এগ্রোবিজ
ক্রেতাদের ত্রাহি অবস্থা
লেখক
ইনকিলাবনিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। কিছু পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতাদের ত্রাহি অবস্থা। বিশেষ করে- চাল, তেল, মুরগির দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। বলা যায় এসব পণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। গত প্রায় দুই মাস ধরে ভোজ্যতেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম এখনো নিয়ন্ত্রণহীন। এ ছাড়া লাগামহীন রয়েছে চালের বাজার। সম্প্রতি দুই দফায় আবার বেড়েছে চালের দাম। এর বাইরে গত এক সপ্তাহে যে সব পণ্যের দাম বেড়েছে সেগুলো হচ্ছে- পেঁয়াজ, আদা, ডিম ও আটা। ফলে ভোক্তারা এখনই শঙ্কিত রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ে।
পবিত্র রমজান শুরু হতে এখনো এক মাস সময় বাকি। কিন্তু তার আগেই নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও। এরই মধ্যে তারা রমজানে চাহিদামতো নিত্যপণ্যের আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে নজরদারির উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সঙ্গে কোন পণ্যের যৌক্তিক মূল্য কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। তারা তদারকি করবে, যেন কোনোভাবেই বেশি দামে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করতে না পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রমজানে যাতে কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ে এজন্য কয়েক দফায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এবার ব্যবসায়ীরা রমজানের আগেই পণ্যের দাম বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা করে বেড়ে ৫০/৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারিমানের চাল পাইজাম/লতা কেজিতে দুই টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা। কেজিতে তিন টাকা বেড়েছে নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের দাম। বর্তমানে নাজিরশাইল/মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।
চালের পাশাপাশি গত কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, আদা ও মুরগির। গত এক সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। তবে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সোনালি মুরগির। এ মুরগি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকায়। একদিনের ব্যবধানে সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ টাকা। লেয়ার মুরগি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা, যা দুইদিন আগেও ছিল ১৮০ টাকা। গরুর গোশত সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত মূল্য ৫৫০ টাকা কেজি কোথাও বিক্রি হচ্ছে না। রাজধানীর বেশির ভাগ বাজারেই ৫৭০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে গরু গোশত বিক্রি হচ্ছে। খাসির গোশতেরও একই অবস্থা, ৯০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শাহাজাহানপুরে খলিল গোশতের দোকানে গরুর গোশত ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় গরু গোশত বিক্রি হয়েছে ৫৭০ টাকা কেজি।
দেশি পেঁয়াজের কেজি দ্বিতীয় দফা ১০ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ও আমদানিকৃত (বড় সাইজের ) পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি আলুতে দুই টাকা বেড়ে ১৬ থেকে ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
কয়েকটি বাজার ঘুরে আরও দেখা যায়, চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। দেশি আদা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা, শশা ৪০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, ফুলকপি পিস ২৫ টাকা, গাজর ২৫ টাকা, টমেটো ২০ টাকা, আলু ২০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া পিস ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা। ঢ্যাঁড়স কেজি ৬০ টাকা। লাউয়ের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো একেকটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। ডিমের দামও অপরিবর্তিত। ডজন বিক্রি হচ্ছে ৮৫/৯০ টাকায়।
শান্তিনগর বাজারের মুরগি বিক্রেতা আবদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বাজারে মুরগি নেই। ফার্মগুলোতে মুরগির ঘাটতি রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যা আসছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এ জন্যই দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, মুরগির দাম সহসা আর কমবে বলে মনে হয় না। কারণ সামনে রোজা। আমাদের ধারণা রোজার শুরুতে মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে।
বাজার করতে আসা জহিরুল আলম বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম অনেক বেড়েছে। সবকিছুরই দাম বাড়তি। এভাবে বাজার চলতে পারে না। দুই-তিনদিনের ব্যবধানে বেড়েছে পেঁয়াজের দামও বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা। অপরদিকে চিনির দামও বেড়েছে বাজারে। গত সপ্তাহে খোলা চিনি কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা। যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। আর প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৭০ টাকা।
পরিবারে পুষ্টিকর খাবারের জোগান নিশ্চিতে স্কুল শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম খিলগাঁও রেলগেইট বাজারে এসেছেন মুরগি কিনতে। প্রতি পিস ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের এক হালি কক মুরগি পছন্দ করেছিলেন তিনি। বিক্রেতা দাম হাঁকিয়েছেন ১ হাজার ৬০০ টাকা। দাম বেশি হওয়ায় এ দোকান থেকে ফিরছেন খালি হাতে।
বিক্রেতা আবুল কাশেম জানালেন, চাহিদা বেড়েছে তাই দামের এই ঊর্ধ্বগতি। প্রতি কেজি সোনালি মুরগির দাম সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এক কেজি ওজনের প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকার মধ্যে। দেশির মুরগির প্রতি পিসের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা, বড় আকারের একেকটি দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায় আর মাঝারি আকারের দাম পড়ছে ৪০০ টাকা। অনুষ্ঠানাদি বেড়েছে, চাহিদার তুলনায় মুরগির সরবরাহ কম বলেও জানান।
খিলগাঁও রেলগেইট বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহেদ আলী পেঁয়াজের দামের বিষয়ে বলেন, এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম দুই দফা বাড়বে কল্পনাও করতে পারিনি। ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করা পেঁয়াজ দেখতে দেখতে ৫৫ টাকা হয়ে গেছে। হুট করে এমন দাম বাড়লেও আড়তে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। তারপরও কেন বাড়ছে বুঝতে পারি না।
ভোজ্য তেলের বাজার এখনো স্থিতিশীল হয়নি। উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে রান্নার অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্যটি। গতকাল খুচরাবাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ও খোলা সয়াবিন ১১৫ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হয়। এছাড়া সুপার পামঅয়েল ১০৫ থেকে ১০৭ টাকা লিটার বিক্রি হয়। গত এক বছরের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনে ৩৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, বোতলজাত সয়াবিনে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও সুপার পামঅয়েলে ৩৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার কথা জানালেও কবে নাগাদ কমতে পারে এ ব্যাপারে কোনো আশার কথা শোনাননি ব্যবসায়ীরা।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ। ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করছে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী। তারা অতি মুনাফার লোভে সুযোগ পেলেই পণ্যের মূল্য বাড়ায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, নিত্যপণ্যের মজুত, উৎপাদন ও আমদানি সন্তোষজনক। তারপরও রোজার এক মাস আগেই পণ্যের দাম বাড়ছে। রোজা সামনে রেখে এই দাম বৃদ্ধির প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। পবিত্র রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে দাম বাড়ানোর প্রবণতা কমবে এবং বাজার স্থিতিশীল থাকবে।
এদিকে আসছে রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। সংস্থাটি এবার রমজানে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে মাঠে নামবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রতি বছর দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২১ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজানেই চাহিদা প্রায় ৪ লাখ টন। একইভাবে সারাবছর চিনির চাহিদা ১৮ লাখ টন। রমজানে চাহিদা ৩ লাখ টনের।
এছাড়া সারা বছর ৫ লাখ টন মসুর ডালের মধ্যে রমজানে চাহিদা ৮০ হাজার টন। আর বছর জুড়ে ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদার ৯০ শতাংশই লাগে রমজানে। সেই সঙ্গে সারা বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ২৭ লাখ টন। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা থাকে প্রায় ৫ লাখ টন পেঁয়াজের।
অথচ এই চাহিদার বিপরীতে রমজানে টিসিবি আড়াই কোটি লিটার ভোজ্য তেল, ১৭ হাজার টন ডাল, ৬০০ টন ছোলা, ১৩ হাজার টন চিনি, ১৭ হাজার টন পেঁয়াজ ও অন্যান্য আরো কিছু পণ্য বিক্রি করবে বলে জানা গেছে। এপ্রিলের শুরু থেকে সারা দেশে ৫০০ ডিলারের মধ্যে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে রাজধানীতে শতাধিক ডিলার পণ্য বিক্রি করবে। টিসিবির এই পণ্য চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তাই বাজারে এর কোন প্রভাব পড়বে বলে ভোক্তারা মনে করেন না।
টিসিবির ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জুয়েল আহমেদ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে টিসিবি একটি বড় ভ‚মিকা রাখতে পারে। তবে এজন্য প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, রমজানে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে চিনি ও ভোজ্য তেলের। কিন্তু টিসিবি যে পরিমাণ সয়াবিন ও চিনি বিক্রির জন্য ডিলারপ্রতি বরাদ্দ দেয় তা দিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখা কঠিন।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
কাঁঠালের আইসক্রিম জ্যাম ও চিপস
-
পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক
-
টি ব্যাগের ব্যবসা করে আয় করুন প্রচুর অর্থ
-
গো-বর্জ্য থেকে শুরু করুন এই চার ব্যবসা, আয় হবে লক্ষাধিক
-
ওষধি উদ্ভিদ কালমেঘ চাষে ব্যাপক আয়
-
নির্দিষ্ট পুঁজিতে মিশ্র চাষে কৃষকদের ব্যাপক আয়ের সুযোগ
-
কেমন হবে আগামীর কৃষি:
-
সুদান ঘাস চাষ করবেন যেভাবে
-
৩ অর্থবছরে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া-কুচিয়া রপ্তানিতে আয় প্রায় ৯৮৯ কোটি টাকা
চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’
ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।
মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’
কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।
ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।
সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।
* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।
বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।
বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।
সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।
ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।
ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।
আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।
এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।
বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলোডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন