দেশি খাবার খেতে খেতে অনেক সময় একটু বিদেশি খাবারও চেখে দেখতে ইচ্ছা করে। বিদেশি খাবারের রন্ধনপ্রণালি, মসলার ব্যবহার, সসের ব্যবহার আমাদের জিবকে কিছুটা হলেও অন্য জগতে নিয়ে যায়। আজ জাপানি তিনটি খাবারের রেসিপি থাকল। রেসিপি দিয়েছেন রীপা হক।
ছাতা আন্দাগি
উপকরণ:
ময়দা ১০০ গ্রাম, ডিম ১টি, চিনি ৫০ গ্রাম, বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ, তেল ১ চা-চামচ ও লবণ ১ চিমটি।
প্রণালি
ময়দা, লবণ ও বেকিং পাউডার একসঙ্গে মিশিয়ে একবার চেলে নিতে হবে। একটা বোলে তারের ফেটানি দিয়ে ডিম ফেটে নিন। ফেটানোর সময় চিনি দিন। এবার এতে তেল মেশান। ময়দার মিশ্রণটি স্প্যাচুলা (একধরনের খুন্তি) দিয়ে মেশাতে হবে। খামির বানানো হয়ে গেলে ঢাকনা দিয়ে রেফ্রিজারেটরে ৩০ মিনিট রাখুন। এরপর হাতে তেল লাগিয়ে গোল বলের মতো করে তেলে অল্প আঁচে ভাজতে হবে। খেয়াল রাখুন যেন তেল খুব গরম না হয়, ১৫০–১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকে। কম আঁচে ভাজলে বলগুলো ফেটে যাবে। এটাই এই ডোনাটের বৈশিষ্ট্য। জাপানিরা এই ফাটা ভাবকে হাসির সঙ্গে তুলনা করে। সব ভাজা হয়ে গেলে পরিবেশন করুন। এটি জাপানের ওকিনায়া অঞ্চলের খাবার।বিজ্ঞাপন
ইমো কেন্ পি
উপকরণ:
মিষ্টি আলু মাঝারি আকারের ১টি, বাটার ১০ গ্রাম, চিনি দেড় টেবিল চামচ, লবণ ১ চিমটি, তেল পরিমাণমতো (ভাজার জন্য) ও কালো তিল পরিমাণমতো।
প্রণালি
মিষ্টি আলু খোসাসহ বা ছিলে ধুয়ে লম্বা লম্বা করে কেটে নিয়ে পানিতে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। পানি থেকে তুলে কিচেন পেপার দিয়ে মুছে শুকিয়ে নিন। কড়াইতে তেল গরম করে ডুবো তেলে ভাজুন। হালকা রং ধরে এলে তুলে ফেলতে হবে। একটি ফ্রাইপ্যানে মাখন গলাতে হবে। এবার চিনি দিন। চিনি গলে হালকা সোনালি রং হলে তাতে ভাজা মিষ্টি আলু দিয়ে তাড়াতাড়ি উল্টে দিন। যেন আলুর গায়ে সব জায়গায় ক্যারামেল লাগে। চুলা থেকে নামিয়ে কালো জিরা এবং এক চিমটি লবণ ছিটিয়ে পরিবেশন করুন। এটি দেখতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসের মতো। তাই বলা যায়, মিষ্টি আলুর ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস।
গোইয়্যা চানপুরু
উপকরণ:
করলা ১টি, ডিম বড় ১টি (হালকা ফেটানো), টফু ছোট আকারের ১ প্যাকেট, লবণ আধা চা-চামচ, গোলমরিচ সামান্য, মেয়োনেজ ১ টেবিল চামচ, তেল ১ চা-চামচ ও টুনা মাছ (ছোট ক্যান) ১টি।
প্রণালি
করলা ধুয়ে পাতলা করে (৩ মিলিমিটার পুরু) কেটে নিয়ে সামান্য লবণ দিয়ে মেখে রাখতে হবে। টফু পেপার টাওয়েল দিয়ে মুছে নিয়ে ছোট টুকরা করে নিতে হবে। একটা ফ্রাইপ্যানে ১ চা-চামচ তেল দিয়ে টফুগুলো দুই পিঠ হালকা বাদামি করে ভেজে নিয়ে একটা বাটিতে তুলে রাখুন। এবার সেই ফ্রাইপ্যানে টুনা (ক্যানের তেলসহ) ও করলা ভাজতে হবে। গোলমরিচ দিন। সামান্য ভাজার পর মেয়োনেজ দিয়ে নেড়ে লবণ স্বাদমতো হয়েছে কি না, দেখুন। এবার ফেটানো ডিম দিয়ে নেড়ে ডিম জমাট বেঁধে এলে নামিয়ে পাত্রে ঢেলে পরিবেশন করুন।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন