পরিবেশ
জরিমানায় ‘জায়েজ’ পাহাড় কাটা
লেখক
প্রথম আলোপাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন রাজনৈতিক নেতা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্যসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
চকরিয়ার খুঁটাখালীর ফুলছড়ি। এখানে একটি পাহাড় কাটা হচ্ছিল এক বছরের বেশি সময় ধরে। গত জানুয়ারিতে পরিদর্শন করে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর। তখন ২ লাখ ৮ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটা হয় বলে প্রতিবেদন দেন অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম। পরে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তখনো ২০ ফুট উঁচু ছিল কিছু পাহাড়। পরে একই স্থানে আবার পাহাড় কাটার অপরাধে উপজেলা ভূমি কার্যালয় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
এরপর ২২ জুলাই আবার পরিদর্শনে যান পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম। তখন নতুন করে ১ লাখ ৬০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কেটে জায়গাটি সমতল করে ফেলা হয় বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। বিষয়টি পুনঃ তদন্তের আবেদন জানান বিবাদী। পরে ১০ অক্টোবর খুঁটাখালীতে গিয়ে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা দেখেন, সেখানে পাহাড় কেটে সমতল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সবাই প্রভাবশালী এবং স্থানীয় সাংসদ জাফর আলমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
জরিমানা দিয়ে আবার পাহাড় কিংবা বনাঞ্চল ধ্বংস করার নজির কক্সবাজারের পিএম খালী ও খুরুশকুলসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার জন্য গত এক বছরে শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু জরিমানা দিয়ে আবার পাহাড় কেটেছেন তাঁরা। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাহাড়গুলো রক্ষা করা যায়নি। পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বড় একটি অংশ রাজনৈতিক নেতা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
৯ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় জানানো হয়, সারা দেশের মধ্যে কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি, ৫৯ হাজার ৪৭১ একর বনভূমি বেদখল হয়ে গেছে। সারা দেশে দখল হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার একর। এ স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. জাফর আলম কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকার সাংসদ। যাঁরা পাহাড় কাটায় সম্পৃক্ত, তিনি তাঁদের প্রশ্রয় দেন বলেও অভিযোগ আছে।বিজ্ঞাপন
সাংসদ জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একবার এক বা দুই লাখ টাকা জরিমানা করার পর আবার নোটিশ দেওয়ার সুযোগ কী থাকে? খুঁটাখালীতে আর পাহাড় কাটা হয়নি। তবে রেললাইনে মাটি দেওয়ার জন্য অনেক জায়গায় কিছু পাহাড় কাটা হয়েছে। আর যেহেতু এখানে আমি দলের প্রধান। তাই দলের কেউ এ ধরনের কাজ করলে তার দায় আমার ওপর বর্তায়। তা ছাড়া আমি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিরও সদস্য।’
পাহাড় কাটার এ উৎসব মূলত শুরু হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঘুমধুম রেললাইনকে কেন্দ্র করে। রেললাইনের গতিপথে পাহাড় পড়লে তা নির্ধারিত পরিমাপে কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এ সুযোগে যে যেমন পারছে, পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির পাশাপাশি জমি সমতল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে।
কক্সবাজার থেকে খুরুশকুল ইউনিয়নের আদর্শ গ্রাম। সেখানে গাছপালা কেটে প্রায় ৬০ ফুট উঁচু ও ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের পাহাড়টির বড় অংশ সাবাড় হয়ে গেছে। এ ছাড়া পিএমখালী, ইসলামপুর, উখিয়া, চকরিয়া, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে এভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটা চলছে। খুরুশকুল আদর্শ গ্রাম থেকে কিছুদূর এগোলে নতুন ঘোনার পাড়া। প্রায় ১৭০ ফুট উঁচু এবং লম্বায় প্রায় ৫০০ গজ দীর্ঘ পাহাড় কেটে সমতল করা হয়েছে। মো. ইসলাম, নুরুল আলম বহদ্দারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এ পাহাড় কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খুরুশকুলের সঙ্গে লাগোয়া পিএমখালী ইউনিয়ন। এখানে পাহাড় কাটছেন শেখ কামাল মেম্বার ও বাবুল। ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে ৭০ ফুট উঁচু পাহাড়টি। কেটে ফেলা হয়েছে শত শত গাছ। এর পাশে চৌধুরী পাড়ায় ৫০ ফুট উঁচু আরেকটি পাহাড়ের একাংশ বিলীন হয়ে গেছে গত দুই মাসে। সেখানে এখন মুরগির ফার্ম করা হয়েছে। অভিযোগ শাহাবুদ্দিন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
রেললাইনে মাটি দেওয়ার জন্য অনেক জায়গায় কিছু পাহাড় কাটা হয়েছে। আর যেহেতু এখানে আমি দলের প্রধান, তাই দলের কেউ এ ধরনের কাজ করলে তার দায় আমার ওপর বর্তায়।
মো. জাফর আলম স্থানীয় সাংসদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি
কক্সবাজারে ভবিষ্যতে পাহাড় থাকবে কি না, সংশয় প্রকাশ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, রেললাইন প্রকল্পের জন্য কিছু পাহাড় নির্দিষ্ট পরিমাপে কাটার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এ সুযোগ নিয়ে সবাই পাহাড় কাটায় লিপ্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জড়িতরা সবাই প্রভাবশালী। বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে জরিমানা ও নোটিশ দিয়েছি। নানাভাবে আমাদের চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে।’
কক্সবাজারের সাতটি উপজেলার পাহাড়, টিলা, পাহাড়ি বন কাটা রোধে এবং সমুদ্রসৈকত রক্ষার বিষয়ে ৯ ডিসেম্বর রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দেওয়া রুলে পাহাড়, পাহাড়ি বন, টিলাকে কোনো ধরনের পরিবর্তন, রূপান্তর, কাটা থেকে রক্ষার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিবেশ সচিবসহ ২২ বিবাদীকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় ও বন কাটার সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের গ্রেপ্তার বন্ধ করে মূল হোতাদের ধরা জরুরি। পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং দু-একজন পাহাড় কর্তনকারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না হলে তা বন্ধ হবে না। জরিমানা যথেষ্ট নয়। জরিমানা করে পাহাড় বেষ্টনী দিয়ে বনায়ন করতে হবে।
জরিমানা দিয়ে খালাস
পরিবেশ অধিদপ্তর দায়িত্ব শেষ করেছে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে। পরিবেশ আদালতেও মামলা করছে। দেখা গেছে, একই স্থানে পাহাড় কাটার কারণে কয়েকবার জরিমানা করা হয়েছে। যাঁরা পাহাড় কাটছেন, তাঁরা জরিমানা দিয়ে আবারও পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছেন। একসময় পুরো পাহাড়টি সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক শেখ নাজমুল হক বলেন, ‘জরিমানা দিয়ে অনেকে মনে করে, তারা বৈধতা পেয়ে গেছে। আবার এসে পাহাড় কাটা শুরু করে। এদের ঠেকাতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।’
খুঁটাখালীর ফুলছড়ির পাহাড়টি কেটে সমতল হয়েছে এভাবেই। মো. সরোয়ার মাস্টার, আবদুস সালাম, হাসানুল ইসলাম ওরফে আদরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এ পাহাড় কাটার অভিযোগ।
কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরের নাপিতখালী এলাকায় বিএনপিদলীয় চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে ১২ লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার অভিযোগ ওঠে এক বছর আগে। তখন তাঁকে নোটিশ দেওয়া হয়। বিবাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পুনঃ তদন্তে পাঠানো হয়। পরে গত মাসে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে পুরো পাহাড় উজাড় হয়ে সেখানে স্থাপনা উঠে গেছে।
করোনার জন্য ২৭ মার্চ থেকে সারা দেশে লকডাউন শুরু হয়। এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজকর্ম ছিল কিছুটা স্তিমিত। কিন্তু পাহাড় কাটা থেমে ছিল না। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৫২টি পাহাড় কাটার স্থান চিহ্নিত করেছে অধিদপ্তর। গত বছর তা ছিল ১০৫
খুরুশকুলের জালিয়া বাপের পাড়া এলাকার পাহাড়টি গত বছর কাটা শুরু হয়। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৭৫ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটা হয়েছিল। এ নিয়ে মামলা করা হয়। আবার চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটার প্রমাণ মেলে। স্থানীয় ইউসুফ, কায়সার ও জিয়াবুলের সম্পৃক্ত পেয়েছে অধিদপ্তর। তাঁদের জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু পাহাড়টি রক্ষা পায়নি।
এর পর গত ১৩ অক্টোবর জালিয়া বাপের পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পাহাড়টির এক পাশ এখন সম্পূর্ণ বিলীন। গাছপালা কেটে ফেলে রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতিতে দুই বছর ধরে দুটি পাহাড় কেটে বিলীন করে ফেলার অভিযোগ রয়েছে তমা কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তারা রেললাইন প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজ করছে। তাদের নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে তমার প্রকল্প ব্যবস্থাপক অনুমোদিত অংশে পাহাড় কাটা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বনবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, জরিমানা করে কখনো পাহাড় কিংবা বনাঞ্চল রক্ষা করা যাবে না। এর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জরিমানা দিয়ে এ অপরাধীরা মনে করে তারা বৈধতা পেয়ে গেছে। বন ও পাহাড় ধ্বংসের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা জড়িত। রোহিঙ্গারাও এর সঙ্গে জড়িত।বিজ্ঞাপন
জড়িত জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা
করোনার জন্য ২৭ মার্চ থেকে সারা দেশে লকডাউন শুরু হয়। এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজকর্ম ছিল কিছুটা স্তিমিত। কিন্তু পাহাড় কাটা থেমে ছিল না। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৫২টি পাহাড় কাটার স্থান চিহ্নিত করেছে অধিদপ্তর। গত বছর তা ছিল ১০৫।
পাহাড় কাটার অভিযোগে কক্সবাজারের ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালামকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া রামুর রশিদনগরের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম, আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন তাহের চৌধুরী ওরফে হিমু, রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, মিঠাছড়ির চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টু, চকরিয়ার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা এবং বালু উত্তোলন, ডুলাহাজারার ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, চকরিয়ার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনসহ অন্তত ৫০ জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে পাহাড় ও বন উজাড়ের অভিযোগ রয়েছে।
জরিমানা করে কখনো পাহাড় কিংবা বনাঞ্চল রক্ষা করা যাবে না। এর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জরিমানা দিয়ে এ অপরাধীরা মনে করে তারা বৈধতা পেয়ে গেছে।
মোহাম্মদ কামাল হোসাইন, অধ্যাপক , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীর বিরুদ্ধে উপজেলার পাগলির বিল এলাকার ১০ একর জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, গাছপালা কাটা এবং ছড়া ভরাটের অভিযোগ এনেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর সঙ্গে ডুলাহাজারার ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিনও জড়িত।
জানতে চাইলে ফজলুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বালু উত্তোলনের জন্য আমার কাগজপত্র আছে। তারা (পরিবেশ অধিদপ্তর) হয়তো তা পায়নি। এ ছাড়া ছড়াটা পানি না থাকায় এমনিতে ভরাট হয়ে গেছে।’
চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে পাহাড় ও গাছপালা কেটে ইটভাটা করার অভিযোগ রয়েছে। তাঁর মালিকানাধীন চকরিয়ার জি এল বি ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ ছাড়া বন উজাড়ের দায়ে বন বিভাগের একটি মামলায় ২০১৪ সালে গিয়াস উদ্দিনকে আদালত ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইটভাটা এখন বন্ধ রয়েছে। আর মামলার বিষয়টি আমার মনে নেই।’
যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সাংসদ জাফর আলম বলেন, ‘গিয়াসের বিরুদ্ধে ইটভাটার একটা অভিযোগ ছিল। আর কিছু আছে কি না আমি জানি না। আর উপজেলা চেয়ারম্যান (সাঈদী) এক জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করার অনুমতি নিয়ে অন্য এলাকা থেকে বালু তুলছেন।’
৯ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় জানানো হয়, সারা দেশের মধ্যে কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি, ৫৯ হাজার ৪৭১ একর বনভূমি বেদখল হয়ে গেছে। সারা দেশে দখল হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার একর
সাংসদ জাফর আলম চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আর সাঈদী সহসভাপতি ও গিয়াস উদ্দিন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
উখিয়ার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমকেও পাহাড় কাটার অভিযোগে নোটিশ দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। উখিয়ার তাইংখালী এলাকায় ইউপি সদস্য নুরুল হক, ছাত্রলীগ নেতা আলী আহমদ, স্থানীয় প্রভাবশালী মো. আলমগীর ফরহাদ, শাহ আলমগীর, ফরিদ আলমের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা ও বন উজাড়ের অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রামের প্রধান বন সংরক্ষক আবদুল আওয়াল সরকার প্রথম আলোকে বলেন, অনেকেই বনের জায়গা দখল করে রেখেছে। অনেক জায়গায় গাছপালা এবং পাহাড় কেটে ফেলেছে। মামলা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগে বেদখল হয়েছে।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
-
পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি
ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।
২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।
৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।
৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।
৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।
৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।
৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।
১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।
১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।
১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷
বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
অশ্বগন্ধা –
বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
শতমূলী –
শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
যষ্টিমধু –
জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী –
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি –
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷
পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।
মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)
কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।
রোপন (Planting)
দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।
ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।
মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।
গাছের পরিচর্যা (Caring)
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন