পরিবেশ
কৃষি হতে পারে কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস
লেখক
সাম্প্রতিক দেশকালমহামারি করোনাকালে চাকরি হারিয়ে বা ঝুঁকি এড়াতে এখন অনেকেই গ্রামে ফিরছেন। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও চলে এসেছেন অনেক মানুষ। এইসব মানুষের কর্মসংস্থান করতে না পারলে গ্রামীণ অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সামনের দিনে কৃষি ব্যবসা ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পই গ্রামীণ কর্মসংস্থানের মূল উৎসে পরিণত হবে। বিশেষ করে দুগ্ধ, মাংস, শস্য, পোলট্রি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের মাধ্যমেই চাকরি বা উদ্যোক্তা তৈরি হবে।
কভিড-১৯-এর প্রভাবে গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশকেও অর্থনৈতিক ক্ষত বয়ে বেড়াতে হবে, যার পরিমাণ হতে পারে ৯ থেকে ২১ বিলিয়ন ডলার। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও রিসার্স অ্যান্ড পলিসি ইনটিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট ( র্যাপিড) আয়োজিত এক কর্মশালায় এমন তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
এমন অবস্থায় কৃষি হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খাত, জিডিপিতে যার অবদান ১৮.৭ শতাংশ (বিবিএস, ২০১২-১৩)। এ খাত এখনো শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশে আশংকাজনক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি (বাৎসরিক ১.৩৭ শতাংশ) দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিকূলতা হিসেবে বিবেচিত। এই বিশাল জনসংখ্যার ভরণ পোষণের জন্য খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষির টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিতভাবে কৃষি জমির হ্রাস (বাৎসরিক ১.০ শতাংশ হারে) এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলবায়ুর প্রভাব খাদ্য উৎপাদনে বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ভবিষ্যতে গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নির্দিষ্ট হারে খাদ্য সরবরাহ একান্ত প্রয়োজন। গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষা প্রতিষ্ঠায় কৃষি কী ভূমিকা পালন করছে এবং করতে পারে তা অনুধাবন করা।
কর্মসংস্থানের মূল উৎস হতে হলে গ্রামকে উন্নত করতে হবে। গ্রাম উন্নয়ন বলতে গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষি ও কুটির শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, সংস্কৃতি ও পরিবেশ- সবকিছুরই উন্নয়ন বোঝায়। এর আধুনিকায়ন মানে সব ক্ষেত্রে নয়া প্রযুক্তির প্রসার ও বৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণার বাস্তবায়ন। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি গ্রামে শহরের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের বিষয়টিও জড়িত। এ ক্ষেত্রে গ্রামবাংলার প্রকৃত রূপ অটুট রাখতে হবে। গ্রামের নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুর-ডোবা, গাছপালা, বনবীথি, ক্ষেতখামার আর দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ যথাযথভাবে অক্ষুণ্ণ রেখেই প্রণয়ন করতে হবে সব উন্নয়ন পরিকল্পনা।
তাতে নাগরিক সুবিধাসংবলিত প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় উন্নত বাসস্থানে পরিণত হবে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি। কৃষি ও কৃষিবহির্ভূত গ্রামীণ খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসবে। মানুষের আয় বাড়বে, বৈষম্য কমবে গ্রামীণ ও শহর জীবনে। গ্রামে বসবাস করতে স্বচ্ছন্দবোধ করবে নারী-পুরুষ সবাই। গ্রামীণ অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের কৃষি এখন বেশ অগ্রসরমান। কিন্তু কালক্রমে কৃষি একটি কম লাভজনক পেশা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
অথচ কৃষি শ্রমিকসহ উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে মোট উৎপাদন খরচ। এ সমস্যার সমাধানের জন্য একদিকে উপকরণ ভর্তুকি বাড়ানো দরকার, অন্যদিকে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করা দরকার কৃষকের জন্য। তাছাড়া উৎপাদিত ফসলের সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন ব্যবস্থাকে দক্ষ করে গড়ে তোলা দরকার। তদুপরি জলবায়ুর অভিঘাতপ্রবণ সমস্যা সংকুল কৃষির উৎপাদন ও জীব প্রযুক্তির ওপর গবেষণা জোরদার করা প্রয়োজন।
খাদ্যশস্যবহির্ভূত ফসল যেমন- শাকসবজি, ডাল, তেলবীজ, মসলা ও ফলমূলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জোরদার করা দরকার গবেষণা ও সম্প্রসারণ কর্মসূচিকে। বর্তমানে আমাদের শস্য বিন্যাসের উন্নয়ন দরকার।আর্থিক সহায়তা ও বাজেট বাড়ানো দরকার কৃষি খাতে। কৃষি ঋণের সুদ হার কমানো দরকার। ঋণের সঙ্গে সংযুক্ত করা দরকার কৃষি বীমা কর্মসূচিকে। সেই সঙ্গে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। কৃষিকে রফতানিমুখী করতে সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।
শস্যবহির্ভূত কৃষি খাত যেমন- পশুপাখি, মৎস্য ও বন উপখাতে বিনিয়োগের সুযোগ অনেক বেশি। উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও বিস্তর। দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদনে আমরা স্বয়ম্ভরতার কাছাকাছি থাকলেও আমিষজাতীয় খাদ্য উৎপাদনে এখনো আমরা বেশ পিছিয়ে আছি। দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখনো অপুষ্টির শিকার।
মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও ফলমূলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা অপুষ্টিজনিত সমস্যার সমাধান করতে পারি। এ উপখাতে সহজ শর্তে ঋণ ও সরকারি প্রণোদনা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে। নতুন কর্মসৃজনে তা সহায়ক হবে। তদুপরি এসবের সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে। ফলে আমিষজাতীয় খাদ্যের ভোগ বৃদ্ধি পাবে। এজন্য বাজারব্যবস্থা ও সংরক্ষণ সুবিধার উন্নয়ন দরকার।
আমাদের কৃষি খামারগুলো ক্রমেই ছোট আকার ধারণ করছে। উন্নত দেশগুলোতে খামারের আকার বড়। তাতে আধুনিক খামার যন্ত্রপাতির ব্যবহার সহজসাধ্য। কিন্তু এর বিপরীতে আমাদের দেশের জোতগুলো ছোট হওয়ায় যন্ত্রপাতির ব্যবহার ততটা সহজ হচ্ছে না। বড় আকারের বিনিয়োগও তেমন সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সমবায়ভিত্তিক কৃষি খামার গড়ে তোলার যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে।
গ্রামে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা দরকার। বর্তমানে বিদেশ থেকে যে রেমিটেন্স আসছে তার সিংহভাগই অর্জন করছে গ্রামের মানুষ। কিন্তু এর উৎপাদনমুখী বিনিয়োগ কম। গ্রামীণ কৃষি উৎপাদনে, ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাতে এ অর্থ বিনিয়োগ করা যায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
আবহমান কাল ধরে হস্তচালিত তাঁত, তেলের ঘানি, বাঁশ-বেত ও মাটির কাজ গ্রামের মানুষের সম্পূরক আয়ের ব্যবস্থা করছে। এগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে। আরও পুঁজিনির্ভর এবং শ্রম সৃজনকারী ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনে উদ্যোগ নিতে হবে গ্রামে। তাছাড়া গ্রামে গ্যাস সংযোগ, পরিবহন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ, বাজার ও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বেগবান করতে পারে। সর্বোপরি গ্রামের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তাতে বিনিয়োগ উৎসাহী হবে গ্রামের মানুষ। স্থায়ী বসবাসের আগ্রহী হবে তারা।
গ্রামের মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ গ্রামীণ উন্নয়নের একটি প্রধান শর্ত। বর্তমানে গ্রামে যে বিনিয়োগ হয় তার বড় অংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে আসে। প্রাতিষ্ঠানিক উৎসের অবদান এক্ষেত্রে খুবই কম। অধিক সুদের মহাজনি ব্যবসা গ্রামে এখনও বড় ভূমিকা পালন করছে আর্থিক খাতে। এ অবস্থার উন্নতিকল্পে গ্রামপর্যায়ে ব্যাংক শাখার দ্রুত সম্প্রসারণ দরকার। বিশেষ করে কৃষি ব্যাংক ও রাকাবকে পুরোপুরি নিয়োজিত রাখা দরকার কৃষি ও গ্রামীণ খাতে অর্থায়নের জন্য। তাছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও কমিউনিটি ব্যাংকিংকে উৎসাহিত করা দরকার।
তদুপরি সমবায় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি ব্যাংক, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করে গ্রামীণ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য কাজ করার নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে। গ্রামের মানুষ মহাজনের কাছে যায় ঋণের সহজলভ্যতার জন্য। এটি প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। মনে রাখতে হবে, কৃষিতে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং গ্রামীণ অকৃষি খাত সম্প্রসারণের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের বিকল্প নেই।
শহরে যোগাযোগ সহজ। গ্রামে তা ধীরগতির। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ গ্রামীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধনে সক্ষম। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জন করতে হলে গ্রামগুলোকেও ডিজিটাল কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে।
এর জন্য গ্রামের মানুষের কাছে ব্রডব্যান্ড সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। তাদের জন্য স্মার্টফোন সহজলভ্য করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৯ কোটি মোবাইল ফোন আছে। এর মাত্র ৩০ শতাংশ স্মার্টফোন। বাকিগুলো ডিজিটাল ফর্মেটে নিয়ে আসতে হবে দ্রুত। গ্রামে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ স্থানীয় জনমনে আস্থার সৃষ্টি করবে। তাদের সুন্দর ও সাবলীল জীবন গড়তে সাহায্য করবে।
গ্রামে এখন ভূমিহীনতা বাড়ছে। জনসংখ্যার চাপে জমিগুলো হচ্ছে খণ্ড-বিখণ্ড। নতুন বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট উন্নয়নের ফলে অনেক জমি চলে যাচ্ছে চাষের বাইরে। তাতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ০.৭৪ শতাংশ কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চিরায়ত কৃষিজমি সংরক্ষণ করা দরকার ফসল উৎপাদনের জন্য। অপরদিকে ভূমিহীন ও ক্ষুদ্র কৃষকের জন্য আবাসস্থল গড়ে তোলা দরকার প্রতিটি গ্রামে। এ অবস্থায় পরিকল্পিত আবাসন কর্মসূচি হাতে নেয়া দরকার গ্রামের ক্রমবর্ধমান বাসিন্দাদের জন্য।
করোনাকালে ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে দ্রুত উন্নতি করতে হলে কৃষি খাতকে শিল্পায়নের সঙ্গে দ্রুত যুক্ত করতে হবে। গ্রামের মানুষের আরো তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছাতে হবে। পণ্য বিপণনের জন্য কৃষক ও খামারিদেরকে অনলাইন বিপণন কৌশলকে কাজে লাগাতে হবে। সামনের দিনে বাংলাদেশে এগ্রিবিজনেসের ওপর যারা পড়াশোনা করবে তারাই চাকরি ও উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে। গ্রামে মানুষ ফিরে যাচ্ছে সেখানে কৃষিভিত্তিক ছোট ব্যবসা এবং বিপণন কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। বৈশ্বিক ও দেশের বাজারে কৃষি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা মেটাতে দেশের কৃষক ও উদ্যোক্তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। তাহলে কৃষি হতে পারে কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
-
দেশের কৃষিতে নতুন সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে
ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।
২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।
৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।
৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।
৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।
৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।
৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।
১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।
১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।
১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷
বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
অশ্বগন্ধা –
বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
শতমূলী –
শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
যষ্টিমধু –
জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী –
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি –
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷
পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।
মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)
কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।
রোপন (Planting)
দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।
ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।
মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।
গাছের পরিচর্যা (Caring)
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন