পোশাকের পর এবার মানুষ ছুটছে সেমাই-চিনির বাজারে। ফলে জমজমাট হয়ে উঠেছে খাদ্যপণ্যের বাজার। সুপারশপগুলোয়ও ভিড় বেড়েছে। ভোক্তারা ঈদের সেমাই, চিনি, ঘি, পোলার চাল, গরম মসলা ও মাংস কেনাকাটা করছে। নিু আয়ের মানুষ চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলেও পরিবারের ছোট ছেলে-মেয়ের মুখে একটু ভালো খাবার তুলে দিতে সাধ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করছেন। সোমবার সরেজমিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ও সুপারশপ ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
এ দিন রাজধানীর কাওরান বাজার, মালিবাগ বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার, রামপুরাসহ বিভিন্ন স্থানের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও সুপারশপ ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার চাহিদামতো পণ্য বিক্রি করতে দোকানের সামনেই বিভিন্ন মানের সেমাই আর মসলার পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। এসব স্থানে ক্রেতাদের পণ্য কিনতে ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেমাই চিনি ও মসলা ছাড়াও গুঁড়ো দুধ, ঘি, সয়াবিন তেল, নারিকেল, সুগন্ধি চাল, কিশমিশ, বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদামসহ বিভিন্ন পণ্য ভালো বিক্রি হচ্ছে।
সেমাই : ঈদের আয়োজন যেন সেমাই ছাড়া চলেই না। তাই প্রতিবছরই ঈদ এলে সেমাইয়ের কদর বেড়ে যায়। রাজধানীর রামপুরা বাজারে সেমাই কিনতে আসা রোকনুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ঈদে বাসা-বাড়িতে সেমাই না হলে চলে না। ঈদের দিন সকাল থেকেই আত্মীয়রা আসতে থাকে। এবার করোনাকালে না হয় আসবে না। কিন্তু বাড়িতে ঈদের দিন সেমাই ছাড়া চিন্তাই করা যায় না।
রাজধানীর রমপুরা বাজার ও কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা চিকন সেমাই কেজিপ্রতি মান ও দোকান ভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর প্যাকেটজাত সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চিকন সেমাই ২০০ গ্রাম প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা। অন্যদিকে খোলা লাচ্ছা সেমাই কেজি প্রতি পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হয়েছে ৩০-৬০ টাকা।
গুঁড়া দুধ : সেমাই, ফিরনি রান্নার অপরিহার্য অনুষঙ্গ গুঁড়ো দুধের বিক্রিও বেড়েছে। চাহিদা বাড়ায় বিক্রেতারাও গুঁড়া দুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারসহ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও সুপার শপ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। রাজধানীর শান্তিনগরে মা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গুঁড়া দুধ কিনতে আসা জাহিদুল বলেন, সেমাইসহ বিভিন্ন মিষ্টান্ন বানাতে দুধের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া রাজধানীতে খাঁটি তরল দুধ সচরাচর পাওয়া যায় না, তাই গুঁড়া দুধের ওপরই ভরসা করতে হয়। একই স্থানের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডানো প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৬২০ টাকা। প্রতি কেজি ডিপ্লোমা গুঁড়া দুধ বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ৬৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চিনি : কাওরান বাজারে চিনি কিনতে আসা হাফিজ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, রমজানজুড়ে চিনির দাম বাড়তির দিকে ছিল। সপ্তাহের ব্যবধানে ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা আরেক ধাপ চিনির দাম বাড়িয়েছে। একই বাজারে ব্যবসায়ী আব্দুল রাজ্জাক বলেন, পাইকারি বাজারে চিনির দাম বেশি। বেশি দামে কিনে আনতে হয়, তাই বেশি দামেই বিক্রি করছি। তিনি আরও বলেন, যে খোলা চিনি এক সপ্তাহ আগে সর্বোচ্চ ৭২ টাকায় বিক্রি করেছি, তা এখন ৭৬ টাকায় বিক্রি করছি। প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ টাকা কেজি, যা সাতদিন আগে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গরম মসলা : ঈদকে কেন্দ্র করে গরম মসলার বিক্রিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে দামও। গত সপ্তাহে যে জিরা প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন তা ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এলাচ, কিশমিশ, দারুচিনির দামও কিছুটা বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি এলাচ ২৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ২৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বিক্রেতারা প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি করছে ৮০০ টাকায়, যা সাতদিন আগে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা, যা সাতদিন আগে ৪৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কাওরান বাজারের মসলা ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন যুগান্তরকে জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে বাড়তি চাহিদাকে সামনে রেখে মসলার বাজার কিছুটা চড়া।
একই বাজারে মসলা কিনতে আসা হাসিনা বেগম যুগান্তরকে বলেন, ঈদের দিন বাড়িতে কিছু না কিছু ভালোমন্দ রান্না করতে হয়। তাই খাবার তৈরি করতে বিভিন্ন ধরনের মসলার প্রয়োজন হয়। তিনি আরও বলেন, চাকরির কারণে সাধারণত বাজারে আসা হয় না। মাঝেমধ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী বাসার পাশের মুদি দোকান থেকে মসলা কিনতে হয়। কিন্তু ঈদে বেশি মসলার প্রয়োজন হওয়ায় বাজারে চলে এসেছি। তবে মনে হচ্ছে, সব মসলার দাম একটু বেশি।
মাংসের বাজার : ঈদকে ঘিরে অস্থির হয়ে উঠছে মাংসের বাজার। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, মাংসের দোকানে ক্রেতার ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। রাজধানীর বাজারগুলোয় সব শ্রেণির মানুষ তাদের চাহিদামতো মাংস কিনে বাড়ি ফিরছে। আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিক্রেতারা আবারও দাম নিয়ে কারসাজি শুরু করেছে। বাড়িয়ে দিয়েছে দাম। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকা, যা এক মাস আগেও ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৯০-৬২০ টাকা। কাওরান বাজারের মাংস ব্যবসায়ী হারুন সিকদার বলেন, সামনে ঈদ, তাই মাংসের দাম একটু বেশিই রাখা হচ্ছে। আর ঈদের আগ পর্যন্ত মাংসের দাম আরও বাড়বে বলেও তিনি জানান।
এদিকে বাজারে এদিন ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৫৫ টাকা কেজিত, যা সাতদিন আগেও ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লেয়ার প্রতি কেজি ২৩০-২৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা সাতদিন আগে ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাকিস্তানি মুরগি ২৪০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন