ছেলেবেলা থেকেই আমরা জেনে বড় হয়েছি যে, প্রাকৃতিক উপাদানই সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। ঠান্ডা লাগলে বা সর্দি-কাশি হলে দাদি-নানিদের সেই আদা চা কিং তুলসির রসের কথা মনে আছে তো? বাড়ির শিশুটির ঠান্ডা লেগে বুকে গড়গড় শব্দ হচ্ছে, দাও তাকে এক চামচ আদার রস খাইয়ে। দাদা-নানার চায়ে নিয়মিত আদার ব্যবহার তো ছিলই। এগুলোর জন্যই মূলত সর্দি, কাশি, জ্বর এবং ফ্লু দূরে থাকতো।
আদা কেবল মৌসুমী সংক্রমণের চিকিত্সা করতে সহায়তা করে না, হজম এবং বিপাকের উন্নতির জন্য এটি একটি দুর্দান্ত প্রতিকার। সর্বোপরি চুল ও ত্বকের মান উন্নত করতে বেশ কয়েকটি আয়ুর্বেদিক ওষুধে আদা ব্যবহার করা হয়। জেনে নিন আদার সম্পর্কে বিস্তারিত-
আদা কী? জীবতাত্ত্বিকভাবে, আদা জিঙ্গিবার অফিফিনেল নামে পরিচিত ফুলের গাছের মূল বা রাইজম, যা ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয়। আদা জিঙ্গিবেরেসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। আশ্চর্যজনক ঔষধি গুণাবলীর জন্য পরিচিত আদা বেশ কয়েকটি আয়ুর্বেদিক ওষুধে সক্রিয় উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
আদার পুষ্টি মূলের মশলা হওয়ায় আদা ভিটামিন বি ৬ এর মতো পুষ্টি এবং ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ জাতীয় ডায়েটার খনিজে ভরা। কাঁচা আদায় প্রায় ৭৯% পানি, ১৮% কার্বোহাইড্রেট, ২% প্রোটিন এবং ১% ফ্যাট রয়েছে। আদা ব্যবহার করার সর্বোত্তম উপায় হলো খাবার এবং পানীয়তে কাঁচা আদা যোগ করা।
আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কীভাবে সহায়তা করে দীর্ঘকাল ধরে প্রচুর পুষ্টিকর গুণগত কারণে আদা ঔষধি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এমনকি বেশ কয়েকটি আয়ুর্বেদিক ওষুধে সক্রিয় উপাদান হিসাবে আদা ব্যবহার করা হয়। আদায় উপস্থিত জিঞ্জারলের কারণে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দ্রুত সাহায্য করে।। এছাড়া আদায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য, যা বেশ কয়েকটি রোগকে দূরে রাখতে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে।
কীভাবে প্রতিদিনের ডায়েটে আদা যোগ করতে পারেন আদা শরীরের জন্য উপকারী তাতে সন্দেহ নেই। তবে আদা খেলে হজম প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। অতএব, উপকার পেতে আদা পরিমিতভাবে ব্যবহার করা জরুরি। গড়ে প্রতিদিন আমাদের শরীরে প্রায় ৪ গ্রাম আদা দরকার।
ডায়েটে আদা রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো চায়ের সাথে যুক্ত করা। এটি কেবল স্বাদ বাড়িয়ে তুলবে না, সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যগুণও বাড়িয়ে তুলবে।
আদা বমি বমি ভাব নিরাময়ে সহায়তা করে। এটি গর্ভবতী নারীদের অনেকে মর্নিং সিকনেসে ভুগে থাকেন। তাদের জন্যও আদা বেশ উপকারী।
আমাদের দেশের অনেক রান্নায়ই আদা ব্যবহার করা হয়। এটি তরকারির ঝোল গাঢ় করতে সাহায্য করে। স্যুপ, তরকারি, সস ইত্যাদি রান্নায় আদা ব্যবহার করলে আরও বেশি উপকার পেতে পারেন।
কয়েকটি তুলসি পাতা ও কিছুটা আদা পানিতে সেদ্ধ করে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিন। সর্দি, কাশি এবং গলা ব্যথা ইত্যাদির মতো বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। এটি আদার উপকারিতা লাভের একটি প্রচলিত পদ্ধতি।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন