ছাদকৃষি
ছাদটি যেন এক টুকরো ‘গ্রাম’
লেখক
বাংলা নিউজ ২৪এক পলকে পুরো ছাদ গ্রামটি |
ঢাকা: গ্রামের কথা মনে পড়লেই স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে উঠে সবুজ-শ্যামল, শান্ত, ছায়াঘেরা, মনোরম পরিবেশ। খাল, বিল, আর পুকুরে পদ্ম ফুল। গাছে গাছে পাখিদের কোলাহল।
বন্দে আলী মিয়া কবিতায় যেমনটা বলছিলেন ‘আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান, আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ।
ফুল-ফলসহ বিভিন্ন গাছপালায় নিবিড় ছায়াঘেরা একেকটি গ্রাম। শহুরে জীবনে এমন চিত্র দেখা দুষ্কর।
সেই চিত্রটিই বাড়ির ছাদে ফুটিয়ে তুলেছেন রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বর কাফরুল থানার বাসিন্দা মিরাজ মিজু ও কাজল দম্পতি।
মিরাজ মিজু পেশায় সাংবাদিক, কাজল ব্যাংকার। আপাদমস্তক ব্যস্ত এ দুই মানুষ তাদের বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন এক টুকরো গ্রাম।
কী নেই তাদের বাড়ির ছাদে। ফুল-ফলের নানা প্রজাতির গাছ, বিভিন্ন রকমের পাখি এবং ছাদ পুকুরে নানা রংয়ের মাছ। বাড়ির ছাদটি যেন গ্রামীণ ক্যানভাস। আর সে কারণেই আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও সহকর্মীরা তাদের ছাদে আসেন ছবি তুলতে এবং সময় কাটাতে।
গৃহকর্তী কাজল জানালেন, তাদের বাড়ির আসলে ওভাবে কোনো নাম নেই। তবে তার দেওয়া একটি নামটা হলো ‘গ্রিন স্টেশন’। বাড়িটা মূলত টিনশেড। একটা অংশে দোতলা। ওই অংশেই তাদের বসবাস। বাগানের সম্পূর্ণ রূপ তৈরি হতে মোটামুটি দুই বছরের মতো সময় লেগেছে। আর ছাদপুকুর হতে লেগেছে ছয় মাসের মতো।
ফুল-ফল গাছের সমাহার
ছাদটা দুইটা অংশ নিয়ে। একটা নিচে আরেকটা ওপরে। নিচের ছাদে আছে গাছ আর পাখি। এই অংশে এলেই যে কারোর মন জুড়িয়ে যাবে। সবুজ শ্যামল আবহ যেকোনো মানুষের মনকে আকৃষ্ট করবে। গ্রামের কথা মনে পড়লে এখানে এলে গ্রামের আবহ পুরোটাই মিলবে।
এখানে রয়েছে ডালিম, করমচা, কামরাঙা, আমড়া, জাহটিকাবা (ব্রাজিলের একটা ফল), লেবু, কমলা, জাম্বুরা, রামভুটান, তুলসী, পুদিনা, পেয়ারা, সাজনা, নয়নতারা, বাগানবিলাশ, বেলি, হাজারি গোলাপ, ক্যাকটাস, হাসনাহেনা, ট্যাঙ্গ ফল, কাঠগোলাপ, ইউফোরবিয়া, ম্যান্টেভিলা, আলমান্ডাসহ নানা প্রজাতির ফুল-ফলের গাছ।
কাজল বলেন, মিজুর গাছ-পাখি ও মাছ এগুলোর প্রতি অনেক দুর্বলতা। ও চায় ওর চারপাশটা থাকবে সবুজ, যতটুকু সম্ভব গ্রামের ফ্লেভার থাকবে। তাই দিনরাত পরিশ্রম করে এগুলো করেছে।
ছাদ পুকুর
ছাদ পুকুরে এ ধারণাটা বলতে গেলে অভিনব। এখনো ঠিক এভাবে প্রচলন হয়ে উঠেনি। যেভাব ছোট্ট ছোট্ট পুকুরগুলো তৈরি করা হয়েছে দেখলে মনে হবে যেন গ্রামের পুকুরই। পুকুরে রয়েছে কচুরিপানাসহ অন্যান্য জলজ উদ্ভিদও। শখের এ উদ্যোগটা এখন আয়ও দিচ্ছে। ছোট্ট পুকুরগুলোতে চাষ হচ্ছে অ্যাকুরিয়ামের নানা জাতের দামী মাছ।
কাজল জানালেন, বাড়তি পাওনা হিসেবে এখন ছাদপুকুরের মাছ বাইরে বিক্রি হচ্ছে। স্বামী মিজুর সময়টা সারাদিন ভালোই কেটে যায় এগুলো নিয়ে। সারাক্ষণ কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকেই।
কাজল আরও জানালেন, পুকুরের যে অংশটা সিমেন্ট দিয়ে তৈরি সেটার খরচ পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। যে অংশটা প্লাস্টিকের ড্রামে সেটার খরচ পড়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। মাছ কেনার খরচ আলাদা। মাছে ইনভেস্ট হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টাকা। মাছ বিক্রি শুরু হয়েছে ২/৩ মাস ধরে। মাসে এভারেজে প্রায় ১০ হাজার টাকা মাছ বিক্রি হয় এখন। পরিস্থিতি ভালো হলে বিক্রি বাড়বে আসা করি।
ছাদপুকুর নামে একটি ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ খুলেছেন এই দম্পতি।
পাখিদের কোলাহল
শহুরে জীবনে বাড়ির ছাদে তৈরি করা ছোট্ট এই গ্রামে শুধু ফুল-ফল আর পুকুরে মাছ নয় আছে নানা প্রজাতির পাখিও। দিনভর তাদের কোলাহল আর কিচিরমিচির শুনলে মনে হয়ে যেন গ্রামেই আছেন আপনি। এখানে রয়েছে বাজরিগার, লাভবার্ড, ফিঞ্চ, ককাটিয়েল, কবুতসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখ-পাখালি।
অনুভূতি
ছোট্ট এই গ্রামের কারিগর মিরাজ মিজু ও কাজল দম্পতি জানান, অনুভূতি তো চরম ভালো। বিশেষ করে করোনার লকডাউনের এ সময়টাতেও বাসায় থাকতে বোরিং লাগে না মোটেও। বৃষ্টি হলে চারদিক আরও সুন্দর লাগে।
সকাল থেকেই পাখির কিচিরমিচির শুরু হয়ে যায়। আমাদের একটা মোরগ আছে। ওর নাম লালী। ফজরের আজানের পর লালীও ডাকাডাকি শুরু করে। আর যখন কোনো মানুষ বাসায় এসে আমাদের বাগান আর পুকুরের প্রশংসা করে তখন তো আরও ভালো লাগে।
-
ছাদটি যেন এক টুকরো ‘গ্রাম’
-
ছাদটি যেন এক টুকরো ‘গ্রাম’
-
ছাদটি যেন এক টুকরো ‘গ্রাম’
-
ছাদটি যেন এক টুকরো ‘গ্রাম’
-
ছাদটি যেন এক টুকরো ‘গ্রাম’
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
চন্দ্রমল্লিকা একটি খুবই জনপ্রিয় ফুল। এই ফুলের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়। বিভিন্ন রংয়ের এই ফুলগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমূল্য রয়েছে প্রথম সারিতে। অক্টোবরে কুঁড়ি আসে এবং নভেম্বরে ফুল ফোটে৷ গাছে ফুল তাজা থাকে ২০ থেকে ২৫ দিন৷ জনপ্রিয়তার দিক থেকে গোলাপের পরই এর স্থান। এটি বিভিন্ন বর্ণ ও রঙের হয়ে থাকে। এর মধ্যে তামাটে, সোনালি, হলুদ, বেগুনি, লাল, খয়েরি এবং “গ্রিন গডেস” নামের সবুজ চন্দ্রমল্লিকা অত্যন্ত জনপ্রিয়। চন্দ্রমল্লিকা ফুলের বাজারে চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
চাষ পদ্ধতি –
জলবায়ু ও মাটিঃ চন্দ্রমল্লিকা তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং রৌদ্রজ্জল জায়গা পছন্দ করে। বাংলাদেশে শীতকালই এই ফুল চাষের উত্তম সময়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সুনিস্কাশিত দো আঁশ ও বেলে মাটি চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উপযোগী। মাটির পিএইচ ৬.০-৭.০ হওয়া বাঞ্জনীয়।
চারা তৈরিঃ
বীজ, সাকার ও শাখা কলম থেকে চন্দ্রমল্লিকার চারা তৈরি করা যায়। বীজ থেকে চারা করলে তা থেকে ভাল ফুল পাওয়া যায় না এবং ফুল পেতে অনেক দিন লেগে যায়। অন্য দিকে ডাল কেটে শাখা কলম করলে বা সাকার থেকে চারা করলে এ সমস্যা থাকে না। এদেশে শাখা কলম করেই সাধারনত চারা তৈরি করা হয়। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শাখা কলম করা শুরু হয়। এক বছর বয়সী সতেজ সবল ডাল থেকে ৮-১০ সেমি লম্বা ডাল তেরছাভাবে কেটে বেডে বা বালতিতে বসিয়ে দিলে তাতে শিকড় গজায়। ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে যখন ফুল দেওয়া শেষ হয়ে যায় তখন গাছগুলোকে মাটির উপর থেকে ১৫-২০ সেমি রেখে কেটে দেয়া হয়। কিছু দিন পর ওসব কাটা জায়গার গোড়া থেকে কিছু সাকার বের হয়। এসব সাকার ৫-৭ সেমি লম্বা হলে মা গাছ থেকে ওদের আলাদা করে ছায়াময় বীজতলায় বা টবে লাগানো হয়। মে- জুলাই মাসে চারাকে বৃষ্টি ও কড়া রোদ থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
চারা রোপনঃ
শেষবারের মত নিদিষ্ট স্থানে কিংবা টবে রোপনের পূর্বে চারাগুলোকে স্বতন্ত্র জমিতে কিংবা টবে পাল্টিয়ে নিয়ে তাদের ফুল উৎপাদনের উপযুক্ততা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। জমি কিংবা টবে চারা রোপনের উপযুক্ত সময় অক্টেবর- নভেম্বর। জাতভেদে ৩০ x ২৫ অন্তর চন্দ্রমল্লিকা রোপন করতে হবে।
পটে বা টবে সার প্রয়োগ:
পটে জন্মানোর জন্য ২ ভাগ মাটি, ২ ভাগ গোবর সার, ১ ভাগ পাতা পচা সার ও ১ ভাগ হাড়ের গুঁড়ার সাথে ৩ গ্রাম টিএসপি, ৩ গ্রাম মিউরেট অব পটাশ এর মিশ্রণ ব্যবহার করা উত্তম। ৮ গ্রাম ইউরিয়া সারের অর্ধেক সাকার/কাটিং রোপণের ২৫-৩০ দিন পর গাছের দৈহিক বৃদ্ধির সময় এবং বাকি অর্ধেক ফুলের কুড়ি আসার সময় উপরি প্রয়োগ করা উচিত।
কুঁড়ি অপসারণ:
অনাকাঙ্ক্ষিত অপরিপক্ক ফুলের কুঁড়ি অপসারণ করাকে কুঁড়ি অপসারণ বলা হয়। চারা গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসলে তা সঙ্গে সঙ্গে অপসারণ করতে হয়। বড় আকারের ফুল পেতে হলে ডিসবাডিং করা উচিৎ অর্থাৎ মাঝের কুঁড়িটি রেখে পাশের দুটি কুঁড়ি কেটে ফেলতে হয়। আর মধ্যম আকারের ফুল পেতে চাইলে মাঝের কুড়িটি অপসারন করা উচিত।
রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা:
জাবপোকা: এ পোকা খুব ছোট আকৃতির, নরম ও কালো-সবুজ বর্ণের। শীতকালে এর প্রকোপ খুব বেড়ে যায়। এ পোকা গাছের পাতা, ডগা এবং ফুল থেকে রস চুষে খেয়ে গাছের ক্ষতি করে। আক্রান্ত নতুন কুঁড়ি ও পাতা কুঁকড়ে যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ
- এ পোকা দমনে প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত পাতা বা ফুল ছিঁড়ে ফেলে পোকাসহ ধ্বংস করা উচিত।
- সাবান গুঁড়া ৫ গ্রাম/লিটার হারে পনিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করেও এ পোকা দমন করা যেতে পারে।
আক্রমণ বেশি হলে ডাইমেথয়েট জাতীয় কীটনাশক (পারফেকথিয়ন/সানগর/ রগর / টাফগর ৪০ ইসি) ২.০ মিলি./লিটার অথবা ইমিটাক্লোপ্রিড জাতীয় (টিডো/ ইমিটাফ) ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ফুল সংগ্রহঃ
চন্দ্রমল্লিকা ফুল কুঁড়ি অবস্থায় তুললে ফোঁটে না। বাইরের পাপড়ি গুলো সম্পূর্ণ খুলে গিয়েছে এবং মাঝের পাপড়ি গুলো ফুটতে শুরু করেছে এমন অবস্থায় খুব সকালে অথবা বিকেলে ধারালো ছুরি দিয়ে দীর্ঘ বোঁটাসহ কেটে ফুল তোলা উচিত।
শীতকালীন মৌসুমী ফুলের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকাও বেশ জনপ্রিয়। ক্রিসমাসের সময় ফোটে বলে একে ক্রিসেন্থিমামও বলা হয়। জাপান ও চীন এর আদি জন্মস্থান। এটি বিভিন্ন বর্ণ ও রঙের হয়ে থাকে। তাই একে ‘শরৎ রানি’ও বলা হয়। বাড়ির আঙিনা, বারান্দা ও ছাদে ফুলটি চাষ করা যায়।
জলবায়ু
চন্দ্রমল্লিকা তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং রৌদ্রোজ্জ্বল জায়গায় ভালো জন্মে। বাংলাদেশে শীতকালই এ ফুল চাষের উপযুক্ত সময়।
মাটি
জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ ও বেলে মাটি চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উপযোগী। মাটির পিএইচ ৬.০-৭.০ হওয়া জরুরি।
চারা তৈরি
বীজ,
সাকার ও শাখা কলম থেকে চন্দ্রমল্লিকার চারা তৈরি করা যায়। জুলাই মাসের
মাঝামাঝি থেকে শাখা কলম করা শুরু হয়। একবছর বয়সী সবল ডাল থেকে ৮-১০
সেন্টিমিটার লম্বা ডাল তেরছাভাবে কেটে বেডে বা বালতিতে বসিয়ে দিলে তাতে
শেকড় গজায়। ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে যখন ফুল দেওয়া শেষ হয়ে যায়; তখন
গাছগুলোকে মাটির উপর থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার রেখে কেটে দেওয়া হয়। কিছুদিন
পর ওসব কাটা জায়গার গোড়া থেকে কিছু সাকার বের হয়। এসব সাকার ৫-৭
সেন্টিমিটার লম্বা হলে মা গাছ থেকে ওদের আলাদা করে ছায়াময় বীজতলায় বা টবে
লাগানো হয়। মে-জুলাই মাসে চারাকে বৃষ্টি ও কড়া রোদ থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা
করতে হবে।
রোপণ
শেষবারের
মতো নির্দিষ্ট স্থানে কিংবা টবে রোপণের আগে চারাগুলোকে স্বতন্ত্র জমিতে বা
টবে পাল্টিয়ে নিয়ে তাদের ফুল উৎপাদনের উপযুক্ততা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
জমি কিংবা টবে চারা রোপণের উপযুক্ত সময় অক্টেবর-নভেম্বর। জাতভেদে ৩০x২৫
অন্তর চন্দ্রমল্লিকা রোপণ করতে হবে।
সার
চন্দ্রমল্লিকা
গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদন শোষণ করে থাকে। এ কারণে জৈব ও
রাসায়নিক খাদ্যযুক্ত মাটিতে এ গাছ খুব ভালোভাবে সাড়া দেয়। প্রতি হেক্টরে ১০
টন পঁচা গোবর বা কম্পোস্ট, ৪০০ কেজি ইউরিয়া, ২৭৫ কেজি টিএসপি, ৩০০ কেজি
মিউরেট অব পটাশ, ১৬৫ কেজি জিপসাম, ১২ কেজি বোরিক অ্যাসিড ও জিংক অক্সাইড
সার প্রয়োগ করতে হবে। সাকার রোপণের ১০-১৫ দিন আগে পঁচা গোবর বা কম্পোস্ট
এবং ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সার ৭-১০ দিন আগে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে
দিতে হবে। সাকার রোপণের ২৫-৩০ দিন পর ইউরিয়া সারের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে
এবং বাকি অর্ধেক সার সাকার রোপণের ৪৫-৫০ দিন পর গাছের গোড়ার চারপাশে একটু
দূর দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। উপরি প্রয়োগের পর সার মাটির সাথে মিশিয়ে সেচ
দিতে হবে।
কুঁড়ি
চন্দ্রমল্লিকার
বেড ও টব আগাছামুক্ত রাখা উচিত। চারা লাগানোর মাসখানেক পর গাছের অাগা কেটে
দিতে হয়। এতে গাছ লম্বা না হয়ে ঝোপালো হয়। চারা গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসলে তা
সঙ্গে সঙ্গে অপসারণ করতে হয়। বড় আকারের ফুল পেতে হলে ডিসবাডিং করা উচিত।
অর্থাৎ মাঝের কুঁড়িটি রেখে পাশের দুটি কুঁড়ি কেটে ফেলতে হয়। আর মধ্যম
আকারের ফুল পেতে চাইলে মাঝের কুঁড়িটি অপসারণ করা উচিত।
সেচ
চন্দ্রমল্লিকার
চারা বিকেলে লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হয়। চারা লাগানোর পর হালকা সেচ
দিতে হয়। গাছ কখনো বেশি পানি সহ্য করতে পারে না। তাই পানি এমনভাবে দিতে হবে
যেন গোড়ায় বেশিক্ষণ পানি জমে না থাকে। চারা রোপণের আগে এবং পরে প্রতিদিন
নিয়মিতভাবে পরিমাণমতো পানি সেচ জরুরি।
ঠেস
চন্দ্রমল্লিকার
ফুল সাধারণত ডালপালার তুলনায় বড় হয়। তাই গাছের গোড়া থেকে কুঁড়ি পর্যন্ত
একটা শক্ত কাঠি পুঁতে দিতে হবে। এতে ফুল নুয়ে পড়বে না। চারা লাগানোর সময়
কাঠি একবারেই পুঁতে দেওয়া ভালো। এজন্য জাত বুঝে চন্দ্রমল্লিকা গাছের উচ্চতা
অনুযায়ী বাঁশের কাঠি চারার গোড়া থেকে একটু দূরে পুঁতে দিতে হয়।
শোষক পোকা
এ
পোকা পাতা ও ফুলের রস শোষন করে। ফলে আক্রান্ত পাতা ও ফুলে দাগ পড়ে। এমনকি
ফুল এবং গাছও শুকিয়ে যায়। এ পোকা দমনের জন্য ২ মিলি ম্যালাথিয়ন ১ লিটার
পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
জাব পোকা
অপ্রাপ্তবয়স্ক
এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় অবস্থাতেই গাছের নতুন ডগা বা ফুলের রস চুষে খায়। এটি
গাছের বৃদ্ধি এবং ফলনে মারাত্মক ক্ষতি করে। নোভাক্রন (০.১% ) বা রগর (১%)
প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা যায়।
পাউডারি মিলডিউ
এ
রোগ হলে গাছের পাতা ধূসর হয়ে যায়। পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায়।
টিল্ট ২৫০ইসি ০.৫ মিলি বা ২ গ্রাম থিয়োভিট প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০
দিন অন্তর স্প্রে করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ফুল সংগ্রহ
জাতভেদে
ফলন কমবেশি হয়। গাছ প্রতি বছরে গড়ে ৩০-৪০টি ফুল পাওয়া যায়। বাইরের
পাপড়িগুলো সম্পূর্ণ খুললে এবং মাঝের পাপড়িগুলো ফুটতে শুরু করলে খুব সকালে
বা বিকেলে ধারালো ছুরি দিয়ে দীর্ঘ বোঁটাসহ কেটে ফুল তোলা উচিত।
শহুরে জীবনে একটুখানি প্রশান্তির পরশ পেতে অল্পকিছু হলেও ফুলগাছ লাগান অনেকেই। ছাদ, বারান্দা কিংবা ঘরের কোন দখল করে এই গাছগুলো। তাতে ঘরের সৌন্দর্য তো বাড়েই, সঙ্গে বাড়ে সতেজভাবও। এই শীতে কিছু ফুলগাছ লাগাতে পারেন আপনার শখের বাগানে। চলুন জেনে নেয়া যাক-
গাঁদা
শীতকালীন ফুলের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুল হল গাঁদা ফুল। দোআঁশ, এঁটেল, বেলে দো-আঁশ বা পলি মাটিতে গাঁদা ভালো হয়। সূর্যের জোরালো আলোয় এদের ফলন ভালো হয়। দিনে অন্তত পাঁচ-ছয়ঘণ্টা সূর্যের আলো দরকার।
ক্যামেলিয়া
অনেকটা গোলাপের মতো দেখতে, তাই ক্যামেলিয়া ফুলকে ‘শীতের গোলাপ’ বলা হয়। এই গাছ না ছাঁটলে প্রায় ২০ ফুট উঁচু হয়ে যায়। এই গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়।
ডালিয়া
শীতের সৌন্দর্য বাড়ায় ডালিয়া। লাল, হলুদ, মেরুন বিভিন্ন রঙের এবং বিভিন্ন জাতের হয় এই ফুল। এর আকার, গঠন, পাপড়ির সৌন্দর্য মানুষকে সহজেই মুগ্ধ করে।
ক্যালেন্ডুলা
এটি সাধারণত পট গাঁদা হিসেবে পরিচিত এবং এটি বাগানে বা যেকোনো জায়গায় চাষ করা যেতে পারে।। এই ফুলগুলি বিভিন্ন রঙের হয়, যেমন- গাঢ় কমলা, হলুদ ইত্যাদি।
পিটুনিয়া
শীতকালীন পরিচিত ফুল পিটুনিয়া। লাল, গোলাপি, সাদা, বেগুনি বিভিন্ন রঙের হয় এই ফুল। গাছ বসানোর পর প্রথম সাত দিন ছায়ায় রাখতে হয়, যেন হালকা রোদ লাগে। নিয়মিত জল দিতে হয় তবে মাটি ভেজা থাকলে পানি না দেয়াই ভালো।
কসমস
গোলাপী, সাদা, বেগুনি বিভিন্ন রঙের হয় এই ফুল। সাধারণত এটিকে কসমস বা মেক্সিকান এস্টার বলে ডাকা হয়। কসমস গাছ ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট হয়। শীতকালে এই ফুলের চাহিদা অত্যন্ত বেশি থাকে।
চন্দ্রমল্লিকা
চন্দ্রমল্লিকা বিঙিন্ন রঙের হয়। চন্দ্রমল্লিকার ফুল সাধারণত ডালপালার তুলনায় বড় হয়। উর্বর বেলে-দোয়াঁশ মাটি এই ফুল চাষের আদর্শ। তবে, এর গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চন্দ্রমল্লিকার টব আগাছামুক্ত রাখা উচিত।
জিনিয়া
সুন্দর ও আকর্ষণীয় এই ফুলে কোনো গন্ধ নেই। এটি সাদা, হলুদ, লাল, বাদামী, কমলা, সবুজ বিভিন্ন রঙের হয়। জিনিয়া শীতকালীন ফুল হলেও সারাবছর চাষ করা যায়। দো-আঁশ মাটি এই ফুল উৎপাদনের জন্য বেশি উপযোগী।
ছেলে থেকে বুড়ো সবারই প্রিয় টক ঝাল কদবেল। কদবেলের আচার, কদবেল মাখা সকলেরই অত্যন্ত পছন্দের। যারা বাগান করতে পছন্দ করেন, বিশেষত টবে, তাদের জন্য কদবেল এক আদর্শ ফল। কদবেলের আকার অনেকটা টেনিস বলের মতো। শরতের শুরুতে কদবেল বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই ফলের মন মাতানো স্বাদ বিশেষ করে মহিলাদের ভীষণই পছন্দের।
টবে কদবেল চাষের পদ্ধতি (Farming Process)
মন কাড়া স্বাদের জন্য পাকা কদবেল সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। কদবেল গাছে ফুল আসে মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ। তবে ফল পাকতে সময় লাগে সেপ্টেম্বর-অক্টবর। টবে রোপনের জন্য কদবেলের কলমের চারা বেশি ভালো। কলমের চারা থেকে কয়েক বছরের মধ্যে ফুল-ফল ধরে। ছাদের টবে এই গাছের চাষ সহজেই করা যায়। জোড় কলম করে এর কলম তৈরি করা যায়। এ গাছের চাষাবাদ অনেকটা বেলের মতোই।
মাটি তৈরি (Land Preparation)
হাফ ড্রামে অথবা টবে পাঁচ সেন্টিমিটার পুরু করে ইটের খোয়া বিছিয়ে তার ওপর ১০ সেন্টিমিটার বালির স্তর দিতে হবে। ড্রামের তলার দিকে জল বার করে দেওয়ার জন্য ছিদ্র রাখতে হবে। এবার তিন ভাগ দো-আঁশ মাটির সাথে দুই ভাগ গোবর সার, ড্রামপ্রতি ২০০ গ্রাম এমওপি (পটাশ) সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি (ফসফেট) সার, ১ কেজি হাড়ের গুঁড়ো, ৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২০ গ্রাম ম্যাগেনেসিয়াম সালফেট (ম্যাগসাল) সার ও ১০ গ্রাম দস্তা সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ড্রামে বা টবে ভরে হালকা করে জল দিয়ে মাটি ভিজিয়ে এক থেকে দুই সপ্তাহ রেখে দিতে হবে।
ড্রাম বা টবের ঠিক মাঝখানে কদবেলের কলম বসিয়ে কলমের গোড়ার মাটি শক্ত করে চেপে দিতে হবে। কলম লাগানোর পর গাছের গোড়ায় জল দিতে হবে। সোজা ভাবে কলম রাখতে গেলে, গোড়ার কাছাকাছি কাঠি পুঁতে তার সাথে কলম বেঁধে দিলে ভালো। শীতকাল ছাড়া বছরের যেকোনও সময় কদবেলের কলম লাগানো যায়। ছাদের ওপর রোদের মধ্যে কদবেলের গাছ রাখা উচিত। এতে গাছের ভালোই হবে।
ফলন এবং পরিচর্যা (Caring)
কলমের গাছে ফুল ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নাগাদ আসে। শরৎকালে ফল পেকে যায়। ডালপালা ফল সংগ্রহ করার সময় কিছু ছেঁটে দেওয়া উচিত। এর ফলে পরের বছর ফলন ভালো হবে। কদবেল গাছে ফুল-ফল ভালো আনার জন্য প্রতি বছর ফল তোলা শেষ হলে গাছের গোড়ার মাটিতে ড্রামপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম এমওপি সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার দুই কেজি প্যাকেটের কম্পোস্ট সারের সাথে মিশিয়ে গোড়ার মাটি নিড়িয়ে তার সাথে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।
গাছের বৃদ্ধি ভালো হলে বছরে একবার সার দিলে হবে না। বর্ষাকালের আগেও ঠিক একই ভাবে পুনরায় সার দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে টব বা ড্রামের মাটি যাতে না শুকিয়ে যায়। টবের মাটি কখনো শুকিয়ে গেলে নিয়ম করে সেচ দিয়ে নিতে হবে।
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন