আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বাংলাদেশ

মাছ বিক্রিও করতে পারছেন না, খাবারও দিতে পারছেন না চাষীরা

ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহার তথ্যমতে, সারাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪২ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রতি বছর উৎপাদন হয় প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ দেশের প্রায় ১০ ভাগের একভাগ মাছ উৎপাদন হয় ময়মনসিংহে।

করোনা সংক্রমণের পর থেকে ময়মনসিংহ অঞ্চলের মাছ চাষীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে হাইব্রিড উপায়ে পাঙ্গাশ, কৈ, তেলাপিয়া, শিং, মাগুর, টেংড়াসহ নানা জাতের মাছ উৎপাদনকারীরা। সেই সঙ্গে মাছের হ্যাচারির মালিকরাও পড়েছেন সঙ্কটে। দেশি জাতের মাছ উৎপাদনকারীরাও এর বাইরে নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঙ্গাশ, কৈ, তেলাপিয়া, শিং, মাগুরসহ নানা জাতের হাইব্রিড মাছ চাষীরা অর্থের অভাবে মাছের খাবার দিতে পারছেন না। স্বাভাবিক সময়ে ১০-২০ শতাংশ নগদ অর্থ দিলে মাছের সব খাবার দিতেন ডিলাররা। এখন নগদ অর্থ ছাড়া মাছের খাদ্য দিচ্ছেন না তারা। অন্যদিকে ব্যাংক কিংবা অন্য কারও কাছ থেকে ঋণও পাচ্ছেন। ফলে অনেক চাষী মাছের খাদ্য দিতে পারছেন না।

সাধারণ সময়ে ময়মনসিংহ থেকে কৈ, পাঙ্গাশসহ অন্যান্য মাছ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সারাদেশে বিক্রি হতো। লকডাউনের পর থেকে কোনো পাইকার কিংবা চাষী ময়মনসিংহের বাইরে মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে যেতে পারছেন না। ফলে মাছের দামও পাচ্ছেন না তারা। পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, কৈ মাছের দাম মণ প্রতি প্রায় ১ হাজার টাকা কমে গেছে। তবে এ অবস্থা চলতে থাকলে মাছের দাম আরও কমতে পারে। দাম না পাওয়ায় ইতোমধ্যে অনেকে মাছ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার মধ্যস্বত্বভোগীরা চাষীদের কাছ থেকে একেবারে কম দামে মাছ কেনার চেষ্টা করছেন। এছাড়া এসব হাইব্রিড মাছ খেলে করোনা হতে পারে– এমন গুজবও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফেলেছে চাষীদের।

সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে মাছ চাষীরাও রয়েছেন। তাদের প্রণোদনা দেয়া হবে। তবে কী উপায়ে দেয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অন্যদিকে মাছ পরিবহন লকডাউনের আওতামুক্ত রয়েছে। কোথাও মাছের গাড়ি সমস্যায় পড়লে তারা সেটার সমাধান করে দিচ্ছেন। তবে মাছ চাষীরা কীভাবে খাদ্য কিনবেন, সেটার কোনো সমাধান দেখছেন না।

সোমবার (২০ এপ্রিল) ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাসমূহের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছি, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। কৃষি খাতে আরও বেশি। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে আমরা কৃষি ঋণ দিচ্ছি। কৃষি মানে শুধু ধান ফলানো নয়। মৎস্য পোল্ট্রি, ডেইরি থেকে শুরু করে ফলমূল, ফুল যা যা আছে – সবকিছু মিলেই এই প্যাকেজ।’

এই করোনা সঙ্কটে মাছ চাষী, খাদ্যের ডিলার ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কী ভাবছেন, কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন, বিস্তারিত তুলে ধরা হলো –

যা বলছেন মাছ চাষীরা
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ১১০ শতাংশ জমির পুকুরে প্রায় তিন লাখ কৈ মাছের পোনা ছাড়েন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, তার মাছের এই চালান তুলতে প্রায় ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা লাগবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এক মাসের মধ্যে মাছগুলো বিক্রির উপযোগী হবে। এই সময় প্রায় ৮-৯ লাখ টাকার খাদ্যের প্রয়োজন হবে। কিন্তু গত ১৩ দিনে কোনো খাদ্য দিতে পারেননি। কারণ, ডিলার এখন আর নগদ টাকা ছাড়া মাছের খাদ্য দিচ্ছেন না।

রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে ১০-২০ শতাংশ টাকা দিলে মাছের খাদ্য দিত ডিলাররা। কিন্তু করোনার কারণে নগদ টাকা ছাড়া কোনো খাদ্য দিচ্ছে না। টাকার জোগাড় করতে না পারায় ১৩ দিন ধরে মাছকে খাবার দিতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘কৈ মাছকে খাবার না দিতে পারার আরেকটা সমস্যা আছে। বড় কৈ ছোট কৈ খেয়ে ফেলে। ফলে মাছ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে খাবার দিতে না পারায় মাছের বৃদ্ধিও কমে গেছে। ’

একই উপজেলার রাজাবাড়ী গ্রামের শ্রীবাস চন্দ্র দাস চাষ করেছেন তেলাপিয়া মাছ। তার প্রায় ৭০-৮০ মণ তেলাপিয়া করোনা সংক্রমণের শুরু সময়ই বিক্রির উপযোগী হয়েছে। কিন্তু তেলাপিয়াসহ কৈ, শিং, মাগুর– হাইব্রিড জাতের এসব মাছ খেলে করোনা হয়, এমন গুজবের কারণে এতদিন মাছ কেনেননি পাইকাররা (মধ্যস্বত্বভোগী)। আড়তে নিলেও ফিরিয়ে আনতে হয়েছে তাকে। তবে পাইকাররা তেলাপিয়া মাছ বাজারে তুলতে বললে রোববার (১৯ এপ্রিল) বিক্রির জন্য মাছ তোলেন তিনি।

শ্রীবাস চন্দ্র দাস বলেন, ‘হাইব্রিড পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, কৈ, শিং– এ জাতীয় মাছ খেলে করোনা হয়, এটা ছড়িয়ে গেছে। কয়েক দিন বাজারে তেলাপিয়া বিক্রি করতে গেছিলাম। কিন্তু পাইকাররা নেয়নি। তিন সপ্তাহ পর আজকে বাজার থেকে খবর দিছে, এখন পাঠালাম।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় ৭০-৮০ মণ তেলাপিয়া হবে আমাদের। যে বাজার ছিল ১৩০ টাকা কেজি, সেটা এখন ১০০-১০২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যেটা ৪৮০০-৫০০০ টাকা মণ বিক্রি হতো, এখন সেটা ৩৫০০-৩৭০০ টাকা মণে হচ্ছে। পাঙ্গাশের আগে বাজার ছিল ৩৭০০-৩৯০০ টাকা মণ। এখন ২৫০০-২৭০০ টাকা মণ। অর্থাৎ তেলাপিয়া, পাঙ্গাশে মণপ্রতি প্রায় ১২০০-১৫০০ টাকা কমে গেছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দিন দিন মাছের দাম আরও কমতে থাকবে।’

‘আগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাছ যেত, এখন সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। এক থেকে দেড় লাখ টাকার মাছ নিয়ে কেউ রিস্কে যেতে চায় না। তাই ময়মনসিংহের ভেতরেই কম দামে মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে’, যোগ করেন শ্রীবাস।

আলমগীর হোসেন নামের আরেক মাছ চাষী বলেন, ‘মাছ বিক্রির সময় করোনার প্রভাব পড়বেই। দূরে কোথাও মাছ নিয়ে বিক্রি করা যায় না। দূরে না নিয়ে গেলে দাম পাওয়া যায় না। তবে কী হয় বলা যাচ্ছে না। এ জন্যই বাকি খাদ্য দিচ্ছে না ডিলার। করোনায় কেউ মারা গেলে টাকা পাবে না। নানা কারণ।’

তিনি বলেন, ‘যত টাকার খাদ্য লাগে, তত টাকা তো একজন চাষীর পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। নতুন করে তো ঋণ পাওয়ারও সুযোগ নেই। এটা একটা বড় সমস্যা।’

কেন নগদ ছাড়া খাদ্য দিচ্ছেন না ডিলার?

মুক্তগাছা উপজেলার কালীবাড়ি বাজারের মাছের খাদ্যের ডিলার জয়নাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘চাষীদের কাছে যে টাকা-পয়সা ছাড়ছি, তারা তো মাছ বিক্রি করতে পারতেছে না। পার্টি মাছ নেয় না, বাজার খুব খারাপ, বাজারে মাছ খাচ্ছে না। বিক্রি না করতে পারার জন্য আমার কাছে ক্যাশ আসছে না। আমার কাছে যা ক্যাশ ছিল, সব শেষ করে ফেলছি। চাষীরাও কিছু কিছু দিছে, ওইটাও শেষ করছি। এখন আর টাকা নাই। অন্যদিকে কোম্পানি ক্যাশ ছাড়া খাদ্য দিচ্ছে না। তাই এখন আমিও চাষীদের নগদ টাকা ছাড়া খাদ্য দিতে পারতেছি না।’

বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত কথা হয় ময়মনসিংহের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সরকার একটা প্রণোদনা দিচ্ছে মাছ চাষীদের। ছোট, মাঝারি চাষী। তবে এটার ক্রাইটেরিয়াগুলো কী হবে, মন্ত্রণালয় থেকে এখনও সেই ধরনের কোনো নির্দেশনা পাইনি। কত একর পর্যন্ত মাছ চাষ করলে সে ছোট চাষী, কত একর হলে মাঝারি চাষী হবে ইত্যাদি। তাছাড়া আমাদের তো বিভিন্ন সমস্যা আছে। কেউ একটা পুকুর নিয়ে মাছ চাষ করছে, তার একটা ক্ষতিই বড় ক্ষতি। আবার দেখা যাচ্ছে, কারও ৩০টা পুকুর আছে, তার ক্ষতিটাও অনেক বড়। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের একটা নীতিমালা করে দেবে, আমরা ছোট ও মাঝারি ক্যাটাগরির কথা বলেছি। হ্যাচারির নাম্বারগুলো আমরা ঠিক করে দিচ্ছি, নার্সারিগুলোর কাছ থেকে নিচ্ছি। পরে কৃষকদের কাছ থেকে নেব। গ্রাম পর্যায় থেকে তাদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ের পর প্রণোদনা দেয়া হবে।’

লকডাউন থাকলেও সারাদেশে মাছ সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় কোনো সমস্যায় পড়লে তা তারা সমাধান করেন বলেও জানিয়েছেন ময়মনসিংহের এই মৎস্য কর্মকর্তা।

দিলীপ কুমার সাহা বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে আমরা সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় মাছ পাঠিয়েছি। ঢাকা অফিসের একটা হটলাইন নম্বর আছে। সমস্যা হলে আমাদের জানালে ময়মনসিংহের ভেতরে হলে আমরা নিজেরাই তা সমাধান করছি। কিন্তু যখন জেলার বাইরে যাচ্ছে হ্যাচারি বা মাছের চালান, তখন আমাদের কিছু নম্বর আছে, তা উপজেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই তারা দিয়ে দেবে। কোথাও আটকা পড়লে আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই ওই উপজেলার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টার সমাধান করতে পারব।’

তবে কৈ, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া চাষীরা যে টাকার অভাবে মাছের খাদ্য দিতে পারছেন না, এ বিষয়ে কোনো সমাধান দিতে পারেননি ময়মনসিংহ জেলার মৎস্য কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

টি ব্যাগের ব্যবসা করে আয় করুন প্রচুর অর্থ

চা পানীয়টি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। প্রিয়জনের সাথে বৈঠক থেকে শুরু করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা সবেতেই চা (Tea) আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে এখন মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশী স্বাস্থ্য সচেতন। সাধারণ চায়ের জায়গায় এসেছে, গ্রীণ টি, হার্বাল টি, লেমনগ্র্যাস টি, ব্লু টি ইত্যাদি। আর প্রকারভেদের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে টি ব্যাগের গুরুত্ব। কারণ এটি খুব অল্প সময়ে তৈরি করা যায় এবং যে কোন স্থানে এর থেকে চা বানানো যায়। অফিস ও হোটেলগুলিতে এর যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। তাই টি ব্যাগ তৈরীর ব্যবসাটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জন্য লাভদায়ক।

চা উৎপাদনকারী দেশ গুলির মধ্যে অংশ নেয় চীন, ভারত , কেনিয়া , শ্রীলঙ্কা , জাপান , ইন্দোনেশিয়া , ভিয়েতনাম, তানজেনিয়া , মালয়, বাংলাদেশ, তার্কী এবং চা পানকারী দেশ গুলির মধ্যে ইংল্যান্ড, জর্মানী, কানাডা ও আমেরিকার বেশ নাম রয়েছে।

এ কারণে বেশিরভাগ সংস্থা টি ব্যাগ বিক্রি শুরু করেছে। আপনি যদি নতুন ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনি টি ব্যাগ মেকিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটির মাধ্যমে আপনি খুব ভাল অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যিনি তৈরী করেন, তার থেকে নিয়ে এসে আপনি বাইরে বিক্রি করতে পারেন, এতে আপনার বিনিয়োগের দরকার পড়বে না। কিন্তু যদি বেশী লাভ করতে চান, তবে বিনিয়োগ করে নিজের ব্যবসা শুরু করুন।

টি ব্যাগ ব্যবসা শুরু করার জন্য জায়গা (How to start) –

এটি শুরু করার জন্য আপনি কোনও জায়গা ভাড়া নিতে পারেন। আপনার নিজের জমি থাকলে ব্যবসার জন্য সুবিধা হবে। এমন জায়গা চয়ন করুন, যেখানে মানুষের সমাগম রয়েছে। টি ব্যাগ তৈরীর জন্য আপনাকে মেশিন ইনস্টল করতে হবে।

চা ব্যাগ ব্যবসায় বিনিয়োগ –

আপনি যদি বড় আকারে ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে আপনাকে বেশী অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এর মেশিনটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল, সুতরাং বেশী পরিমাণ রাশি বিনিয়োগের দরকার রয়েছে এই ব্যবসায়, তবে আপনি যদি ব্যাংক থেকে লোণ নেন, তবে আপনি ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

চা ব্যাগ তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল –

ফিল্টার পেপার –

এর ভিতরে চায়ের পাতা স্টোর করতে হবে। এই কাগজটি সুক্ষ ছিদ্রযুক্ত এবং পাতলা, পাশাপাশি সহজে ভিজে যায় না, তাই এই কাগজটি চা ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

চা পাতা –

আপনি যেমন প্রকারের ব্যাগ বিক্রি করতে চান, তেমন চা পাতা কিনতে হবে।

বিভিন্ন প্রকারের চা –

সাধারণ চা, গ্রীণ টি, উলং টি, ব্ল্যাক টি, হার্বাল টি

চা ব্যাগগুলিতে চা পাতা পূরণ করার প্রক্রিয়া –

চা ব্যাগ তৈরীর মেশিনের সাহায্যে প্রস্তুত চা পাতাগুলি ফিল্টার পেপারে পূরণ করতে হয়। সাধারণত প্রায় ২-৪ আউন্স চা পাতা একটি টি ব্যাগে ভরা হয়। এর পরে, একটি প্যাকিং মেশিনের সাহায্যে ব্যাগটি সিল করা হয়। টি ব্যাগের সাথে একটি সুতো সংযুক্ত থাকে।

চা ব্যাগ ব্যবসায় থেকে লাভ –

আপনি চায়ের পাতার গুণমান অনুযায়ী ব্যাগের দাম নির্ধারণ করতে পারেন। এই ব্যবসা থেকে খুব ভাল লাভ করা যায়। এর আরও বিক্রয়ের জন্য, আপনি বাজারে পাইকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এগুলি ছাড়াও আপনি হোটেল বা অফিসের লোকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই ব্যবসা আপনাকে মাসে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন দিতে পারে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com