর পর থেকেই কখন কী ধরনের গাছের পরিচর্যা নিতে হবে, সে বিষয়ে আমরা তাঁকে পরামর্শ দিয়ে আসছি। তাঁর সফলতা দেখে অনেক কৃষক এখন আমাদের কাছে ড্রাগন চাষের জন্য পরামর্শ নিতে আসছেন।’
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সব ধরনের মাটিতে ড্রাগন চাষ হয়। তবে উঁচু জমিতে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তিন মিটার পরপর গর্ত করে চারা রোপণ করতে হয়। বছরের যেকোনো সময় চারা রোপণ করা যায়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। সিমেন্ট অথবা বাঁশের খুঁটিতে গাছ বেঁধে দিতে হয়। গাছে ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল ধরে। পুষ্টিগুণসম্পন্ন প্রতিটি ড্রাগন ফলের ওজন ২০০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। ২ থেকে ৪ বছর বয়সী একটি গাছে ৫ থেকে ১২টি ফল ধরে। পরিপক্ব একটি গাছে সর্বোচ্চ ৪০টি ফল পাওয়া যায়। ছাদবাগানের টবেও ড্রাগন ফল চাষ করা যায়।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’
সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।
কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।
সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় ফল কাঁঠালের জ্যাম, চাটনি ও চিপস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহের প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। তাঁরা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মোট ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
গত শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।
কর্মশালায় ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠাল স্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশ কাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।’
কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মুখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।
ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন