২০০৪ সালে রান্না করতে গিয়ে গ্যাস স্টোভ থেকে গায়ের কাপড়ে আগুন লাগে সোমা দত্তের।
বিবিসি বাংলাকে সোমা দত্ত বলেন, কাপড়ে আগুন লাগার পর নিজেই সেটি নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন যখন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না তখন সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে শুরু করেন।
ওই সময়ে বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন তার স্বামী। তিনিও আগুন নেভাতে চেষ্টা করেন।
“কিন্তু ওই মুহূর্তে আসলে কি তাৎক্ষণিক বোধ শক্তি কাজ করে না। রান্নাঘরের সামনেই জল ছিল। আমরা কেউই নজর করিনি। আমার হাজবেন্ড দৌড়ে বাথরুম গিয়ে জল এনে ঢালতে শুরু করে। ততক্ষণে আগুনে অনেকটা পুড়ে যায়।”
সোমা দত্ত বলেন, তার শরীরের ২৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে যায়। এর মধ্যে ১২ শতাংশ ছিল মারাত্মক ক্ষত।
তিনি জানান, অন্তত দুটি হাসপাতাল ঘুরে শেষমেশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে।
তবে এর মধ্যে আগুন লাগার পর তার শরীরে অনেক ঠাণ্ডা পানি ঢালা হয়েছিল।
“জ্বলুনিটা কমানোর জন্য আর শরীর ঠাণ্ডা করার জন্য প্রচুর ঠাণ্ডা পানি ঢালা হয়েছিল। এর ফলে যেটা হয়েছিল সেটা হচ্ছে ভেতরে মাংস সেদ্ধ হওয়াটা রোধ করা গিয়েছিল,” সোমা দত্ত বলেন।
শুধু তিনি নন, বাংলাদেশে প্রতিবছরই বিভিন্ন ধরণের অগ্নিকাণ্ডে শত শত মানুষ হতাহত হয়।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাব মতে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ২৪ হাজার ৭৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আবাসিক গৃহে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে আট হাজারের বেশি।
এই সময়ে আগুনে পুড়ে প্রাণ হারিয়েছে ১৮৪ জন। আর আহত হয়েছে ৫৬০ জন।
কতটুকু পোড়াটা বিপজ্জনক?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া তথ্য মতে, বড়দের ক্ষেত্রে শরীরের ১৫ শতাংশ এবং শিশুদের ক্ষেত্রে যদি শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে যায় তাহলে তা ঝুঁকিপূর্ণ বলে ধরা হয়।
তবে খুব কম বয়সী শিশু বা নবজাতক এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই পরিমাপ সব সময় খাটে না। এসব এক্ষেত্রে ১০ কিংবা ১৫ ভাগের চেয়ে কম পুড়ে গেলেও অনেক সময় তা প্রাণঘাতী হতে পারে।
পোড়া অংশের পরিমাণ যত বেশি হবে মৃত্যুর আশঙ্কা তত বেড়ে যাবে। এছাড়া এটা বয়সের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে কম পরিমাণ পোড়াও প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি’র সহকারি অধ্যাপক ডা. শারমিন আক্তার সুমি বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে ৩০% এর কম পোড়াটাও বিপদজনক।
“যখন পোড়াটা অনেক গভীর হয়, রোগী যখন অনেক বেশি বয়স্ক থাকে কিংবা খুব কম বয়সী থাকে, রোগীর যদি অন্য কোন স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা থাকে, যারা অনেক মোটা থাকে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে, এসব ক্ষেত্রে পোড়ার পরিমাণ খুব বেশি না থাকলেও অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হয়ে যায়।”
শরীরের কত ভাগ পুড়লো তার সাথেও বিপদের মাত্রাটা জড়িত বলে মনে করেন তিনি।
মানবদেহকে ১০০ ভাগ ধরা হয়। এর মধ্যে ১৫% এর বেশি পুড়ে গেলে অবস্থা খারাপ হওয়া শুরু হয়। এটা ৩০ ভাগের বেশি হলে সেখানে এক্সটেনসিভ ট্রিটমেন্ট (বিশেষ চিকিৎসা) দরকার হয়।
শরীরের ৪০ ভাগের বেশি পুড়ে গেলে সেই রোগীকে ক্রিটিক্যাল বা সংকটাপন্ন বলে ধরা হয়।
“আর ৭০ ভাগের বেশি হলে ধরে নেয়া হয় যে তার বাঁচার আশা নেই বললেই চলে।”
আগুনে পোড়ার হিসাব কিভাবে হয়?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পুড়ে যাওয়া পরিমাপ করতে পুরো দেহকে ১০০ ভাগ ধরা হয়। এর পর বিভিন্ন অংশকে আলাদা ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন, আঙুল খোলা রেখে পুরো হাতের তালু মিলে এক ভাগ ধরা হয়।
পোড়া যদি ছোট আকারের হয় তাহলে তা পরিমাপের ক্ষেত্রে ওই অংশটি হাতের তালুর কতগুণ সেটা হিসাব করা হয়।
সংস্থাটির মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে মানুষের পুরো দেহকে ৯% হিসেবে বা ৯ এর গুণিতক ধরে ভাগ করে হিসাব করা হয়।
এবিষয়ে ডা. শারমিন আক্তার সুমি বলেন, প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাতের আঙুল থেকে শুরু করে ঘাড় পর্যন্ত সামনের এবং পেছনের অংশ মিলে ৯%। আবার পায়ের সামনের অংশ ৯% এবং পেছনের অংশ ৯%। অর্থাৎ পুরো পা মিলে ১৮% ধরা হয়।
“চিকিৎসা বিজ্ঞানে এগুলো পরিমাপ করার আলাদা চার্ট আছে। সে অনুযায়ী এগুলো পরিমাপ করা হয়।”
তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই হিসাবটি একটু আলাদা। শিশুদের মাথার সামনে এবং পেছনের অংশ মিলে ২০% ধরা হয়। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাথার সামনে এবং পেছনের অংশ মিলে ৯% ধরা হয়।
কী ধরণের পোড়া কতটা মারাত্মক?
একটা জিনিস কতখানি গভীর হয়ে পুড়বে তা নির্ভর করে কতক্ষণ সময় ধরে আগুনের সংস্পর্শে থাকলে, কোন ধরণের আগুনে পুড়লো এবং যে জিনিসে পুড়লো সেটার তাপমাত্রা কত ছিল।
এগুলো মিলে পোড়াকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে-
কন্টাক্ট বার্ন: এটা হচ্ছে কোন কিছুর সাথে লেগে পোড়া। তরল পদার্থ বা শক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসা। যেমন গরম পাতিল বা কয়েনে পোড়া।
ফ্লেম বার্ন: সরাসরি আগুনের সংস্পর্শে পোড়া। অর্থাৎ আগুন জামায় লাগলো বা গায়ে লাগলো।
কেমিকেল বার্ন: বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসলে পুড়ে গেলে সেটাকে কেমিকেল বার্ন ধরা হয়।
বাংলাদেশে ফ্লেম বার্ন সবচেয়ে বেশি হয় বলে জানান ডা. শারমিন আক্তার সুমি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গভীরতা বা মাত্রা অনুযায়ী পোড়া তিন ধরণের হয়।
ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন: এটি মূলত সূর্যের তাপের কারণে হয়। এতে চামড়া লাল হয়ে যেতে পারে, ব্যথা থাকতে পারে, কিন্তু ফোস্কা পড়ে না।
সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন: গরম কোন তরল পদার্থের সংস্পর্শে আসলে এ ধরণের পোড়া হতে পারে। এতে চামড়া লাল বা ধূসর হয়ে পুড়ে বা ঝলসে যায়।
থার্ড ডিগ্রি বার্ন: এতে চামড়া কালো হয়ে পুড়ে যায় এবং মারাত্মক আকার ধারণ করে। আগুন, বিদ্যুৎ বা বজ্রপাত, দীর্ঘ সময় গরম তরল বা ধাতব পদার্থের সংস্পর্শে আসলে এধরণের পোড়ার ঘটনা ঘটে।
শ্বাসনালী পোড়া খারাপ কেন?
অনেক সময় দেখা যায় যে, আগুনের সংস্পর্শে আসলে শ্বাসনালী পুরে যায়। এ ধরণের পোড়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান ডা. শারমিন আক্তার সুমি।
পেট্রোল বা কোন দাহ্য পদার্থ দিয়ে যদি আগুন লাগানো হয়, কিংবা গ্যাস থেকে আগুন লাগলে বা বদ্ধ কোন জায়গায় আগুন লাগলে শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ার শঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে।
তিনি বলেন, শ্বাসনালীর পোড়াটা সরাসরি ফুসফুসে প্রভাব সৃষ্টি করে বলে এই পোড়া সবচেয়ে মারাত্মক।
আমরা যে শ্বাস নেই সেটি একটি নালীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। এই বাতাসের সাথে ছোট ছোট উপাদান থাকে যা খালি চোখে দেখা যায় না। এগুলো ফুসফুসে গিয়ে সংক্রমণ সৃষ্টি করে।
“পরিবেশে বা বাতাসে যে মাইক্রোঅর্গানিজম থাকে সেগুলো চামড়া বা ত্বক ভেদ করে ঢুকতে পারে না। কিন্তু চামড়া পুরো গেলে সেগুলো সহজেই ফুসফুস এবং মাংসপেশিকে সংক্রমণ তৈরি করে।”
এই মাইক্রোঅর্গানিজমগুলো পোড়া শ্বাসনালীর ভেতর দিয়ে ফুসফুসে সংক্রমণ তৈরি করে। যার কারণে নিউমোনিয়া দেখা দেয়। এ কারণে এটি একটি বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করে বলে জানান ডা. শারমিন আক্তার সুমি।
প্রাথমিক অবস্থায় কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায়?
কেউ অগ্নিকান্ডের শিকার হলে সাথে সাথে কী কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ-এনএইচএস-ও কিছু পরামর্শের কথা উল্লেখ করেছে। এগুলো হচ্ছে-
১. প্রচুর পানি ঢালুন
শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি’র সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন আক্তার সুমি বলেন, আগুনে পোড়ার প্রথম আধাঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসময় রোগীর শরীরে যত বেশি সম্ভব পানি ঢালতে হবে।
শুধু পানি ঢাললেই পোড়ার পরিমাণ কমিয়ে আনা যেতে পারে।
“যেখানে ২০% পুড়তো সেটাকে হয়তো ১৫ বা ১০% এ নামিয়ে আনা যেতে পারে।”
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বহমান ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পোড়া জায়গা অন্তত ২০ মিনিট ধরে ধুতে হবে। তবে বরফ, বরফ শীতল পানি কোন ধরণের ক্রিম ও তৈলাক্ত পদার্থ যেমন মাখন দেয়া যাবে না।
২. কাপড় ও গহনা খুলে ফেলুন
কেউ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হলে তার পরিহিত কাপড় ও গহনা যত দ্রুত সম্ভব খুলে ফেলতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে ন্যাপি কিংবা ডায়াপার থাকলে সেটি খুলে ফেলতে হবে।
কিন্তু পোড়া চামড়া বা পেশীর সাথে যদি কোন ধাতব পদার্থ বা কাপড়ের টুকরো আটকে গিয়ে থাকে তাহলে তা সরানোর চেষ্টা করা যাবে না। এক্ষেত্রে ক্ষত আরো বেশি বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
পানি ঢালার পর রোগীর শরীর গরম রাখার চেষ্টা করতে হবে যাতে হাইপোথারমিয়া না হয়। সেক্ষেত্রে কম্বল দিয়ে তাকে জড়িয়ে নেয়া যেতে পারে। তবে শরীরের যে অংশ পুড়ে গেছে সেখানে যাতে কোন ধরণের কাপড় না থাকে সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
৩. যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে
আগুনে পোড়োর পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে মধ্যে হাসপাতালে নেয়া গেলে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ডা. শারমিন আক্তার সুমি বলেন, প্রথমত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে নেয়া হলে রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী তাকে ২০-৩০ লিটার পর্যন্ত স্যালাইন দেয়া যায়। কিন্তু এর চেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে ৩-৪ লিটারের বেশি দেয়া সম্ভব নয়। ফলে তার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
প্রথম ২৪ ঘণ্টায় স্যালাইন দেয়ার কারণে যে উপকার পাওয়া যায় পরে আর সেটি পাওয়া যায় না। এজন্য এই ২৪ ঘণ্টাকে পোড়া রোগীর জন্য গোল্ডেন আওয়ার বলা হয়।
৪. টুথপেস্ট, লবণ, ডিমের সাদা অংশ দেয়া যাবে না
পোড়া রোগীকে তার ক্ষত স্থানের উপর টুথপেস্ট, লবণ বা ডিমের সাদা অংশ দেয়া যাবে না। এটি প্রাথমিকভাবে জীবাণুমুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে এটাকে সংক্রমণের দিকে ঠেলে দেয়।
হাসপাতালে নেয়ার পর এই জিনিসগুলোকে পরিষ্কার করা হয়। আর তখন এগুলো জমাট বেঁধে থাকে বলে চামড়া উঠে আসার শঙ্কা থাকে। অর্থাৎ তার ক্ষত আরো গভীর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যদি রোগীর মুখ কিংবা চোখ পুড়ে যায় তাহলে রোগীকে যতক্ষণ সম্ভব সোজা করে বসিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এতে ফোস্কা পড়া বা ফুলে যাওয়া কমে যায়।
৫. বেশি করে তরল খাওয়াতে হবে
পোড়া রোগীকে স্যালাইন দেয়া সম্ভব না হলে মুখে অন্তত স্যালাইন, ডাবের পানি বা তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে।
এছাড়া ক্যালরি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন ডিম বা মুরগি খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু পানি ঢাললেই পোড়ার পরিমাণ কমিয়ে আনা যেতে পারে।
শরীরের কত ভাগ পুড়লো তার সাথেও বিপদের মাত্রাটা জড়িত বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে প্রতিবছরই বিভিন্ন ধরণের অগ্নিকাণ্ডে শত শত মানুষ হতাহত হয়।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন