মিনস হচ্ছে মাছকে ফিলেট করে মিনসার মেশিন দিয়ে চূর্ণ করে কাটাবিহীন মাছ বানানো। এটা ধোয়া নয়, তবে মাঝে মাঝে ধোয়া হয়ে থাকে। এটা সরাসরি খাওয়া হয় না। পলিথিনে মুড়ে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে এটা থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়।
সুরিমি হচ্ছে লবণ পানিতে ধোয়া মিনস। এর সঙ্গে ক্রায়োপ্রোটেকট্যান্ট (৪% সরবিটল+ ৪% সুগার, ০.৩% সোডিয়াম ট্রাই পলি ফসফেস মিশ্রণ) মেশানো হয়। আয়তাকার আকৃতি দিয়ে পলিথিনে মুড়ে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা হয়।
মিনস ও সুরিমি কোনো পণ্য নয় এটা থেকে পরবর্তীতে ইচ্ছা অনুযায়ী আকার, স্বাদ, আকৃতি দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়। এটা বিভিন্ন পণ্যের কাচামালও বলা যেতে পারে।
মাছের বিবেচ্য বিষয় ১. কম মূল্যের হবে। ২. হোয়াইট মাসল বিশিষ্ট মাছ। ৩. কম তেলযুক্ত হবে। ৪. সারা বছর প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ৫. ভালো জেলিং ক্ষমতা থাকবে। ৬. যে মাছগুলো ক্রেতা কম পছন্দ করে ও কম খায় এমন মাছ হবে।
যে মাছে মিনস হয় মাছের ইংরেজি নাম আলাস্কা পোলাক, থ্রেড ফিন ব্রিম, বিগ আই স্নাপার, ক্রোকার, হেয়ার টেইল, লিজার্ড টেইল, প্যাসিফিক হ্যাক, হর্স ম্যাককেরেল, সর্ড ফিস, তেলাপিয়া, উড়ুককু মাছ, মুলেট, ছুরি মাছ, হাতুরি হাঙ্গর।
মিনস থেকে যা যা হয় মিনস থেকে ফিস বল, ফিস ফিংগার, ফিস নাগেট, ফিস বার্গার পেটি, ফিস সসেজ, ফিস কাটলেট, ফিস হাম, ফিস পিকল, ফিস স্টিক তৈরি করা হয়।
যে মাছ থেকে সুরিমি হয় আলাস্কা পোলার্ক, আটলান্টিক কড, বিগহেড পেন্না ক্রোকার, বিগ আই, মিল্ক ফিস, হাঙ্গর, সর্ড ফিস, তেলাপিয়া।
সুরিমি থেকে যা যা হয় সুরিমি থেকে কামাবোকো, আগেমনো, চিকুয়া, কাট্সুবিসি, ফিস সাইলেস, পেমপেক, নরটুমাকি ইত্যাদি তৈরি করা যায়।
কামাবোকো ফ্রিজে সংরক্ষিত সুরিমিকে প্রথমে বাইরে এনে নরমাল করতে হবে। সুরিমির ওজনের ১০% পানি ও ২-৫% সোডিয়াম ক্লোরাইড (লবণ) দ্রবণে ২০ মিনিট নাড়তে হবে। এরসঙ্গে ১৫% আলু মিশিয়ে ১০ মিনিট মিক্সড করতে হবে। এবার আকৃতি দিতে হবে। যে পণ্য তৈরি করতে চান কাঠের ডাইশে সেই আকার দিয়ে পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে ৮৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ১ ঘণ্টা রাখুন। এরপর বের করে ঠান্ডা করতে হবে। কামাবোকোকে ছোট অংশে কাটতে হবে।
আগেমনো ফ্রিজে সংরক্ষিত সুরিমিকে প্রথমে বাইরে এনে নরমাল করুন। সুরিমির ওজনের ১০% পানি ও ২-৫% সোডিয়াম ক্লোরাইড (লবণ) দ্রবণে ১০ মিনিট নাড়ুন। এরসঙ্গে সবজি, রসুন, আদা, পিঁয়াজ বাটা এবং অন্যান্য মসলা মেশান। ভালোভাবে মিশিয়ে বিভিন্ন আকৃতি দিন। এবার এগুলোকে ডুবন্ত তেলে ভাজলে হয়ে গেলো আগামনো।
ফিস সসেজ ফ্রিজে সংরক্ষিত মিনস বাইরে এনে স্বাভাবিক করুন। ওজনের ২.৫% লবণ ও ১৫% পানিতে ১০ মিনিট মেশান। এরসঙ্গে মরিচ, হলুদ, মসলা ০.১% সোডিয়াম নাইট্রেট দিয়ে ১০ মিনিট মেশান। এবার চাপ সৃষ্টি করে পলিথিনে প্যাক করুন। পলিথিনের দুই প্রান্ত টাইট করে বাঁধুন। ৮৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রায় সেদ্ধ করুন। ঠান্ডা করে ছোট ছোট অংশে কাটুন। এটাই ফিস সসেজ।
পণ্য তৈরি যেমন শিখতে হয়; তেমনই এটাকে পরিবেশন করাও ততটা প্রয়োজন। তৈরিকৃত পণ্যগুলো বিভিন্ন সালাদ ও সবজি দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন