ড. সুমাইয়া আহমেদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিন মাস বাসা থেকেই বের হননি, কিন্তু তা সত্ত্বেও রক্ষা পাননি করোনাভাইরাস থেকে।
পরিবারেই চিকিৎসক আছেন এবং অসুস্থতার সময়টুকুতে তার পরামর্শ অনুযায়ীই চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ তিনি।
কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর কোভিড-১৯ নিয়ে তার আর কিছু করণীয় আছে কি-না কিংবা কতটুকু সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার, সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন তিনি।
“পজিটিভ হওয়ার পর আইইডিসিআর থেকে কল দিয়েছিলো। সেখানকার ডাক্তার তখন বলেছিলেন যে আপনাকে পরেও সাবধান থাকতে হবে। তবে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন সুমাইয়া আহমেদ।
“তবে ডায়াবেটিস থাকায় আমি সতর্কই থাকবো। আর পরিবারে চিকিৎসক থাকায় সার্বক্ষণিক পরামর্শের একটা সুযোগ আছে।”
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এন এম ফিরোজ কামাল।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়ে দু’দফা নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর চিকিৎসক তাকে আরও বিশ্রাম নেয়া ও ফুসফুসের দিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “যেহেতু আমি একবার আক্রান্ত হয়েছি তাই সতর্ক থাকতেই হবে। সুরক্ষা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারগুলো পুরোপুরি মেনটেইন করতে হবে।”
“পাশাপাশি আদা চা পান করা বা বেশি তরল খাওয়া এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের যে ব্যায়াম আছে, সেগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। আর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন বা শাক-সবজি বেশি খেতে হবে”।
মিস্টার কামাল বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে অ্যান্টিবডি টেস্টের সুযোগ খুব একটা নেই, তাই তার মধ্যে আদৌ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি-না, সে ব্যাপারে ঠিক নিশ্চিত নন তিনি।
“একবার হলে আবার হতে পারে কি-না বা শরীরে অ্যান্টিবডি কত শতাংশ মানুষের তৈরি হয়, এসব অনেক প্রশ্নের উত্তরই আসলে আমাদের জানা নেই। সেজন্যই সামাজিক সুরক্ষার যাবতীয় বিষয়গুলো মেনে চলতেই হবে,” যোগ করলেন তিনি।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব বলছে, ড. সুমাইয়া আহমেদ ও এন এম ফিরোজ কামালের মতো তিপান্ন হাজারের বেশি মানুষ বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন ২৬শে জুন পর্যন্ত।
এদের কেউ বাসায় থেকে আবার কেউ-বা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ এবং চিকিৎসকদের আশা, আক্রান্তরা পরামর্শ অনুযায়ী চললে দ্রুতই পর্যায়ক্রমে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
কিন্তু সুস্থ হয়েই কি ডাক্তারকে ভুলে যাবেন?
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. শারমিন ইয়াসমীন জানাচ্ছেন – না, একদমই না। কোভিড-১৯ রোগ সেরে গেলেও ডাক্তারকে ভুলে যাওয়া উচিত হবে না।
“করোনাভাইরাসের চিকিৎসার সময় প্রাথমিকভাবে জরুরি ঔষধ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে রোগীকে ভালোর দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। ফলে তখন লক্ষ্যটাই থাকে যে রোগীর অবস্থা যেন আরও খারাপ না হয়, রোগী যেন ভালোর দিকে যাত্রা শুরু করতে পারে,” বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।
এই চিকিৎসক আরও বলেন, “কিন্তু ভাইরাসটি আক্রমণ করে কোথাও ক্ষতি করেছে কি-না, বা অন্য কোনো বিষয়ে চিকিৎসার পরবর্তীতে প্রয়োজন আছে কি-না, তার কিন্তু ফলো-আপ জরুরি পরবর্তী জীবনে ভালো থাকার জন্য”।
চট্টগ্রামে একজন চিকিৎসক একবার ভালো হয়ে আবার সংক্রমিত হয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গেছেন – এমন উদাহরণ সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের দিয়ে তাদের জন্য বিশেষ কিছু পরামর্শও দেন শারমিন ইয়াসমীন।
তিনি বলেন, অনেক সময় ভাইরাস সংক্রমণের কারণে রক্ত জমাট বেধে রক্ত প্রবাহের নালীগুলো আটকে যায়, যার জন্য পরবর্তীতেও চিকিৎসা দরকার হতে পারে।
সুস্থ হয়ে ওঠার ব্যক্তির জন্য শারমিন ইয়াসমীনের পরামর্শ:
১. সুস্থ হয়ে গেলেও ফলো-আপ চিকিৎসা করাতে হবে
২. প্রয়োজনীয় টেস্টগুলো সময়মত করিয়ে চিকিৎসককে দেখাতে হবে
৩. শারীরিক সুস্থতার জন্য দরকারি ব্যায়ামগুলো অব্যাহত রাখতে হবে
৪. বয়স বা অন্যান্য রোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সার্বক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে, কারণ করোনাভাইরাস আবার আক্রান্ত করবে না এমন কোন নিশ্চয়তা এখনো পাওয়া যায়নি
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে সতর্কভাবে কাজ করা
৬. মনে রাখতে হবে, অ্যান্টিবডি সবসময় সুরক্ষা দেয় না, কারণ এটা নির্ভর করে ব্যক্তি কতটা আক্রান্ত হয়েছেন তার ওপর
৭. স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক সুরক্ষার নিয়ম-কানুন পুরোপুরি মেনে চলা।
সতর্ক থাকতে হবে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়েও
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেনিন চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে জানাচ্ছেন যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক সময় মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, ফলে চিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও পরবর্তীতেও মানসিক ট্রমা তার মধ্যে কাজ করে।
“তাই পরিবার ও সমাজের উচিত হবে তার পাশে থেকে সাহায্য করা, যাতে তিনি সহজে এটাকে মেনে নিয়ে চলতে পারেন। আবার আমাদের দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের নিয়ে যে সোশ্যাল স্টিগমা (সামাজিক কলঙ্ক) তৈরি হয়, তা যেন পরবর্তীতে তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি না করে, সেটিও দেখতে হবে,” বলছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে যাওয়াটাই শেষ কথা নয়।
“মনে রাখতে হবে, গবেষণায় দেখা গেছে করোনাভাইরাস ফুসফুসের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষত তৈরি করতে পারে। তাই ফুসফুসের ক্ষত বা প্রদাহ আছে কি-না, সেটি সুস্থ হওয়ার পর ভালো ভাবে নিশ্চিত হতে হবে”।
সব মিলিয়ে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হলেও নিয়মিত চেক-আপ ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার বলে মনে করেন লেলিন চৌধুরী।
কিন্তু সুস্থ হওয়ার পরের করণীয় দিকগুলোর দিকে বাংলাদেশের কেউ তেমন নজর দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন এই চিকিৎসক।
সুস্থ হওয়ার পরেও দেখতে হবে শরীরের কেমন ক্ষতি করে গেলো করোনাভাইরাস
সুস্থ হলেও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন