আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ইসলাম

কুরবানি দেওয়ার ফজিলত

কুরবানি কী? কুরবানির ফজিলত কী? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের প্রশ্নের উত্তরে সুস্পষ্ট ও সুন্দর জবাব দিয়েছেন। যে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহু। কী আছে সেই হাদিসের বর্ণনায়?

সাহাবায়ে কেরাম একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেনহে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই কুরবানি কি?

জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এটা তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর সুন্নাত (রীতিনীতি)।

তাঁকে আবারও জিজ্ঞাসা করা হলোহে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতে আমাদের কি ফজিলত (পূণ্য রয়েছে)?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, ‘(কুরবানির জন্তুর) প্রতিটি লোমের পরিবর্তে (একটি করে) নেকি রয়েছে।’

তাঁরা আবারও জিজ্ঞাসা করলেনপশম বিশিষ্ট পশুর বেলায় কি হবে? (পশুরতো পশম অনেক বেশি)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনপশমওয়ালা পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তেও একটি করে নেকি রয়েছে। (মুসনাদে আহমদইবনে মাজাহমিশকাত)

আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার আশায় জিলহজ মাসের ১০-১২ তারিখ উট, গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়া জবেহ করাই হলো কুরবানি। আর এ পশুর পশম যতবেশিই হোক না কেন, প্রতিট পশমের বিনিময়ে রয়েছে একটি করে সাওয়াব।

আরবি করব বা কুরবান (قرب বা قربان) শব্দ থেকে উর্দূ ও ফার্সিতে কুরবানি শব্দটির উৎপত্তি। যার অর্থ দাঁড়ায়-নৈকট্য বা সান্নিধ্য। কুরবান হল, প্রত্যেক সেই বস্তু, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। আর সেখান থেকেই ফারসী বা উর্দু-বাংলাতে গৃহীত হয়েছে ‘কুরবানি’ শব্দটি।

মুসলমানের জন্য কুরবানি করা মহান আল্লাহর নির্দেশ। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাও তাই। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

‘অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ পড় এবং কুরবানি কর।’ (সুরা কাউসার : আয়াত ২)

আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে নামাজ ও কুরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সবচেয়ে বেশি এ দুইটি ইবাদত করেছেন। তিনি যেমন অধিক নামাজ আদায় করেছেন তেমনি বেশি কুরবানিও করেছেন।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কুরবানি প্রসঙ্গে একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তাহলো-

১. হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ বছর মদিনায় অবস্থান করেছেন। মদিনায় অবস্থানকালীন প্রত্যেক বছরেই কুরবানি করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)

২. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ (ও সুন্দর) দুই শিং বিশিষ্ট সাদা-কালো মিশ্রিত (মেটে বা ছাই) রঙের দুইটি দুম্বা কুরবানি করেছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)

৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো বছর কুরবানি থেকে বিতর থাকেননি। তিনি কর্মে দ্বারা যেমন কুরবানি করতে অনুপ্রাণিত করেছেন আবার বক্তব্য দিয়ে কুরবানির প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। হাদিসে এসেছে-

‘যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাজের আগে (পশু) জবেহ করে সে নিজের জন্য জবেহ করে। আর যে নামাজের পর জবেহ করে তার কুরবানি সিদ্ধ হয় এবং সে মুসলমানদের তরিকার অনুসারী হয়।’ (বুখারি)

৪. সামর্থ্যবানদের মধ্যে যারা কুরবানি করে না, তাদের প্রতি তিনি এভাবে হুশিয়ারী করেছেন। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানি করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের ধারে-কাছেও না আসে।’ (মুসনাদে আহামদ, ইবনে মাজাহ, মুসতাদরেকে হাকেম)

মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারে একমত যে, কুরবানি কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মোতাবেক বিধেয়। এ ব্যাপারে কারো কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু কুরবানি করা ওয়াজিব না সুন্নাত -এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যে কারণে সম্পদের মালিকের জন্য অনেক ইসলামিক স্কলার ও সংস্কারক কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে মতামত দেন। আবার অনেক সাহাবা, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ এবং ইসলামিক স্কলারগণ কুরবানিকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন।

তবে মুসলিম উম্মাহর জন্য এটা উত্তম যে, সামর্থ্য থাকলে কুরবানি ত্যাগ না করাই উত্তম। সক্ষম হলে নিজের ও পরিবার-পরিজনের পক্ষ থেকেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি করা। যার মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নির্দেশ মানা হয় তেমনি সাহাবাদের অনুসরণ ও অনুকরণেও রয়েছে বিশাল সাওয়াবের হাতছানি।

মনে রাখতে হবে

কুরবানি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে অর্থ খরচ করে স্বার্থ ত্যাগ করে এ ইবাদত করতে হয়। এতে যেমন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাত জাগ্রত হয়। আবার ইসলামের নির্দশনও প্রকাশ পায়।

কুরবানির মাধ্যমে পরিবার ও দরিদ্রজনের উপর খরচ করা হয় এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য হাদিয়া ও উপঢৌকন পেশ করার সুযোগ হয়। কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য করতে পেরেই মুমিন মুসলমান আনন্দলাভ করতে পারে। আর সেই খুশিই হলো কুরবানির খুশি।

এমনটি যেন না হয়

হজ না করে হজের টাকা সাদকাহ করলে যেমন ফরজ আদায় হয় না। তেমনি কুরবানি না করে কুরবানির টাকা গরিব-দুঃখীর মাঝে বণ্টন করলেও কুরবানির হক আদায় হবে না। কেননা কুরবানিতে আল্লাহর জন্য পশু জবেহ করা হলো ইবাদত ও দ্বীন ইসলামের নির্দশন এবং প্রতীক। এ কারণেই ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন-

‘কুরবানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ এবং সমগ্র মুসলিম জাতির এক আমল। আর কোথাও কথিত নেই যে, তাঁদের কেউ কুরবানির পরিবর্তে তার মূল্য সাদকাহ করেছেন। আবার যদি তা উত্তম হতো তবে তাঁরা নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম করতেন না।’ (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া)

কুরবানি দ্বারা জবেহ উদ্দেশ্য। সুতরাং পশু জবেহ করা কুরবানির মূল্য সাদকাহ করা অপেক্ষা উত্তম। যদিও সে তা কুরবানির চেয়ে পরিমাণে অধিক হয়। কারণ, কুরবানিতে জবেহ হলে উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কুরবানি সম্পর্কে বলেছেন-

১. فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

‘অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য নামাজ পড় এবং কুরবানি কর।(সুরা কাউসার : আয়াত ২)

২. قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, অবশ্যই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২)

সুতরং কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী নামাজ ও কুরবানির ইবাদত অর্থ দিয়ে আদায় করলে হবে না। এর অন্যতম প্রমাণ হলো- হজের ক্ষেত্রে যারা তামাত্তু ও কিরান হজ করবেন, তারা যদি কুরবানির পরিবর্তে ৩গুণ বা তারচেয়েও বেশি সাদকাহ করে তাতে তার পরিবর্তন হবে না। ঠিক কুরবানিও তাই। আর আল্লাহ তাআলাই অধিক জানেন।’ (তুহফাতুল মাওদুদ)

কুরবানি নামাজের মতো স্বাতন্ত্র ইবাদত। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে কুরবানির ফজিলত ও সাওয়াব অনেক বেশি। আর এটা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাত হওয়ার কারণেই প্রিয়নবি নিজে তা পালন করেছেন। সে কারণে তা উম্মতে মুহাম্মাদির সামর্থবানদের জন্যও তা আদায় করা আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক সামর্থ্যবানকে কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। কুরবানির ফজিলত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলাম

পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম ১৭ নভেম্ব

দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।

সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।

শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান। 

সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন?

নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:

নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)

যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)

তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

আজান শোনার পর প্রিয় নবি (সা.)-এর সুন্নাত কী?

প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।

স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-

১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-

كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه

‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।

প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا

‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)

আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত

কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-

كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج

‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেনতবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)

ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-

لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم

‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!

মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-

من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض

‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো নাতার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।

প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।

মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

হিজরতের কঠিন বিপদে যে দোয়া নাজিল হয়েছি

মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-

رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا

উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)

উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।

কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।

আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।

ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।

কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

কেয়ামতের দিনের মুক্তিতে মুমিনের করণীয় কী?

শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।

হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।

সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)

আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!

কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com