আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

গ্লাসগো কি আশা জাগাতে পারবে

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হয়েছে বহুপ্রতীক্ষিত ২৬তম জলবায়ু সম্মেলন বা কপ–২৬। করোনা মহামারির কারণে এক বছর পরে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন প্রায় ২০০ দেশের ১২০ জন রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধানসহ প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। ১৯৭টি রাষ্ট্র তথা স্বাক্ষরকারী পার্টি ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির চার অনুচ্ছেদে প্রতি পাঁচ বছর পর আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার একটি বিধান রেখেছিল। এবারের সম্মেলনে সেই লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। পক্ষকালের কথা থাকলেও অতীতের মতো আলোচনা আরও এক-দুই দিন বেশি গড়াতে পারে। একেবারে আলোচনা ভেঙে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে বিশ্বনেতাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবার পৃথিবীকে বাঁচানোর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কি?

প্যারিস জলবায়ু চুক্তির চতুর্থ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর রাষ্ট্রগুলোর নিজ উদ্যোগে নিজ দেশের কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকারনামায় (এনডিসি) সংশোধন আনবে। এটা তথাকথিত ‘র‍্যাচেট পদ্ধতি’ হিসেবে পরিচিত; চুক্তিতে এ শব্দমালা নেই। বিপরীত দিকে গতি প্রতিরোধ করার মাধ্যমে শুধু একটি দিকে অবিচ্ছিন্ন রৈখিক বা ঘূর্ণন গতি তৈরি করাকে ‘র‍্যাচেট পদ্ধতি’ বলা হয়। অর্থাৎ প্যারিস চুক্তির অভীষ্ট তাপমাত্রাকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত করা এবং কোনোক্রমেই ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বাইরে যেতে না দেওয়ার জন্য ‘র‍্যাচেট পদ্ধতি’।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে বলেছেন, এ পর্যন্ত জমা দেওয়া এনডিসির মাধ্যমে বিশ্বের তাপমাত্রা এ শতাব্দীর মধ্যে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে না। স্বপ্রণোদিত কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা পেশ করা হয়েছে, তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলেও বিশ্বের তাপমাত্রা এ শতাব্দীর মধ্যে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো বেড়ে যেতে পারে। নিজ উদ্যোগে হওয়ায় তথা আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহি কতটা থাকবে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। অতীতের ইতিহাস বলে, ১৯৯৭ সালে জাপানে স্বাক্ষরিত কিয়োটো প্রটোকলে শিল্পোন্নত ৩৭টি দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর আইনি বাধ্যবাধকতাসহ চুক্তি করেছিল। সে চুক্তিতে অঙ্গীকার পূরণ না হলে জরিমানার বিধানও ছিল। অথচ সেই চুক্তির কার্যকর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। আইনি বাধ্যবাধকতা ছাড়া প্যারিস চুক্তি কতটুকু কার্যকর হবে, তা কেবল সময়ই বলতে পারে!বিজ্ঞাপনবিজ্ঞাপন

কেন অনুচ্ছেদ-৬ নিয়ে দর–কষাকষি

প্যারিস চুক্তির ৬ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রগুলোর স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রসমূহ তাদের এনডিসি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশগত ভারসাম্যের কথা মাথায় রেখে আরও বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারবে বলে বলা হয়েছে। এর মধ্যে নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে বাজারভিত্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কার্বন নিঃসরণ ও ক্ষতিপূরণ বা অফসেট আলোচনা সবচেয়ে জটিল।

প্যারিস চুক্তির অধীনে সহযোগিতামূলক পদক্ষেপগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, আন্তর্জাতিকভাবে স্থানান্তরিত প্রশমন ফলাফল বা আইটিএমওএস (অনুচ্ছেদ ৬.২-৬.৩), দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন কার্যক্রমের দ্বারা আন্তর্জাতিক প্রশমন বিনিময়ের (বাণিজ্যের) অনুমতি এবং তৃতীয়ত, পার্টিগুলোর এনডিসি বাস্তবায়ন সহায়তার লক্ষ্যে মুনাফাবিমুখ ব্যবস্থাপনা।

এই বিষয়গুলো ইউএনএফসিসিসি এবং কিয়োটো প্রটোকলেরই সম্প্রসারিত রূপ। তবে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা এবং এর অগ্রগতি সংগত কারণে সন্তোষজনক নয়। রাষ্ট্রগুলো তাদের সম্মত হওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণেই হিমশিম খাচ্ছে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহ তাদের উন্নয়নের গতিকে বাধাগ্রস্ত না করে লক্ষ্য সামনে রেখে তাদের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রাগুলো নিয়েই দর–কষাকষি করবে।

অনেক বিষয় নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। যেমন প্রশমন ও অভিযোজন একেক দেশ একেকভাবে পরিমাপ করে। কেউ কেউ কার্বন ডাইঅক্সাইড তুল্যতার মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পরিমাপ ব্যবহার করে। অনেক দেশ মনে করে, এ পদ্ধতিতে পরিমাপ করলে প্রশমন ফলাফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে তাদের পিছিয়ে রাখবে। আবার একই বিষয়কে দুবার গণনার মতো অনভিপ্রেত বিষয়ও আছে। যে পদ্ধতিতেই প্রশমন ফলাফলের গণনা হোক, পরিমাপের নির্ধারকগুলোর যদি সাধারণীকরণ করা না হয় বা সমান বিষয়বস্তুগুলো যদি অনুমানের ওপর ভিত্তি করে হয়, তবে তা ভুল দিকে নিয়ে যাবে। বৈশ্বিক জবাবদিহির মধ্যে থাকতে পারে, এমন পদ্ধতির প্রয়োজন।

আরেকটি বিতর্কিত বিষয় হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্থানান্তরিত প্রশমন ফলাফল বা আইটিএমওএসের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা। কিয়োটো চুক্তির অধীনেও বাজার প্রক্রিয়াগুলো সম্পূরক ধারার সঙ্গে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমান খসড়া নির্দেশিকা (৬.২৬৭) দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ নিঃসরণ সীমা নির্ধারণ করে না এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিঃসরণকারী পার্টির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইটিএমওএসের প্রযোজ্যতা এবং এনডিসির অধীনে নয়, এমন খাতগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধনও এখানে বিবেচ্য বিষয়। পুনরায় বৈশ্বিক নির্গমনের সামগ্রিক প্রশমন অনুচ্ছেদ ৬.২–এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কি না, তা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।বিজ্ঞাপন

কার্বন বাজেট, ন্যায্যতা ও উন্নয়নের অধিকার

ঐতিহাসিক দূষণকারী দেশের তালিকায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউভুক্ত ২৭টি দেশ। চীন বর্তমানে সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশ (প্রায় ২৮ শতাংশ)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, রাশিয়া ও জাপানের মিলিত নিঃসরিত কার্বনের পরিমাণ প্রায় ৩৪ শতাংশ এবং ভারত ২ দশমিক ৬২ শতাংশ। তবে জনপ্রতি হিসাবে এখনো ঐতিহাসিক দূষণকারীরা শীর্ষে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) ষষ্ঠ প্রতিবেদন বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১১টি দেশে আগামী দিনে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার ঘটনা বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হিসেবে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে দায়ী করে এ প্রতিবেদন সতর্ক করছে, পরিস্থিতি এখন ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পৃথিবীর কার্বন পরিসর ফুরিয়ে আসছে। ২০২০ সাল থেকে শুরু করে কার্বন বাজেট অনুযায়ী পৃথিবী মাত্র ৪০০ গিগাটন কার্বন নিঃসরণ করতে পারবে। অর্থাৎ একবার যদি এই সীমা অতিক্রম করে যায়, পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে। ফলে আইপিসিসি ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা বা নেট জিরোর কথা বলেছে।

কার্বন বাজেট জটিল প্রক্রিয়া। এক. পরিবেশদূষণকারী গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই–অক্সাইড এবং মিথেন বায়ুমণ্ডলে দীর্ঘদিন থাকে। একদিকে যেমন বর্তমানের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে, তেমনি যোগ হচ্ছে ঐতিহাসিক নিঃসরণের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলোও। দ্বিতীয়ত, কার্বন নিঃসরণ মূলত অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন চলাচল, বিভিন্ন শিল্পকারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ বাড়ায়। সুতরাং, জলবায়ু পরিবর্তনের আলোচনা শুধু বাস্তুসংস্থানকে ঘিরে নয়; বিশ্ব অর্থনীতির আলোচনাও বটে! অতএব অনেক দুরূহ। তৃতীয়ত, সম্পদ আহরণের প্রতিযোগিতায় থাকা দেশগুলো বায়ুমণ্ডলে বিরাজমান গ্রিনহাউস গ্যাসের আধিক্যের দায় কখনোই এড়াতে পারে না। ধনী দেশগুলোর স্বার্থে আঘাত এলেই তারা পিছপা হবে। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের অধিকার ন্যায্যতম। কিন্তু কার্বন বাজেটে তাদের পরিসর দাবিয়ে রাখতে ধনী দেশগুলো বিভিন্ন ফন্দিফিকির হাজিরে ব্যস্ত।

ভূরাজনীতি, অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতা ও জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ

কার্বন নিঃসরণের পার্থক্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ১৯৯২ সালের ফ্রেমওয়ার্ক সম্মেলনে একটি নীতি গৃহীত হয়। এটি হলো ভূমণ্ডলকে রক্ষার দায়িত্ব সব রাষ্ট্রের সম্মিলিত হলেও জলবায়ুকে বিপন্ন করার পেছনে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর ঐতিহাসিক দায়ভার আছে। এ নীতি থেকে স্খলন অনেক দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দিকটাই দেখা যাক। বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জাপানের কিয়োটোতে ১৯৯৭ সালের ১১ ডিসেম্বর কিয়োটো প্রটোকল গৃহীত হয়। এর ফলে ২০০৮ থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রথম দায়বদ্ধতা সময়কালে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী শিল্পোন্নত দেশগুলোর গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ১৯৯০ সালের পর্যায়ের চেয়ে গড়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হ্রাসের আইনগত বাধ্যবাধকতা আরোপিত হয়। কংগ্রেসের অনুমোদন না পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এ বাধ্যবাধ্যকতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর কার্যকর করেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালানোর সময় থেকেই পরিবেশ রক্ষা নিয়ে সরব ছিলেন। ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই প্যারিস চুক্তিতে যোগ দেন। এ ছাড়া বাইডেনের ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন বাজেটে ঘুরেফিরে দূষণমুক্ত জ্বালানির ব্যবহার, বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির জন্য সহায়তা, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দূষণমুক্ত করা এবং জলবায়ুবিষয়ক গবেষণায় বাজেট বাড়ানোর কথা এসেছে। গত এপ্রিলে জলবায়ু অর্থায়নে বার্ষিক প্রায় ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ব্যয় করার প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি দেন বাইডেন এবং ২০২৪ সালের মধ্যে এ পরিমাণ দ্বিগুণ করার আশ্বাস দিয়েছেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায়। সে ধারাবাহিকতায় কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিতে কপ-২৬ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন বাইডেন। কিন্তু অঙ্গীকার আর আশ্বাসের বাইরে কতটুকু অবদান রাখতে পারবে এ যোগদান? বিভক্ত মার্কিন কংগ্রেসের ওপর বাইডেনের অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি রক্ষা নির্ভর করবে। এ ছাড়া নিজ দলে রয়েছে মতানৈক্য। মার্কিন গ্যাস-কয়লানির্ভর পশ্চিম ভার্জিনিয়ার সিনেটর জো মানচিন উল্লেখযোগ্য। এর আগে ২০৩৫ সালের মধ্যে মার্কিন বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাকে কার্বনমুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করে কয়লার বিরুদ্ধে আলোচনা এগোতে পারেননি বাইডেন। শঙ্কা থেকে যায়, মানচিনের মতো মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মতো অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতা যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু কাটিয়ে উঠতে পারবে?

অন্যদিকে বিশ্বের সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী চীনের প্রেসিডেন্ট সি তাঁর গ্লাসগো যাত্রা নিশ্চিত করেননি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট সি জি-২০ বৈঠকেও যোগদান করেননি। চীন ২০৬০ সালের মধ্যে নেট জিরোর কথা বলেছে, তবে সংশোধিত এনডিসি জমা দেয়নি।

বায়ুমণ্ডলে অধিক কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। বছরের পর বছর জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ছে। তথ্যমতে, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০৩০ সাল নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যে পরিমাণে কমাতে হবে, বিশ্ব তার চেয়ে ১২০ শতাংশ বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পথে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিশ্বব্যাংক জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ করে চলেছে। জার্মানভিত্তিক পরিবেশ আন্দোলনকারী গ্রুপ আর্জওয়াল্ড বলছে, ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে বিশ্বব্যাংক।

জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলো নানা মোড়কে তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। যেমন গত জলবায়ু সম্মেলনের পর থেকে টোটাল, বিপি, শেল, গাল্প, ইকুইনর, এনি ইত্যাদি কোম্পানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে লবিং করার জন্য আনুমানিক ১৭০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে। দেখার বিষয় বিশ্বনেতারা করপোরেট আধিপত্য বলয়কে পাশ কাটিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারবিষয়ক কী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

তিনটি চিত্রকল্প

কপ-২৬ সম্মেলন ঘিরে তিনটি চিত্রকল্প ধারণা করা যায়। এক. আশা–জাগানিয়া অর্থাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চুক্তি। দ্বিতীয় চিত্র হতে পারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার চিন্তাকে নিবু নিবু অবস্থায় হলেও জাগিয়ে রাখা। তৃতীয়ত, সম্মেলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। যেমন কোপেনহেগেন হয়েছিল। দ্বিতীয়টির সম্ভাবনা বেশি। রাত–দিনের বিরামহীন দর–কষাকষি ১২ নভেম্বর শেষ হয়ে যাবে, এ কথা বলা যাবে না। অন্তত ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিমুহূর্তে অনুসরণ করতে হবে আলোচনার অগ্রগতি কোন দিকে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com