পরিবেশ
করোনা মোকাবিলায় পতিত জলাশয় হতে পারে অর্থনৈতিক হাতিয়ার
লেখক
জাগোনিউজ২৪.কমবৈশ্বিক করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় দেশে পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য উৎপাদন এবং প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বর্তমান সরকারের মূল নির্দেশনা হলো ‘দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি পতিত না রেখে উৎপাদনশীল কাজে লাগাতে হবে’। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে মৎস্য অধিদফতরাধীন চলমান ‘জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক’ প্রকল্পটি অক্টোবর, ২০১৫-জুন, ২০২২ মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সারাদেশের ৬১টি জেলার ৩৪৯টি উপজেলায় প্রায় ২,৬০০.০ হেক্টর আয়তনের পতিত বা অব্যবহৃত ভরাট হয়ে যাওয়া বিভিন্ন শ্রেণির জলাশয় (পুকুর/দিঘি/মরানদী/বরোপিট/বিল/হাওড় ইত্যাদি) পুনঃখননের মাধ্যমে মৎস্যচাষ উপযোগী সংস্কার করে স্থানীয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর মাছ চাষের আওতায় আনা।
বিবেচ্য প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য দুটি, তা হলো ১. বছরে মোট ১০,২৩৪.০০ মেট্রিক টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদন (প্রায় ৪.০ মেট্রিকটন/হেক্টর/বছর) এবং ২. মোট ১৮,২০০ জন প্রান্তিক মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি (৭-১০ জন/হেক্টর)।
এছাড়াও সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিতকরন, সরকারি খাস জলাশয়ে প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ, ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণসহ অনেক লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রকল্পটি গৃহীত। উন্নয়নকৃত জলাশয়ের পাড়/ডাইকগুলোতে শাক-সবজি, নেপিয়ার ঘাস ও ফলদবৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিগত জুন/২০২০ পর্যন্ত প্রায় ১,৩০০ হেক্টর জলাশয় পুনঃখনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং সংস্কারকৃত উক্ত জলাশয় হতে বর্তমানে বাৎসরিক প্রায় ৬,৫০০.০ মেট্রিকটন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদনসহ (৫.০ মেট্রিকটন/হেক্টর/বছর) এবং প্রায় ৯,১০০ জন প্রান্তিক মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে (৭ জন/হেক্টর)। এছাড়াও পরোক্ষভাবে আরো দ্বিগুণেরও বেশি পরিমাণ মানুষ আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই চলমান জলাশয় সংস্কার প্রকল্পটি করোনার প্রভাব মোকাবেলায় প্রধান লক্ষ্য পূরণে দেশে অতিরিক্ত মৎস্য উৎপাদন এবং গ্রামীণ পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার গুরুত্ব অনুধাবন করে করোনা মহামারি মোকাবেলার অংশ হিসাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নির্দেশনায় এবং মৎস্য অধিদফতরের নিবিড় তত্ত্বাবধানে জলাশয় সংস্কার প্রকল্পের অর্থায়নে বর্তমান ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রায় ১,১০০.০ হেক্টর জলাশয় পুনঃখনন করে গঠিত সুফলভোগী প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাধ্যমে মৎস্য চাষের আওতায় আনার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে (কর্মসংস্থান সৃষ্টি- প্রতি হেক্টরে ৭-১০ জন ও অতিরিক্ত মৎস্য উৎপাদন- ৪ মেট্রিকটন/হেক্টর/বছর) ইতিমধ্যে নির্বাচিত ভরাট হয়ে যাওয়া বিভিন্ন শ্রেণির পতিত জলাশয় পুনঃখনন কাজ মাঠ পর্যায়ে প্রায় সমাপ্ত অবস্থায় আছে। দেশের ভয়াবহ করোনা মহামারিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে এ ব্যাপক জলাশয় পুনঃখনন কার্যক্রম বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন সংশ্লিষ্ট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, সিনিয়র উপজেলা/উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, বিভাগীয় সহকারী প্রকৌশলী, জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীগণ।
পুনঃখনন কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণে নিবিড় মনিটরিং কাজে নিয়োজিত আছেন ৮ বিভাগের সুযোগ্য উপপরিচালক মহোদয়গণ। এছাড়াও কেন্দ্রীয়ভাবে মৎস্য অধিদফতর এবং প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ টিম চলমান পুনঃখনন কার্যক্রম পরিদর্শন করছেন। সর্বপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্দেশিত প্রতিটি পুনঃখনন কাজের স্বাক্ষী সংরক্ষণ, অনুমোদিত চূড়ান্ত পরিমাপ কমিটি কর্তৃক সম্পাদিত কাজের হিসাব নিরুপন এবং গঠিত সুফলভোগী গ্রুপের নিকট পুনঃখননকৃত জলায়শটি মাছ চাষের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর কার্যক্রম জলাশয় পুনঃখনন কাজ শতভাগ স্বার্থকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
এখানে বিশেষ করে উল্লেখ করা প্রয়োজন বিবেচ্য প্রকল্পভুক্ত প্রায় সকল পুনঃখনন উপযোগী জলাশয়ের মালিকানা ভুমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়গণ এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো), সঙ্গত কারণেই পুনঃখননের জন্য তাদের অনাপত্তি পত্রের প্রয়োজন হয়। মৎস্য অধিদফতরের এ ব্যাপক পুনঃখনন কার্যক্রমে করোনা মোকাবেলার অংশীদার হিসেবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং বাপাউবো এর সহায়তা ছিল অত্যন্ত আন্তরিক।
সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সংস্কারকৃত জলাশয়গুলোর উৎপাদনশীলতা প্রায় ৮ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ইজারা মূল্য কয়েক গুণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সরকারের রাজস্ব আয় পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়েছে, জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা তৈরি হয়েছে, পরিবেশের উন্নয়ন হয়েছে, প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বেহাত হওয়া সরকারি সম্পদ পুনরুদ্ধার হয়েছে, সম্পদেও সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে, সর্বপরি প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে।
সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত জলাশয় সংস্কার প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমান ২০২০-২১ অর্থবছর ব্যাপকভিত্তিক জলাশয় পুনঃখনন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি ৯০% এর অধিক হবে বলে আশা করা যায়। ফলে উন্নয়নকৃত জলাশয় হতে বছরে প্রায় ৯,৬০০.০ মেট্রিকটন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদনসহ ১৬,৮০০ জন গ্রামীণ মানুষের সরাসরি স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
লক্ষ্যণীয় বিষয়, সাম্প্রতিক করোনা মহামারি প্রাদুর্ভাবে শহরকেন্দ্রিক ব্যাপক সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে নিজ গ্রামে স্থানান্তর হয়েছে। সেপ্রেক্ষিতে ঐসকল বেকার স্থানান্তরিত মানুষের জন্য জলাশয় পুনঃখনন কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে (১,১০০.০ হেক্টর জলাশয় পুনঃখননে ১.১০ কোটি ঘন মিটার মাটি উত্তোলিত হয়েছে)। বর্তমানে দেশে গ্রামীণ অর্থনীতি সচল থাকার জন্য সরকারের গৃহীত অন্যান্য পদক্ষেপের সাথে মৎস্য অধিদফতরের জলাশয় সংস্কার প্রকল্পের পুনঃখনন কার্যক্রম ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।
প্রকল্পটির আরো কয়েকটি সফল দিক হলো গঠিত সুফলভোগী গ্রুপের সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং উদ্ভুদ্ধকরণ কর্মসূচির আওতায় সংস্কারকৃত জলাশয়ে প্রদর্শনী মৎস্য খামার স্থাপন। মৎস্য চাষের আধুনিক কলাকৌশলের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান ও প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে ফলাফল প্রদর্শন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকে অতিক্রম করতে সাহায্য করেছে (৫.০ মেট্রিকটনটন/হেক্টর/বছরের বেশি হয়েছে)।
প্রকল্পের মধ্যবর্তী মূল্যায়ন প্রতিবেদনে গৃহীত কার্যক্রমের উপর অনেক ইতিবাচক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এবং দেশব্যাপী বৃহত্তর পরিসরে চাহিদার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত মৎস্য উৎপাদন ও গ্রামীণ পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ভরাট জলাশয় পুনঃখননের মাধ্যমে মৎস্য চাষের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি কর্তৃক নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষা প্রতিবেদনে সংস্কারকৃত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ৪.০-৬.০ মেট্রিকটন/হেক্টর/বছর এবং ১৫,০০০-২০,০০০ জনমানুষের সরাসরি গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সমপরিমাণ মানুষের পরোক্ষ কর্মসংস্থানের ফলে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে বলে মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে।
-
করোনা মোকাবিলায় পতিত জলাশয় হতে পারে অর্থনৈতিক হাতিয়ার
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
-
নিপাহ্ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
-
ফুল চাষে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
-
চন্দ্রমল্লিকা চাষের নিয়ম-কানুন
-
আলু থেকে জন্ম নেবে গোলাপ গাছ
-
সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা
-
জারবেরা চাষে কোটিপতি আনোয়ার
-
এই ফুলগাছগুলো লাগাতে পারেন
-
ট্রে আর টবে ফুল চাষ করে মাসে ৫০ হাজার আয় করছেন যে যুবক
ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।
২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।
৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।
৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।
৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।
৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।
৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।
১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।
১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।
১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷
বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
অশ্বগন্ধা –
বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
শতমূলী –
শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
যষ্টিমধু –
জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী –
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি –
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷
পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।
মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)
কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।
রোপন (Planting)
দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।
ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।
মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।
গাছের পরিচর্যা (Caring)
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন