দৈনন্দিন
করোনাকালীন ভেজাল খাদ্য
লেখক
জাগোনিউজ২৪.কমডা. শামীম তালুকদার
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততায় খাবারের প্রতি নজর দেয়ার সময় তেমন হয় না। কোথায় খাচ্ছি বা কী খাচ্ছি, সেটাও আমরা গুরুত্ব দেই না। রঙ-বেরঙের চটকদার খাবারের প্রতি আমাদের নজর সবসময়। বিশেষ করে শহর অঞ্চলে ফাস্ট ফুড ও রেস্তোরাঁর খাবারের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি। আবার এসব খাবারকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে অনলাইনভিত্তিক খাবার সরবরাহের ব্যবসা।
যাদের বাসায় রান্না করার সময় নেই কিংবা যারা ব্যস্ততার জন্য বাইরে গিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে পারছেন না, তাদের জন্য তৈরি আছে এসব অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম। যদিও ফাস্ট ফুড খেতে চিকিৎসকরা সব সময়ই বারণ করেন, তবে করোনার ক্ষেত্রে ভয়টা খাবারে নয় বরং ভয়টা হচ্ছে খাবার প্রস্তুত, মজুত, প্যাকেজিং ও সরবরাহের ক্ষেত্রে যথাযথ হাইজিন মানা হচ্ছে কি-না? বিশেষ করে, যারা অনলাইনে খাবার সরবরাহের সঙ্গে জড়িত তাদের দ্বারা করোনা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যদিও এখন পর্যন্ত খাবারের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারণ ভালোভাবে রান্না করা হলে খাবারে করোনাভাইরাস বেঁচে থাকে না, তাই অনলাইনে অর্ডার করা খাবার খেতে বাধা নেই। তবে ফুড প্যাকেজিংয়ের সংস্পর্শের কারণে বা খাবার ডেলিভারি করতে যিনি আসবেন তার দ্বারা করোনা সংক্রমিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।
এছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো যেসব খাবার সরবরাহ করে সেগুলোর কোয়ালিটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ ও পচা-বাসি খাবার সরবরাহের অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে।
আমাদের দেশের অনেক মানুষ প্রায় প্রতিদিনই রেস্তোরাঁর খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করেছেন। রোজ রোজ রেস্তোরাঁর খাবার খাওয়ায় শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ এসব খাবারে ব্যবহার করা হয় ‘মনো সোডিয়াম গ্লুটামেট’, যাকে আমরা ‘আজিনামোটো’ নামে চিনি। মাত্রাতিরিক্ত ‘মনো সোডিয়াম গ্লুটামেট’ ডেকে আনতে পারে বিভিন্ন ধরনের স্নায়ুর সমস্যা এবং বৃহদন্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্যান্সার।[১]
যদিও আমাদের দেশের নিরাপদ খাদ্য আইন- ২০১৩ এর ২৩নং ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অথবা বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দ্রব্য বা উহার উপাদান বা বস্তু (যেমন- ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, সোডিয়াম সাইক্লামেট), কীটনাশক বা বালাইনাশক (যেমন- ডি.ডি.টি., পি.সি.বি. তৈল, ইত্যাদি), খাদ্যের রঞ্জক বা সুগন্ধি আকর্ষণ সৃষ্টি করুক বা না করুক বা অন্য কোনো বিষাক্ত সংযোজন দ্রব্য বা প্রক্রিয়া সহায়ক কোনো খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্য উপকরণে ব্যবহার বা অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন না, অথবা উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্য উকরণ মজুত, বিপণন বা বিক্রয় করতে পারবেন না।’[২]
কিন্তু আমাদের দেশের হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরা কোনো নিয়মনীতি মানেন না, কারণ আইন প্রযোগকারী সংস্থা কর্তৃক কঠোর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় তারা দুর্নীতির সুযোগ পান
১. সুদীপ দে, “Coronavirus: চাইনিজ ফুড করোনাভাইরাসের ঝঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে না তো?” ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ZEE ২৪ ঘণ্টা; ২. বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আইন- ২০১৩]
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইউম সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘করোনার সময় হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ থাকায় আমাদের মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম কিছুটা সীমিত ছিল। কিন্তু আমাদের টিম এখন পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। অনলাইন খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কোথায় খাদ্য প্রস্তুত করছে বা কোথা থেকে খাদ্য সংগ্রহ করছে, সেটিরও অনুসন্ধান চলছে। যদি কোনোপ্রকার অনিয়ম ধরা পড়ে তাহলে আমরা অবশ্যই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
বাংলাদেশে শিল্পরঞ্জক রঙ খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন- মিষ্টির রঙ উজ্জ্বল করতে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার হয়। বাংলাদেশের মানুষ মিষ্টি খেতে ভালোবাসে এবং বিভিন্ন উৎসবে মিষ্টি একটি অপরিহার্য উপাদান। এছাড়া বেগুনি, পেঁয়াজু প্রভৃতি ইফতারসামগ্রীতে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার হয়। শিল্পরঞ্জক রঙ সমৃদ্ধ খাদ্যসামগ্রী চুলকানি, জন্ডিস ও প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া যকৃত, বৃক্ক, অস্থি প্রভৃতির ক্ষতিসাধন করে থাকে। কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত রঙ, ঘনচিনি, স্যাকারিন আর ফ্লেভার দিয়ে তৈরি করে বাজারজাত করা হয় বিভিন্ন ধরনের ভেজাল জুস ও সস। বাংলাদেশের মানুষের অতি সাধারণ একটি খাবার হচ্ছে মুড়ি। অথচ মুড়িতে ইউরিয়া মেশানো হয় যা মুড়িকে সাদা ও বড় আকারের করে। কিন্তু ইউরিয়া মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং এটি আলসার সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিককালে একটি চিকিৎসা জরিপে দেখা যায় যে, মুড়িতে ক্যাডমিয়ামের পরিমাণ সাধারণত চালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ, যা ইউরিয়া ব্যবহারের কারণে হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। চিকিৎসকরা বৃক্ক বা কিডনি রোগের জন্য ক্যাডমিয়ামকে দায়ী বলে সতর্ক করেন। [৩]
ইট ও কাঠের গুঁড়া মেশানো হয় খাবারের মশলায়; বাজারের তেল, আটা, চিনি, কেক, বিস্কুট কিছুই ভেজালমুক্ত নয়। বাজারের ৮৫ শতাংশ মাছে ফরমালিন মিশিয়ে পচন রোধ করা হয়। শাকসবজিতে বিষাক্ত স্প্রে, সবধরনের ফলমূল দ্রুত পাকিয়ে রঙিন বানাতে সর্বত্র কার্বাইড, ইথোফেন, আর পচন রোধে ফরমালিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, শাকসবজি ও ফলমূলে যে বিষ দেয়া হয়, তা একবারে পরিমাণ মতো খেলে তাৎক্ষণিকভাবে মানুষ মারা যাবে। চাষি বা ব্যবসায়ীরা মানুষকে একবারে বিষ খাইয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করছে না, তারা মানুষকে হত্যা করছে ধীরে ধীরে। এসব বিষ ফল-সবজি-মাছের সঙ্গে শরীরে ঢুকছে, ফুসফুস-পাকস্থলী- কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, শরীরে বাসা বাঁধছে ক্যান্সার, মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জনগণ কিন্তু তারা সেটা বুঝতেই পারছেন না।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, শরীরে ইমিউনিটি ভালো থাকলে এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চললে করোনা সহজে কাউকে আক্রান্ত করতে পারে না। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যেহেতু করোনার কোনো টিকা সহজলভ্য হয়নি, সেজন্য যার যার শরীরের ইমিউনিটি তাকেই রক্ষার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ভেজাল খাবার খেয়ে কীভাবে মানুষ শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম ঠিক রাখবে? বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ভেজাল ও দূষিত খাদ্য গ্রহণের কারণে অসুস্থ হয়, এর মধ্যে মারা যায় চার লাখ ৪২ হাজার মানুষ। এছাড়া দূষিত খাদ্য গ্রহণজনিত কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সের আক্রান্ত হওয়া ৪৩ শতাংশ শিশুর মধ্যে মৃত্যুবরণ করে এক লাখ ২৫ হাজার। [৪]
করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেক মা তাদের শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে পারেননি, সাধারণ সময়েও অনেক মা বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাদের শিশুদের স্তন দান করতে পারেন না, যার কারণে তাদের ভরসা করতে হয় বাজারের প্যাকেটজাত দুধের ওপর। কিন্তু সেখানেও রয়েছে ভেজালের প্রকোপ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগার (এনএফএসএল) বাজার থেকে কাঁচা তরল দুধের ৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করে সম্প্রতি গবেষণা চালিয়েছে। এতে তারা দেখেছে, নমুনার সবগুলোতেই সিসা ও অ্যান্টিবায়োটিক অনুজীব রয়েছে। প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনার মধ্যে ১৮টিতেই ভেজাল রয়েছে, এছাড়া ছিল উচ্চমাত্রার বিভিন্ন রাসায়নিক। এনএফএসএলের প্রতিবেদনে বলা হয়, গরুর দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে ৯৬ শতাংশ দুধে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। প্যাকেট দুধের ৩১টি নমুনার ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে টেট্রাসাইক্লিন মেলে, ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশ দুধের নমুনায় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া পাওয়ার কথা বলা হয় প্রতিবেদনে। এছাড়া দইয়ের ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে একটিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা এবং ৫১ শতাংশ নমুনায় বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।[৫]
বাচ্চাদের খাবারের মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান দুধ। অতি তাৎপর্যপূর্ণ এই খাবারও যদি ভেজালমুক্ত না হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? আবার ভেজাল দুধের সঙ্গে রঙ, কেমিক্যাল আর ঘনচিনি দিয়ে তৈরি করা হয় বাচ্চাদের অতিপ্রিয় একটি খাবার আইসক্রিম। আইসক্রিমকে সুস্বাদু করতে ঘনচিনি ও রঙ ব্যবহার না করতে সংশ্লিষ্ট আইসক্রিম প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বারবার সতর্ক করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এখনও রঙ মেশানো আইসক্রিমের সঙ্গে ব্যবহার করছে ঘনচিনি। কিন্তু ক্ষতিকর এসব পদার্থ ব্যবহারের ফলে বাচ্চারা আইসক্রিম খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সাময়িকভাবে আমরা বাচ্চাদের অসুস্থতার কারণ হয়তো বুঝতে পারি না বা গুরুত্ব দেই না, কিন্তু এসব ক্ষতিকর পদার্থ গ্রহণের কারণে বাচ্চারা দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার শিকার হতে পারে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ।
সম্প্রতি দেশে দীর্ঘ সময় ধরে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর দোকানপাট সব বন্ধ থাকায় আইসক্রিমসহ যেসব কোমল পানীয় ঠান্ডা বা ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন হয় সেগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি। আবার দেখা গেছে, লম্বা সময় দোকান বন্ধ থাকায় ফ্রিজ ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীসমূহ বন্ধ করে রাখতে হয়েছে। দীর্ঘদিন সঠিক তাপমাত্রায় না রাখায় এসব পণ্যের মেয়াদ ও মান নষ্ট হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক, কিন্তু লকডাউনের পর দোকান খুলে এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ও মানহীন পণ্যই জনগণের হাতে তুলে দিচ্ছে দোকানদাররা। এসব পণ্য ক্রয় করে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিছু কিছু অনলাইন প্রতিষ্ঠান বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রির অফার দিয়ে সাধারণ জনগণের হাতে নকল ও ভেজাল পণ্য তুলে দিচ্ছে। অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব পণ্য মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায় সেগুলো চোরাই বাজার থেকে কম মূল্যে সংগ্রহ করে লেবেল ও স্টিকার পরিবর্তন করে জনগণের হাতে তুলে দেয়। বাজার মূল্য থেকে কম দামে, কীভাবে পণ্য দিচ্ছেন— এমন প্রশ্নে প্রতিষ্ঠানগুলো বলে, তারা সরাসরি ডিলার থেকে পণ্য সংগ্রহ করে বিধায় খরচ কম, অথচ বাস্তবে যত ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য রয়েছে সেগুলো তারা জনগণকে সরবরাহ করে বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে। জনগণও সস্তা পাবার আশায় না জেনেই বাজে পণ্যগুলো অনলাইন থেকে সংগ্রহ করে। বাচ্চাদের খাবারের সাপ্লিমেন্ট হিসেবে যেসব পণ্য বাজারে পাওয়া যায় (যেমন- হরলিক্স, কমপ্ল্যান, বুস্ট, বোর্নভিটা) সেগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ক্রেতারা আকৃষ্ট হলেও প্রকৃত পক্ষে এগুলোতে যেসব পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকার কথা, সেগুলো উপস্থিত থাকে না। এসব সাপ্লিমেন্টারি খাবার ইউএস এফডিএ (US FDA) কর্তৃক অনুমোদিত না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এগুলো ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছে শুধুমাত্র ব্যাপক মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপনের কারণে। আমাদের দেশের মায়েরা তাদের সন্তানদের কিছুটা বাড়তি পুষ্টির জোগান দিতে এসব সাপ্লিমেন্টারি ফুড কিনে আনেন বাজার থেকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব খাবার পুষ্টির জোগান দেয় না।[৬]
[৩. প্রফেসর ড. এম. এ রহিম, ড. মো. শামছুল আলম, ‘বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য’, কৃষি তথ্য সার্ভিস; ৪. মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ, ‘ভেজাল খাদ্যে প্রাণনাশ’, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, যুগান্তর; ৫. শিপন হাবীব, ‘দুধেও ভেজাল শিশু খাবে কী’, ৮ জুন ২০১৯, যুগান্তর; ৬. ‘হরলিক্স, কমপ্ল্যান, বুস্ট এর মাহাত্ম্য,” রান্না ঘর]
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘খাদ্যে ভেজাল ঠেকাতে হলে আমদানিকৃত পণ্যগুলো দেশে প্রবেশকালীন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপর বাজারে ছাড়া উচিত এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের উৎপাদক ও উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের ডেটাবেজ তৈরি করা জরুরি। পাশাপাশি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ শাখাকে শক্তিশালী করার জন্য সমন্বিত তদারকি নিশ্চিত করাও প্রয়োজন। [৭]বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল প্রয়োগ একটি সাধারণ ব্যাপার। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অবহেলা এজন্য অনেকখানি দায়ী। অন্যদিকে, আইনের ব্যর্থতা, খাদ্যমূল্য, তথ্য অপ্রতুলতা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রভাব প্রভৃতি খাদ্যে ভেজাল প্রক্রিয়ায় সমভাবে দায়ী। একদিকে খাবারে ভেজাল বা বিষ দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে, অন্যদিকে ভেজালবিরোধী অভিযানের নামে মানুষের সঙ্গে রসিকতা করা হচ্ছে। সারা বছর খবর নেই, অভিযান চালানো হয় রমজান মাসে। উৎসমুখে ব্যবস্থা না নিয়ে, অভিযান চালানো হয় খুচরা বিক্রেতাপর্যায়ে। ফলে সাময়িকভাবে ভেজাল রোধ করা গেলেও কিছুদিন পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায় খাদ্যে ভেজাল দেয়ার প্রবণতা। [৮]
অনলাইন খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সে সম্পর্কে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘এক্ষেত্রে ক্রেতা ও খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান— এই দুই পক্ষের ভূমিকাই জরুরি। ক্রেতাদের অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে খাবার অর্ডার করতে হবে, যার মাধ্যমে তাদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ কম থাকবে। আর অনলাইন ব্যবসায়ীদের যে সংগঠন রয়েছে তাদের উচিত সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করুক বা না করুক, তারা তাদের নিজস্ব একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে সেটি যথাযথভাবে অনুশীলন করা এবং নীতিমালা অনুযায়ী তাদের সদস্যদের নিয়মিত মনিটরিং করা, যার মাধ্যমে তারা ক্রেতাদের বিশ্বাস ও আস্থা সহজেই অর্জন করতে পারবে।’
ভেজালবিরোধী অভিযানগুলো শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকায়, মফস্বল ও গ্রামপর্যায়ে ভেজাল খাদ্য ছড়িয়ে দেয়া ব্যবসায়ীদের জন্য আরও সহজ হয়েছে। গ্রামের দোকানগুলোতে এমন সব বেনামি কোম্পানির পণ্য পাওয়া যায় যেগুলোর নাম কেউ কখনও শোনেননি। শহরাঞ্চলে সুবিধা করতে না পেরে লাইসেন্সবিহীন বেনামি কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য গ্রাম ও মফস্বল অঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে দেয়, যার কারণে সাধারণ জনগণ না জেনেই এসব বাজে কোম্পানির পণ্য ক্রয় করছে। ছোট দোকানিরা তো বটেই, শহরের সুপারশপগুলোতেও মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিক্রি হয়। বোতলজাত পানির কোনোটাতেই যেসব উপাদান থাকার কথা লেখা থাকে, তা থাকে না! মোটা ইরি চাল মেশিনে সরু করে মিনিকেট নামে বেশি দামে বিক্রি হয় অথচ বাস্তবে মিনিকেট নামে কোনো ধান বা চাল নেই। প্রকাশ্যেই এমন প্রতারণা চলছে— লাল চালের চাহিদা বাড়ছে, সাদা চাল রঙ করে লাল করা হচ্ছে। দুধে শুধু পানি নয়, শ্যাম্পু জাতীয় পদার্থ মেশানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। ঘি নামে বাজারে যা বিক্রি হয়, তার সঙ্গে আর যাই হোক ঘি’র কোনো সম্পর্ক থাকে না, দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। এক কেজি খেজুর রসের পাটালির দাম ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। এক কেজি চিনির দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। যে খেজুরের রসে পাঁচ কেজি পাটালি হওয়ার কথা, তার সঙ্গে পাঁচ কেজি চিনি মিশিয়ে ১০ কেজি পাটালি তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশের সর্বত্রই এমন চলছে। রাতের ঢাকার বাজারে মহিষ দেখতে পাবেন কিন্তু সকালের বাজারে মহিষের মাংস পাবেন না! সব গরুর মাংস। সব বকরির মাংসই এদেশে খাসির মাংস হয়ে যায়। মেয়াদোত্তীর্ণ মাংসকে তাজা বলে চালানোর জন্য গরুর রক্ত মেশানো হয় মাংসে, আর মহিষের মাংস ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয় গরুর মাংস বলে। [৯]
মাংস উৎপাদনের উদ্দেশ্যে লালন-পালন করা ব্রয়লার মুরগিসহ সব ধরনের পশুকেই নিয়মিতভাবে প্রায় প্রতিদিনই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এবং ক্ষতিকর ফিড খাওয়ানো হয়। ব্রয়লার মুরগি কম-বেশি আমাদের সকলেরই পছন্দ এবং এর যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। কিন্তু ব্রয়লার মুরগির ওজন দ্রুত বৃদ্ধি এবং তাড়াতাড়ি বড় করার জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ব্রয়লার মুরগি খাওয়ার মাধ্যমে এসব ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ক্যানসার তৈরি করতে পারে এবং ভবিষ্যতে মানুষের শরীরে অন্যকোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। একাধিক গবেষণয়া দেখা গেছে, প্রায় ৬৭ শতাংশ ব্রয়লার মুরগির শরীরে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া থাকে যা কোনোভাবেই আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। [১০]
[৭. তানজির মেহেদি, ‘খাদ্যে ভেজাল ঠেকাতে প্রয়োজন সমন্বিত তদারকি’, ৮ জুন ২০১৯, ডয়চে ভেলে; ৮. তানজির মেহেদি, ‘খাদ্যে ভেজাল ঠেকাতে প্রয়োজন সমন্বিত তদারকি’, ৮ জুন ২০১৯, ডয়চে ভেলে; ৯. গোলাম মোর্তোজা, ‘খাদ্যে ভেজাল-বিষ মানদণ্ডে, বাংলাদেশ কী পৃথিবীতে শীর্ষে?’, ১৩ আগস্ট ২০২০, দ্য ডেইলি স্টার.নেট; ১০. ‘গবেষণায় প্রমাণিত, ব্রয়লার মুরগি খেলে হতে পারে ভয়ঙ্কর রোগ’, ১৭ মার্চ ২০১৭, দেশেবিদেশে.কম]
রাজধানীর কারওয়ানবাজার, কাপ্তানবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিন মুরগি আসে কয়েক লাখ। পরিবহন ও তাপমাত্রার কারণে প্রতিদিনই মারা যায় কয়েক হাজার মুরগি। মৃত মুরগিগুলো ফেলে দেয়ার কথা থাকলেও কখনওই ডাস্টবিনে তা দেখা যায় না। তাহলে কোথায় যায় সেগুলো? আসলে মৃত মুরগিগুলো ব্যবহার করা হয় মাছের খাবার হিসেবে, এছাড়া রাজধানীর বেশকিছু রেস্টুরেন্টে এসব মৃত মুরগি সরবরাহ করা হয়, রেস্টুরেন্টের অসাধু ব্যবসায়ীরা চিকেন গ্রিল, শর্মা, ফ্রাই প্রভৃতি প্রস্তুত করতে এসব মরা মুরগি ব্যবহার করে। আর সাধারণ জনগণ দ্বিগুণ টাকা খরচ করে এসব মরা মুরগি খাচ্ছে।
বাংলাদেশের একটি অপরিহার্য ফল কলা। বাংলাদেশে সবরি-চাপা-সাগর কলা উৎপাদন হয়। খুব তাড়াতাড়ি যাতে কলা পেকে যায় তাই ব্যবসায়ীরা কলাতে রাইপেন-ইথোফেন বা কার্বাইড জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করেন। বিশেষ করে সবরি কলায় হরমোন স্প্রে করা হয়, স্প্রে করার আগে কলা পরিষ্কার করা হয় সার্ফ এক্সেল বা শ্যাম্পু দিয়ে। অপরিণত কলা কেরোসিনের স্টোভের হিট দিয়ে নরম করা হয়। কলার বাহ্যিক রঙ ১২ ঘণ্টার মধ্যে হলুদ হয়ে আকর্ষণীয় রঙ ও আকার ধারণ করে। ফলে কলা দেখতে খুব সুন্দর দেখায় এবং কাস্টমাররা এসব কলা কিনে নিয়ে যান। কৃত্রিমভাবে পাকানো কলা খুব দ্রুত পচেও যায়। কলাতে বিষাক্ত যে কেমিক্যাল মিশানো হচ্ছে তা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কেমিক্যাল মিশ্রিত কলা খেয়ে জীবনহানির সম্ভাবনাও বেশি। [১১]
শুধু কলা নয়, আনারসের ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গে সুপারফিক্স নামক একটি হরমোন স্প্রে করা হয়, ফলে আনারস অতি দ্রুত বড় হয়, অপরিণত আনারস ফুলেফেঁপে বেড়ে ওঠে। প্রাকৃতিক নিয়মে পাকার মাস দেড়েক আগে বিষাক্ত রাইপেন-ইথোফেন স্প্রে করা হয়। স্প্রে করার এক থেকে তিনদিনের মধ্যে বাগানের সব আনারস একসঙ্গে পেকে টকটকে রঙ ধারণ করে, তারপর স্প্রে করা হয় ফরমালিন। যা আনারসকে পচন থেকে রক্ষা করে। ফরমালিন স্প্রের পরের দিন বাগানের সব আনারস বাজারে তোলা হয়। কাঁঠাল পাকানো হয় ‘ঘাই’ দিয়ে, ‘ঘাই’ মানে পেরেক জাতীয় কিছু একটা দিয়ে কাঁঠালের বোটার দিক ফুটো করে বিষ প্রয়োগ করা হয়।
ঈশ্বরদীর লিচু বাগান দেখলে যেকোনো মানুষের চোখ জুড়িয়ে যাবে। লিচু বাগানে গেলে লিচুর আকার ও পরিমাণ দেখে বিস্মিত হতে হয়। কিন্তু সেই লিচুতেও পাঁচ থেকে ছয়বার কীটনাশক স্প্রে করা হয়। ঝরে না পড়া, বোটা শক্ত, বৃদ্ধি, রঙ চকচকে করাসহ সবকিছুর জন্য বিষ দেয়া হয়। কাঁচা পেঁপে পাকানো হয় রাইপেন-ইথোফেন স্প্রে করে, বাইরের আবরণ দেখে মনে হয় পাকা, কিন্তু আসলে কাঁচা। পেঁপে বিষ দিয়ে পাকানোয় খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। কোনোটা খাওয়া গেলেও তাতে স্বাভাবিক পুষ্টিগুণ থাকে না। এসব পাকা পেঁপেতে বিষ জাতীয় যা থাকে তা মানবদেহের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর। সবচেয়ে সুস্বাদু ফল হলো আম। কিন্তু সেই আমও হিট দিয়ে পাকানো হয়। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব অপকর্ম চালিয়ে যায়। প্রশাসন কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয় না। ফলে দিনদিন এসব অপকর্ম বেড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিষাক্ত এসব দাহ্য পদার্থ মিশানো ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং সঙ্গে সঙ্গে বমিভাব ও ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কেমিক্যাল মিশ্রিত কোনো খাদ্য গ্রহণ করলে তার প্রভাব পড়ে লিভার ও কিডনির ওপর। ওইসব খাদ্য গ্রহণে তা দাহ্যে পরিণত হওয়ার পর নিঃসরণ ঘটে লিভার ও কিডনির মাধ্যমে। ফলে কেমিক্যাল মেশানো ফল শরীরের এই দুটি অংশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
পরিবেশ বাঁচাও অন্দোলনের (পবা) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে তিন লাখ লোক ক্যান্সারে, দুই লাখ লোক কিডনি রোগে, দেড় লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া গর্ভবতী মা ১৫ লাখ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মদান করেন। ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে হেপাটাইটিস, কিডনি, লিভার ও ফুসফুস সংক্রমিত রোগীর সংখ্যাও দিনদিন বেড়ে চলেছে। [১২]
[১১. ‘কলা পাকাতে ভয়ানক কেমিক্যাল, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিডনি-লিভার’, ১৪ মে ২০১৯, নতুন সময়.কম; ১২. মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ, ‘ভেজাল খাদ্যে প্রাণনাশ’, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, যুগান্তর]
যদিও খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে অনেক আইন আমাদের দেশে বিদ্যমান আছে কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের মাঝে সমন্বয়হীনতা বিদ্যমান। এজন্য সরকার ২০০৫ সালে PFO-১৯৫৯ এর সংশোধন করে এতে ৪ (ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে, যার মাধ্যমে জাতীয় খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ উপদেষ্টা পরিষদ (NFSAC) গঠন করা হয়। যেটি সমন্বয়কারী সংস্থা হিসেবে কার্যকর আছে। কিন্তু NFSAC-এর অনেক দুর্বলতা আছে। যেমন- এতে জনবলের অভাব রয়েছে, এটি কোনো স্বাধীন সংস্থা নয়, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় খাদ্যে ভেজাল সংক্রান্ত বিষয়ে তদারকি করে যা সংশ্লিষ্টদের মাঝে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। এছাড়া ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে, ১৪ বছরের কারাদণ্ডেরও বিধান রয়েছে এ আইনে। ২০১৫ সালে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। মাঝে-মধ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হলেও ভেজালদানকারী চক্রকে দমন করা যাচ্ছে না। [১৩]
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি ও পচা-বাসি খাবার সংরক্ষণের অভিযোগে প্রায়ই বিভিন্ন হোটেল ও খাবারের দোকানকে জরিমানা করতে দেখা যায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার মনিটরিং টিমকে। কিন্তু কিছুদিন পরই আবার সবকিছু আগের মতো হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফরোজা রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রমাণসহ কোনো সুস্পষ্ট অভিযোগ আসলে আমরা সেটি গুরুত্বসহকারে দেখি এবং সে অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে আমাদের নিয়মিত অভিযান চালু রয়েছে।’
শুধু হোটেল বা রেস্তোরাঁই নয় বরং হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের পচা-বাসি খাবার সরবরাহের ঘটনা সম্প্রতি উঠে আসে গণমাধ্যমে। পুরান ঢাকার নয়াবাজারে অবস্থিত মহানগর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি একাধিক রোগী এমন অভিযোগ করেন। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা দিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন মহানগর জেনারেল হাসপাতালটিকে নতুন করে প্রস্তুত করা হয়। চিকিৎসাসেবা দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় লোকবল ও প্রতিদিন একজন রোগীর খাবারের জন্য সরকারের তরফ থেকে ৩০০ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে খাবারের জন্য প্রচলিত বরাদ্দের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি টাকা করোনা রোগীর জন্য বরাদ্দ হলেও পর্যাপ্ত খাবার সঙ্কটের অভিযোগ করেন এখানকার রোগীরা। এছাড়া হাসপাতালটিতে করোনা চিকিৎসার শুরু থেকেই নানা অব্যবস্থাপনা, ডাক্তার-নার্স ও স্টাফ সঙ্কটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। সময়মতো রোগীর খাবার সরবরাহ না করায় সঙ্কট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। মহানগর জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রকাশ চন্দ্র রায় স্বাক্ষরিত করোনা রোগীর পথ্য মেনুতে বলা হয়, সকালের নাশতায় ৩০০ গ্রাম পাউরুটি, একটি ডিম, ৪০০ গ্রাম তরল দুধ, একটি বড় আকারের কলা ও ১০০ গ্রাম চিনি বরাদ্দ রয়েছে। যার মূল্য ধরা হয়েছে ৯৫ টাকা। দুপুর ও রাতের মেনুতে ৩৫০ গ্রাম চাল ও মাছ বা মুরগির মাংস বা খাসির মাংসসহ সবজিতে বরাদ্দ ২০৫ টাকা। কিন্তু রোগীরা জানান, সকালে চার পিস রুটি, এক গ্লাস দুধ ও একটি ডিম পরিবেশন করা হয়। দুপুর ও রাতে ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম ওজনের মাছ বা মাংসসহ সবজি ও পাতলা ডাল দেয়া হয়। এছাড়া ওইসব তরকারি মসলাবিহীন রান্না করার কারণে অধিকাংশ রোগী খেতে পারেন না। নাশতার মধ্যে প্রায়ই পচা ডিম ও বাসি রুটি দেয়ার অভিযোগ করেন তারা। এজন্য অধিকাংশ করোনা রোগী নিজেরাই আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে গিয়ে বাইরে থেকে খাবার কিনে আনেন, যেটি একটি ভয়ঙ্কর বিষয়। [১৪]
শুধু খাবার নয়, জীবনরক্ষাকারী ওষুধেও ভেজাল দেয়া হয়। ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব হওয়ারও খবর পাওয়া যায়। গত বছর এইস সফট, নাপা সফটসহ বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত প্যারাসিটামল জাতীয় ১৬টি ওষুধের নিবন্ধন বাতিল করে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ ছাড়া আরও ৩৫ ধরনের ওষুধের নিবন্ধনও বাতিল করা হয়। এর মধ্যে স্কয়ার, অপসোনিন, বেক্সিমকো, রেনাটা, ইবনে সিনার মতো প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ওষুধও রয়েছে। মূলত প্যারাসিটামল, পায়োগ্লিটাজন ও রসিগ্লিটাজন গ্রুপের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। এসব ওষুধের উৎপাদন, বিপণন, মজুত, বিক্রয়, ক্রয় ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপশি জনসাধারণকে এসব ওষুধ ব্যবহার না করার জন্যও বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়। এসব ওষুধের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করাসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে এসব ওষুধ নিজস্ব চ্যানেলের মাধ্যমে বাজার থেকে প্রত্যাহার করে তার পরিমাণসহ অধিদপ্তরকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়। [১৫]
বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে ফুডপান্ডা বা পাঠাও ফুডের মতো অনলাইন ডেলিভারি সার্ভিস ব্যবহার করে ক্রেতাদের রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার অর্ডারে অভ্যাস তৈরি হলেও শাকসবজি, মাছ-মাংস বা রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই কেনার ক্ষেত্রে অনলাইন ডেলিভারি সিস্টেম ব্যবহারের প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেশ কম ছিল। দেশে গত মার্চ মাসের শেষদিক থেকে জুনের শুরু পর্যন্ত দুই মাসের বেশি সময় করোনার কারণে সাধারণ ছুটি থাকায় অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল এবং মানুষজন ঘরে থাকার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য অনলাইনে অর্ডারের প্রবণতা বেড়ে যায়। অনলাইনে অর্ডারের পরিমাণ অনেক বাড়লেও সেই অনুপাতে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা ও ডেলিভারি দেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে। মানুষের মধ্যে অনলাইনে অর্ডারের চাহিদা বাড়লেও প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনলাইনে এ ধরনের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা দিতে পারছে না বলে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। লকডাউনের আগে শাকসবজি, মাছ-মাংসের মতো পণ্য অনলাইনে অর্ডার দিলে আগে একদিন, খুব বেশি হলে তিনদিন সময় নিত, কিন্তু সাধারণ ছুটির মধ্যে অর্ডার ডেলিভারি করতে ১০ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত সময় নিতে দেখা গেছে। পণ্যের মান নিয়েও রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। তবে অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, করোনার সময় হঠাৎ করেই অনলাইনে অর্ডারের পরিমাণ অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায়, জনগণের চাহিদা মতো সেবা দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এছাড়া সক্ষমতার ব্যাপারটিও বিদ্যমান। পণ্য সংকট আরও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ; সাধারণ ছুটির সময় মানুষের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অতিরিক্ত পরিমাণে কিনে মজুত করে রাখার প্রবণতার কারণে পণ্যের স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে অন্যদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা যায়নি।
বাংলাদেশে অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্য এখনও পুরোপুরি বিস্তার লাভ করতে পারেনি। দেশে করোনার কারণে সৃষ্ট উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জনসাধারণের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও জরুরি ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করছে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। ই-ক্যাবের মাধ্যমে চালডালডটকম, দারাজ, ইভ্যালি, ফুডপান্ডা, সহজ, পাঠাও, সেবা এক্সওয়াইজেড, ডায়বেটিক স্টোর, সিন্দাবাদ, পিকাবো, মিনা ক্লিক, জাদরো ও ঘরে বাজারসহ বেশ কয়েকটি ই-কমার্স কোম্পানি তাদের জরুরি নিত্যপণ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ই-ক্যাবের মাধ্যমে জরুরি লজিস্টিক সেবা বিদ্যুৎ, ই-কুরিয়ার, পেপারফ্লাই, সুন্দরবন, রেডেক্স, স্টিডফাস্ট ও সি এক্সপ্রেস অব্যাহত রাখছে। ঢাকায় যদি নিউ ইয়র্কের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, অর্থাৎ সবাইকে ঘরে থাকতে হয় এবং দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে প্রতিদিন প্রায় এক লাখের মতো মানুষকে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে শাকসবজি, চাল-ডাল, মাছ-মাংসের মতো পণ্য সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের সবগুলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মিলে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার মানুষের কাছে দিনে পণ্য পৌঁছে দিতে পারবে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘চালডালের’ চিফ অপারেটিং অফিসার জিয়া আশরাফ এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘একটা ই-কমার্স স্টার্ট-আপকে বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে চায় না বা সহায়তা করতে চায় না। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের প্রয়োজনীয় ফান্ডিং পায় না উন্নতি করার জন্য। অর্থায়নের সহজলভ্য ব্যবস্থা থাকলে এবং সময় মতো ফান্ডিং পেলে চাহিদা তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করে পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হতো, সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না।’
নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে ২০১৮ সাল থেকে ফেব্রুয়ারির দুই তারিখকে ‘নিরাপদ খাদ্য দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘খাদ্যকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সকলের। উৎপাদক থেকে শুরু করে ভোক্তা এবং প্রক্রিয়াজাতকারী সকলের সচেতনতা ও সাবধানতা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা যার যার অবস্থান থেকে যে দায়িত্বটুকু আছে তা পালন করলে এ সমস্যার সমাধান সহজ।’ [১৬]
[১৩. প্রফেসর ড. এম. এ রহিম, ড. মো. শামছুল আলম, ‘বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য’, কৃষি তথ্য সার্ভিস; ১৪. শামীম হাওলাদার, ‘করোনারোগী নিজেই দোকানে যাচ্ছেন, খাবার সংগ্রহ করছেন’, ১৫ জুন ২০২০, নয়াদিগন্ত; ১৫. ‘নাপা, এইসসহ প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ নিষিদ্ধ!’, ৪ জুন ২০১৯, আমাদের সময়.কম; ১৬. ‘নিরাপদ খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থাপনা’, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বাংলাদেশের খবর]
বর্তমানে দেশে খাদ্যের ভেজাল প্রতিরোধের একমাত্র সমাধান হচ্ছে- ভেজালকারীরা যেসব কারণে প্রাণঘাতী রাসায়নিক ব্যবহারের আশ্রয় নিচ্ছে সেসব কারণ অনুসন্ধান এবং তা সমাধানের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে খাদ্যের পচন রোধ এবং দীর্ঘায়িত সংরক্ষণের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বিশ্বজুড়ে খাদ্যের বাজারজাতকরণে স্বাস্থ্যসম্মত নানাবিধ পদ্ধতির চর্চা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য প্রয়োগিক গবেষণার দ্বারা স্বল্পতম সময়ে প্রচলন করা সম্ভব। আধুনিক প্রযুক্তি এবং কারিগরি ব্যবস্থাপনার দ্বারা ভেজালকারীদের চাহিদা মোতাবেক টাটকা ফলমূল, শাকসবজি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব। যার দ্বারা ফরমালিনসহ অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার কমে আসবে। খাদ্যের ভেজাল রোধে নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ অনুসরণ করা যেতে পারে-
১. সরকারের খাদ্য অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ— এসব প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে কাজ করার প্রবণতা তৈরির জন্য সমন্বয় সাধন।
২. অনলাইন খাদ্য সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক নীতিমালা প্রয়োজন। অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।
৩. ভেজালবিরোধী অভিযানকে আরও কার্যকর করার লক্ষ্যে এর পরিধি বাড়াতে হবে এবং সারা বছর এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। খাদ্যে ভেজালকারীদের কঠোর শাস্তি ও জেল-জরিমানা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ভেজালবিরোধী মনিটরিং টিমকে আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং ভেজাল শনাক্তকরণে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতে হবে।
৫. খাদ্যে ক্ষতিকর কেমিক্যালসহ সকল প্রকার রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার বন্ধে আইন জোরদার করতে হবে এবং ক্ষতিকর পদার্থ সরবরাহ ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ব্যতীত যার-তার কাছে রাসায়নিক পদার্থ বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে।
৬. জনগণ ও ব্যবসায়ী সকলকে সচেতন করতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে হবে। এজন্য সরকারের বিশেষ আর্থিক সহয়তা জরুরি।
৭. নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে পরীক্ষাগারের গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্তু আমাদের দেশে ভালো কোনো পরীক্ষাগার নেই। যে কয়েকটি রয়েছে, তাদেরও সক্ষমতার অভাব রয়েছে। সুতরাং পরীক্ষাগার বাড়াতে সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন।
৮. দেশে খাদ্যের ভেজালরোধে বিদ্যমান আইনে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইনগুলো সংস্কারের অভাবে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। খাদ্য তদারকিতে সরকারি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও তাদের অনেক প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা আছে। নিজেদের মধ্যে রয়েছে সমন্বয়ের অভাবও। আবার এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে অর্পিত দায়িত্ব পালনে যেমন অবহেলার অভিযোগ রয়েছে, তেমনি তারা নিজেরাও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। খাদ্যে ভেজাল রোধে এসব সমস্যার সমাধান অতীব জরুরি।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
অর্গানিক খাদ্য: বাংলাদেশে বাড়ছে চাহিদা কিন্তু মান নিশ্চিত হচ্ছে কী?
-
ফুল চাষে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
-
চন্দ্রমল্লিকা চাষের নিয়ম-কানুন
-
আলু থেকে জন্ম নেবে গোলাপ গাছ
-
সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা
-
জারবেরা চাষে কোটিপতি আনোয়ার
-
এই ফুলগাছগুলো লাগাতে পারেন
-
ট্রে আর টবে ফুল চাষ করে মাসে ৫০ হাজার আয় করছেন যে যুবক
-
বেকারত্ব দূর করতে ফুল চাষ
-
টবে ফুলের চাষ কেন করবেন
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন