জার্মানি আর আয়ারল্যান্ড সম্প্রতি বেশ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জানিয়েছিল, তারা সাফল্যের সঙ্গে করোনাভাইরাস ট্রেসিং অ্যাপ চালু করতে পেরেছে।
কিন্তু এই অ্যাপ যে আসলে কাজ করছে, এটি দিয়ে লোকজনকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সম্পর্কে যে সতর্ক করে দেয়া যায়, তার কী প্রমাণ আছে?
আসলে কোন প্রমাণ এখনো নেই। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষার কথা ভেবে এই অ্যাপগুলো যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, তাতে করে আসলে কোনদিনই জানা যাবে না, এই অ্যাপগুলো আসলে কতটা কাজ করছে।
ব্রিটিশ সরকার ইংল্যান্ডের জন্য এমন একটি কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ চালু করতে চেয়েছিল, যেটির সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে এক জায়গায় সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু গত মাসে ব্রিটিশ সরকার সেই পরিকল্পনা বাদ দেয়। পরিবর্তে তারা এখন অ্যাপল-গুগল টুলকিটের ভিত্তিতে একটি ডিসেন্ট্রালাইজড বা বিকেন্দ্রীকৃত অ্যাপ তৈরির পথে এগুচ্ছে।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে যাদের উদ্বেগ আছে, তারা এধরণের কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপের পক্ষে। কারণ এ ধরণের অ্যাপে কোন ব্যক্তি কার সংস্পর্শে এলো, সেই তথ্য তাদের স্মার্টফোনেই সংরক্ষিত থাকবে, কোন কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারে নয়। এর ফলে অ্যাপ ব্যবহারকারীরা অজ্ঞাতপরিচয় থাকতে পারবেন।
ব্রিটিশ সরকার বলছে, এরকম নতুন একটি অ্যাপ খুব দ্রুত তৈরি করা যাবে না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত সপ্তাহেই পার্লামেন্টে বলেছিলেন, বিশ্বের কোন দেশেই আসলে ঠিকমত কাজ করে এমন কোন কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ নেই।
তবে ব্রিটেনে বিরোধী দলের নেতা, কিয়ের স্টার্মার সাথে সাথে জবাব দিয়ে বলেছিলেন, জার্মানির এরকম অ্যাপ আছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে একই কথা বলেছিলেন আরও অনেকে।
জার্মানির করোনাভাইরাস অ্যাপটি দেশজুড়ে চালু করা হয় গত জুন মাসে। এর কয়েকদিন আগে রবার্ট কচ ইনস্টিটিউট এটির অগ্রগতি সম্পর্কে একটি আপডেট দেয়। এতে তারা বেশ উল্লাস প্রকাশ করে বলেছিল, সারাদেশের প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ এই অ্যাপটি তাদের স্মার্টফোনে ইনস্টল করেছে।
অ্যাপটির ডেভেলপার তখন এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, “শুরুতেই এরকম ব্যাপক সাড়া এই অ্যাপটির ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ এবং গ্রহণযোগ্যতারই প্রমাণ।”
কিন্তু মনে রাখতে হবে জার্মানিতে ৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। কাজেই এরকম কোন অ্যাপ যদি সফল হতে হয়, জনসংখ্যার অন্তত অর্ধেক মানুষকে সেটি ব্যবহার করতে হবে।
রবার্ট কচ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর লোথার ওয়েইলার বলেছিলেন, ”অ্যাপটি কাজ করছে।” তিনি আরও জানিয়েছিলেন, এই অ্যাপ ব্যবহারকারী প্রায় ৫০০ জন মানুষ করোনাভাইরাস টেস্ট করে পজিটিভ বলে প্রমাণিত হয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, এই অ্যাপ ব্যবহার করে অন্যদেরকে সতর্ক করে দেয়ার সুযোগ আছে।
তবে এরপর তিনি আবার যোগ করেছিলেন, “আমরা বলতে পারবো না ঠিক কতজন মানুষকে সতর্ক করা গেছে, কারণ এই অ্যাপটি বিকেন্দ্রীকৃত ধারার ভিত্তিতে কাজ করে।”
এর মানে হচ্ছে, আমরা আসলে জানি না, এই সফটওয়্যার তার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ঠিকমত করতে পারছে কি না।
কোন অ্যাপ কতটা সঠিকভাবে কাজ করছে তা জানতে হলে এটা বোঝা দরকার অ্যাপটি কতটা ভুল পজিটিভ বা ভুল নেগেটিভ সংক্রমণের বার্তা পাঠাচ্ছে। অর্থাৎ যখন কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে আসছে, তখন এই অ্যাপটি তাকে সতর্ক করে দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কি না। অথবা যারা আসলে সংক্রমণের শিকার কারও সংস্পর্শে আসেনি, তাদের কাছে আবার ভুলে সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে কি না।
এটি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক গবেষণায় দেখা গেছে দুজন মানুষের মধ্যকার দূরত্ব মাপার ক্ষেত্রে ব্লুটুথ খুব নির্ভরযোগ্য নয়।
রবার্ট কচ ইনস্টিটিউট বিবিসিকে জানিয়েছে, তাদের অ্যাপ কতটা ভালোভাবে কাজ করছে সেই উত্তর তারাও জানে না। কারণ অ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য তাদের স্মার্টফোনেই সংরক্ষিত থাকছে, সেই তথ্য ইনস্টিটিউটের পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
জার্মানিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব যাদের ওপর, সেই ম্যানুয়্যাল কন্ট্যাক্ট ট্রেসাররা কি এ সম্পর্কে কোন ধারণা দিতে পারে কত লোক আসলে এই অ্যাপের মাধ্যমে সতর্কবার্তা পেয়েছে?
এ প্রশ্নের উত্তরও ‘না।’ কারণ এদের পরিচালনা করে স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ। তারা তাদের তথ্য কারও সঙ্গে শেয়ার করতে রাজী নয়।
রবার্ট কচ ইনস্টিটিউট আশা করছে, মধ্য বা দীর্ঘ মেয়াদে এই অ্যাপটির কার্যকারিতা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার ফল থেকেই জানা যাবে। কিন্তু কিভাবে সেটা করা হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
সুইজারল্যান্ডেও এই একই সমস্যা।
দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, তারাও অ্যাপল এবং গুগলের মডেল ব্যবহার করে তাদের ‘সুইসকোভিড’ অ্যাপ তৈরি করেছেন।
“আর এ কারণে পরিসংখান পেতে আমাদেরও একই ধরণের সীমাবদ্ধতা আছে।”
‘ইতিবাচক মনে হচ্ছে’
আয়ারল্যান্ডের অ্যাপটি তৈরি করেছে নিয়ারফর্ম নামের যে প্রতিষ্ঠান, তার প্রধান সিয়ান ও মাইডিন।
দু সপ্তাহ আগে তারা অ্যাপটি চালু করেন। খুব দ্রুতই এটি স্মার্টফোনে ইনস্টল করেছেন ১৩ লাখ মানুষ। আয়ারল্যান্ডের মোট স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ।
নিয়ারফর্ম এখন উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্যও একই ধরণের একটি অ্যাপ তৈরি করছে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা এনএইচএসের অ্যাপ প্রকল্প সমস্যায় পড়ার পর উত্তর আয়ারল্যান্ড নিজেদের মতো করে অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেয়।
মিস্টার ও মাইডেন আশা করছেন ব্রিটেনের অন্যান্য জায়গায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে তারা এই একই অ্যাপু চালু করতে পারেন।
বিবিসির কাছে তিনি দাবি করেন, তারা এরই মধ্যে সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন।
“আমরা এমন এক সমাধান খুঁজে বের করেছি, যেটা সবার জন্য কাজ করছে। এটা পরীক্ষিত, যাচাই করা। কোন সরকার চাইলে আমরা এক মাসের মধ্যে এই তৈরি করে দিতে পারি।”
এরকম অ্যাপের কার্যকারিতা নিয়ে যেসব সংশয়, সেগুলো তিনি উড়িয়ে দিলেন।
“আমাদের কাছে সব তথ্য এখনো নেই। তবে যেসব তথ্য প্রাথমিক তথ্য আমরা পেয়েছি, তা বেশ ইতিবাচক।
জার্মানি আর সুইজারল্যান্ডের অ্যাপ যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, আয়ারল্যান্ডের অ্যাপটিও সেই একইভাবে তৈরি। কাজেই এই অ্যাপ থেকে কেন অনেক বেশি তথ্য পাওয়া যাবে সেটি পরিস্কার নয়।
তবে একটা ছোট্ট পার্থক্য আছে। আয়ারল্যান্ডের অ্যাপটি ইনস্টল করার সময় এটি ব্যবহারকারীদের কাছে জানতে চায়, তারা কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপের কার্যকারিতার জন্য কিছু বেনামি মেট্রিক্স ব্যবহার করতে দিতে রাজী আছে কি না।
মিস্টার ও মাইডেন বলছেন, কোন ক্ষেত্রে অ্যাপটি সতর্ক করে দিতে ব্যর্থ হলে বা ভুল করলে সেটি নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই।
কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ নিয়ে সমস্যা
বিশ্বের অন্য কিছু দেশেও কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল:
জাপানের কনট্যাক্ট কনফার্মিং অ্যাপ (কোকোয়া) ডাউনলোড করার হার কমে এসেছে। সোমবার পর্যন্ত এটি ডাউনলোড করা হয় ৭৭ লাখ বার। জাপানের জনসংখ্যা হচ্ছে ১২ কোটি ৬০ লাখ। এই সফটওয়্যারে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল, যার ফলে করোনাভাইরাস টেস্ট পজিটিভ আসলে সেটি এই অ্যাপে রিপোর্ট করা যাচ্ছিল না। পরে নতুন একটি ভার্সানে এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। কিন্তু জাপান টাইমস বলছে, তারপর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ২৭টি করোনাভাইরাস পজিটিভ কেস এই অ্যাপের মাধ্যমে জানা গেছে।
ইটালির কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপের নাম ইমিউনি। ৪২ লাখ ইতালিয়ান এপর্যন্ত অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন। ইতালির জনসংখ্যা প্রায় ছয় কোটি। সরকার যা আশা করেছিল, তার চেয়ে অনেক কম সাড়া পাওয়া গেছে অ্যাপটি ব্যবহারে। ইতালিতে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় অ্যাপটি ব্যবহারে আগ্রহ কমে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাপটির নাম কোভিডসেইফ। কিন্তু এই অ্যাপ দিয়ে এখনো পর্যন্ত এমন কোন করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা জানা যায়নি, যেটি কিনা অন্যান্য কনট্যাক্ট ট্রেসিং প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইতোমধ্যে জানা যায়নি। এই অ্যাপ নিয়ে বেশ কিছু সমস্যার কথা রিপোর্ট করছে জেডনেট নামের একটি ওয়েবসাইট। এক সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই অ্যাপটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৪ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার।
ফ্রান্সের কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপের নাম স্টপকোভিড। ফ্রান্সের ডাটা বিষয়ক ওয়াচডগ সংস্থা সোমবার সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে এই অ্যাপটিতে কিছু পরিবর্তন আনার জন্য, যাতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিষয়ক আইনের সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী এটি ব্যবহার করছে ২৩ লাখ মানুষ।
জার্মানির অ্যাপটি চালু করা হয় জুনের মাঝামাঝি
আয়ারল্যান্ডের অ্যাপটি খুবই সফল বলে দাবি করা হচ্ছে
কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপের কার্যকারিতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন
জলিল মিয়া। জীবনের পুরো সময়টা কাটিয়েছেন জেলের কাজ করে। কখনও অন্যকোনো কাজ শেখার চেষ্টাটুকুও করেননি। ভেবেছিলেন এই পেশা দিয়েই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন।
কিন্তু জীবনের এই পড়ন্ত সময়ে এসে পড়েছেন নানা বিড়ম্বনায়। সাংসারিক বিড়ম্বনার পাশাপাশি পড়েছেন নদীতে ইলিশ না পাওয়ার বিড়ম্বনায়। আর এর মূল কারণ হচ্ছে মেঘনার বুকে ইলিশ না পাওয়া।
পটুয়াখালী ও বরিশালে প্রচুর ইলিশ পাওয়া গেলেও চাঁদপরের মেঘনায় আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। আর তাই হতাশায় ভুগছেন স্থানীয় আড়তদার ও জেলেরা।
মঙ্গলবার দুপুরে হরিনা এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নদীতে তেমন একটা ইলিশ নেই। জেলেরা নদীতে সারাদিন পড়ে থেকেও নৌকার জ্বালানি খরচ পর্যন্ত উঠাতে পারছেন না।
শফিক, হারুন, মোতালেবসহ বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানায়, নদীতে যে পরিমাণ মাছ থাকার কথা তা একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। নদীতে মাছ না থাকায় সংসার চালাতেও কষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় জেলে জসিম উদ্দিন জানান, ভোর ৪টায় নদীতে গেছিলাম। এখন বেলা ১১টা বাজে আসলাম। কিন্তু কোনো মাছের দেখা পাইনি। হাজার দু’য়েক টাকার মাছ পাইছি। এত কম মাছ ধরলে আমরাতো চলতে পারব না।
এ বিষয়ে হরিনা ঘাটের আড়তদার হারুন খাঁ জানান, এখন মাছের মৌসুম কিন্তু জেলেরা নদীতে মাছ পাচ্ছে না। কিছুদিন পর আবার মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম চালু হবে তাই আমরা খুব চিন্তায় আছি। জেলেরা নদীতে মাছ না পাওয়ায় তাদের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি আমাদেরও। তাছাড়া আমাদের এখন অলস সময় কাটাতে হচ্ছে।
হরিনা ঘাটের আরেক আড়তদার আব্দুল কাদের ছৈয়াল জানান, জেলেরা এখন নদীতে তেমন একটা মাছ পাচ্ছে না। তাই আমরাও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এই নিয়ে আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি কারণ আমরা জেলেদেরকে অনেক টাকা দাদন দিয়ে রাখি। নতুন করে আগামী বছরের জন্য আবার দাদনের সময় এসে গেছে। এখন কীভাবে কী করব তাই বুঝতে পারছি না।
মাছ কম পাওয়ার বিষয়ে চাঁদপুরের ইলিশ গবেষক ডাক্তার আনিসুর রহমান জানান, যেহেতু দক্ষিণাঞ্চলে যেমন পটুয়াখালী, ভোলা, চরফেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে সেহেতু চাঁদপুরে অল্প সময়ের মধ্যেই মাছ ধরা পড়বে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
ব্যাটেল অফ ব্রিটেন শুরু হওয়ার ৮০ বছর পূর্তি হলো এই বছরের ১০ই জুলাই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় ব্রিটেনের রয়্যাল এয়ারফোর্স এবং নাৎসি জার্মানির বিমান বাহিনীর মধ্যে আকাশে ওই যুদ্ধ হয়েছিল।
১৯৪০ সালের অক্টোবরে ওই যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল ব্রিটেন। অবশেষে হামলাকারী নাৎসী বিমানগুলোকে ডেকে পাঠাতে বাধ্য হয় হিটলার।
এই যুদ্ধে বিজয়ের জন্য ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী নির্ভর করেছিল অসাধারণ নকশার যুদ্ধবিমানগুলোর ওপরে। আর তার অন্যতম স্পিটফায়ার যুদ্ধবিমানের নকশায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলে কিশোরী এক স্কুল ছাত্রী।
কে ছিলেন হ্যাজেল হিল?
হ্যাজেল হিল ছিলেন যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ১৩ বছরের এক বালিকা।
তার পিতা, ফ্রেড হিল ঊনিশশো ত্রিশের দশকে বিমান মন্ত্রণালয়ে চাকরি করতেন।
রাজকীয় বিমান বাহিনীর (আরএএফ) সব ধরণের কর্মকাণ্ড তদারকি করতো এই মন্ত্রণালয়।
সেই সময় রাজকীয় বিমান বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য নানা ধরণের বিমান তৈরি করা হচ্ছিল, তার একটি ছিল ‘স্পিটফায়ার’ যুদ্ধবিমান।
প্রথমদিকের বিমানগুলো শত্রু বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য ততোটা কার্যকর ছিল না। পরবর্তীতে সেই বিমানের উন্নত নতুন সংস্করণ তৈরি করা হয়।
সেসব সংস্কারের অন্যতম ছিল যে, বিমানে কতগুলো আগ্নেয়াস্ত্র সংযুক্ত করা হবে।
প্রথমে পরিকল্পনা করা হয়েছিল যে, বিমানে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র থাকবে। তবে হ্যাজেলের পিতা, ফ্রেড হিল ভাবলেন, সেখানে আটটি আগ্নেয়াস্ত্র সংযুক্ত করা উচিত।
কিন্তু ঠিক কীভাবে বিমানে সেগুলো বিন্যাস করা হবে, অংকের সেই হিসাব তিনি করে উঠতে পারছিলেন না।
তখন তিনি বাড়িতে ফিরে গেলেন এবং তার কিশোরী মেয়ে হ্যাজেলকে ডেকে সমস্যাটির সমাধান করতে বললেন, যে মেয়ে অংকে তুখোড় ছিল।
তখন অনেকে মনে করতেন, এই যুদ্ধবিমানগুলোয় আটটি করে আগ্নেয়াস্ত্র সংযুক্ত করা হলে বিমানের জন্য সেটা বেশি হয়ে যাবে এবং ওজনের কারণে বিমানগুলো উড়তে পারবে না।
কিন্তু হিসাব কষে দেখা গেল, ব্রিটিশদের যুদ্ধ জয়ের জন্য সেটা আসলে যথার্থ ছিল।
বিমানে বেশি আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কারণে তাদের যে বিশেষ সক্ষমতার দরকার ছিল, সেটা তার পেয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর বিজয়ে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
হ্যাজেলের গাণিতিক হিসাব-নিকাশে তার পিতার সেই সমাধান ছাড়া যুদ্ধের ফলাফল হয়তো ভিন্নরকম হতে পারতো।
হ্যাজেলের নাতনি ফেলিসিটি বেকার বলেছেন, তার দাদী গল্প করতেন যে তিনি বিমান নিয়ে কাজ করেছিলেন, কিন্তু শুধুমাত্র কিছুদিন আগে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, সেটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তিনি বলছেন, ”তার নাতনি হিসাবে আমি সবসময়েই গর্ব করে যাবো। আমার এখন আরও বেশি ভালো লাগছে যে, তার সেই অবদান ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীও স্বীকৃতি দিয়েছে। ”
দেশে বাল্ব পেঁয়াজের যথেষ্ট ঘাটতি থাকার কারণে পুরো বছর চাহিদা মেটানো সম্ভব বারি উৎপাদিত ‘বারি পাতা পেঁয়াজ-১’ এর মাধ্যমে। এটি বসতভিটাসহ মাঠ পর্যায়ে সারাবছর চাষ করা সম্ভব। বিদেশি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশে চাষ উপযোগী ‘বারি পাতা পেঁয়াজ-১’ নামক উন্নত জাতটি ২০১৪ সালে মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, বগুড়া কর্তৃক কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য উদ্ভাবন করা হয়।
গাজীপুর আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার জানান, পাতা পেঁয়াজ বাসাবাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে টবেও চাষ করা যায়। আশা করা হচ্ছে এ জাতের পাতা পেঁয়াজ চাষের মাধ্যমে একদিকে সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের পরিবর্তেও এটি ব্যবহার করা যাবে। অন্যদিকে সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের সঙ্গে সংকরায়নের মাধ্যমেও রোগমুক্ত উন্নত জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।
তিনি জানান, পাতা পেঁয়াজ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসলাজাতীয় ফসল। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তা খুবই জনপ্রিয় মসলা। দেশভেদে এর নামের বৈচিত্র্যতা রয়েছে। এটি Japanese bunching onion, Salad onion, Welsh onion, Ceboule ইত্যাদি নামেও পরিচিত।
পাতা পেঁয়াজের উৎপত্তি স্থান এশিয়ায় (সাইবেরিয়া, চীন)। পাতা পেঁয়াজের প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলো হলো- জাপান, তাইওয়ান, শ্রীলংকা, ভারত, কোরিয়া, চীন, ইউরোপ, আমেরিকা ও সাইবেরিয়া। গুরুত্ব বিবেচনায় জাপানে এ ফসলটি বাল্ব পেঁয়াজের পরে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে। উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের বসতভিটায় ব্যাপকভাবে এ পেঁয়াজের চাষ করে। এ প্রজাতির গাছের মূলত দুটি অংশ-সবুজ পাতা ও সাদা মোটা সিউডোস্টেম।
এ জাতীয় পেঁয়াজে সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের (Allium cepa L.) মতো বাল্ব উৎপাদন হয় না। তবে সাদা সিউডোস্টেমের গোড়ায় বাল্বের মতো বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। এ প্রজাতির গাছ বহুবর্ষজীবী। বীজ সংগ্রহের পর পুনরায় কুঁশি উৎপাদনের মাধ্যমে রেটুন ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। বীজ বা কুঁশির মাধ্যমে পাতা পেঁয়াজের বংশ বিস্তার হয়। এ ফসলটির কুঁশি উৎপাদনের প্রবণতা খুবই বেশি। এ প্রজাতিটি পার্পল ব্লচসহ বিভিন্ন রোগ সহিঞ্চু/প্রতিরোধী। এর পাতা ও ফুলের দণ্ড ফাঁপা। এর স্বাদ ও গন্ধ প্রায় সাধারণ পেঁয়াজের মতো।
এ প্রজাতির পেঁয়াজে এলাইল সালফাইড নামক উদ্বায়ী পদার্থের কারণেই গন্ধের সৃষ্টি হয়। এ মসলাটি রন্ধনশালায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এর মূল বা হলুদ পাতা ছাড়া ফুলের দণ্ডসহ সব অংশই বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যকে রুচিকর ও সুগন্ধপূর্ণ করে। এটি সালাদ হিসেবে কাঁচা অথবা বিভিন্ন তরকারি বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে সিদ্ধ করে খাওয়া যায়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন