জৈব
কোকোডাস্ট দিয়ে কিভাবে জৈব সার তৈরি করা হয়
লেখক
নিজস্ব প্রতিনিধিবাংলাদেশে নারিকেলকে বলা হয় গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি। ঐতিহ্যগতভাবে এদেশে নারিকেল চাষ হয় বাড়ির আঙিনায়। নারিকেল চাষে তাই বাড়তি কোনো জায়গা জমির দরকার হয় না। নারিকেল গাছের ছায়া বসতবাড়িতে সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফল ও শাকসবজি চাষ করতেও সহযোগিতা করে। রোপণ করার ৬-৭ বছর পর ফল আসে এবং বিরামহীনভাবে ৫০-৬০ বছর তা চলতে থাকে। বিস্ময়কর এ ফলদ বৃক্ষের ফুল, ফল, কাণ্ড পাতা বছরব্যাপী কোনো না কোনোভাবে আমাদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। কৃষকের কাছে তাই নারিকেল সবচেয়ে সমাদৃত গাছ। নারিকেল থেকে উত্তম পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ডাবের পানি পাওয়া যায়। নারিকেলের ছোবড়া থেকে আঁশ এবং আঁশজাত দ্রব্য তৈরি করা যায়।
সবশেষে নারিকেলের তুষ (কোকোডাস্ট) থেকে ভালোমানের জৈব সার তৈরি হয়ে থাকে। বরিশাল অঞ্চলের স্বরূপকাঠি (পিরোজপুর), খুলনার ফুলতলা, বাগেরহাট ও যশোর জেলার মনিরামপুর অঞ্চলে নারিকেলের ছোবড়া বা খোসা থেকে বংশানুক্রমে নারিকেলের খোসা, আঁশ ও আঁশজাত দ্রব্য করা হয়ে থাকে।
নারিকেলের খোসা
নারিকেলের খোসা থেকে আঁশ তৈরির সময় খোসার ৬৬% তুষ বা Cocodust বের হয়। নারিকেলের তুষে ৩১% সেলুলোজ ও ২৭% লিগনিন জাতীয় জৈব পদার্থ আছে এবং এর কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত ১০৪:১ (Shekar, 1999)। সেলুলোজ খুব শক্ত বা Stable পদার্থ এবং এ কারণে নারিকেলের তুষ ১০-১৫ বছর পরও মাটিতে অক্ষতাবস্থায় থাকে। লিগনিন পচন-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা অনুজীবের কার্যক্ষমতা কমায়। নারিকেলের তুষে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় সব রকম পুষ্টি থাকে বলে তুষ পচালে উৎকৃষ্ট জৈব সারে রূপান্তরিত হয়। ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে নারিকেলের তুষের সাথে চুন (প্রতি ১০০০ কেজি তুষে ৫ কেজি চুন) ও মাশরুম স্পন (Spawn) বা বীজ মিশিয়ে পচানো হয়। নারিকেলের তুষের মধ্যে মাশরুম চাষ করেও তা পচানো যায়। মাশরুমে ক্লোরোফিল না থাকায় সূর্যের আলো ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না। দৈহিক বাড়-বাড়তির জন্য মাশরুম নারিকেলের তুষের সেলুলোজ হতে শর্করা জাতীয় খাদ্য সংগ্রহ করে, ফলে নারিকেলের তুষের সেলুলোজ কঠিন পদার্থ হতে সরলতম পদার্থে রূপান্তরিত হয় ও সহজে পচে যায়। তুষে মাশরুম spawn ও চুন প্রয়োগ করলে ১ মাসের মধ্যে হিউমাস জাতীয় কালো পদার্থে পরিণত হয়।
হিউমাস রাসায়নিক সারের মতো পুষ্টি সমৃদ্ধ নয়, তবে মাটিতে দীর্ঘদিন সক্রিয় থেকে মাটির অনুজীবের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, মাটির ভৌত গুণাবলি ধরে রাখে এবং গাছের জন্য প্রয়োজনীয় মুখ্য ও গৌণ সব ধরনের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে। হিউমাস মাটির Ca++, Zn++, Cu++ Fe++ ধাতব আয়ন ধরে রাখতে সাহায্য করে। এসব আয়নগুলো গাছের আয়ন বিনিময় ক্ষমতা বাড়ায়, মাটি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করার ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিকেল অপসারণ করে গাছের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। ফ্রি-রেডিকেল এক ধরনের ক্রিয়াশীল যৌগমূলক যা গাছের ক্লোরোফিল নষ্ট করে দেয়। গাছের স্বাভাবিক রেচন প্রক্রিয়া (Metabolism) থেকেই ফ্রি-রেডিকেল তৈরি হয়। জমিতে বেশি বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে ফ্রি-রেডিকেলও বেশি তৈরি হয়। ফল জাতীয় সবজি যেমন টমেটো, করলার ক্ষেত্রে ফ্রি-রেডিকেলের কারণে একবার ফল আসলেই গাছের পাতা শুকিয়ে মারা যায়। এসব ধাতব আয়ন গুলো Super oxide dismutage (SOD) নামে এক ধরনের এনজাইম তৈরির মাধ্যমে ফ্রি-রেডিকেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
নারিকেলের তুষের বিশেষ গুণ হচ্ছে ওজনের ৮-১০ গুণ পানি ধারণক্ষমতা। তাই সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি জানা থাকলে নারিকেলের অব্যবহৃত এ তুষ সরাসরি নার্সারি ব্যবসা ও ফুল চাষে ব্যবহার করে যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণ কেন্দ্র যশোরের কর্মরত বিজ্ঞানীরা ২০০৮ সালে যশোর শহরতলীর চাচড়া এলাকায় কোকো ফাইবার মিল নামক কোম্পানির সহায়তায় নারিকেলের আঁশ তৈরি ও তুষ পচানোর ওপর এক গবেষণা পরিচালনা করেন। ওই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা মাশরুমের বীজ ও চুন প্রয়োগ করে দ্রুত নারিকেলের তুষ পচানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। হাইড্রোলিক মেশিনে নারিকেলে তুষের ব্লক তৈরি করে তাতে চারা লাগানোর ওপরও বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন।
নারিকেল থেকে জৈব সার তৈরি
নারিকেলের তুষ ফলের অংশ হওয়ায় গাছের বৃদ্ধির জন্য দরকারি সব পরিমাণ পুষ্টি বিশেষ করে পটাশিয়াম জাতীয় পদার্থ থাকে। পচানোর পর মাটিতে প্রয়োগ করলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা ও অন্যান্য ভৌতিক গুণাবলি বৃদ্ধিসহ অনুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে দীর্ঘমেয়াদে গাছের পুষ্টি সরবরাহ ও বৃদ্ধি-সহায়তা প্রদান করে। তাছাড়া নারিকেল থেকে তৈরি জৈব সারে আছে অনেক রকমের এনজাইম (Enzyme) ও কোষীয় পদার্থ যা শিকড় দিয়ে গাছের মধ্যে প্রবেশ করে ও গাছের রোগ প্রতিরোধ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করার বাড়তি ক্ষমতা প্রদান করে। নারিকেল থেকে তৈরি জৈব সারে আছে ৬০৭৫% জৈব পদার্থ, ০.৭৬/ নাইট্রোজেন, ০.৪% হারে ফসফরাস ও পটাশ, ০.২% সালফার ও ০.০০৪ বোরন।
কোকোপিটের ব্যবহার
০ ক্রমবর্ধমান হাইড্রোপোনিকউপায়ে সবজি চাষের জন্য কোকোপিট ব্যবহার করা হয় যেন কোনোভাবেই গাছ বা চারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়;
০ কোকোপিট উদ্ভিদের শিকড় উন্নয়নের জন্য একটি চমৎকার স্তর এবং গাছ বা চারা রোপণ করার সময় কোনো এজেন্ট প্রয়োজন হলে জৈব সারের সাথে কোকোপিটের সংমিশ্রণে একটি গ্রোয়ার মিডিয়া তৈরি করে সরাসরি চারা তৈরি করা যেতে পারে;
০ কোকোপিট মাটির তুলনায় অনেক হালকা এবং টবে ব্যবহারের সময় খুব সহজেই কোকোপিটের ভেতর বাতাস চলাচল করতে পারে যার ফলে গাছ বেশি বেশি অক্সিজেন নিতে পারে;
০ কোকোপিট শোষক সময়কাল অনেক : ফলে এটা গাছে ধীরে ধীরে শোষিত হয়;
০ কোকোপিট একটি উচ্চ বাফার ক্ষমতাসম্পন্ন জৈব পদার্থ যা মাটির গুণাগুণ বজায় রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। কাকোপিটের পিএইচ (pH) সবসময় ৫.৫ থেকে ৭ থাকে যা সুস্থ উদ্ভিদ তৈরি করে এবং খুব সহজেই উন্নত মানের গাছপালা তৈরি করতে সাহায্য করে এবং এর ফলে অনেক বেশি পরিমাণে ফসল সংগ্রহ করা যায়;
০ টবে মাটি ব্যবহার করলে ওজন বেশি হয়, কিন্তু কোকোপিট ব্যবহার করলে কম হয়। ছাদের ওপর অনেক টব ব্যবহার করলে লোড ক্যাপাসিটি কম হয়;
০ কোকোপিট দিয়ে যে কোনো প্রকার চারা তৈরি বা গাছ লাগানো যেতে পারে, নির্দিষ্ট কোনো ধরা বাঁধা নিয়ম নেই। আধুনিক গ্রিন হাউসে কোকোপিটকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে
ফসল উৎপাদন করে থাকে:
০ কোকোপিট দিয়ে টবে গাছপালা লাগালে দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পানি দিলে টবের ভেতর কখনও জলাবদ্ধতা তৈরি হয় না, পানি সাথে সাথে দ্রুত সব জায়গাতে ছড়িয়ে দেয় এবং নির্দিষ্ট পরিমাণমতো পানি ধরে রেখে গাছকে সতেজ রাখে এবং কখনও পানি আবদ্ধ হয়ে গাছ মারা যায় না ।
নিত্যপ্রয়োজনীয় সব চাহিদার জোগান দিলেও আমাদের দেশে নারিকেল অনেকটা অবহেলিত রয়ে গেছে। নারিকেল গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে নারিকেলের ফলন ও উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। একই সাথে নার্সারির চারা তৈরি কলম লাগানোর ক্ষেত্রে কোকোডাস্ট নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। একে কাজে লাগিয়ে কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ৫২ টি পণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার জন্য আদালতের আদেশের পর খাদ্যে ভেজাল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশে যারা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত অর্থাৎ অর্গানিক খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করেন তারা বলছেন সম্প্রতি তাদের ক্রেতা হঠাৎ করেই খানিকটা বেড়ে গেছে।
ফল ও সবজিতে রাসায়নিক পদার্থ বা খাদ্যে ভেজাল নিয়ে উদ্বেগের কারণে অনেকেই এই ব্যবসাতেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
কিন্তু তারা নিজেরা আদৌ অর্গানিক সামগ্রী দিচ্ছেন কিনা সেটি কি কোনভাবে নিশ্চিত হচ্ছে?
ক্রেতারা কি বলছেন?
অর্গানিক ফল, সবজি বা খাবার এমন শব্দ লিখে অনলাইনে একটু খুঁজতেই অনেকগুলো সরবরাহকারীর নাম চলে এলো।
ফেসবুকেও এরকম নানা নাম চোখে পড়লো।
ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় এরকম একটি বিপণন কেন্দ্রে সদাই করছিলেন কলাবাগানের একজন বাসিন্দা।
তিনি বলছিলেন কি খাচ্ছেন সেনিয়ে তিনি আজকাল রীতিমতো আতংকিত। তিনি বলছেন, “ভীষণ আতংক আমার। যেখানে যাই সেখানেই দুষিত জিনিস। আমি জানিনা বাংলাদেশে কেন এত নকল, এত ভেজাল আমার মাথায় আসে না। কেন এত ওষুধ দেয়, ইনসেক্টিসাইড দেয় আমি বুঝি না।”
কি ধরনের অর্গানিক পণ্য বিক্রি হচ্ছে?
অর্গানিক বলে যেসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে তার বিপণন কেন্দ্রগুলোতে একটু অন্য আকৃতির লাউ, কলা, কুমড়ো বা মৌসুমি ফল চোখে পড়লো।
একটু জীর্ণ দেখতে সবজিও রয়েছে। এসব দোকানে সরিষার তেল, ঘি বা মধুর বোতলে নেই বাণিজ্যিক পণ্যের চাকচিক্য।
মোড়কে ঝলমলে লোগো, ছবি অথবা মডেলরাও অনুপস্থিত। অর্গানিক সামগ্রীর ব্যবসা করছে এমন প্রতিষ্ঠান হার্ভেস্ট।
এর কর্মী বাসুদেব সরকার বলছেন তারা কিভাবে এসব পণ্য সংগ্রহ করেন।
তিনি বলছেন, “আমাদের নিজেদের ডেইরি খামার আছে। সেখানে দুধ, দই হয়। নিজেদের ঘানিতে সরিষার তেল, নিজেদের ফার্মে ঘি হয়। চালডাল আমরা যেগুলো বিক্রি করি সেগুলো আমরা গ্রামে কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করি।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকেও সংগ্রহ করছেন অনেকে।
মি. সরকারের কাছে জানতে চাইলাম কৃষক তাদের কি দিচ্ছেন কিভাবে যাচাই করা হয়?
তিনি বলছেন, “নির্দিষ্ট কিছু কৃষক আছে আমাদের। আমরা নিজেরা মাঠে গিয়ে পরিদর্শন করি। জিনিসটা দেখে যাচাই বাছাই করেই তারপরই আমাদের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।”
অর্গানিক কিনা সেটি কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছে?
যে ভোক্তাদের কথা উল্লেখ করছেন বাসুদেব সরকার তাদের একজন নাইমা খানম কাছাকাছি সময়ে খাদ্য পণ্য নিয়ে আতংকের কারণে এসব দোকানে আসতে শুরু করেছেন।
তিনি বলছেন, “দাম অনেক বেশি। তারপর সব জায়গায় পাওয়াও যায়না। যেসব দোকান অর্গানিক বলে দিচ্ছে আদৌ কি সেগুলো অর্গানিক কিনা সেটাও আমরা জানিনা। তারপরও যাচ্ছি। যেন একটু ভেজাল কম খাই। সেই চিন্তা থেকে যাই।”
নাইমা খানমের এমন সন্দেহ একেবারে অমূলক তা বলা যাবে না।
যেসব খাদ্য সামগ্রী প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত বা অর্গানিক বলে বিক্রি হচ্ছে তা পরীক্ষা করা হয়না বলে জানিয়েছে খাদ্যের মান পরীক্ষা করার সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন বা বিএসটিআই।
সংস্থাটির কর্মকর্তারা আরও বলছেন ফল বা সবজির মতো সামগ্রী তাদের আওতায় পরে না।
ভোক্তারা কিভাবে বুঝবেন তিনি আসলে কি খাচ্ছেন?
প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রের সমন্বয়কারী দেলোয়ার জাহান বলছেন, সেটি খেয়েই বুঝতে হবে।
সেটি কেমন হতে পারে তার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলছেন, “প্রথমত দেখা। বাজারের বেগুন এখানকার বেগুন দেখতে অন্যরকম। ধরুন বাজারের কলা কিভাবে পাকে আর এখানকার কলাগুলো কিভাবে পাকে তার প্রসেস দেখলেই সে বুঝতে পারবে।”
তিনি বলছেন এর পরে পরীক্ষা হবে রান্নায়। প্রচুর সার বা অন্যান্য রাসায়নিক দেয়া সবজি বা ফল রান্না করার সময় প্রচুর পানি বের হয়।
আর তার মতে শেষ পরীক্ষা হবে খাবার টেবিলে।
তিনি বলছেন, “রাসায়নিক সার যদি দেয়া থাকে তাহলে আদি স্বাদ সে পাবে না। যেমন রাসায়নিক যুক্ত পুইশাক খেতে গেলে রাবারের মতো লাগবে। কিন্তু যদি রাসায়নিক না দেয়া থাকে তাহলে সে পুইশাকের যে আদি স্বাদ যে ঘ্রাণ সেটাই সে পাবে। সে বিশ বছর বা চল্লিশ বছর আগে ফিরে যাবে।”
তিনি বলছেন বেশিরভাগ লোকে মনে করে সবজি বা ফল চক চক করলে বা তা দেখতে সুন্দর হলে সেগুলোই ভালো। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। তার মতে মানুষজনকে বিষয়টা বোঝানো মুশকিল।
দায়ভার পুরোটাই সরকারের?
কিন্তু যেখানে দেশটির খাদ্যসামগ্রীর মান পরীক্ষাকারী সরকারি সংস্থাই বিষয়টি পরীক্ষা করছে না তাহলে অর্গানিক সামগ্রীর মান নিশ্চিত হচ্ছে কিভাবে?
বেসরকারি সংস্থা উবিনীগ দেশিও বীজ ও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে বহুদিন ধরে কাজ করছে।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার বলছেন বাংলাদেশ অর্গানিক খাদ্য সরবরাহ করা বেশ মুশকিল কেননা ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহারের প্রবণতা এখানকার কৃষির সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে।
আর এর দায় তিনি পুরোটাই দিচ্ছেন সরকারের উপরে।
তিনি বলছেন, “আমরা এককালে সরকারি নিতি হিসেবেই কিন্তু বিষ ব্যবহার করেছি। এক সরকার না বহু সরকার এবং স্বাধীনতার পর থেকেই হয়েছে। একসময় এটাই বলা হয়েছিলো খাদ্য উৎপাদনে এটাই জরুরী। এর দায় তাই সরকারকেই নিতে হবে।”
তিনি আরও বলছেন, “এই নিতির কারণে এমন এমন সব বিষাক্ত পেস্টিসাইড, ইনসেক্টিসাইড এমনকি হার্বিসাইড ওটা দিয়েও কিন্তু সব নষ্ট করেছে। নিরাপদ খাদ্যের একটা ফরমুলা রয়েছে যে ‘ফ্রম ফার্ম টু ফোর্ক’ অর্থাৎ কৃষকের মাঠ থেকে খাবারের পাত পর্যন্ত, সেখানে আমার যে একদম শুরুর যায়গা সেটাকেই আমরা বিষাক্ত করে রেখেছি।”
তার প্রভাব পরছে মানুষের স্বাস্থ্যে। যা থেকে মুক্ত নয় কৃষক, বিক্রেতা, ভোক্তা বা কর্তৃপক্ষ কেউই।
এখন প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত পণ্যই এর সমাধান বলছিলেন ফরিদা আক্তার।
জৈব
পরিবারের সদস্যদের জন্য ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতেই ছাদে বা বারান্দায় ফল,সবজি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ
লেখক
বিবিসি বাংলাঢাকার নিকেতনের বাসিন্দা সামিনা হোসেন অনেকদিন ধরেই বাসার ছাদে নানাধরণের মশলা, ফল ও সবজির বাগান করছেন।
এবারের বৃক্ষমেলা থেকেও বেশকিছু নতুন ধরণের ফল ও মশলার গাছ কিনছিলেন তিনি।
মিজ. হোসেন বলেন, “এতদিন বাসার ছাদে লেবু, আঙ্গুর, চাইনিজ কমলার মত নানা ধরণের ফলের চাষ করতাম, তা দিয়ে ৩-৪ জনের পরিবারের ফলের চাহিদা পূরণ হতো।”
সুযোগ সুবিধা পেলে এতদিনের বাগান করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বড় পরিসরে ব্যবসায়িকভাবে ফল, সবজি, মশলার চাষ করারও ইচ্ছাপ্রকাশ করেন তিনি।
তবে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, অধিকাংশ মানুষই ছাদে বা বারান্দায় ফল,সবজির চাষ করেন পরিবারের সদস্যদের জন্য টাটকা ও ভেজালমুক্ত খাবারের যোগান নিশ্চিত করতে।
কেন ছাদে ফল চাষ করতে চায় মানুষ?
অনেকেই বলেন বাড়ির সৌন্দর্যবর্ধন বা শখ পূরণ করতেই ছাদে বা বারান্দায় বাগান করে থাকেন তারা।
তবে মেলায় আসা অধিকাংশ গৃহিণীই বলেন শুধু শখের বশে কিংবা বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যেই নয়, ছাদে বা বারান্দায় ফল বা সবজির গাছ লাগিয়ে পরিবারের চাহিদাও পূরণ করেন তারা।
ঢাকার শান্তিনগরের বাসিন্দা শাহিদা শামিম জানান বাড়ির ছাদে ফুলগাছের পাশাপাশি লেবু, মরিচ, পেয়ারা, পুঁইশাকসহ নানা ধরণের ফল, সবজি ও মশলার গাছ লাগিয়েছেন তিনি। এসব গাছ থেকে সংগৃহীত ফসল দিয়ে তাঁর পরিবারের ফল,সবজি ও মশলার চাহিদা অনেকাংশেই মিটে যায়।
লালমাটিয়ায় একটি ফ্ল্যাট বাসার বাসিন্দা মিজ. সুমাইয়া জানান ছাদে জায়গা না থাকায় বারান্দাতেই ফল, সবজির গাছ লাগিয়েছেন তিনি।
মিজ. সুমাইয়া বলেন, “নিজের বাগানের ফল বা সবজি দিয়ে পরিবারের চাহিদার কিছুটা পূরণ হয়। তবে স্বস্তির বিষয় হলো পরিবারের সদস্যরা ভেজালমুক্ত ও টাটকা খাবারের নিশ্চয়তা পাচ্ছে – এই তো অনেক বেশী।”
পাশাপাশি ঘরের সাথে বাগান থাকায় একধরণের মানসিক প্রশান্তির অনূভুতি তৈরী হয় বলেও বাগান করতে ভালবাসেন মিজ. সুমাইয়া।
মেলায় অধিকাংশ ক্রেতাকেই দেখা যায় ছাদ বা বারান্দায় টবে লাগানোর উপযোগী নানা ধরণের ফুল, ফল, সবজি বা মশলার গাছ কিনতে।
সাধারণত ছাদবাগানে যেসব ফল দেখা যায়, যেমন পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, পেপে, সেগুলো বাদেও অ্যাভোক্যাডো, ড্রাগনফ্রুটের মত নতুন নামের বিদেশী ফল কিনতে দেখা যায় ক্রেতাদের।
ছাদে ফল বা সবজি চাষে কতটা আগ্রহী মানুষ?
ঢাকার বৃক্ষমেলায় ফুলগাছ বা নিছক সৌন্দর্যবর্ধক গাছের চেয়ে এবার ফল ও সবজির গাছের চাহিদা অপেক্ষাকৃত বেশী বলে জানান বিক্রেতারা।
সোহরাব হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, “মেলায় ফলের গাছের চাহিদাই বেশী। আর ফলের মধ্যে চেনা দেশী ফলের চেয়ে বিদেশী ফলের দিকেই বেশী আগ্রহ মানুষের।”
সোহরাব হোসেনের মতে ইন্টারনেটে টবে লাগানোর উপযোগী নতুন নতুন বিদেশী ফল সম্পর্কে ধারণা পেয়ে সেসব ফল কিনতে বেশী আগ্রহ প্রকাশ করে ক্রেতারা।
গতবছর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনই ঘোষণা দিয়েছিল, ঢাকার ভেতরে বনায়নের চাহিদা মেটাতে যারা বাড়ির ছাদে বাগান করবে, তাদের ১০ শতাংশ কর মওকুফ করা হবে। বৃক্ষমেলায় বিক্রেতারা ধারণা করছেন সিটি কর্পোরেশনের এরকম সিদ্ধান্তে উদ্বুদ্ধ হয়েই মানুষ ছাদে বাগান তৈরীতে আগের চেয়ে বেশী আগ্রহী হয়েছে।
আপনি জানেন কি?
- বর্তমানে জমিতে অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রচুর পরিমানে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়।
- তবে ব্যাপকহারে এ রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমিতে এর বিরূপ প্রভাব ও পড়ে ।
- সাথে সাথে জমিতে জৈব পদার্থ ও উপকারী অনুজীবের পরিমান হ্রাস পেতে থাকে।
- এছাড়া জমির পুষ্টি উপাদানের মাত্রা ও ক্রমশ কমে যেতে থাকে। এজন্য জমিতে কম্পোষ্ট ব্যবহার খুবই প্রয়োজনীয়
কম্পোস্ট তৈরির উপাদান
যেসব উপাদান দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করা যায়, তা হলো-
- ফসলের অবশিষ্টাংশ
- কচুরীপানা
- সবজি বা ফলের খোসা
- আগাছা
- বসতবাড়ির ময়লা আবর্জনা ও
- খড়কুটা
স্তূপ পদ্ধতিতে কম্পোস্টবসতবাড়ির আশপাশে, ক্ষেতের ধারে অথবা পুকুর বা ডোবার কাছে স্তূপ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। এজন্য খেয়াল রাখতে হবে, যেন স্থানটি বেশ উঁচু হয়, যাতে সেখানে বর্যার পানি জমে না থাকে। এ ধরনের উঁচু স্থান যদি গাছের ছায়ার নিচে হয় এবং সেখানে স্তূপ করা যায় তাহলে খুবই ভালো কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। কারণ গাছের ছায়া রোদ বৃষ্টি প্রতিরোধ করবে এবং জৈব পদার্থের পচন ক্রিয়ায় সাহায্য করবে। বর্ষাকালে অথবা যেসব এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি, সেসব এলাকায় স্তূপ পদ্ধতিতে তৈরি কম্পোস্ট বেশ কার্যকর। গ্রাম বাংলায় এ পদ্ধতিকে গাদা পদ্ধতি বলা হয়।
তৈরির নিয়ম : কম্পোস্ট তৈরির জন্য প্রথমে ৩-৪ দিনের শুকনো কচুরিপানা ও অন্যান্য আবর্জনা ফেলে ১৫ সেমি. পুরু স্তর সাজাতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাজা বা সবুজ কচুরিপানা ব্যবহার উচিত নয়, এতে পটাশ ও নাইট্রোজেনের উপাদান নষ্ট হয়। কচুরিপানা বেশি লম্বা হলে তা ১৫ সেমি. করে কেটে ব্যবহার করতে হবে।
এরপর এ স্তরের ওপর ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২০০ গ্রাম টিএসপি সার ছিটিয়ে দেয়া ভালো। এতে পচনক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। সার ছিটানোর পর স্তরের ওপর ২.৫০-৫.০০ সেমি. পুরু করে গোবর এবং কাদা মাটির একটি প্রলেপ দিতে হবে। এর ফলে স্তরের ভেতর জীবাণুর ক্রিয়া বেড়ে যাবে এবং দ্রুত পচন কাজ সম্পন্ন হবে। এভাবে১.২৫ মি.উঁচু না হওয়া পর্যন্ত বারবার ১৫ সেমি. পুরু করে শুকনো কচুরিপানা,আবর্জনা, খড়কুটো দিয়ে স্তর সাজাতে হবে এবং ২.৫০-৫.০০ সেমি. পুরু করে গোবর ও কাদা মাটি দিয়ে লেপে দিতে হবে। গাদা তৈরি শেষ হলে এর উপরিভাগ মাটি দিয়ে লেপে দিতে হবে এবং সম্ভব হলে কম্পোস্ট স্তূপ ওপর ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্তূপ বা গাদা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর একটি শক্ত কাঠি গাদার মাঝখানে ভিতরের দিকে দিয়ে স্তরগুলো অতিরিক্ত ভেজা কিনা তা দেখে নিতে হবে। যদি ভেজা থাকে, তাহলে শক্ত কাঠি দিয়ে গাদার উপর থেকে মাঝে মাঝে ছিদ্র করে দিতে হবে, যাতে বাতাস ভিতরে ঢুকতে পারে। এরপর গাদার ভিতরের অংশ শুকিয়ে গেলে ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে গাদ যেন অতিরিক্ত শুকিয়ে না যায়। যদি অতিরিক্ত শুকিয়ে যায়, তাহলে ছিদ্র পথে পানি বা গো-চনা ঢেলে গাদাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমানে গোবর, গো-চনা এবং ইউরিয়া গাদাতে ব্যবহার করা হলে স্তূপ তৈরির প্রায় ৩ মাসের মধ্যে তৈরি কম্পোস্ট জমিতে ব্যবহারের উপযুক্ত হবে। আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে যদি কম্পোস্ট গুড়াঁ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে তা জমিতে ব্যবহারের উপযোগী হয়েছে।
কম্পোস্ট ব্যবহারের উপকারীতা
কম্পোস্ট ব্যবহারে –
- মাটির পুষ্টিমান বৃদ্ধি করে ও মাটিকে সমৃদ্ধ করে।
- বেলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং পুষ্টি উপাদান যুক্ত করে।
- এটেল মাটিকে ঝুরঝুরে করে ও এর বায়ুচলাচল বৃদ্ধি করে।
- সবজি ফসলে মালচিং এর কাজ করে।
- ভূমিক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে।
- মাটিতে উপকারী অনুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।
- মাটির পি-এইচ বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মান নিরপেক্ষ রাখতে সহায়তা করে।
- পট অথবা টবের মাটির সহিত কম্পোস্ট ব্যবহার করে চারা রোপন করা হয়।
সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।
জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।
বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।
চাষবাস করতে গেলে সারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ফসল বাঁচানোর সঙ্গে সঙ্গে সারের সুরক্ষাও নিশ্চিত করা উচিত। ফসলে ব্যবহৃত সার ভালো রাখতে গেলে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। এক্ষেত্রে প্রথমেই বলা ভালো, সারের বস্তা যখন চালান গাড়িতে তোলা হয়, তখন মজুররা সারের বস্তায় আঁকশি মারেন। প্রথমত সারের বস্তায় আঁকশি মারা উচিত নয়। সারের বস্তা কখনো মাটির ওপর ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। মনে রাখতে হবে সার চালান করার সময় কোনোমতেই যেন তাতে জল না লেগে যায়। জল লাগলেও সারের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। কখনো চটের বস্তাতে সার রাখা উচিত নয়, কারণ চটের বস্তাতে বাতাসের আর্দ্রতা লেগে সার ভীষণ রকমের ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
সার রক্ষার উপযুক্ত আবহাওয়া (Appropriate Climate)
তবে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা থেকে সারকে কখনোই পুরোপুরি বাঁচানো সম্ভব নয়। সঠিক চেষ্টা করলে সারকে আর্দ্র হওয়ার থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। গোটা দিন আলো বাতাস যুক্ত ঘরে সার রেখে দিলেও, সন্ধের সময় বাতাসের আর্দ্রতা যখন বেশি থাকে সেই সময় ঘরের সমস্ত দরজা ও জানালা বন্ধ করে দিলে সারকে আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। সারে আর্দ্র হয়ে গেলে তা জমাট বেঁধে যায়, কৃষকরা পরে তা ফসলে ব্যবহার করতে গেলে আখেরে ক্ষতিগ্রস্থই হবেন।
সার রক্ষনাবেক্ষনের সহজতম পদ্ধতি ( Methods of fertilizer maintenance)
১) সার যেখানে মজুত হবে, সেই ঘর যেন শুকনো এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়। দেওয়ালে এবং ঘরের সিলিঙে যাতে সারের বস্তা থাকে থাকে রাখার ফলে না লেগে যায় তার খেয়াল রাখতে হবে।
২) সারের বস্তা যেই ঘরে মজুত হবে সেই ঘরে যদি আলাদা আলাদা করে তাকের ব্যবস্থা করা হয় তবে তা হবে সবথেকে ভালো উপায়। এতে কোন সারটি আগে এসেছে আর কোনটা পরে মজুতকরণের জন্য রাখা হয়েছে সেটি সহজেই জানতে পারা যাবে। বিনা কারণে পুরোনো সারের বস্তা পড়ে পড়ে নষ্ট হবে না।
৩) সারের বস্তাগুলিকে এমনভাবে পর পর সাজাতে হবে যাতে সেগুলি ধসে না যায়। এর জন্য সরাসরি বস্তাগুলি না সাজিয়ে একটু কোনাকুনি সাজাতে হবে। সারের বস্তা সাধারণত প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়, তাই এগুলিকে অনেকটা উঁচুতে রাখা উচিত নয়, অন্তত ৩ মিটারের বেশি তো নয়ই।
৪) ব্যাগ ভর্তি সারকে শুকনো ও পরিষ্কার মেঝেতে রাখা উচিত।শুকনো সিমেন্টের মেঝেতে সার বস্তা সংরক্ষণ করা উচিত।
৫) সার যেখানে মজুত হবে সেই স্থানে অন্য কোনও কৃষিজাত দ্রব্য রাখা যাবে না।
সার সুরক্ষিত রাখতে হলে এই নিয়মগুলি মেনে চললে সারের ক্ষতি অনেকাংশে ঠেকানো সম্ভব। সার বাঁচলে ফসলও বাঁচবে এই কথা মাথায় রেখে সারের রক্ষনাবেক্ষন করা উচিত। সার এতে বেঁচেও যাবে সাথে সাথে বহু পরিশ্রম অর্জিত অর্থও বিফলে যাবে না।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন