মোসাম্মৎ খুরশিদা আক্তার (কাল্পনিক নাম) বয়স-৪৫ বছর, ২ সন্তানের জননী, গৃহিনী। দীর্ঘদিন ধরে দুই হাতের ৩টি আঙ্গুলের ব্যাথায় ভুগছেন। তার ডায়াবেটিস রয়েছে (৬ বছর যাবত) নিয়ন্ত্রিত অবস্থায়। হাতের আাঙ্গুলের সমস্যার ধরন হল সোজা করতে কষ্ট হয় এবং মাঝে মাঝে আটকে যায়। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অর্থোপেডিক ডা. দেখাচ্ছেন, কিছু ব্যাথানাশক ওষুধ এবং একটি আঙ্গুলে স্টেরয়েড ইনজেকশন দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে কিছুদিন ভালো থাকলেও কিছুদিন পরে ব্যাথা আবার তীব্রভাবে ফিরে আসে। বর্তমানে তার দৈনন্দিন কাজের ব্যাঘাত ঘটছে, হাত দিয়ে কোনো কিছু ধরতেই কষ্ট হয় এখন। অর্থোপেডিক চিকিৎসক তাকে সার্জারি করাতে পরামর্শ দিয়েছেন।
তার স্বামীর কর্মস্থলের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা একই সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি সিপিআরসিতে এসে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ায় তাকেও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। উক্ত ভদ্রমহিলা যে সমস্যায় ভুগছেন তা মোটামুটি আমাদের কাছে পরিচিত। এটিকে আমরা ‘ট্রিগার ফিঙ্গার’ নামে চিনি যেটিকে আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলি ‘Stenosing Tenosynovitis/Tensosynovitis’। এতে মধ্যমা এবং দু‘পাশের আঙ্গুল সচরাচর বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে কিন্তু অন্যান্য আঙ্গুলেও হতে পারে। আমাদের হাতে অনেকগুলো টেন্ডন থাকে। এই টেন্ডনগুলো একটি টানেলের মধ্যে অবস্থান করে। আমরা যখন আঙ্গুল ব্যবহার করি তখন এটি সুন্দরভাবে সহজে টানেলের ভিতর দিয়ে মুভ করে। এই টানেলকে বলা হয় টেন্ডন সিথ। এই টেন্ডন সিথের মধ্যে কিছু টিস্যু থাকে যাকে আমরা পুলি বলি। এই পুলিগুলো টেন্ডনকে মাংসপেশী এবং হাড়ের মাঝে শক্তভাবে আটকে রাখে। যদি কারো হাতে এই পুলিতে প্রদাহ হয় তখন হাতের আঙ্গুল ভাজ করতে বা ভাজ অবস্থা থেকে সোজা করতে কষ্ট হয়। তখন আমরা একে বলি ‘ট্রিগার ফিঙ্গার’। অনেক সময় নডুউল দেখা যায়। যদি এটি মারাত্মক মাত্রায় প্রদাহ হয় তখন আমরা আঙ্গুল সোজা বা ভাজ কোনোদিকেই করতে পারি না। এই সমস্যার কারণ:
১. এখনও পর্যন্ত এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২. যারা খুব জোরে হাতের কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি দেখা যায়। যেমনঃ টাইপিস্ট, ব্যাংকার, পোষাক শ্রমিক, গৃহিনী ইত্যাদি পেশার লোক ৩. কিছু নির্দিষ্ট রোগ যেমনঃ ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগে যারা দীর্ঘদিন যাবত ভুগছেন। ৪. সম্প্রতি আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে যারা স্মার্টফোন দীর্ঘক্ষণ ধরে ব্যবহার করছেন তাদের মধ্যে আশংকাজনকভাবে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসা পদ্ধতি:
এখন মজার ব্যাপার হচ্ছে গতানুগতিক ব্যবস্থা এই রোগের জন্য খুব একটা কার্যকর নয় কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যকর হয় না মূলত রোগটি কেন হচ্ছে এই সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে। তাই প্রথমে আমরা রোগটি কেন হচ্ছে এর পরবর্তী কী কী সমস্যা হতে পারে এবং এই সমস্যাগুলো হতে আমরা কীভাবে পরিত্রাণ পেতে পারি সেই সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রথমেই রোগীকে দিতে হবে। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট খুব সহজেই কিছু সুনির্দিষ্ট থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, স্পেসিফিক থেরাপিউটিক স্ট্রেচিং, DTFM (ডিপ ট্রান্সভার্স ফ্রিকশন ম্যাসাজ), Cryotherapy (Ice), স্পি্লটিং/ট্যাপিং/এসেসটিভ ডিভাইস, LASER, UST, প্যারাফিন ওয়াক্স এবং NSAID ড্রাগের মাধ্যমে খুব সহজেই সমস্যার সমাধান দিতে পারেন। এখানে মনে রাখতে হবে এই রোগের জন্য শুধু ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গতানুগতিক চিকিৎসার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
সমস্যা খুব বেশি গুরুতর অবস্থায় পৌঁছালে Corticosteroid Injection/Cortisone Injection দেওয়া যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে Corticosteroid Injection নেওয়ার পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা না নেওয়া হলে পুনরায় সমস্যা ফিরে আসে। তবে কিছু ক্ষেত্রে অপারেশন এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং করতে হয়। তবে অপারেশনের পর স্বাভাবিক হাতের কর্মক্ষমতা ফিরে পেতে এবং হাতের সম্পূর্ন মুভমেন্ট ফিরে পেতে হলে অপারেশনের পরপরই অবশ্যই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে। সকল চিকিৎসা করার পরও ভালো হবে না বা এই সমস্যা আবারও ফিরে আসতে পারে যদি রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না রাখে এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এক্সারসাইজ না করে। সুতরাং ‘ট্রিগার ফিঙ্গার’ হতে পরিত্রাণ পেতে চাইলে দ্রুত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। আশা করি দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন।
বি.দ্র.: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অথবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদ হতে ৫ বছর মেয়াদী ফিজিওথেরাপি ডিগ্রিধারীরাই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক/ফিজিওথেরাপিস্ট/রিহ্যাব প্র্যাকটিশনার। সুতরাং ফিজিওথেরাপি অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপিস্টেরর তত্ত্বাবধানে করবেন।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন