আঙিনা কৃষি
চন্দ্রমল্লিকার ফুলের চাষ ও তার রোগ দমনের উপায়
লেখক
নিজস্ব প্রতিনিধিচন্দ্রমল্লিকা একটি খুবই জনপ্রিয় ফুল। এই ফুলের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়। বিভিন্ন রংয়ের এই ফুলগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমূল্য রয়েছে প্রথম সারিতে। অক্টোবরে কুঁড়ি আসে এবং নভেম্বরে ফুল ফোটে৷ গাছে ফুল তাজা থাকে ২০ থেকে ২৫ দিন৷ জনপ্রিয়তার দিক থেকে গোলাপের পরই এর স্থান। এটি বিভিন্ন বর্ণ ও রঙের হয়ে থাকে। এর মধ্যে তামাটে, সোনালি, হলুদ, বেগুনি, লাল, খয়েরি এবং “গ্রিন গডেস” নামের সবুজ চন্দ্রমল্লিকা অত্যন্ত জনপ্রিয়। চন্দ্রমল্লিকা ফুলের বাজারে চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
চাষ পদ্ধতি –
জলবায়ু ও মাটিঃ চন্দ্রমল্লিকা তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং রৌদ্রজ্জল জায়গা পছন্দ করে। বাংলাদেশে শীতকালই এই ফুল চাষের উত্তম সময়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সুনিস্কাশিত দো আঁশ ও বেলে মাটি চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উপযোগী। মাটির পিএইচ ৬.০-৭.০ হওয়া বাঞ্জনীয়।
চারা তৈরিঃ
বীজ, সাকার ও শাখা কলম থেকে চন্দ্রমল্লিকার চারা তৈরি করা যায়। বীজ থেকে চারা করলে তা থেকে ভাল ফুল পাওয়া যায় না এবং ফুল পেতে অনেক দিন লেগে যায়। অন্য দিকে ডাল কেটে শাখা কলম করলে বা সাকার থেকে চারা করলে এ সমস্যা থাকে না। এদেশে শাখা কলম করেই সাধারনত চারা তৈরি করা হয়। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শাখা কলম করা শুরু হয়। এক বছর বয়সী সতেজ সবল ডাল থেকে ৮-১০ সেমি লম্বা ডাল তেরছাভাবে কেটে বেডে বা বালতিতে বসিয়ে দিলে তাতে শিকড় গজায়। ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে যখন ফুল দেওয়া শেষ হয়ে যায় তখন গাছগুলোকে মাটির উপর থেকে ১৫-২০ সেমি রেখে কেটে দেয়া হয়। কিছু দিন পর ওসব কাটা জায়গার গোড়া থেকে কিছু সাকার বের হয়। এসব সাকার ৫-৭ সেমি লম্বা হলে মা গাছ থেকে ওদের আলাদা করে ছায়াময় বীজতলায় বা টবে লাগানো হয়। মে- জুলাই মাসে চারাকে বৃষ্টি ও কড়া রোদ থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
চারা রোপনঃ
শেষবারের মত নিদিষ্ট স্থানে কিংবা টবে রোপনের পূর্বে চারাগুলোকে স্বতন্ত্র জমিতে কিংবা টবে পাল্টিয়ে নিয়ে তাদের ফুল উৎপাদনের উপযুক্ততা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। জমি কিংবা টবে চারা রোপনের উপযুক্ত সময় অক্টেবর- নভেম্বর। জাতভেদে ৩০ x ২৫ অন্তর চন্দ্রমল্লিকা রোপন করতে হবে।
পটে বা টবে সার প্রয়োগ:
পটে জন্মানোর জন্য ২ ভাগ মাটি, ২ ভাগ গোবর সার, ১ ভাগ পাতা পচা সার ও ১ ভাগ হাড়ের গুঁড়ার সাথে ৩ গ্রাম টিএসপি, ৩ গ্রাম মিউরেট অব পটাশ এর মিশ্রণ ব্যবহার করা উত্তম। ৮ গ্রাম ইউরিয়া সারের অর্ধেক সাকার/কাটিং রোপণের ২৫-৩০ দিন পর গাছের দৈহিক বৃদ্ধির সময় এবং বাকি অর্ধেক ফুলের কুড়ি আসার সময় উপরি প্রয়োগ করা উচিত।
কুঁড়ি অপসারণ:
অনাকাঙ্ক্ষিত অপরিপক্ক ফুলের কুঁড়ি অপসারণ করাকে কুঁড়ি অপসারণ বলা হয়। চারা গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসলে তা সঙ্গে সঙ্গে অপসারণ করতে হয়। বড় আকারের ফুল পেতে হলে ডিসবাডিং করা উচিৎ অর্থাৎ মাঝের কুঁড়িটি রেখে পাশের দুটি কুঁড়ি কেটে ফেলতে হয়। আর মধ্যম আকারের ফুল পেতে চাইলে মাঝের কুড়িটি অপসারন করা উচিত।
রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা:
জাবপোকা: এ পোকা খুব ছোট আকৃতির, নরম ও কালো-সবুজ বর্ণের। শীতকালে এর প্রকোপ খুব বেড়ে যায়। এ পোকা গাছের পাতা, ডগা এবং ফুল থেকে রস চুষে খেয়ে গাছের ক্ষতি করে। আক্রান্ত নতুন কুঁড়ি ও পাতা কুঁকড়ে যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ
- এ পোকা দমনে প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত পাতা বা ফুল ছিঁড়ে ফেলে পোকাসহ ধ্বংস করা উচিত।
- সাবান গুঁড়া ৫ গ্রাম/লিটার হারে পনিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করেও এ পোকা দমন করা যেতে পারে।
আক্রমণ বেশি হলে ডাইমেথয়েট জাতীয় কীটনাশক (পারফেকথিয়ন/সানগর/ রগর / টাফগর ৪০ ইসি) ২.০ মিলি./লিটার অথবা ইমিটাক্লোপ্রিড জাতীয় (টিডো/ ইমিটাফ) ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ফুল সংগ্রহঃ
চন্দ্রমল্লিকা ফুল কুঁড়ি অবস্থায় তুললে ফোঁটে না। বাইরের পাপড়ি গুলো সম্পূর্ণ খুলে গিয়েছে এবং মাঝের পাপড়ি গুলো ফুটতে শুরু করেছে এমন অবস্থায় খুব সকালে অথবা বিকেলে ধারালো ছুরি দিয়ে দীর্ঘ বোঁটাসহ কেটে ফুল তোলা উচিত।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
শীতকালীন মৌসুমী ফুলের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকাও বেশ জনপ্রিয়। ক্রিসমাসের সময় ফোটে বলে একে ক্রিসেন্থিমামও বলা হয়। জাপান ও চীন এর আদি জন্মস্থান। এটি বিভিন্ন বর্ণ ও রঙের হয়ে থাকে। তাই একে ‘শরৎ রানি’ও বলা হয়। বাড়ির আঙিনা, বারান্দা ও ছাদে ফুলটি চাষ করা যায়।
জলবায়ু
চন্দ্রমল্লিকা তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং রৌদ্রোজ্জ্বল জায়গায় ভালো জন্মে। বাংলাদেশে শীতকালই এ ফুল চাষের উপযুক্ত সময়।
মাটি
জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ ও বেলে মাটি চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উপযোগী। মাটির পিএইচ ৬.০-৭.০ হওয়া জরুরি।
চারা তৈরি
বীজ,
সাকার ও শাখা কলম থেকে চন্দ্রমল্লিকার চারা তৈরি করা যায়। জুলাই মাসের
মাঝামাঝি থেকে শাখা কলম করা শুরু হয়। একবছর বয়সী সবল ডাল থেকে ৮-১০
সেন্টিমিটার লম্বা ডাল তেরছাভাবে কেটে বেডে বা বালতিতে বসিয়ে দিলে তাতে
শেকড় গজায়। ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে যখন ফুল দেওয়া শেষ হয়ে যায়; তখন
গাছগুলোকে মাটির উপর থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার রেখে কেটে দেওয়া হয়। কিছুদিন
পর ওসব কাটা জায়গার গোড়া থেকে কিছু সাকার বের হয়। এসব সাকার ৫-৭
সেন্টিমিটার লম্বা হলে মা গাছ থেকে ওদের আলাদা করে ছায়াময় বীজতলায় বা টবে
লাগানো হয়। মে-জুলাই মাসে চারাকে বৃষ্টি ও কড়া রোদ থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা
করতে হবে।
রোপণ
শেষবারের
মতো নির্দিষ্ট স্থানে কিংবা টবে রোপণের আগে চারাগুলোকে স্বতন্ত্র জমিতে বা
টবে পাল্টিয়ে নিয়ে তাদের ফুল উৎপাদনের উপযুক্ততা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
জমি কিংবা টবে চারা রোপণের উপযুক্ত সময় অক্টেবর-নভেম্বর। জাতভেদে ৩০x২৫
অন্তর চন্দ্রমল্লিকা রোপণ করতে হবে।
সার
চন্দ্রমল্লিকা
গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদন শোষণ করে থাকে। এ কারণে জৈব ও
রাসায়নিক খাদ্যযুক্ত মাটিতে এ গাছ খুব ভালোভাবে সাড়া দেয়। প্রতি হেক্টরে ১০
টন পঁচা গোবর বা কম্পোস্ট, ৪০০ কেজি ইউরিয়া, ২৭৫ কেজি টিএসপি, ৩০০ কেজি
মিউরেট অব পটাশ, ১৬৫ কেজি জিপসাম, ১২ কেজি বোরিক অ্যাসিড ও জিংক অক্সাইড
সার প্রয়োগ করতে হবে। সাকার রোপণের ১০-১৫ দিন আগে পঁচা গোবর বা কম্পোস্ট
এবং ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সার ৭-১০ দিন আগে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে
দিতে হবে। সাকার রোপণের ২৫-৩০ দিন পর ইউরিয়া সারের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে
এবং বাকি অর্ধেক সার সাকার রোপণের ৪৫-৫০ দিন পর গাছের গোড়ার চারপাশে একটু
দূর দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। উপরি প্রয়োগের পর সার মাটির সাথে মিশিয়ে সেচ
দিতে হবে।
কুঁড়ি
চন্দ্রমল্লিকার
বেড ও টব আগাছামুক্ত রাখা উচিত। চারা লাগানোর মাসখানেক পর গাছের অাগা কেটে
দিতে হয়। এতে গাছ লম্বা না হয়ে ঝোপালো হয়। চারা গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসলে তা
সঙ্গে সঙ্গে অপসারণ করতে হয়। বড় আকারের ফুল পেতে হলে ডিসবাডিং করা উচিত।
অর্থাৎ মাঝের কুঁড়িটি রেখে পাশের দুটি কুঁড়ি কেটে ফেলতে হয়। আর মধ্যম
আকারের ফুল পেতে চাইলে মাঝের কুঁড়িটি অপসারণ করা উচিত।
সেচ
চন্দ্রমল্লিকার
চারা বিকেলে লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হয়। চারা লাগানোর পর হালকা সেচ
দিতে হয়। গাছ কখনো বেশি পানি সহ্য করতে পারে না। তাই পানি এমনভাবে দিতে হবে
যেন গোড়ায় বেশিক্ষণ পানি জমে না থাকে। চারা রোপণের আগে এবং পরে প্রতিদিন
নিয়মিতভাবে পরিমাণমতো পানি সেচ জরুরি।
ঠেস
চন্দ্রমল্লিকার
ফুল সাধারণত ডালপালার তুলনায় বড় হয়। তাই গাছের গোড়া থেকে কুঁড়ি পর্যন্ত
একটা শক্ত কাঠি পুঁতে দিতে হবে। এতে ফুল নুয়ে পড়বে না। চারা লাগানোর সময়
কাঠি একবারেই পুঁতে দেওয়া ভালো। এজন্য জাত বুঝে চন্দ্রমল্লিকা গাছের উচ্চতা
অনুযায়ী বাঁশের কাঠি চারার গোড়া থেকে একটু দূরে পুঁতে দিতে হয়।
শোষক পোকা
এ
পোকা পাতা ও ফুলের রস শোষন করে। ফলে আক্রান্ত পাতা ও ফুলে দাগ পড়ে। এমনকি
ফুল এবং গাছও শুকিয়ে যায়। এ পোকা দমনের জন্য ২ মিলি ম্যালাথিয়ন ১ লিটার
পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
জাব পোকা
অপ্রাপ্তবয়স্ক
এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় অবস্থাতেই গাছের নতুন ডগা বা ফুলের রস চুষে খায়। এটি
গাছের বৃদ্ধি এবং ফলনে মারাত্মক ক্ষতি করে। নোভাক্রন (০.১% ) বা রগর (১%)
প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা যায়।
পাউডারি মিলডিউ
এ
রোগ হলে গাছের পাতা ধূসর হয়ে যায়। পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায়।
টিল্ট ২৫০ইসি ০.৫ মিলি বা ২ গ্রাম থিয়োভিট প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০
দিন অন্তর স্প্রে করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ফুল সংগ্রহ
জাতভেদে
ফলন কমবেশি হয়। গাছ প্রতি বছরে গড়ে ৩০-৪০টি ফুল পাওয়া যায়। বাইরের
পাপড়িগুলো সম্পূর্ণ খুললে এবং মাঝের পাপড়িগুলো ফুটতে শুরু করলে খুব সকালে
বা বিকেলে ধারালো ছুরি দিয়ে দীর্ঘ বোঁটাসহ কেটে ফুল তোলা উচিত।
শহুরে জীবনে একটুখানি প্রশান্তির পরশ পেতে অল্পকিছু হলেও ফুলগাছ লাগান অনেকেই। ছাদ, বারান্দা কিংবা ঘরের কোন দখল করে এই গাছগুলো। তাতে ঘরের সৌন্দর্য তো বাড়েই, সঙ্গে বাড়ে সতেজভাবও। এই শীতে কিছু ফুলগাছ লাগাতে পারেন আপনার শখের বাগানে। চলুন জেনে নেয়া যাক-
গাঁদা
শীতকালীন ফুলের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুল হল গাঁদা ফুল। দোআঁশ, এঁটেল, বেলে দো-আঁশ বা পলি মাটিতে গাঁদা ভালো হয়। সূর্যের জোরালো আলোয় এদের ফলন ভালো হয়। দিনে অন্তত পাঁচ-ছয়ঘণ্টা সূর্যের আলো দরকার।
ক্যামেলিয়া
অনেকটা গোলাপের মতো দেখতে, তাই ক্যামেলিয়া ফুলকে ‘শীতের গোলাপ’ বলা হয়। এই গাছ না ছাঁটলে প্রায় ২০ ফুট উঁচু হয়ে যায়। এই গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়।
ডালিয়া
শীতের সৌন্দর্য বাড়ায় ডালিয়া। লাল, হলুদ, মেরুন বিভিন্ন রঙের এবং বিভিন্ন জাতের হয় এই ফুল। এর আকার, গঠন, পাপড়ির সৌন্দর্য মানুষকে সহজেই মুগ্ধ করে।
ক্যালেন্ডুলা
এটি সাধারণত পট গাঁদা হিসেবে পরিচিত এবং এটি বাগানে বা যেকোনো জায়গায় চাষ করা যেতে পারে।। এই ফুলগুলি বিভিন্ন রঙের হয়, যেমন- গাঢ় কমলা, হলুদ ইত্যাদি।
পিটুনিয়া
শীতকালীন পরিচিত ফুল পিটুনিয়া। লাল, গোলাপি, সাদা, বেগুনি বিভিন্ন রঙের হয় এই ফুল। গাছ বসানোর পর প্রথম সাত দিন ছায়ায় রাখতে হয়, যেন হালকা রোদ লাগে। নিয়মিত জল দিতে হয় তবে মাটি ভেজা থাকলে পানি না দেয়াই ভালো।
কসমস
গোলাপী, সাদা, বেগুনি বিভিন্ন রঙের হয় এই ফুল। সাধারণত এটিকে কসমস বা মেক্সিকান এস্টার বলে ডাকা হয়। কসমস গাছ ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট হয়। শীতকালে এই ফুলের চাহিদা অত্যন্ত বেশি থাকে।
চন্দ্রমল্লিকা
চন্দ্রমল্লিকা বিঙিন্ন রঙের হয়। চন্দ্রমল্লিকার ফুল সাধারণত ডালপালার তুলনায় বড় হয়। উর্বর বেলে-দোয়াঁশ মাটি এই ফুল চাষের আদর্শ। তবে, এর গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চন্দ্রমল্লিকার টব আগাছামুক্ত রাখা উচিত।
জিনিয়া
সুন্দর ও আকর্ষণীয় এই ফুলে কোনো গন্ধ নেই। এটি সাদা, হলুদ, লাল, বাদামী, কমলা, সবুজ বিভিন্ন রঙের হয়। জিনিয়া শীতকালীন ফুল হলেও সারাবছর চাষ করা যায়। দো-আঁশ মাটি এই ফুল উৎপাদনের জন্য বেশি উপযোগী।
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
নানা রঙের ফুল আমরা দেখতে পাই। লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি, সাদা- কত রঙের ফুল আছে। এর মধ্যে নীল ফুল মানেই অপরাজিতা। আরও চমকপ্রদ নাম রয়েছে ফুলটির। এর বৈশিষ্ট্যও অনেক। আসুন জেনে নেই অপরাজিতার চাষ সম্পর্কে-
পরিচয়: অপরাজিতা ফুলটি Popilionaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর ইংরেজি নাম ‘বাটারফ্লাই পি’। গাঢ় নীল বলে একে ‘নীলকণ্ঠ’ নামেও ডাকা হয়। এই ফুল এসেছে মালাক্কা দ্বীপ থেকে। টারনেটি বা মালাক্কা থেকে এসেছে বলে অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম ক্লিটোরিয়া টারনেটিকা। ক্লিটোরিয়া অর্থ যোনীপুষ্প। ফুলের ভেতরের আকৃতির জন্যই এ নাম। কেরালায় একে বলে ‘শঙ্খপুষ্পী’।
যত রং: নীল ছাড়াও সাদা এবং হালকা বেগুনি রঙের ফুল হয়ে থাকে। ফুলের ভেতরের দিকটা সাদা বা ঈষৎ হলুদ রঙের হয়ে থাকে।
বৈশিষ্ট্য: লতানো এবং সবুজ পাতা বিশিষ্ট গাছে এ ফুল হয়ে থাকে। তবে ফুলে কোনো গন্ধ নেই। তবু রঙের বাহারে ফুলটি অনন্য। হালকা সবুজ রঙের পাতার গড়ন উপবৃত্তাকার। ঝোপজাতীয় গাছে প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। বহুবর্ষজীবী এ লতা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। লতা জাতীয় গাছে এক পাপড়ি ও দুই স্তর পাপড়িতে এই ফুল হয়।
রোপণ: অপরাজিত ফুল গাছের ডাল বর্ষাকালে স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে রোপণ করতে হয়। ছোট ছোট ধূসর ও কালো বর্ণের বিচি রোদে শুকিয়ে নরম মাটিতে রোপণ করতে হয়। বাড়ির আঙিনায়, টবে বা বাগানেও এ গাছ লাগানো যায়। আশেপাশের উঁচু গাছ বেয়ে এটি বেড়ে ওঠে।
প্রাপ্তিস্থান: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকায় রমনা পার্ক, শিশু একাডেমির বাগান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, বলধা গার্ডেন ও কোনো কোনো অফিসের বাগানে এই ফুলের গাছ রয়েছে।
গুণাবলী: অপরাজিতা কেবল সৌন্দর্যে নয়, ওষুধি গুণেও অতুলনীয়। এর ফুল, পাপড়ি, মূল ও গাছের লতা নানা ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। হিন্দুদের কাছে অপরাজিতা পবিত্র উদ্ভিদ। শারদীয় দুর্গোৎসবে ষষ্ঠীতে এবং বিজয়া দশমীর পূজায় এ ফুল ব্যবহার করা হয়।
সময়কাল: এই ফুলের বয়স অন্তত ৫ কোটি বছর। নীল অপরাজিতা বারো মাস ফোটে। তবে শীতে কমে যায়। নীল ফুলের গাছ যত তাড়াতাড়ি শাখা-প্রশাখা ছড়ায় সাদা তত তাড়াতাড়ি ছড়ায় না।
জ্যৈষ্ঠ মাস হচ্ছে বাংলাদেশের মধুমাস। আর এই মধুমাসের মধুফল হল আম। এই আমকে ঘিরে হয়েছে বাঙালির অনেক ঐতিহ্য এবং নানা ধরনের খাবার। ইদানীং কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী এই ঐতিহ্যকে নষ্ট করে ফেলছে। বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন-কার্বামাইড ইথাইল, ইথিলিন এবং বিভিন্ন প্রকার হরমোন দিয়ে অপরিপকস্ফ ফলকে পাকিয়ে বাজারজাত করছে, যা মানুষের দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এতে ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, ক্ষুদা মন্দা, বন্ধ্যত্ব ইত্যাদি মারাত্মক রোগ হতে পারে। এছাড়াও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দিন দিন জমি কমে যাওয়ায় ফল গাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। বাঙালিদের এই ঐতিহ্যবাহী ফলকে টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএ রহিম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ফলগাছ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ও বাণিজ্যিকভাবে চাষোপযোগী বিভিন্ন উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রকৃতির আমের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়াও বছরে দুই থেকে তিনবার ফলনশীল, পলিঅ্যামব্রায়োনিক, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়াবেটিক আমসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আমের জাত উদ্ভাবন করেছেন।
এফটিআইপি বাউ আম-১ (শ্রাবণী) : শ্রাবণী একটি নিয়মিত ফলধারণকারী নাবী জাতের আম। ফলের আকার মাঝারি ও কিঞ্চিত্ লম্বা। পাকা ফলের ত্বকের রং গাঢ় হলুদ, শাঁসের রং কমলাভ লাল, সুস্বাদু, রসালো ও মিষ্টি। খোসা সামান্য মোটা ও আঁটি পাতলা। এটি একটি মাঝারি বামন জাতের গাছ। বাংলাদেশের সবগুলো এগ্রো ইকোলজিক্যাল জোনে উত্পাদনযোগ্য। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ফুল আসে এবং জুলাই মাসের শেষের দিকে ফল পাকতে শুরু করে। সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ মাটি উত্তম। ফুল আসা থেকে ফল পরিপকস্ফ হতে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস সময় লাগে। প্রতি বছর বর্ষার আগে ও পরে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের জন্য নিয়মিত কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। হেক্সাগোনাল রোপণ পদ্ধতি উত্তম। ৫-৭ মিটার – ৫-৭ মিটার রোপণ দূরত্বে প্রতি হেক্টর ৩০০-৩৫০টি চারা রোপণ করা যায়। রোপণকাল থেকে ফল পেতে প্রায় এক বছর সয়ম লাগে। ফলে মাঝে মাঝে হালকা অ্যানথ্রাকনোজ রোগ দেখা যায়।
এফটিআইপি বাউ আম-২ (সিন্দুরী) : এটি নিয়মিত ফলধারণকারী ও বামন প্রকৃতির জাত। ফল আকারে ছোট ও গোলাকৃতি। গাছে থোকায় থোকায় আম ধরে। কাঁচা আম সবুজাভ সিঁদুরে রংয়ের হয়ে থাকে। পাকলে সিঁদুরে হলুদ রংয়ের হয়ে থাকে। রসালো এবং টক-মিষ্টি। শাঁসে কোনো আঁশ নেই। আমের আঁটি পাতলা কাগজের মতো। তাই এ জাতকে বীজবিহীন আম বলে। বাংলাদেশের সবগুলো এগ্রো ইকোলজিক্যাল জোনে উত্পাদনযোগ্য। উর্বর দোআঁশ মাটি এ ফল চাষের জন্য উত্তম। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সব মাটিতে এ ফল চাষ করা যায়। ৫-৭ মিটার – ৫-৭ মিটার রোপণ দূরত্বে প্রতি হেক্টর ৩০০-৩৫০টি চারা রোপণ করা যায়। রোপণের পর প্রথম বছর থেকে ফল পাওয়া যায়, তবে গাছের মজবুত কাঠামো তৈরির জন্য প্রথম বছর মুকুল আসার পর মুকুল ভেঙ্গে দিতে হবে। এই আমে ভিটামিন সি বেশি পরিমাণে থাকে।
এফটিআইপি বাউ আম-৩ (ডায়াবেটিক) : জুন মাসের শেষের দিকে এই জাতের পাকা ফল পাওয়া যায় । ফুল আসা থেকে শুরু করে পরিপকস্ফ হতে ৫-৭ মাস সময় লাগে । ফলের আকার মাঝারি ও লম্বাটে প্রকৃতির । ফলের গড় ওজন ৫৫ গ্রাম । পাকা ফলের রং হলুদাভ । ফলে রসের পরিমাণ কম কিন্তু আঁশের পরিমাণ বেশি। ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীরা এ ফল খেতে পারে। এটি নিয়মিত ফলধারণকারী ও বামন প্রকৃতির জাত। গাছে প্রতি বছরই প্রধানত ২ বার ফুল ও ফল ধরে। প্রথমবার জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এবং দ্বিতীয় বার মে-জুন মাসে ফুল আসে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে উত্পন্ন ফুল হতেই মুখ্য উত্পাদন পাওয়া যায় । সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ মাটি এ আম চাষের জন্য উত্তম । দীর্ঘ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না, তবে খরা মৌসুমে সেচ প্রদান করতে হবে । ৫-৭ মিটর দূরে দূরে প্রতি হেক্টরে ৩০০-৩৫০টি চারা রোপণ করা যায় । রোপণকাল থেকে ফল পেতে প্রায় একবছর সময় লাগে ।
এফটিআইপি বাউ আম-৪: এটি নিয়মিত ফল ধারণকারী জনপ্রিয় একটি জাত। জুন মাসের দিকে এই জাতের ফল পাকা শুরু হয় আর ফুল আসা থেকে ফল পরিপক্ক হতে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস সময় লাগে। পাকা ফলের ত্বকের রঙ হালকা সবুজ। শাঁসের রঙ কমলা, সুগন্ধযুক্ত, রসালো এবং বেশ মিষ্টি। শাঁসে কোনো আঁশ নেই। খোসা পাতলা এবং আঁটি খুবই ছোট (ফলের ৯.৭৬%)। এ জাতের আম সারা বছর লাগানো যায়। বোঁটা শক্ত হওয়ায় ঝড়ো হাওয়াতে ঝরে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ৭-৮ মিটার দূরে দূরে প্রতি হেক্টরে ২০০-২২০টি চারা রোপণ করা যায়।
এফটিআইপি বাউ আম-৬ (পলিএ্যাম্বব্রায়নী): গাছ বামন আকৃতির এবং নাবী জাত। পাঁচ বছরের একটি গাছ হতে গড়ে ১০০-৩০০টি ফল পাওয়া যায়। একটি বীজ হতে গড়ে ৫-৮টি চারা পাওয়া যায়, এর মধ্যে একটি চারা জাইগোটিক বাকিগুলো নিউসেলাস। প্রতি বছরই ফল পাওয়া যায়। অর্ধেক ড্রামে বাড়ির ছাদেও চাষ করা যায়। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ফুল আসে এবং জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পরিপক্ক হয়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি উত্তম। পাঁচ বছরের একটি গাছ হতে ৩০-৪০ কেজি ফলন পাওয়া যায় এবং বছর প্রতি ২০-৩০ কেজি করে বাড়তে থাকে। পূর্ণবয়স্ক গাছে ২৫-৩০ টন/হেক্টরে ফল পাওয়া যায়। এই আমগাছ বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদন এবং পলিএ্যাম্বব্রায়নী হওয়ায় নার্সারিতে চারা উৎপাদন করার জন্য উত্তম।
এফটিআইপি বাউ আম-৯ (সৌখিন চৌফলা): জাতটি নিয়মিত ফলধারণকারী। এটি একটি বামন জাতের গাছ। বছরে ৩-৪ বার ফল দেয়। এটি সৌখিন ফল চাষিদের জন্য, যা ছাদে বা টবে চাষ করা যায়। বাণিজ্যিকভাবেও লাগানো যায়। পলিব্যাগে চারা থাকলে সারা বছর গাছ লাগানো যায়। সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ মাটি উত্তম। ফুল আসা থেকে ফল পরিপক্ক হতে প্রায় পাঁচ মাস সময় লাগে। প্রতি হেক্টরে ৭০০-৮০০টি চারা রোপণ করা যায়। রোপণকাল থেকে ফল পেতে ছয় মাস সময় লাগে।
এফটিআইপি বাউ আম-১০ (সৌখিন-২): এটি একটি মাঝারি বামন জাত। সারা বছর জাতটি লাগানো যায়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ফুল আসে এবং মে-জুন মাসে ফল পরিপক্ক হয়। আবার জুলাই-আগস্ট মাসে ফল আসে এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফল পাকে। রোপণকাল থেকে ফল পেতে এক বছর সময় লাগে। তেমন কোনো রোগবালাই দেখা যায় না। প্রথম বছর ১০-১৫টি এবং দ্বিতীয় বছরে ৩০-৫০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এই জাতের গাছ বাণিজ্যিকভাবে লাগানো ঠিক হবে না। তবে বাড়ির আঙিনায় ও ছাদে লাগানোর জন্য উত্তম।
উল্লেখ্য, বাউ আমের চারা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারসহ দেশের বিভিন্ন নার্সারিতে পাওয়া যায়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন