ইসলাম
কোরবানির পশুর প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে নেকি জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
লেখক
ইনকিলাবপবিত্র কোরবানির শিক্ষা ত্যাগের শিক্ষা। কোরবানির শিক্ষা আল্লাহর হুকুমের সামনে বান্দার নিজের সোপর্দ করার শিক্ষা। লোক দেখানো কোরবানি বর্জন করে ইখলাস ওয়ালা কোরবানি করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন ও কোরবানি করুন। ( সুরা কাউছার, আয়াত নং ৩)। সুতরাং সক্ষমতা ও সুযোগ থাকা সত্তে¡ও যদি কেউ কোরবানি না করে তবে সে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। বিভিন্ন মসজিদে আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পবিত্র কোরবানির গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযিলত সর্ম্পকে বিভিন্ন মসজিদের পেশ ইমামরা গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নগরীর মসজিদগুলোর জুমার নামাজে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। করোনা মহামারি থেকে মুক্তির জন্য মসজিদগুলোতে বিষেশ দোয়া করা হয়। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এহেসানুল হক জিলানী আজ জুমার বয়ানে বলেন, কোরবানি হলো আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের অনন্য মাধ্যম। কোরবানির শুরু হয়েছিল হযরত আদম আলাইহিস সালামের দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের মধ্যে সংঘটিত কোরবানির মাধ্যমে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে রাসুল! আপনি তাদেরকে আদমের পুত্রদ্বয়ের বৃত্তান্ত যথাযথভাবে পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়েই কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হয়েছিল এবং অন্যজনের কোরবানি কবুল হয় নাই। সে (কাবিল) বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। অপরজন (হাবিল) বলল, অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন। সে (হাবিল) বলল, যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার প্রতি হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি” কোরবানির ইতিহাস হযরত আদম আলাইহিস সালামের যুগ থেকে শুরু হলেও মুসলিম উম্মাহর প্রচলিত কোরবানি মূলতঃ হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পরীক্ষায় হযরত ইসমাইল আলাইহি সালামকে কোরবানির স্মৃতিময় ঘটনার মাধ্যমেই সূচনা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন”যখন ইসমাইল আলাইহিস সালাম চলাফেরা করার বয়সে উপণীত হলেন; তখন হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর প্রাণপ্রিয় সন্তানকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানির জন্য স্বপ্নে আদিষ্ট হন। (আর নবীদের স্বপ্ন কোনো কল্পনা প্রসূত ঘটনা নয় বরং তা আল্লাহ প্রদত্ত ওহী) হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম পুত্র ইসমাইলকে বললেন, ‘হে ছেলে ! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে জবেহ করছি। এ বিষয়ে তোমার অভিমত কি? সে (হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম) বললেন, পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা পালন করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন”। পেশ ইমাম বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোরবানি তোমাদের পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নত। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন হে আল্লাহর রাসুল এই কোরবানি দ্বারা আমাদের কি লাভ ? তিনি কোরবানির ফযিলত সম্পর্কে বললেন,কোরবানির পশুর প্রত্যেকটা চুলের বিনিময়ে একটি করে নেকি দান করবেন। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন পশমের বিনিময়েও কি নেকি দিবেন? তিনি বললেন, প্রত্যেক টি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি দান করবেন”। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানো কোরবানি বর্জন করে ইখলাছ ওয়ালা কোরবানি করার তৌফিক দান করুন। আমীন ।
ঢাকার ডেমরার ঐতিহ্যবাহী দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদে জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, কোরবানির শিক্ষা ইখলাসের শিক্ষা। শুধু ইখলাসের কারণে হযরত আদম আলাইহিস সালামের পুত্র হাবিলের কোরবানি কবুল হয়েছিল। তার অপর পুত্র কাবিলের ইখলাস না থাকার কারণে তার কোরবানি কবুল হয়নি। কোরবানির শিক্ষা ত্যাগের শিক্ষা। কোরবানির শিক্ষা আল্লারহ হুকুমের সামনে বান্দার নিজের সোপর্দ করার শিক্ষা। প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, কোরবানরি শিক্ষা তাকওয়ার শিক্ষা। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আল্লাহর দরবারে না উহার (কোরবানির) গোশত পৌঁছে, না উহার রক্ত পৌঁছে; বরং তার কাছে তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে।
হযরত আয়শা রাদি.বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বনী আদম কোরবানির দিন এমন কোন আমল করে না যে আমলটি কোরবানি করার চেয়েও আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয়। কিয়ামতের দিন ঐ পশু তার শিং, খুর ও পশমসহ উঠবে। আর কোরবানির পশুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ দরবারে তা কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা এর দ্বারা আত্মতৃপ্তি লাভ কর।
তিনি বলেন, কোরবানি করা ওয়াজিব। কারণ হযরত আবু হুরায়রা রাদি. বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্বেও কোরবানি করবে না, সে যেন আমার ঈদগাহের নিকটবর্তিও না হয়। (আহমাদ, ইবনে মাজা)। ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনারারী খতিব অধ্যাপক ড. মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আজ জুমার বয়ানে বলেন, আরবি ‘কোরবান’ ও ‘কোরবাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে নৈকট্য লাভ করা, নেক আমল দ্বারা মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। বাংলা ভাষায়, ‘কোরবানি’ মানে ত্যাগ, উৎসর্গ করা, পশু কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনকল্পে কোরবানির দিনে যে পশু জবাই করা হয়, তারই নাম ‘কোরবানি’। একই কারণে কোরবানির দিনকে ‘ইয়াওমুল-আদ্বহা’ ও কোরবানির ঈদকে ঈদুল-আদ্বহা বলা হয়।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আদম সন্তান কোরবানির দিন যত নেক আমল করে তার মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে (পশু কোরবানির মাধ্যমে) রক্ত প্রবাহিত করা। কিয়ামতের দিন কোরবানির পশু (জীবিত হয়ে) তার শিং, খুর এবং পশম সহকারে উঠবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর দরবারে তা কবুল হয়ে যায়। বিখ্যাত সাহাবি হযরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, একদিন সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই কোরবানি কি? হুজুর (সা.) উত্তর দিলেন, তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাত (নিয়ম)। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসুল! এতে আমাদের জন্য কি রয়েছে? হুজুর (সা.) বললেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসুল! পশমওয়ালা পশুদের (অর্থাৎ যেসব পশুর পশম বেশি হয় যেমন ভেড়া ইত্যাদির) পরিবর্তে কি সওয়াব পাওয়া যাবে? হুজুর (সা.) বললেন, পশমওয়ালা পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে (চাই পশম যত বেশিই হোক না কেন)। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, হে লোক সকল! জেনে রাখ তোমাদের প্রত্যেক (সামর্থ্যবান) পরিবারের পক্ষে প্রতি বছরই কোরবানি করা আবশ্যক। (আবু দাউদ, নাসায়ী)
আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছেই ঈদের খুশী পৌঁছে যায়। পথশিশু, দিনমজুর, গরীব, দুঃখী, অসহায় কেউ যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়। এ ব্যপারে আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন কেউ যদি অভাবে থাকে, তার অভাব পূরণের আমাদের চেষ্টা করতে হবে। ঈদের দিনে সবাই যাতে আনন্দচিত্তে এ দিনটি উদযাপন করতে পারে সে ব্যপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন, যাবতীয় বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
ঢাকা উত্তরা ৩নং সেক্টরের মসজিদ আল-মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম জুমার খুৎবায় বলেন, মহিমান্বিত জিলহজ মাসের আসন্ন ঈদুল আযহার কোরবানি মুলত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এর কোরবানির অনুসরণ। আজ হতে প্রায় ৪ হাজার বছর পূর্বে ইরাকের উর নামক স্থানে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা, পরিবার ও রাষ্ট্র শক্তির প্রচন্ড বিরোধীতা ও প্রতিরোধের মুখে তিনি তাওহীদ প্রচারে অনড় থাকেন। একপর্যায় তিনি ফিলিস্তিনে হিজরত করেন। ৮৬ বছর বয়সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হযরত হাজেরার গর্ভে প্রথম পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালাম জন্মগ্রহণ করেন। আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা স্বরুপ বৃদ্ধ বয়সে ১৩ বছর বয়স্ক অতি প্রিয় সন্তানকে কোরবানি করার হুকুম দেন। ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এবং শিশু ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও আল্লাহর হুকুম পুরা করতে শতভাগ রাজি হয়ে যান, যা সুরা সফফাতের ৮৪ নং আয়াত থেকে ১০৭ আয়াত পর্যন্ত বর্নিত হয়েছে।
সুরা হজ্জের ৩৭নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন কোরবানিকৃত পশুগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহ তায়ালার নিকট পৌছে না বরং তোমাদের তাক্বওয়া তাঁর নিকট পৌছে। সুতরাং কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার নিয়তে করতে হবে। সামাজিকতা রক্ষা বা মানুষ দেখান কিংবা গোশত খাওয়ার নিয়ত হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। কোরবানির গোশত এক ভাগ গরীবদের এক ভাগ আত্মীয় স্বজনদের আর এবং ভাগ নিজেদের জন্য রাখলে ভালো হয়।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, যে কোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হল রিয়া বা লৌকিকতামুক্ত হতে হবে। কোরআন সুন্নাহর নির্দেশিত পন্থায় হতে হবে। লোক দেখানো বা দুনিয়াবী কোন স্বার্থের জন্য হতে পারবে না। কেননা যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করবে, সে ছোট শিরক করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে। তার সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে। চাই সেটা ছোট আমল হোক বা বড় আমল। যেমন, মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজ, রোজা, হজ, কোরবানি ও দান করা প্রভৃতি।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে বলেন, নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহ তায়ালাকে ধোঁকা দেয় অর্থাৎ তার সাথে প্রতারণা করে। অথচ (এর মাধ্যমে) তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। আর যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়, মানুষকে দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহ তায়ালাকে খুব কমই স্মরণ করে। সুরা আন নিসা, আয়াত ১৪২। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মানুষকে শোনানোর জন্য কোন কাজ করে আল্লাহ তায়ালা তার পরিবর্তে কেয়ামতের দিন তাকে শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তায়ালা তার পরিবর্তে কেয়ামতের দিন তাকে দেখিয়ে দিবেন (অর্থাৎ ে তার আমলের কোন বিনিময় পাবে না বরং এটা তার শাস্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে)। – বুখারি, হাদিস নং ৬৪৯৯। সুতরাং আমাদের সব আমল লৌকিকতামুক্ত হওয়া চাই। আসছে কোরবানিকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ অশুভ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কে কার চেয়ে সুন্দর গরু কিনতে পারে, কার গরু মহল্লার মধ্যে সবচেয়ে দামি। অনেকে আবার ক্রয়কৃত গরুকে সাজিয়ে মহল্লায় চক্কর দেয়। যাতে এলাকাবাসী জানে যে, তার গরু এত টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। কেউবা নতুন জামাইয়ের বাড়িতে আস্ত রানের গোশত পাঠাতে কোরবানি দেন। এগুলো অনুচিত। এর মাধ্যমে কোরবানির মতো সওয়াবপূর্ণ ইবাদতকে আমরা নষ্ট করে ফেলি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার সন্তুষ্টি অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পুর্ব বয়ানে বলেন, মুসলিম মিল্লাতের নিকট পবিত্র ঈদুল আযহা তথা কোরবানিী ঈদ সমাগত। পশু জবাহের মাধ্যমে আল্লাহ নৈকট্য অর্জনের অপর নাম কোরবানি। ইসলামী শরীয়তে ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত সময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নির্দিষ্ট পশু জবাহ করাকে কোরবানি বলা হয়। যার নিকট কোরবানির দিন সমূহে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য (প্রায় ৬১৩ গ্রাম) অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ন (প্রায় ৮৮ গ্রাম) কিংবা তৎ সমমূল্যের টাকা বা সম্পদ থাকে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব। (ফাতাওয়ায়ে শামী, খন্ড নং ৫, পৃষ্ঠা নং ১৯৮ এর বর্ননা মতে যার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব তার উপর কোরবানি ওয়াজিব) । কোরবানি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত একটি গুরুত্বপূর্ন ইবাদাত। সক্ষমতা ও সুযোগ থাকা সত্তে¡ও যদি কেউ কোরবানি না করে তবে সে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনকারী হিসেবে বিবেচিত হবে।
খতিব আরও বলেন, শুধু পশু কোরবানিই নয় বরং কোরবানির থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগ বিসর্জনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ইখলাসের সাথে আঞ্জাম দিতে হবে। আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করুন। আমীন।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম ১৭ নভেম্ব
-
নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন?
-
আজান শোনার পর প্রিয় নবি (সা.)-এর সুন্নাত কী?
-
হিজরতের কঠিন বিপদে যে দোয়া নাজিল হয়েছি
-
কেয়ামতের দিনের মুক্তিতে মুমিনের করণীয় কী?
-
শরীরের ব্যথা থেকে মুক্তি লাভের দোয়া
-
ঈমান নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে করণীয়
-
প্রতিটি বস্তু আল্লাহর তাসবিহ পড়ে
-
হাউজে কাউসার আল্লাহর শ্রেষ্ঠ প্রতিদান
-
মানবজীবনে ঈমানের সুফল
দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।
সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।
শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান।
সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।
নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:
নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)
কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)
যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)
তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)
প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।
স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-
كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه
‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।
প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-
لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا
‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)
আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত
কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-
كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج
‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেন, তবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)
ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-
لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم
‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!
মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-
من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض
‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো না, তার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।
প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।
মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-
رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا
উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)
উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।
কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।
আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।
ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।
কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।
হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।
সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)
আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!
কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন