বাংলাদেশের দেশী বিলুপ্তপ্রায় মাছ গাং মাগুরের পোনা উৎপাদন গবেষণায় সফল হয়েছেন ময়মনসিংহের হ্যাচারি উদ্যোক্তা নূরুল হক। এক বছর টানা ব্যবহারিক গবেষণার পর এই সাফল্য অর্জন করেন তিনি।
মাগুরের সঙ্গে আকৃতিগত মিল না থাকলেও মাছটির নাম গাং মাগুর। নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জের হাওর কিংবা নাটোর সিরাজগঞ্জের চলনবিলে এক সময় দেখা মিলত মাছটির। কোনো কোনো এলাকায় পরিচিত ছিলো গাগড় মাছ হিসেবে।
এই মাছটিও বিলুপ্তির তালিকায়। তাই নূরুল হক তার পোনা উৎপাদন গবেষণায় বছরখানেক আগে যুক্ত করেন গাং মাগুরকে।
ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র ফিস সীড হ্যাচারীর সত্ত্বাধিকারী নুরুল হক জানালেন, তিনিই প্রথম এই গাং মাগুরের ব্রিড করলেন। ২০১৪ সালে থেকে তিনি গাং মাগুর সংগ্রহে নামেন এবং খবর পান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেও কিছু গাং মাগুর সংগ্রহে রয়েছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ সুবিধা কম থাকায় ডক্টর আলী রেজা নূর তাকে গাং মাগুরগুলো দেন ব্রিড করার জন্য ।
১৯৯৮ সাল থেকে মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন গবেষণায় দৃষ্টান্তমূলক সাফল্য রয়েছে নূরুল হকের। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই গাং মাগুর নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী তিনি।
নূরুল হক আরো জানান, তিনি প্রথম ১৯৯৮ সালে কর্মাশিয়ালি দেশী মাগুরের পোনা উৎপাদান শুরু করেন। ১৯৯৯ সালেও দেশী শিং মাগুরের পোনা উৎপাদন করেন। ২০০০ সালে তিনি পাবদা মাছের পোনা উৎপাদন করেন। ২০০২ সালে করেন দেশী কৈ মাছের পোনার উৎপাদন।
সেই ধারণা থেকে এই নতুন গাং মাগুর খুব তাড়াতাড়ি বিস্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পোনা উৎপাদন সাফল্যের পর এখন চলছে গাং মাগুরের বৈশিষ্ট ও স্বভাব নিরুপণের কাজ।
নূরুল হক জানান, এই গাং মাগুরকে যদি চাষে আনা যায় তবে তাকে বানানো খাবারে অভ্যস্ত করাতে হবে। খাবার খাওয়ার পর মাছের উন্নতিও দেখা যায়। মাছের জাত যদি বাছাই করা কাজ করা যায় তবে মাছের ওজন ও বৃদ্ধি বেশী হবে।
বহুদিন পর আবার ফিরে আসছে গাং মাগুর, এ নিয়ে আশা জেগেছে এলাকার চাষীদের মাঝেও। তারা জানান, এই গাং মাগুর দেখেছেন ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে। গাং মাগুরের জাত গবেষণা এবং পোনা উৎপাদন মৎস চাষ বিপ্লবে নতুন এক শুভ বার্তা।
গবেষক এবং পোনা উৎপাদক নূরুল হক আশা করছেন নতুন জাতের এই মাছটির পোনা আগামী বর্ষা মৌসুম নাগাদ কৃষক পর্যায়ে দেওয়া সম্ভব হবে এবং গাং মাগুর চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবে। অন্যদিকে বিলুপ্ত প্রায় গাং মাগুরের জাত রক্ষা পাবে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন