আমার রান্নার হাত বরাবরই ভালো। আর ইন্দোনেশিয়ায় এসে আমার এই রান্নার হাতের দক্ষতা আরও বাড়ানোর সুযোগ পেয়ে গেলাম। শেফ আর রাঁধুনির মধ্যে যে পার্থক্য বিদ্যমান এই রান্নার ক্লাসে না এলে তা জানতামই না। জাভার মানুষের খাদ্যাভ্যাস আর আমাদের বাংলাদেশিদের খাদ্যাভ্যাস প্রায় একই। তাই নির্দ্বিধায় যেকোনো বাংলা খাবারই ইন্দোনেশিয়ার মানুষের মন কাড়ে। ইন্দোনেশিয়া থেকে যা কিছুই সঙ্গে নিয়ে যায় না কেন তা চিরস্থায়ী হবে না। আর যদি আমি এই রন্ধনশিল্পটা আয়ত্ত করতে পারি, তাহলে অন্তত সারা জীবন এ ইন্দোনেশিয়ান স্বাদ সবার কাছে পোঁছাতে পারব। তাই আমিও এখানে এসে ইন্দোনেশিয়ান খাবার রান্না শেখার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। আমার শিক্ষক ভাগ্য সব সময়ই সুপ্রসন্ন। এবার রান্না শিক্ষক হিসেবে পেলাম ইবু (মা/শিক্ষিকা) রেটনো সাইয়ার সেপতিয়ানিকে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কুলিনারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। রেটনো ম্যাম বাংলাদেশি খাবারের প্রতি অতি আসক্ত। তাই একজন বাঙালি রাঁধুনিকে তিনি ছাত্র হিসেবে গ্রহণ না করে বরং গ্রহণ করলেন সন্তান হিসেবে। তাই ক্লাসের প্রতিটি বিষয় তিনি আমাকে হাতে ধরে শেখাতেন। সেটা পেঁয়াজ কাটা হোক আর লবণ দেওয়া, সবকিছুতেই তার মাতৃভাব বিরাজ করত। আর আমিও চেষ্টা করতাম আমার সর্বোচ্চ দিয়ে।বিজ্ঞাপনবিজ্ঞাপন
নাসি গোরেং ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত খাবারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নাসি (ভাত) গোরেং (ভাজা)। অনেকটা ফ্রাইড রাইসের মতো মনে হবে। কিন্তু পার্থক্য এখানেই! মনে হওয়া আর বাস্তবতা এক জিনিস নয়। তাই এর স্বাদ গ্রহণ না করা পর্যন্ত বোঝা যাবে না পার্থক্যটা আসলে কোথায়। নাসি গোরেংকে সাধারণত ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় খাবার হিসেবে বলা যায়। প্রস্তুত করা হয় পেঁয়াজ, রসুন, ঝাল, লবণ, তেল ও সাধারণ ভাত দিয়ে। আর এতে প্রয়োগ করা হয় ইন্দোনেশিয়ান কেচাপ, যা ফ্রাইড রাইচ থেকে নাসি গোরেংকে আলাদা করেছে। জাভার যেকোনো রেস্তোরাঁর সহজেই পাওয়া যায় এ খাবার। সমগ্র ইন্দোনেশিয়ায় অতিথি আপ্যায়নে নাসি গোরেং বিখ্যাত।
গাডো গাডো জাকার্তা মহর এশিয়ার নিউইয়র্ক বলে সর্বাধিক পরিচিত হলেও এই শহরটি গাডো গাডোর শহর হিসেবে পরিচিত। গাডো গাডো জাভার অন্যতম স্ট্রিট ফুড হিসেবে পরিচিত। মাছ থেকে তৈরি একধরনের চপ। এটি পরিবেশন করা হয় সবজি আর বাদামের সমন্বয়ে তৈরি একপ্রকার সস দিয়ে। যার স্বাদ অতি সহজেই সবার মন কাড়ে।
নাসি উদুক নাসি উদুক জাভার অন্যতম আরেকটি বিখ্যাত খাবার। নারকেলের দুধ, মাংস ও বিভিন্ন প্রকারের সবজি দিয়ে প্রস্তুত করা হয় এ খাবার। পরিবেশন করা হয় চিকেন ফ্রাইসহ অন্যান্য ইন্দোনেশিয়ান খাবার দিয়ে। ৪০০ বছরের পুরোনো এ খাবার এখনো জাভার মানুষ তাদের সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক অংশ হিসেবে বহন করে চলেছে।
পাডাং পাডাং কোনো নির্দিষ্ট খাবার নয়। বলা যায় জাভার মানুষের যখন ঝালযুক্ত খাবারের দরকার পড়ে তখন তারা পাডাং-এ এসে হাজির হয়। এখানে সহজেই দেখা যায় বাংলাদেশি খাবারের রমরমা ছড়াছড়ি। যদিও সব খাবার দেখতে বাংলাদেশি খাবারের মতো, তবুও স্বাদটা একটু আলাদা। জাভার মসলা আর বাংলাদেশি মসলার মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট। পাডাংয়ের সব খাবারের স্বাদ মুখে লেগে থাকার মতো। এখানে পাওয়া যায় গরু ভুনা, মুরগি ভুনা, ডিম ভুনাসহ মুখরোচক খাবার।বিজ্ঞাপন
তেমপে গোরেং তেমপে ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার। প্রস্তুত করা হয় সয়াবিন থেকে। আংরিংকান (জাভার রাস্তার পাশের খাবারের দোকান) ও বুর্জ-তে (সাধারণ খাবার হোটেল) সহজেই মেলে এ খাবার। ভাজাপোড়া যাঁদের পছন্দ, তাঁরা অবশ্যই জাভা ভ্রমণে এই তেমপে গোরেং-এর স্বাদ নিতে ভুল করবেন না। তাহু (সয়াবিন থেকে প্রস্তুত) খাবারটিও জাভার মানুষ বিভিন্ন উপায়ে খেয়ে থাকে।
মি আইয়াম মি (নুডলস) ইন্দোনেশিয়ানদের অন্যতম প্রিয় একটি খাবার। আইয়াম (মুরগি) দিয়ে সেদ্ধ সুপি নুডলস জাভার মানুষ এক দিন না খেয়ে থাকতে পারে না। মি বহুল প্রচলিত ইন্দোনেশিয়ান খাবার বলা যায়, মি ইন্দোনেশীয়দের প্রাত্যহিক আধুনিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে।
এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ান খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো সাম্বাল, সাতে, বাক্স, সোতো, নাসি উদুক, বাকপাও, পেপেছ ইকান, পেমপেক, মার্তাবাক, কেতোপ্রাক, বালাদো তোরং, রেন্দাং, সিওমাই, ইকান বাকার, ওটাক-ওটাক ইত্যাদি অন্যতম।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন