চীন
করোনা ভাইরাস: কোভিড-১৯ রোগের উৎস চীনের উহানকে ঘিরে যেসব প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে
লেখক
বিবিসি বাংলাউহানের উপকণ্ঠে এক গ্রামে ছোট্ট একটি ঘরের ভেতর বয়স্ক এক নারী নিচু গলায় বিড়বিড় করে কিছু বলছেন এবং টেবিল চাপড়াচ্ছেন। তার উল্টো দিকে আরেক নারী কাঁদছেন। ফেব্রুয়ারির গোড়ায় তার ৪৪ বছর বয়স্ক ভাই করোনাভাইরাসে মারা গেছেন। তিনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছেন না।
ভাইয়ের শেষকৃত্যের পর মিজ ওয়াং (যিনি তার পুরো নাম জানাতে চান না) বলেন, তার ভাই ওয়াং ফেই কবর থেকে তাকে বার্তা পাঠিয়েছে। “ফেইফেই বলেছে আমাকে সে দোষী করছে না।”
ছোটবেলা থেকেই ভাইকে তারা ফেইফেই বলে ডাকেন। “আমি জানি ও আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে, মৃত্যুটা যাতে আমি মেনে নিতে পারি,” যোগ করলেন তিনি।
তার ভাই কোভিড ওয়ার্ডে মারা গেছে। কেউ তাকে শেষ দেখাও দেখতে যেতে পারেনি। তার জীবনের শেষ ক’টা দিনের সাক্ষী হয়ে আছে তার পাঠানো কাতর কিছু টেক্সট মেসেজ।”
“আমি অসম্ভব ক্লান্ত,” একটা মেসেজে সে লিখেছিল। “এই রোগে অনেকদিন ধরে ভুগছি।”
তার বোনের অপরাধবোধের মূল কারণটা হল অসু্স্থ ভাইয়ের পাশে থাকতে না পারা।
“হাসপাতালে ভাইয়ের পাশে থাকতে পারিনি। যখন শুনলাম ও আর নেই, তখন ওর মৃত্যুটা মেনে নিতে পারিনি। আমাদের পরিবারে সবার বুক ভেঙে গেছে।”
ভাইয়ের ঠিকমত চিকিৎসা হয়েছিল কি-না জানতে চান মিজ ওয়াং – জানতে চান তার যত্ন নেয়া হয়েছিল কি-না, তাকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করা হয়েছিল কি-না।
মিজ ওয়াংকে বলে দেয়া হয়েছে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা না বলতে। সেই নিষেধ অমান্য করে বিবিসির সাথে কথা বলে একটা ঝুঁকি তিনি নিয়েছেন।
আরেক নারী সাক্ষাতকার দেওয়ার জন্য যখন আমাদের গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন, তখন সাদা পোশাকের পুলিশ আমাদের পথ রোধ করে প্রশ্ন করেছে।
উহানের পূর্ব লেকের তীরে রাতের অন্ধকারে বিবিসির সাথে কথা বলার সময় আরেক ব্যক্তি জানায় যে তার বাবার মৃত্যু নিয়ে কথা বলার জন্য পুলিশ দু’বার তাকে জেরা করেছে।
যারা করোনাভাইরাসের শিকার হয়েছেন তারা এবং সাংবাদিকরা যখন উহানে করোনাভাইরাসের সূত্রপাত কীভাবে হলো তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন কিংবা জানতে চেয়েছেন যে এই ভাইরাসের বিস্তার আরও কার্যকরভাবে ঠেকানো সম্ভব ছিল কি-না, তখন কাজটা তাদের জন্য সহজ হয়নি।
কিন্তু বিশ্ব জুড়ে এই যে বিপর্যয়, এই যে মহামারি, তার যে উৎপত্তিস্থল তাকে নিয়ে নানা প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে।
জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ওয়াং ফেই যখন অসুস্থ বোধ করেন, তখন চীনে সরকারিভাবে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল মাত্র তিন। আজ পৃথিবী জুড়ে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ। মৃতের সংখ্যা অন্তত পাঁচ লাখ।
এখন এই ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি অবরুদ্ধ, অর্থনৈতিক ধস নেমেছে বিশ্ব জুড়ে।
ভাইরাসের উৎস
উহানেই প্রথম এই করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। আবার এই উহানই প্রথম এই ভাইরাস দমনে সচেষ্ট হয়। ফলে অনেকেই মনে করছেন এর উৎস খুঁজতে হবে এই উহানেই।
কীভাবে এবং কোথায় এই ভাইরাসের উৎপত্তি, সে প্রশ্ন এখন চীন ও আমেরিকার মধ্যে প্রচারণা যুদ্ধের একটা বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
আর বারবার ঘুরে ফিরে আসছে যে প্রশ্ন, তা হলো এই ভাইরাসের উৎস কি প্রাকৃতিক – যেটা বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই মনে করেন – নাকি কোন ল্যাব থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে এই ভাইরাস?
মিজ ওয়াংয়ের ভাই গাড়ি চালাতেন। তিনি উহানের বাইরে কদাচিৎ গেছেন। তার ৪৪ বছরের জীবনে চীনের উহান শহরকে তিনি আমূল বদলে যেতে দেখেছেন। চীনের পশ্চাদপদ একটা শিল্পনগরী থেকে উহান আজ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের রমরমা একটা কেন্দ্র এবং পরিবহনের মূল একটা ঘাঁটি।
কিন্তু এই অসাধারণ উন্নতির শিখরে ওঠা শহর ওয়াং ফেই-এর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারল না কেন?
জানুয়ারির শুরুতেই চিকিৎসকরা বুঝতে পেরেছিলেন যে এই ভাইরাস প্রচণ্ডরকম সংক্রামক। তারা তখন থেকেই তাদের হাসপাতালের ভেতর কোয়ারেন্টিন প্রক্রিয়া চালু করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু মানুষজনকে এই ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করার বদলে কর্তৃপক্ষ তখন স্বাস্থ্যকর্মীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। চিকিৎসক লী ওয়েনলিয়াং যখন তার সহকর্মীদের এই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সতর্কতা নেওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তখন তার মুখ বন্ধ করা হয়েছিল। পুলিশ তাকে দিয়ে স্বীকারোক্তি সই করিয়ে নিয়েছিল।
কর্তৃপক্ষ ১৮ই জানুয়ারি তারিখেও জোর দিয়ে বলেছিল, এই রোগ ছোঁয়াচে নয়।
ওয়াং ফেই যখন অসুস্থ বোধ করে হাসপাতালে যান, তাকে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। “ওরা বলছে এ রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না, কিন্তু দেখছি ডাক্তাররা সবাই মাস্ক পরে আছেন,” তিনি তার বোনকে বলেছিলেন।
তার বোন বলেন, “আমিও তখন বলেছিলাম ‘ভাল হয়ে যাবে’। পেছন ফিরে তাকালে এখন মনে হয়, সরকার তখন আসলেই মানুষকে যথেষ্ট সতর্ক করেনি। এখন মনে হয় আমার ভাইয়ের সঠিক চিকিৎসা সহায়তা দরকার ছিল। সে কারণেই আমার নিজেকে অপরাধী মনে হয়।”
মি. ওয়াং ওই সময়ে চীনা নতুন বছরের ছুটি কাটানোর সব পরিকল্পনা বাতিল করে দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দীর্ঘ লাইনে শামিল হন। কিন্তু ততদিনে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে এবং রোগীর তুলনায় শয্যা কম। ফলে হাসপাতালের বাইরে লম্বা লাইনে সারা দিন কাটিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরতেন ওয়াং ফেই।
“ফেই অন্তরের গভীরে বিশ্বাস করত দেশ ও সরকার তাকে ভালবাসে এবং সরকার তাকে রক্ষা করবে,” বলেন মিজ ওয়াং।
মি. ওয়াং-এর অবস্থার তখন অবনতি হচ্ছে। ৭ই ফেব্রুয়ারি ওই হাসপাতালেই মারা যান ডাক্তার লী ওয়েনলিং, যার বক্তব্য তখন পুলিশ চেপে দিয়েছে। ওয়াং ফেইয়ের মনোবল এ ঘটনায় ভেঙে পড়ে। “একজন চিকিৎসকই যদি বাঁচতে না পারেন, তাহলে আমার বাঁচার কী সম্ভাবনা?” – বোনকে পাঠানো টেক্সটে তিনি লেখেন।
উহানে স্বাস্থ্যকর্মীরা এখনও খোলাখুলি কথা বলতে পারছেন না।
কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি হাসপাতালের বাইরে একজন নার্সের সাথে কথা বলেছিলাম। আমাদের সাথে কথা বলে তিনি সাইকেল নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখলাম পাশের রাস্তা থেকে সাদা পোশাকের দুজন পুলিশ তার পিছু নিল। দেখলাম তাকে থামিয়ে তার সাথে ওই দুজন লোক বেশ উত্তপ্তভাবে কথা বলছে।
আমি এগিয়ে যাবার পর ওরা ওই নার্সকে ছেড়ে দিল। এর কয়েক মিনিট পর তিনি আমাকে ফোন করে বলেন তার সাক্ষাৎকারটা মুছে ফেলতে। তার নিরাপত্তার স্বার্থে সেটা করা ছাড়া আমার কোন বিকল্প ছিল না।
চীনে প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ অনেকদিনের – সেটা হলো তথ্য নিয়ন্ত্রণ করা।
উহান অবশ্য সফলভাবে লকডাউন দিয়ে অবশেষে এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু এরপর চীনকে আমেরিকাসহ বিভিন্ন মহলের এই অভিযোগের মুখে পড়তে হয় যে প্রাথমিক পর্যায়ে তথ্য গোপন এবং বিলম্বের কারণে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বিশ্বজোড়া একটা সংকটে পরিণত হয়েছে।
একটি গবেষণায় বলা হয়, উহান কর্তৃপক্ষ আর এক সপ্তাহ আগে পদক্ষেপ নিলে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা শতকরা ৬৬ ভাগ কমতো।
চীনা কর্তৃপক্ষ দেরি করার এবং তথ্য গোপন করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে যে অপরিচিত একটা রোগের মোকাবেলায় তাদের প্রতিক্রিয়া দ্রুতই ছিল এবং তারা এটাও জানায় যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের এই রোগ মোকাবেলার প্রশংসা করেছে।
চীনা সরকার এমন কথাও বলেছে যে পশ্চিমের সাথে তুলনা করলে তারা অনেক ভালভাবে এই রোগের মোকাবেলা করেছে। এমনকি পশ্চিমের দেশগুলো যেভাবে এই ভাইরাস মোকাবেলা করেছে, তাকে চীন বিশৃঙ্খল এবং বিভ্রান্তিপূর্ণ বলে ঠাট্টাও করেছে।
তবে পশ্চিমের দেশগুলোর বক্তব্য, যেসব দেশের সরকার গণতান্ত্রিক, সেসব দেশে ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতা উঠে আসে মুক্ত সংবাদমাধ্যমে, কিন্তু চীনে সংবাদমাধ্যমের সেই স্বাধীনতা নেই। তাই সেখানে সরকারি ভাষ্যের বাইরে কথা বললে রাষ্ট্র তাকে থামিয়ে দিতে পারে।
চীনে সংসদীয় প্রতিনিধি , ঊর্ধ্বতন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ এবং চিকিৎসক – সব মিলিয়ে ২০ জনের বেশি ব্যক্তির কাছে সাক্ষাৎকার চেয়েছিলাম, প্রশ্নও পাঠিয়েছিলাম পররাষ্ট্র এবং বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য কমিশনের কাছে । কিন্তু আমাদের অনুরোধে সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমণ
ওয়াং ফেই থাকতেন খুব বড় একটা বাজারের খুবই কাছে। হুয়ানান সিফুড মার্কেট বলে পরিচিত এই বাজার নামে সামুদ্রিক খাবারের বাজার হলেও, এখানে কখনও-সখনও বন্যপ্রাণী বেচা হতো বলেও জানা যায় – বিশেষ করে যেসব প্রাণী চীনে শৌখিন খাবারের তালিকায় আছে। এই বাজার এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
প্রথমদিকে সন্দেহ করা হয়, এই বাজার থেকেই ভাইরাসের শুরু – যেখানে পশু থেকে মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে।
এই ভাইরাস, পরে যার নামকরণ হয় সার্স-কোভ-২, সেই ধরনের একটি করোনাভাইরাস, যার উপরের অংশ খোঁচা খোঁচা মুকুটের মত। এ ধরনের ব্যাপক সংখ্যক ভাইরাস দেখা গেছে বাদুড়ের শরীরে।
ধারণা করা হয়, এ ধরনের ভাইরাস মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে, বাদুড় থেকে সরাসরি অথবা অন্য কোন পশুর মাধ্যমে – যেখানে দ্বিতীয় প্রাণীটি অন্তর্বর্তীকালীন বাহক হয়।
নভেম্বর ২০০২-এ চীনে এই ধরনের একটি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল।
ওই করোনাভাইরাসটির নাম ছিল সার্স কোভ-১, সেটিও দক্ষিণ চীনের একটি বাজার থেকে ছড়ায়।। বাদুড় থেকে বনবিড়ালের হয়ে মানুষের শরীরে ঢোকে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওই ভাইরাসে মারা যায় ৭৭৪ জন। তখনও চীনা কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকমাস পর্যন্ত স্বীকার করেনি যে এটা ছড়াচ্ছে।
এবারের করোনাভাইরাস থেকে প্রথম সংক্রমিত হয় মি. ওয়াং যে পাড়ায় থাকতেন সেই পাড়ার কিছু মানুষ। একটি জরিপে দেখা যায়, এদের অর্ধেকই ওই সিফুড বাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
স্বভাবতই ধরে নেয়া হয়, এবারে ভাইরাসের অন্তর্বর্তীকালীন বাহক ওই বাজারে বিক্রির জন্য নেয়া কোন পশু।
তবে ওই বাজারের ভেতরে বিভিন্ন জায়গা থেকে নেয়া নমুনা পরীক্ষার পর চীন এখন এই তত্ত্ব নাকচ করে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সেখান থেকে নেয়া যেসব প্রাণীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তাতে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
চীনা কর্মকর্তারা তাই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, এই প্রাদুর্ভাবের শুরু সম্ভবত অন্যত্র। ওই জনাকীর্ণ বাজার শুধু এই রোগ একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষে ছড়াতে সাহায্য করেছে।
বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই বেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, এই সার্স-কোভ-২ ভাইরাস ওই বাজার বা অন্য কোন জায়গা – যেখানে থেকেই শুরু হোক না কেন, তা পশুর মাধ্যমেই মানুষের শরীরে ঢুকেছে। তারা বলছেন, বেশি জনসংখ্যা এবং পশুপাখির স্বাভাবিক বাসস্থানে মানুষের উপস্থিতি বাড়ার কারণে পশুর শরীর থেকে মানুষের শরীরে ভাইরাস ঢোকার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট ড. ইয়ুয়েন কোওক-ইয়াং জানুয়ারি মাসে চীনের স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুসন্ধানী একটি দলের সাথে উহানে যান। তিনি এই তত্ত্ব সমর্থন করে বলছেন যে এই ভাইরাসের সূত্রপাত হয়েছে প্রাণী থেকে মানুষের সংক্রমণের মধ্যে দিয়ে।
“আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আমি বলব বাজার থেকে এবং যেসব বাজারে বন্যপ্রাণী বিক্রি হয়, সেখান থেকেই এটা আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি,” তিনি আমাকে বলেন।
তিনি বলেন, এ কারণেই এধরনের ভাইরাস মহামারি ভবিষ্যতে এড়াতে হলে এই বন্যপ্রাণীর বাজারগুলোকে নজরদারিতে রাখতে হবে। “সংস্কৃতি পাল্টানো সহজ নয়, কিন্তু আমাদের সেটা করতেই হবে।”
মে মাসের মাঝামাঝি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি প্রস্তাব পাশ ক’রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আহ্বান জানায়, এই ভাইরাসের সম্ভাব্য অন্তর্বর্তীকালীন বাহক কোন্ পশু, তা খুঁজে বের করার জন্য। সম্প্রতি ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে এ জন্য তদন্তকারী একটি দল চীনে পাঠানোর জন্য সংস্থাটিকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন এই খুঁজে বের করার কাজটা খুব সহজ হবে না।
চীনা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন কাজ ইতোমধ্যেই শুরু করেছে কি-না এবং করলে তার অগ্রগতি কতটুকু, এ সম্পর্কে বিবিসি জানতে চাইলে চীনা কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে কোন তথ্য দেয়নি।
ভাইরাসের গঠন ও প্রকৃতি
ওয়াং ফেই যখন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন, তখন হুয়ানান সিফুড মার্কেট থেকে মাত্র ৪০ মিনিট গাড়ির দূরত্বে অন্য আরেকটি তত্ত্ব নিয়ে চর্চ্চা শুরু হয়েছিল।
উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি এখন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের একটা বড় কেন্দ্রবিন্দু। এই ল্যাবরেটরি থেকে ভাইরাসটি বেরিয়ে গিয়েছিল কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আর অভিযোগের ঝড় এখনও থামেনি।
সংস্থাটির কংক্রিট আর কাঁচে মোড়া আধুনিক ভবন, গাছপালা আর ছোট্ট এক হ্রদ দিয়ে সাজানো চত্বরটি পাশের রাস্তা থেকে বেশ স্পষ্ট দেখা যায়।
কঠোর নিরাপত্তার বেড়াজালে ঘেরা চত্বরে আমরা পৌঁছন মাত্র নিরাপত্তা কর্মীরা জানিয়ে দেন এটা খুবই স্পর্শকাতর এলাকা এবং দ্রুত সেখানে পুলিশ পৌঁছে যায়।
বাদুড়ের শরীর থেকে করোনাভাইরাস সংগ্রহ, মজুত রাখা এবং সেগুলো নিয়ে গবেষণার কাজে এই সংস্থা বিশ্বে শীর্ষ স্থানে।
এখানে গবেষকদের প্রধান হলেন তারকা বিজ্ঞানী অধ্যাপক শি ঝেংগলি। করোনাভাইরাস নিয়ে তার জ্ঞানের কারণে এই বিজ্ঞানী তার সহকর্মীদের কাছে পরিচিত “বাদুড় নারী” (ব্যাট ওম্যান) নামে।
এই গবেষকরা বহু বছর ধরে চীনের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গুহা থেকে জ্যান্ত বাদুড়ের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা চালাচ্ছেন।
তাদের গবেষণাপত্রে কয়েকশো’ করোনাভাইরাসের উল্লেখ আছে। এসব ভাইরাসের জেনেটিক গঠনের পরিবর্তন, কীভাবে তার থেকে মিশ্র ভাইরাসের জন্ম হয় এবং এসব ভাইরাসের মানুষকে সংক্রমিত করার ও মহামারি ঘটানোর ক্ষমতা – এইসব গবেষণার অংশ।
সার্স কোভ-১ ভাইরাসের জেনেটিক তথ্য উদঘাটন করেছিলেন এই অধ্যাপক শি। ওই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে উহানের বিজ্ঞানীরা তার থেকেও আরও মারাত্মক এবং আরও ছোঁয়াচে ভাইরাস ছড়ানোর আশংকা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
উহানে এই নতুন ভাইরাস ছড়ানোর বিষয়টা জানার মাত্র তিনদিন পর দোসরা জানুয়ারি তিনিই প্রথম এই সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের জিনের গঠন উদঘাটন করেন।
দুভার্গ্যজনকভাবে এই সার্স-কোভ-২-এর জেনেটিক গঠন প্রকাশ পাওয়ার পরই ল্যাব থেকে এই ভাইরাস বের হয়ে যাবার তত্ত্ব ছড়াতে শুরু করে।
অধ্যাপক শি-র গবেষণা এবং তারপর আরও কয়েকটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে, নতুন ভাইরাসের জিনোমে এমন কিছু একটা আছে যা একই ধরনের জানা অন্যান্য করোনাভাইরাস থেকে আলাদা।
এই ভাইরাসের প্রোটিনে যে স্পাইক বা চূড়ার মত জিনিস আছে – যেগুলো দেখতে অনেকটা মুকুটের মত – সেগুলো সংক্রমিত বাহকের শরীরের কোষে গিয়ে আটকে যায়। শুধু তাই নয়, শুরু থেকেই এই সার্স-কোভ-২ ব্যাপকভাবে ছোঁয়াচে হয়ে উঠতে পারে।
এই ভাইরাসের যে স্পাইক প্রোটিন, বা চূড়ার মত দেখতে প্রোটিনগুলো, তাতে খুবই আলাদা আরেকটা জিনিস আছে যেটার নাম “ফুরিন ক্লিভেজ সাইট”। এর কারণে এই ভাইরাস মানুষের দেহকোষে খুবই ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ঢুকতে পারে, তার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং মানুষের কোষে দ্রুত বাড়তে পারে। অন্য কোন সার্স জাতীয় করোনাভাইরাসের এই ক্ষমতা নেই।
বিভিন্ন কারণে এই ভাইরাসের মারাত্মক ক্ষমতা, তার অস্বাভাবিক ধরন – আর উহানের গবেষণা কেন্দ্র, যার আসল কাজ ভাইরাস গবেষণা, তার কাছে এর প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটায় জন্ম নেয় একটা বিতর্কিত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।
ফেব্রুয়ারির গোড়ায় ল্যাব থেকে দুর্ঘটনাক্রমে ভাইরাস বেরিয়ে যাওয়ার দাবি প্রথম ছড়ায় চীনের ইন্টারনেট সাইটে।
ভিত্তিহীন গুজব ছড়াতে থাকে যে এই করোনাভাইরাস গবেষণাগারে সংক্রমিত প্রাণী থেকে স্থানীয় মানুষের মধ্যে হয়তো ছড়িয়েছে। এমন গুজবও ওঠে যে বন্যপ্রাণী থেকে সংগ্রহ করা কোন প্রাকৃতিক ভাইরাস বা ল্যাবে তৈরি ভাইরাস থেকে হয়তো দুর্ঘটনাবশত সংক্রমিত হয়েছেন উহান গবেষণা কেন্দ্রের কোন বিজ্ঞানী – এবং সেখান থেকেই এর শুরু।
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ে চীনের বাইরেও। বিদেশি সংবাদপত্র এবং ওয়েবসাইটে দাবি করা হয় “জীবাণুঅস্ত্র” হিসাবে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে এই ভাইরাস।
কিন্তু ল্যাব থেকে ভাইরাস ছাড়ার তত্ত্ব – পশু দেহের ভাইরাস বা মানুষের তৈরি ভাইরাস, ইচ্ছাকৃতভাবে ছাড়া বা দুর্ঘটনাবশত বের হয়ে পড়া ভাইরাস – কোনটার স্বপক্ষেই নির্ভরযোগ্য কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় একদল গবেষক এই ভাইরাসের জিনগত গঠন ব্যবহার করে প্রথম একটা ইঙ্গিত দিয়ে বসেন যে ল্যাবে সম্ভবত এই ভাইরাসের জিনের কাঠামোতে বদল ঘটানো হয়েছে।
কিন্তু ভারতীয় ওই গবেষণাপত্র দ্রুত ভুয়া প্রমাণিত হয় এবং তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
ফেব্রুয়ারির গোড়ায় শি ঝিংগলি নিজে সামাজিক মাধ্যমে এর উত্তর দিতে বাধ্য হন।
“আমি, শি ঝিংগলি, আমার জীবনের নামে শপথ করে বলছি, আমাদের গবেষণাগারের সাথে এই ভাইরাসের কোন সম্পর্ক নেই,” তিনি লেখেন। তিনি আরও বলেন, যারা এই গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের উচিত “তাদের দুর্গন্ধময় মুখ বন্ধ করা”।
সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বেশ কিছু প্রোটিন স্পাইক বা চূড়া আছে যা অনেকটা খোঁচার মত, যার কারণে এই ভাইরাস ‘করোনা’ বা মুকুটের মত দেখতে।
তখন ওয়াং ফেই-এর ফুসফুস জীবাণুর আক্রমণে ঝাঁঝরা – রক্ত কোষ ও জলীয় পদার্থে ভরে উঠেছে তার ফুসফুস। রক্তে অক্সিজেন ক্রমশ কমছে।
“আমার হৃদস্পন্দন এখন প্রতি মিনিটে ১৬০। আমার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ মাত্র ৭০। আমি মারা যাচ্ছি।”
ভাইরাস নিয়ে বিতণ্ডা
এই ভাইরাস নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট।
একজন সাংবাদিক ৩০শে এপ্রিল তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আপনি কি এখনও পর্যন্ত কোন প্রমাণ দেখেছেন যাতে আপনি নিশ্চিত যে উহানের ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজিই এই ভাইরাসের উৎস?”
“হ্যাঁ আমি দেখেছি। হ্যাঁ, আমি দেখেছি,” উত্তর দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যরাও তার সাথে গলা মেলান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চীনের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে বলেন, “চীনে ল্যাবরেটরিগুলো ঐতিহাসিকভাবে নিচু মানের”।
তবে ল্যাব থেকে ভাইরাস বেরুনোর ব্যাপারে “ব্যাপক তথ্যপ্রমাণ ” হাতে পাবার কথা আমেরিকা বললেও কোন কিছুই তারা দেখাতে পারেনি।
এই ইস্যু নিয়ে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বিতণ্ডাকে প্রেসিডেন্টের আমেরিকান সমালোচকরা দেখেছেন দেশের অভ্যন্তরে তার ব্যর্থতাকে ঢাকার একটা চেষ্টা হিসাবে।
তবে অনেকে আবার এমন কথাও বলেছেন যে ল্যাব থেকে ভাইরাস বেরুনোর তত্ত্বটা একেবারে উড়িয়ে দেবার মত নয়। এই তত্ত্ব শুধু চীনের বেলাতেই নয়, এটা আমেরিকান সরকারের বেলাতেও প্রযোজ্য হতে পারে।
উহানের যে গবেষণাগারে বাদুড়ের করোনাভাইরাস নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছিল, সেটা শুধু চীনা প্রকল্প ছিল না। এই গবেষণা হচ্ছিল আন্তর্জাতিক পরিসরে। এবং নতুন কোন ভাইরাস থেকে মহামারি ছড়ানোর ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি খতিয়ে দেখার জন্য বিশ্বের বিজ্ঞানীরা একযোগে সেখানে কাজ করছিলেন।
কী ধরনের হুমকির মুখে মানুষ পড়তে পারে, তার প্রতিকার কী হতে পারে, কী ধরনের টিকা কার্যকর হতে পারে – এসব নিয়ে গবেষণার অনেক ঝুঁকির দিক থাকতে পারে।
ল্যাবে কাজ করতে গিয়ে গবেষকদের নিজেদের অজ্ঞাতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
সার্স-কোভ-১ জীবাণু নিয়ে কাজ করার সময় দু’টি এ রকম ঘটনার নজির আছে। ওই গবেষণাগারে ২০০৪ সালে একজন গবেষক কাজ করতে গিয়ে সংক্রমিত হন, তার থেকে সংক্রমিত হয়ে তার মা মারা যান। একজন নার্সও ওই সময় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তার সংস্পর্শে আসা কয়েকজনকে তিনি সংক্রমিত করেছিলেন।
ডিসেম্বরের শেষে নতুন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর পর অধ্যাপক শি মন্তব্য করেছিলেন, তার মনে প্রথমেই যেটা এসেছিল সেটা হল ‘এই ভাইরাস আমাদের গবেষণাগার থেকে ছড়ালো না তো?’
বিতর্ক
তবে আমেরিকার রাজনৈতিক মহল এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে যতই উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, এই তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছেন অধিকাংশ বিজ্ঞানী।
বৈজ্ঞানিক মহল একমত যে এই ভাইরাসের উৎস প্রাকৃতিক। সার্স-কোভ-২ ভাইরাস এসেছে প্রাণী থেকে এবং প্রাণী দেহ থেকে তা ঢুকেছে মানুষের দেহে ।
এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে।
এছাড়াও অধ্যাপক শি ঝেংগলির নিজস্ব গবেষণায় এর পক্ষে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান রিভিউ নামে এক জার্নালে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এই মহামারির সাথে তার গবেষণাগারের কোন রকম সংশ্লিষ্টতা যে নেই, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তার ল্যাবে ইতোমধ্যেই সংরক্ষিত সব নমুনা এবং পরীক্ষার সব রেকর্ড তিনি “পাগলের মত” ঘাঁটতে শুরু করেন।
একটি মাত্র ভাইরাসের সাথে তিনি নতুন ভাইরাস সার্স-কোভ-২-এর ৯৬ শতাংশ মিল পান, যার নাম তিনি দিয়েছিলেন RaTG13 – যেটি তিনি একটি বাদুড়ের শরীর থেকে সংগ্রহ করেছিলেন ২০১৩ সালে।
তারপরেও দু’টি ভাইরাসের মধ্যে জিনগত অনেকগুলো তফাত ছিল – প্রাকৃতিক বিবর্তনের মাধ্যমে যে পার্থক্যগুলো কাটিয়ে দু’টোর ভাইরাসের একেবারে এক রকম হয়ে উঠতে অন্তত বিশ বছর সময় লাগার কথা।
তিনি বলেন, তার গবেষণাগার থেকে এই ভাইরাস বের হতে হলে, সেখানে হয় খোদ সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি, না হয় একেবারে কাছাকাছি জিনের গঠন আছে এমন ভাইরাস থাকতে হতো।
“সেটা আমার গবেষণাগারে ছিল না – এটা প্রমাণ হবার পর আমার মাথা থেকে বিরাট দুশ্চিন্তা নেমে যায়। আমি কয়েক রাত ঘুমাতে পারিনি, জেগে কাটিয়েছি,” সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকানকে বলেন তিনি।
তবে এই ভাইরাস যে ল্যাব থেকে বেরোয়নি, তার পক্ষে সন্দেহাতীত প্রমাণ ছাপা হয় মার্চ মাসে নেচার মেডিসিন নামে চিকিৎসাবিজ্ঞান সাময়িকীতে।
সেখানে উন্নত ধরনের কম্পিউটার পরীক্ষার ফলাফল ও তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দেখানো হয় যে এই ভাইরাসের গঠন ও আচরণ এমনই নজিরবিহীন এবং এর কার্যক্ষমতা এতটাই নিখুঁত ও অসাধারণ যে কোন বিজ্ঞানীর পক্ষে ল্যাবে এই ভাইরাস তৈরি করা অসম্ভব।
উহানের গবেষণাগারে এমন কোন ভাইরাস যদি সংরক্ষিত থাকত, যার জিনের গঠন সার্স-কোভ-২-এর খুবই কাছাকাছি, তাহলে হয়ত বা বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করলে তার থেকে এই ভাইরাস ল্যাবে তৈরি করতে পারতেন। কিন্তু যে ভাইরাসের অস্তিত্বই নেই, তা তৈরি করা অবাস্তব ও অসম্ভব বলে নেচার মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা বলেছেন।
তবে এখনও মুষ্টিমেয় কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন এটা একেবারে অসম্ভব নয়। বিজ্ঞানে অনেক কিছুই হঠাৎ করে আবিষ্কার হবার নজিরও আছে বলে তারা মনে করেন।
অন্যদিকে, চীনের ভেতর অনেকে মনে করে এই ভাইরাসের পেছনে আমেরিকার হাত রয়েছে।
“আমার মনে হয় এই ভাইরাস আমেরিকা থেকে এসেছে,” উহানে এক নারী আমাকে বলছিলেন, “রোগের প্রাদুর্ভাব যখন শুরু হয়, তখন আমেরিকান সৈন্যরা উহানে ছিল। তারা চাটার্ড বিমানে প্রথমদিকেই ফিরে গেছে”।
এই ভাইরাস নিয়ে আমেরিকা আর চীনের মধ্যে প্রচারণা যুদ্ধ এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ এখনও রমরমা।
আমেরিকার রাটগার্স ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং জীবাণু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রিচার্ড এবরাইট বলছেন, ল্যাব থেকে এই ভাইরাস কোনভাবে বেরিয়েছিল কি-না, তা নিশ্চিতভাবে বলার একটাই পথ আছে।
আর তা হলো “একটা গ্রহণযোগ্য তদন্তের জন্য চীনের গবেষণাগার, সেখানকার সংরক্ষিত সব নমুনা, পরীক্ষার সব নথিপত্র, ল্যাবের কর্মী এবং নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি সবকিছু অবাধে পরীক্ষার সুযোগ করে দেয়া।
চীনা কর্তৃপক্ষ কূটনৈতিক চাপের মুখে এই ভাইরাস নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তে রাজি হয়েছে। তবে এই তদন্তের পরিধি কতটা হবে, কারা এতে অংশ নেবে এবং কখন তা হবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জোর দিয়ে বলেছেন মহামারির প্রকোপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই তদন্ত চালানো যাবে না।
-
-
-
-
ট্রাম্প
-
পরদিন তিনি শেষ মেসেজ পাঠান - "প্লিজ আমাকে বাঁচাও, আমি চোখে তারা দেখছি।" এর কয়েক ঘন্টা পর তিনি মারা যান।
-
"আমার হৃদস্পন্দন এখন প্রতি মিনিটে ১৬০। আমার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ মাত্র ৭০। আমি মারা যাচ্ছি।"
-
ওয়াং ফেই-এর ফুসফুস জীবাণুর আক্রমণ
-
এই মারাত্মক ভাইরাসের শিকার হয়ে হাসপাতালে মি. ওয়াং-এর অবস্থার যখন ক্রমশ অবনতি হচ্ছে - যা এখন বিশ্বের সর্বত্র ডাক্তারদের অতি পরিচিত হয়ে উঠেছে - তখন বোনের কাছে কাতরভাবে টেক্সট করতেন ওয়াং ফেই।
-
সার্স-কোভ-২ প্রোটিন স্পাইকে ফুরিন ক্লিভেজ সাইট নামে একটা অংশ থাকে, যা সংক্রমিত করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
-
আরবিডি মানুষের দেহকোষের যে গ্রাহক এসিই-২, তার গায়ে সেঁটে বসে এবং সংক্রমণ ঘটায়।
-
প্রতিটা প্রোটিন স্পাইকে থাকে বেশ কয়েকটি রিসেপটার বাইন্ডিং ডোমেইন (আরবিডি) অর্থাৎ এক সাথে সংযুক্ত গ্রাহকগুচ্ছ।
-
শি ঝেংগলি
-
উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি
-
বাজার
-
জন সাডওয়ার্থ চীনা নিরাপত্তা কর্মকর্তার মুখোমুখি
-
হাসপাতালে ওয়াং ফেই
-
মিজ ওয়াং
-
-
মিজ ওয়াং-এর ভাই ওয়াং ফেই
-
মিজ ওয়াং
-
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
-
জিংক সমৃদ্ধ পুষ্টি ধানের চাষে কৃষকদের জামানতবিহীন ঋণ দেবে কৃষি ব্যাংক, কী লাভ এই চাল উৎপাদন বাড়লে?
-
নিপাহ্ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
-
বাংলাদেশে বাড়ছে ইলিশ, মিয়ানমারে কেন কমছে – দা এগ্রো নিউজ
-
পঞ্চাশে বাংলাদেশ: এক টেলিভিশন তারকা আর দরিদ্র কৃষকের সন্তান এক বিজ্ঞানী যেভাবে পাল্টে দিয়েছেন বাংলাদেশের কৃষি
-
ইলিশ কি মিঠা পানির মাছ হয়ে যাচ্ছে? – দা এগ্রো নিউজ
-
বাংলাদেশে ‘প্রায় বিলুপ্তি’র পথে ১০০-এর বেশি দেশীয় মাছ – দা এগ্রো নিউজ
-
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত ইলিশের ‘জীবন রহস্য’ কীভাবে এর উৎপাদন বাড়াবে
-
বাংলাদেশে গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসে কীভাবে – দা এগ্রো নিউজ
-
আপেল-স্ট্রবেরির দরকার নেই, বাঙালিরা পেয়ারা বা বরই খেলেও একই উপকার পাবেন
ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার ভারত-বাংলাদেশের ওপর করোনাভাইরাসের দায় চাপানোর চেষ্টায় মেতে উঠেছে চীন। দেশটির একদল গবেষক দাবি করেছেন, করোনাভাইরাস উহান থেকে নয়, ভারত-বাংলাদেশ থেকেই ছড়িয়েছে। তারা বলেছেন, ২০১৯ সালের গ্রীষ্মেই সম্ভবত করোনার জীবাণু ছড়িয়েছে। আর সেটা ছড়িয়ে থাকতে পারে ভারত অথবা বাংলাদেশ থেকে। এখান থেকে এ জীবাণু উহানে বাহিত হয়েছে। আর উহানেই এটা প্রথম শনাক্ত হয়। যদিও তাদের এমন অযৌক্তিক দাবিকে সন্দেহের চোখেই দেখছেন পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা।
চীনের একাডেমি অব সায়েন্সের একদল গবেষকের গবেষণার ফলাফলে বিস্ফোরক এ দাবি করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটের প্রাক-প্রকাশনা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গত ১৭ নভেম্বর চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়। ওই প্রবন্ধ উদ্ধৃত করে গত শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সান বলেছে, উহানের দোষ এখন বাংলাদেশ বা ভারতের ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে। চীনা বিজ্ঞানীরা আচমকা এমন অযৌক্তিক দাবি তোলায় পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা আগাম সতর্ক করে দিয়েছেন। তাদের মতে, এই গবেষণা ‘বড় ধরনের’ দাবি তুলছে, আর এ কারণে সতর্কতা ও সন্দেহপ্রবণ চোখে এটি ভালো করে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
শুক্রবার ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগেও চীনের একাধিক গবেষণায় কভিড-১৯ মহামারির দায় দেশটির সীমান্তের বাইরে কারও ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একাধিক গবেষণায় ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রকে এই জীবাণুর উৎস দেশ হিসেবে শনাক্তের চেষ্টা করা হয়েছে।
গত বছর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীনের কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ভাইরাসের তথ্য প্রকাশ করে। শুরুতে এই ভাইরাস চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ছড়ায়। একপর্যায়ে তা মহামারি আকারে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে এ বছরের ৮ মার্চ।
এরই মধ্যে চীনের বিজ্ঞানীদের দাবিকে পুরোপুরি অনুমাননির্ভর বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত শুক্রবার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মাইক রায়ান এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বলেন, চীন থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়নি, এমন কথা বলা আমাদের জন্য একেবারে অনুমাননির্ভর হবে।
গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ২০১৯ সালের মে থেকে জুন মাসে উত্তর-মধ্য ভারত ও পাকিস্তানে রেকর্ড দ্বিতীয় দীর্ঘতম দাবদাহ তাণ্ডব চালিয়েছিল। ফলে ওই অঞ্চলে ভয়াবহ পানির সংকট সৃষ্টি হয়। পানির অভাবে বানরের মতো বন্যপ্রাণী একে অপরের সঙ্গে ভয়াবহ লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিল এবং অবশ্যই এটি মানুষ ও বন্যপ্রাণী সংস্পর্শের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছিল। এই দাবদাহকেই প্রাণী থেকে মানবদেহে করোনা সংক্রমণের কারণ বলে মনে করছেন গবেষকরা।
চীনা গবেষক দলটি করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজতে ফাইলোজেনেটিক বিশ্নেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তাদের মতে, সবচেয়ে কম রূপান্তরিত রূপটাই ভাইরাসের আসল রূপ হতে পারে। এ ধারণার ভিত্তিতেই তারা দাবি করেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ উহানে হয়নি। এর বদলে ভারত ও বাংলাদেশের মতো জায়গাগুলো, যেখানে কম রূপান্তরিত ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে, সেখানেই হতে পারে এর আসল উৎস। এ ছাড়া ভারত-বাংলাদেশের পাশাপাশি করোনার সম্ভাব্য উৎস হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, সার্বিয়া, ইতালি, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র ও চেক রিপাবলিকের নাম বলেছেন চীনের ওই গবেষকরা।
গবেষকরা আরও বলেছেন, যেহেতু বাংলাদেশ ও ভারতের নমুনায় এ ভাইরাসে কম মাত্রায় মিউটেশন পাওয়া গেছে, তাই এ দুই প্রতিবেশী দেশ থেকেই এটি ছড়ানোর আশঙ্কা আছে।
তবে চীনাদের এ দাবির সঙ্গে একমত নন অনেক বিশেষজ্ঞ। চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রকে ‘খুবই ত্রুটিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছেন গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির ভাইরাল জিনোমিপ অ্যান্ড বায়োইনফরমেটিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডেভিড রবার্টসন। তিনি বলেন, ন্যূনতম রূপান্তরিত ভাইরাস সিকোয়েন্স শনাক্তকরণে লেখকদের দৃষ্টিভঙ্গি সহজাতভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট। লেখকরা মহামারির বিস্তৃতি-সংক্রান্ত উপাত্তগুলো এড়িয়ে গেছেন, যাতে চীনে ভাইরাসের উত্থান এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া স্পষ্ট দেখা যায়। এই বিশেষজ্ঞের মতে, চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি সার্স-কভ-২ সম্পর্কে বোঝার বিষয়ে নতুন কিছুই যোগ করেনি।
প্রথমবারের মতো সফলভাবে মানুষবিহীন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করলো দেশটি
চাঁদ থেকে পাথর ও ধ্বংসাবশেষ আনতে প্রথমবারের মতো সফলভাবে মানুষবিহীন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছে চীন।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) চীনের দক্ষিণের প্রদেশ হাইনানের ওয়েনচ্যাং থেকে দেশটির স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৪টায় সবচেয়ে বড় রকেট লং মার্চ ৫ উৎক্ষেপিত হয়।
“চ্যাংই ফাইভ” নামে এ যানটি এক প্রাচীন চীনা চন্দ্রদেবীর নামানুসারে রাখা হয়েছে। এটি এখনও পর্যন্ত দেশটির সবচেয়ে সাহসী চন্দ্রাভিযান। এই মিশনটি সফল হলে চীনের মহাকাশ বিষয়ে গবেষণা ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মঙ্গল থেকে নমুনা আনার বা চাঁদে অভিযানের পথকে আরও সুগম করতে পারে।
সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার পর চীনই হবে বিশ্বের তৃতীয় দেশ, যারা চাঁদ থেকে পাথর আনবে। মহাকাশযান সাধারণত চাঁদে পৌঁছাতে তিনদিন সময় নেয়।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা একটি পাথরের তৈরি বৌদ্ধ মন্দিরের প্রায় চার হাজার ৬০০ বর্গমিটার এলাকা খনন করে এ পুরাকীর্তিগুলো আবিষ্কার করেন
চীনা প্রত্নতত্ত্ববিদরা দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর চংকিংয়ের পাথরের তৈরি স্থানীয় বৌদ্ধ মন্দির এলাকা থেকে ৯০০টিরও বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) চংকিং শহরের ইনস্টিটিউট অব কালচারার হেরিটেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রত্নতত্ত্ববিদরা শহরের জিয়াংজিন এলাকার একটি পাথরের তৈরি বৌদ্ধ মন্দিরের প্রায় চার হাজার ৬০০ বর্গমিটার এলাকা খনন করে এ পুরাকীর্তিগুলো আবিষ্কার করেন।
ইনস্টিটিউট অব কালচারাল হেরিটেজের একজন প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ নিও ইয়িংবিনের মতে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুই বছরব্যাপী এ খননের মাধ্যমে তাঙ্গ রাজবংশ (৬১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৯০৭ খ্রিস্টাব্দ) এবং কোয়িং রাজবংশের (১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ-১৯১১ খ্রিস্টাব্দ) পর্যন্ত সময়কার ৫০টিরও বেশি স্থাপনা, সমাধি এবং খোদাই করা শিলালিপি পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, প্রাচীন চীনের স্থানীয় ইতিহাস এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে নতুন করে আবিষ্কৃত এ পুরার্কীতিগুলোর দারুন বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক এবং শৈল্পিক মূল্য যোগ করবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বিরল কোন প্রাণীর ছবি তুলতে হলে আপনার প্রয়োজন হবে দক্ষতা এবং সৌভাগ্য।
রুশ ফটোগ্রাফার সার্গেই গর্শকফের যে দুটোই রয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া গেল তার তোলা ছবিতে।
রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় অরণ্যে তার তোলা একটি সাইবেরিয়ান বাঘ (আমুর টাইগার)-এর ছবি এ বছরের সেরা বন্যপ্রাণীর ছবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এই মাদি মাঘকে দেখা যাচ্ছে ল্যান্ড অফ লেপার্ড ন্যাশনাল পার্কের একটি গাছকে জড়িয়ে ধরে আছে।
গাছের গায়ে ঘষা দিয়ে এবং প্রস্রাব করে এক বাঘ অন্য বাঘকে তার নিজের বিচরণ ক্ষেত্রের কথা জানিয়ে দেয়।
“ছবিটির আলো, রং এবং টেক্সচার ইত্যাদি দেখে মনেই হয় না এটি একটি ছবি। মনে হয় এটি একটি অয়েল পেইন্টিং,” বলছেন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতার একজন বিচারক রজ কিডম্যান।
“দেখে মনে হয় বাঘটি অরণ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমনকি বাঘের লেজটি পর্যন্ত মিশে আছে গাছের গুঁড়ির সাথে, বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।
এই ছবির আরও চমকপ্রদ দিক হলো যেভাবে ছবিটা তোলা হয়েছে।
এই ক্যামেরা-ট্র্যাপ যন্ত্র জঙ্গলের মধ্যে বাসিয়ে রাখা হয়। কোন বন্য প্রাণী এর আওতার মধ্যে এলেই ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ছবি তুলে রাখে।
সে জন্য সার্গেইকে জানতে হয়েছে কোথায় ক্যামেরা বসাতে হবে, কোন্ অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুলতে হবে ইত্যাদি। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার হিসেবে সেখানেই প্রয়োজন হয় দক্ষতা ও একাগ্রতা।
পূর্ব রাশিয়ায় অবৈধ শিকারের জেরে বাঘের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এসব বাঘের সংখ্যা এখন কয়েকশোতে ঠেকেছে বলে ধারণা করা হয়।
হরিণ, বুনো শুয়োর — আমুর টাইগারের প্রধান খাদ্য — তাদের সংখ্যাও কমেছে ব্যাপক হারে শিকারের ফলে।
আমুর টাইগার বিরল হয়ে পড়ায় তার ছবি তোলার কাজও বেশ কঠিন। সার্গেই যে সেরা ছবি তুলেছেন, তার জন্য তার ক্যামেরা-ট্র্যাপ যন্ত্রকে বসিয়ে রাখতে হয়েছিল ১০ মাস।
লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম প্রতি বছর বন্য প্রাণীদের সেরা ছবি পুরষ্কার দিয়ে থাকে। এটা দেয়া হচ্ছে গত ৫৫ বছর ধরে।
একটি বাচ্চা শেয়াল যেভাবে একটি বুনো হাঁসকে কামড়ে খাচ্ছে — এই ছবিটি তুলেছেন ফিনল্যান্ডের টিনএজ ফটোগ্রাফার লিনা হেকিনেন। ১৫-১৭ বছর বয়সী ফটোগ্রাফারদের ক্যাটেগরিতে এটি সেরা ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়।
শেয়ালটি তার খাবারকে অন্য শেয়ালের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একটি পাথরের খাঁজে ঢুকে পড়েছিল।
এটি একটি প্রবোসিস জাতের পুরুষ বাঁদরের ছবি। এটি অ্যানিমাল পোর্ট্রেট বিভাগে এবার সেরা ছবি হিসেবে বাছাই হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও দ্বীপে একটি অভয়ারণ্যে এই ছবিটি তোলা হয়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাঁদরটির নাকের দৈর্ঘ্যও বাড়তে থাকবে। বড় নাকের সাহায্যে তার ডাকও বেশি শোনা যাবে। এবং বাঁদরের দলের মধ্যে তার অবস্থানকেও পরিষ্কার করবে।
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতায় শুধু বন্য প্রাণীর ছবি তোলা হয় না।
ইউরোপের জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ইতালির মাউন্ট এট্নার এই ছবিটি আর্থস এনভায়রনমেন্ট ক্যাটেগরিতে সেরা ছবি নির্বাচিত হয়েছে।
এই ছবি তোলার জন্য লুচিয়ানো গুয়াডেনজিওকে প্রচণ্ড তাপ এবং আগ্নেয়গিরির বিষাক্ত ভাপ সহ্য করতে হয়েছে।
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতার সরিসৃপ বিভাগের এটি সেরা ছবি। এই গ্লাস ফ্রগ জাতের ব্যাঙটির মুখে মাকড়শা। হাইম এই ছবিটি তুলেছেন একুয়েডরের ম্যানডুরিয়াকু অরণ্যে। তখন প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। এর মধ্যেই তিনি এক হাতে ছাতা এবং ফ্ল্যাশ লাইট ধরে অন্য হাত দিয়ে ক্যামেরা পরিচালনা করেন।
উত্তর ফ্রান্সের নরমান্ডিতে এই ছবিটি তোলা হয়েছে। এর জন্য ক্যামেরায় বিশেষ ধরনের দ্রুত গতির শাটার ব্যবহার করা হয়েছে যাতে বোলতা দুটির পাখার ছবিকে ফ্রেমবন্দি করা যায়।
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতার আন্ডার ওয়াটার বিভাগের সেরা ছবি। এটা একটা ডায়মন্ড-ব্যাকড স্কুইড। ফিলিপিন্সের আনিলাও উপকূলে জলের তলে রাতের বেলা সোংডা এই ছবিটি তোলেন। স্কুইডটি প্রায় ৬-৭ সেন্টিমিটার দীর্ঘ।
এই বন বিড়ালের বাচ্চাগুলিকে দেখা যায় উত্তর-পশ্চিম চীনের চিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে। ছয় বছর ধরে অনুসরণের পর শানুয়ান এই ছবিটি তুলতে সমর্থ হন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন