চীন
চীন-ভারত সামরিক সংঘাত: কার শক্তি কতটা, কোন্ দেশ কার পক্ষ নেবে
লেখক
বিবিসি বাংলাচীন এবং ভারতের মধ্যে বড় ধরণের কনভেনশনাল বা প্রথাগত সম্মুখ লড়াই হয়েছিল একবারই, ১৯৬২ সালে।
কিন্তু ঐ যুদ্ধের পর বিগত দশকগুলোতে এশিয়ার এই দুটি দেশ বিপুল সমরাস্ত্র সম্ভার গড়ে তুলেছে, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে বৈরিতাও বেড়ে চলেছে।
লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে সোমবার রাতে দু’পক্ষেই বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা যেন হঠাৎ বহুগুণ বেড়ে গেছে।
এই দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশংকা কতটা? বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এবং পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? ভারত বা চীন- কেউই কি আসলে এরকম একটা যুদ্ধ চায়? আর এরকম সংঘাতে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলো কেন উভয় সংকটে পড়বে?
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ মাহমুদ আলির সঙ্গে কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার মিজানুর রহমান খান। চীন-ভারত সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতে গুরুত্বপূর্ণ নয়টি প্রশ্ন নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ:
চীন-ভারত সংঘাত কতটা উদ্বেগজনক?
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সীমান্তের তিনটি এলাকাতে চীনা এবং ভারতীয় সৈন্যরা নিজেদের শক্তি জোরদার করেছে। ভারত এবং চীনের মধ্যে যদিও সীমান্ত চিহ্নিতকরণ হয়নি, দু’পক্ষের মধ্যে কয়েকবার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছিল যে বর্তমানে যে পরিস্থিতি, সেটা লংঘন করা হবে না। কেউই বিদ্যমান পরিস্থিতি পাল্টানোর চেষ্টা করবেন না। এখন সোমবার রাতে যে ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে চীনা এবং ভারতীয়, দুপক্ষের বক্তব্য একেবারে পরস্পরবিরোধী। দু’পক্ষই বলছেন যে অন্য পক্ষের সেনাবাহিনী তাদের আগের অবস্থান থেকে সামনে এগিয়ে এসে ভূমি দখল করেছেন এবং এবং সেকারণেই হাতাহাতি-মারামারি হয়েছে। কাজেই পরিস্থিতি একটু ঘোলাটে। দুপক্ষই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রাখছে। কারা যে কোন এলাকায় ঢুকেছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে দুপক্ষই তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছেড়ে দিতে একেবারেই রাজি নয় এবং প্রয়োজনবোধে তারা হাতাহাতি করবেন। এবং সেটা তারা করেছেন। তবে গোলাগুলি হয়েছে এমনটা শোনা যায়নি।
এটা কি শুধুই সীমান্ত বিরোধ, নাকি এর পেছনে আরো বড় কিছু আছে?
সেনবাহিনী বা সশস্ত্রবাহিনী যা কিছু করে, তার পেছনে একটা রাজনৈতিক-কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট থাকে। বর্তমানে ভারত এবং চীনের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটা বিশ্বজনীন প্রেক্ষাপটে সেটা বেশ বৈরি। বিশ্ব রাজনীতিতে এই দু্ই দেশের অবস্থান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে। আন্তর্জাতিকভাবে চীনের সেই অর্থে কোন মিত্র নেই। তাদের একটি মিত্রদেশ হচ্ছে পাকিস্তান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ২০ বছর ধরে বলা যায় ভারতের মিত্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ১৯৯৯-২০০০ সাল হতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এর মধ্যে সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারটিও রয়েছে। এই সহযোগিতা গত দুই দশকে অনেক দৃঢ় হয়েছে। ভারত বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি সামরিক জোটের অংশগ্রহণ করেছে।
অন্যদিকে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক গত কয়েক বছরে বেশ বৈরি হয়ে গেছে, ভারত-মার্কিন সামরিক সহযোগিতাকে তাই তারা মোটেই পছন্দ করছে না। চীন এবং ভারতের মধ্যে বৈরিতার এরকম একটা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে। এই প্রেক্ষাপটে চীন-ভারত সম্পর্ক ক্রমশ শত্রুভাবাপন্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই আলোকে দেখতে গেলে এই সীমান্ত বিরোধ তাদের মধ্যকার শত্রুতার একটি প্রকাশ মাত্র।
চীন-ভারতের এই উত্তেজনা কি বৃহত্তর সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে?
চীন এবং ভারত, দুটি দেশই গত বছর দশেক ধরে তাদের সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। চীন এটা করেছে তিব্বতে। আর ভারত করেছে দক্ষিণের অরুণাচল প্রদেশে এবং লাদাখ অঞ্চলে। দুটি দেশই এসব জায়গায় রাস্তাঘাট করেছে, বিমান ঘাঁটি বানিয়েছে। রেডার স্টেশন বসিয়েছে। সৈন্য সমাবেশ বৃদ্ধি করেছে। দু’পক্ষই বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে। সেখানে সামরিক মহড়াও দিয়েছে দুই দেশ। কাজেই একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাব সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেখা যাচ্ছে।
এর পাশাপাশি চীন এবং ভারত, দুই দেশেই জাতীয়তাবাদী একটি মনোভাব জোরালো হয়ে উঠেছে। দুটি দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো দেখলে, বিশেষ করে ভারতে, এটা বেশ চোখে পড়বে। সেখানে চীনকে একটি বৈরি দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে অনেক কথা বলা হচ্ছে। চীনের সংবাদমাধ্যমগুলোতে অবশ্য ভারত অতটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। কিন্তু তারপরও যখনই ভারত সম্পর্কে কথা উঠছে, সেখানে জাতীয়তাবাদী একটা মনোভাব বেশ স্পষ্ট। সুতরাং এটা বলা যায়, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবে যে বৈশ্বিক মেরুকরণ, সেখানে ভারত এবং চিনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব রয়েছে।
দ্বিতীয়ত: দুই দেশেই একটা জাতীয়তাবাদী আকাঙ্খা বা চিন্তাধারা বেশ জোরদার হয়ে উঠেছে।
তৃতীয়ত: যেসব সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনী সামনাসামনি মোতায়েন আছে, সেখানে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। কাজেই সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল।
তার মানে কী দুই দেশ সম্মুখ যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে?
দুটি দেশেরই স্বার্থ হচ্ছে যুদ্ধে না জড়ানো। কারণ যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি বেশ ব্যাপক হবে। দুটি দেশেরই ক্ষতি হবে। কাজেই দুই দেশই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাইছে।
চীন এবং ভারত উভয়েরই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। দুই দেশের সংঘাতে যদি ক্রমবর্ধমান হারে ভয়ংকর সমরাস্ত্রের ব্যবহার হতে থাকে, দুই দেশই আসলে পরস্পরকে ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
কাজেই আমার ধারণা কোন দেশই সেরকম ব্যাপকতর কোন সংঘাতে জড়াতে চায় না। কারণ শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধের ফল কী দাঁড়াবে সেটা কেউই এখন পর্যন্ত বলতে পারে না।
দ্বিতীয়ত ভারত এবং চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখন ব্যাপক আকার নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী একটা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কোন দেশই এরকম একটা সম্পর্ক ক্ষুন্ন করতে চাইবে না।
তৃতীয়ত, যুদ্ধ যদি খুব বেশি ছড়িয়ে পড়ে, সেটা যে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে সেটা দুপক্ষই বোঝেন। কারণ দুটি দেশই পারমানবিক শক্তিধর। কাজেই তাদের চেষ্টা থাকবে উত্তেজনা কমিয়ে আনার।
কিন্তু ১৯৬২ সালে এরকম সীমান্ত বিরোধ থেকেই তো দুই দেশ প্রথাগত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল?
১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময়ের প্রেক্ষাপট ছিল একেবারেই অন্যরকম।
১৯৪৭ সালে ভারত সরকার মার্কিন বিমানবাহিনীকে ৬টি বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করতে দিয়েছিল। এই ঘাঁটিগুলো থেকে মার্কিন বাহিনী চীনের ভেতর কমিউনিস্ট বাহিনির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। এর পাশাপাশি ১৯৫০ সালে যখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বা গণপ্রজাতন্ত্রী চীন তিব্বত পুর্নদখল করে, তখন সেখানে একটি গেরিলা গোষ্ঠী চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায়। এই গেরিলা গোষ্ঠীকে গোপনে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র মদত যুগিয়েছিল। সেই সংঘাতের প্রেক্ষাপটেই কিন্তু ১৯৬২ সালের যুদ্ধ হয়েছিল।
কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো দুটি দেশের কোনটিই সীমান্তরেখা মেনে নেয়নি। চীনের হিসেব অনুযায়ী অষ্টাদশ শতাব্দীতে যে সীমান্তরেখা ছিল, তাতে অরুণাচল প্রদেশ এবং লাদাখের কিছু অংশ তৎকালীন চীন সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। ব্রিটিশরা যখন ১৯১৩ সালে সিমলা চুক্তি করে একটি সীমান্তরেখা একেঁছিল, ম্যাকমোহন লাইন এবং অন্যান্য লাইন, সেটা চীন কখনো মানেনি। কিন্তু ব্রিটিশদের চিহ্নিত সেই সীমারেখাই ভারত বরাবার দাবি করেছে।
কাজেই দুপক্ষের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। কিন্তু মতবিরোধ মানেই যে যুদ্ধ, তা নয়। যুদ্ধ তখনই হয়, যখন দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের নেতারা সিদ্ধান্ত নেন যে তাদের পক্ষে অন্যপক্ষের অবস্থান আর মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তখন যুদ্ধ বাধে।
কিন্তু দুই দেশ যদি সত্যিই যুদ্ধে জড়িয়ে যায়, তখন সামরিক শক্তির দিক থেকে কে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে?
দুটি দেশেরই বিপুল অস্ত্রসম্ভার রয়েছে এবং এসব অস্ত্রশস্ত্র বেশ আধুনিক। গত ২০ বছর ধরে দুটি দেশ শুধু নিজেরাই সমরাস্ত্র তৈরি করেনি, একই সঙ্গে অস্ত্র আমদানিও করেছে। বিশেষ করে ভারত পরপর পাঁচ বছর বিশ্বের সবচাইতে বেশি অস্ত্র আমদানিকারক দেশের স্থান দখল করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইসরায়েল থেকে তারা অনেক অত্যাধুনিক অস্ত্র এনেছে। তারা নিজেরাও বিদেশি প্রযুক্তি এনে নিজেরা অস্ত্র তৈরি করেছে। একইভাবে চীন রাশিয়া থেকে কিছু অস্ত্র কিনেছে, কিন্তু বেশিরভাগ অস্ত্র তারা এখন নিজেরা উৎপাদন করে ।
কাজেই অত্যাধুনিক অস্ত্র দুপক্ষেরই আছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো গিরিসংকুল পার্বত্য এলাকায় তারা সেইসব অস্ত্র কতটা ব্যবহার করতে পারবে ।
বিমান বহর এবং ক্ষেপণাস্ত্র হয়তো তারা ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু যাকে আমরা সেনাবাহিনী বলি, যারা মাটিতে যুদ্ধ করে, তারা তাদের গোলন্দাজ, সাঁজোয়া বা ট্যাংক বহর খুব একটা ব্যবহার করতে পারবে বলে মনে হয়না।
গত কদিন ধরে গণমাধ্যমে, বিশেষ করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে দুই দেশের সামরিক শক্তির অনেক তুলনামূলক হিসেব দেয়া হচ্ছে। তিব্বত আর শিনজিয়াং অঞ্চলে চীনের কত যুদ্ধবিমান, কত সৈন্য আর ট্যাংক আছে, তার পাশাপাশি ভারতের
সীমান্তবর্তী এলাকায় যে কমান্ডগুলো রয়েছে, সেখানে কত সৈনিক আর সরঞ্জাম আছে।
কিন্তু এ ধরণের অংকের হিসেব আসলে একেবারেই সঠিক নয়। কেননা যার যত সৈন্যই থাকুক, নানা কারণে সব সৈন্য কোন দেশই মোতায়েন করতে পারে না। কারণ যেখানে এই যুদ্ধ হবে, সেখানকার ভূপ্রকৃতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, যে জায়গা নিয়ে বিরোধ, সেটা কোন দেশের কাছে কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটির জন্য তারা কতটুকু পর্যন্ত বলপ্রয়োগ করতে প্রস্তুত, সেটাই আসল প্রশ্ন।
কাজেই কোন সামরিক সংঘাতে এই প্রশ্নটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সামরিক শক্তির চেয়ে।
যদি দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধেই যায়, তখন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা অন্য ক্ষমতাধর দেশগুলো কে কী ভূমিকা নেবে?
সাম্প্রতিক কালে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলোর বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যেমন জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল এবং ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে। ভারতের এসব দেশের সামরিক সহযোগিতা বেশ ঘনিষ্ঠ। কাজেই এসব দেশ হয়তো রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিকভাবে ভারতকে সমর্থন দেবে। অন্যদিকে চীনের সেরকম আন্তর্জাতিক মিত্র নেই। রাশিয়া চীনের বন্ধুরাষ্ট্র, কিন্তু মনে রাখতে হবে অতীতে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতেরও ঘনিষ্ঠ মৈত্রী ছিল। ১৯৬২ সালে রাশিয়া কিন্তু চীনের বদলে ভারতকেই সমর্থন করেছিল। কাজেই প্রত্যেকটি দেশ হয়তো এখানে তার নিজের স্বার্থটাকে আগে দেখবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মতো দেশের সঙ্গে চীন এবং ভারত, উভয় দেশেরই সুসম্পর্ক আছে। দুই দেশের মধ্যে যদি যুদ্ধ হয়, তখন সরাসরি কোনো পক্ষ নেওয়ার জন্য কি চাপ বাড়বে বাংলাদেশের উপর?
এধরণের একটা চাপ গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ওপর আছে। যেমন ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছিলেন যে চীনের সাহায্যে তারা চট্টগ্রামের গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করবেন। কিন্তু এই প্রস্তাব যখন বাংলাদেশ চীনের কাছে দেয়, তখন চীন সেটি গ্রহণ করেছিল। এই বন্দর নির্মাণে বাংলাদেশের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র,ভারত এবং জাপানের চাপের মুখে বাংলাদেশকে সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিতে হয়। পরে বাংলাদেশ জাপানের সাহায্য নিয়ে চট্টগ্রামে সামুদ্রিক বন্দর নির্মাণ করছে।
এধরণের চাপ কিন্তু বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরেই অনুভব করছে। এটার মোকাবেলায় বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে তাদের সাধ্যমত কাজ করে চলেছে। তবে যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি যে বেশ জটিল হয়ে পড়বে, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশের অনেক সমরাস্ত্র চীন থেকে এসেছে। বাংলাদেশি সেনা অফিসাররা চীন থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, কিন্তু সেটা রাজনৈতিক সম্পর্ক, সামরিক নয়। এখনো পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশ সে পরিমাণ সমরাস্ত্র কেনেনি। কাজেই এটা একটা জটিল সম্পর্ক। অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি- সব দিক দিয়ে।
কাজেই বাংলাদেশের মতো দেশগুলো, চীন এবং ভারত- দুই দেশের সঙ্গেই যাদের এরকম সম্পর্ক, তাদের জন্য বেশ জটিল একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে সন্দেহ নেই।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যুদ্ধ এড়ানোর জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। যেমন হটলাইনে দুই দেশের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে সরাসরি কথা বলে উত্তেজনা প্রশমনের ব্যবস্থা রেখেছিলেন। চীন এবং ভারতের বেলায় কি সেরকম কোন মেকানিজম আছে?
এরকম ব্যবস্থা দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে আঞ্চলিক অধিনায়ক পর্যায়ে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এরকম যোগাযোগ হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবে যারা আসলে সিদ্ধান্তগুলো নেবেন, তাদের মধ্যে যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা এখনো আছে বলে মনে হয়না। চীনের নেতা শি জিনপিং যখন সম্প্রতি ভারত সফরে যান, তখন এরকম একটা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব উঠেছিল। তবে সেটি বাস্তবায়িত হয়েছিল কীনা জানা যায়নি।
-
চীনা সেনা সদস্যদের কঠোর শারীরিক প্রশিক্ষণ।
-
দিল্লিতে কট্টর ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের চীন-বিরোধী বিক্ষোভ।
-
পূর্ব ভারতে স্বতন্ত্র গোর্খা রাজ্যের দাবির পেছনে চীনের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ।
-
গত বছর মেঘালয় রাজ্যে ভারত ও চীনের সামরিক বাহিনী এক যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়।
-
শ্রীনগর-লে জাতীয় মহাসড়াকের পাশে বাংকার নির্মাণ করছে ভারতীয় বাহিনী।
-
চীন আর ভারতের সীমান্ত বিরোধ অনেক পুরোনো
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার ভারত-বাংলাদেশের ওপর করোনাভাইরাসের দায় চাপানোর চেষ্টায় মেতে উঠেছে চীন। দেশটির একদল গবেষক দাবি করেছেন, করোনাভাইরাস উহান থেকে নয়, ভারত-বাংলাদেশ থেকেই ছড়িয়েছে। তারা বলেছেন, ২০১৯ সালের গ্রীষ্মেই সম্ভবত করোনার জীবাণু ছড়িয়েছে। আর সেটা ছড়িয়ে থাকতে পারে ভারত অথবা বাংলাদেশ থেকে। এখান থেকে এ জীবাণু উহানে বাহিত হয়েছে। আর উহানেই এটা প্রথম শনাক্ত হয়। যদিও তাদের এমন অযৌক্তিক দাবিকে সন্দেহের চোখেই দেখছেন পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা।
চীনের একাডেমি অব সায়েন্সের একদল গবেষকের গবেষণার ফলাফলে বিস্ফোরক এ দাবি করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটের প্রাক-প্রকাশনা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গত ১৭ নভেম্বর চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়। ওই প্রবন্ধ উদ্ধৃত করে গত শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সান বলেছে, উহানের দোষ এখন বাংলাদেশ বা ভারতের ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে। চীনা বিজ্ঞানীরা আচমকা এমন অযৌক্তিক দাবি তোলায় পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা আগাম সতর্ক করে দিয়েছেন। তাদের মতে, এই গবেষণা ‘বড় ধরনের’ দাবি তুলছে, আর এ কারণে সতর্কতা ও সন্দেহপ্রবণ চোখে এটি ভালো করে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
শুক্রবার ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগেও চীনের একাধিক গবেষণায় কভিড-১৯ মহামারির দায় দেশটির সীমান্তের বাইরে কারও ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একাধিক গবেষণায় ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রকে এই জীবাণুর উৎস দেশ হিসেবে শনাক্তের চেষ্টা করা হয়েছে।
গত বছর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীনের কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ভাইরাসের তথ্য প্রকাশ করে। শুরুতে এই ভাইরাস চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ছড়ায়। একপর্যায়ে তা মহামারি আকারে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে এ বছরের ৮ মার্চ।
এরই মধ্যে চীনের বিজ্ঞানীদের দাবিকে পুরোপুরি অনুমাননির্ভর বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত শুক্রবার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মাইক রায়ান এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বলেন, চীন থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়নি, এমন কথা বলা আমাদের জন্য একেবারে অনুমাননির্ভর হবে।
গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ২০১৯ সালের মে থেকে জুন মাসে উত্তর-মধ্য ভারত ও পাকিস্তানে রেকর্ড দ্বিতীয় দীর্ঘতম দাবদাহ তাণ্ডব চালিয়েছিল। ফলে ওই অঞ্চলে ভয়াবহ পানির সংকট সৃষ্টি হয়। পানির অভাবে বানরের মতো বন্যপ্রাণী একে অপরের সঙ্গে ভয়াবহ লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিল এবং অবশ্যই এটি মানুষ ও বন্যপ্রাণী সংস্পর্শের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছিল। এই দাবদাহকেই প্রাণী থেকে মানবদেহে করোনা সংক্রমণের কারণ বলে মনে করছেন গবেষকরা।
চীনা গবেষক দলটি করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজতে ফাইলোজেনেটিক বিশ্নেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তাদের মতে, সবচেয়ে কম রূপান্তরিত রূপটাই ভাইরাসের আসল রূপ হতে পারে। এ ধারণার ভিত্তিতেই তারা দাবি করেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ উহানে হয়নি। এর বদলে ভারত ও বাংলাদেশের মতো জায়গাগুলো, যেখানে কম রূপান্তরিত ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে, সেখানেই হতে পারে এর আসল উৎস। এ ছাড়া ভারত-বাংলাদেশের পাশাপাশি করোনার সম্ভাব্য উৎস হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, সার্বিয়া, ইতালি, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র ও চেক রিপাবলিকের নাম বলেছেন চীনের ওই গবেষকরা।
গবেষকরা আরও বলেছেন, যেহেতু বাংলাদেশ ও ভারতের নমুনায় এ ভাইরাসে কম মাত্রায় মিউটেশন পাওয়া গেছে, তাই এ দুই প্রতিবেশী দেশ থেকেই এটি ছড়ানোর আশঙ্কা আছে।
তবে চীনাদের এ দাবির সঙ্গে একমত নন অনেক বিশেষজ্ঞ। চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রকে ‘খুবই ত্রুটিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছেন গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির ভাইরাল জিনোমিপ অ্যান্ড বায়োইনফরমেটিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডেভিড রবার্টসন। তিনি বলেন, ন্যূনতম রূপান্তরিত ভাইরাস সিকোয়েন্স শনাক্তকরণে লেখকদের দৃষ্টিভঙ্গি সহজাতভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট। লেখকরা মহামারির বিস্তৃতি-সংক্রান্ত উপাত্তগুলো এড়িয়ে গেছেন, যাতে চীনে ভাইরাসের উত্থান এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া স্পষ্ট দেখা যায়। এই বিশেষজ্ঞের মতে, চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি সার্স-কভ-২ সম্পর্কে বোঝার বিষয়ে নতুন কিছুই যোগ করেনি।
প্রথমবারের মতো সফলভাবে মানুষবিহীন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করলো দেশটি
চাঁদ থেকে পাথর ও ধ্বংসাবশেষ আনতে প্রথমবারের মতো সফলভাবে মানুষবিহীন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছে চীন।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) চীনের দক্ষিণের প্রদেশ হাইনানের ওয়েনচ্যাং থেকে দেশটির স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৪টায় সবচেয়ে বড় রকেট লং মার্চ ৫ উৎক্ষেপিত হয়।
“চ্যাংই ফাইভ” নামে এ যানটি এক প্রাচীন চীনা চন্দ্রদেবীর নামানুসারে রাখা হয়েছে। এটি এখনও পর্যন্ত দেশটির সবচেয়ে সাহসী চন্দ্রাভিযান। এই মিশনটি সফল হলে চীনের মহাকাশ বিষয়ে গবেষণা ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মঙ্গল থেকে নমুনা আনার বা চাঁদে অভিযানের পথকে আরও সুগম করতে পারে।
সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার পর চীনই হবে বিশ্বের তৃতীয় দেশ, যারা চাঁদ থেকে পাথর আনবে। মহাকাশযান সাধারণত চাঁদে পৌঁছাতে তিনদিন সময় নেয়।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা একটি পাথরের তৈরি বৌদ্ধ মন্দিরের প্রায় চার হাজার ৬০০ বর্গমিটার এলাকা খনন করে এ পুরাকীর্তিগুলো আবিষ্কার করেন
চীনা প্রত্নতত্ত্ববিদরা দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর চংকিংয়ের পাথরের তৈরি স্থানীয় বৌদ্ধ মন্দির এলাকা থেকে ৯০০টিরও বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) চংকিং শহরের ইনস্টিটিউট অব কালচারার হেরিটেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রত্নতত্ত্ববিদরা শহরের জিয়াংজিন এলাকার একটি পাথরের তৈরি বৌদ্ধ মন্দিরের প্রায় চার হাজার ৬০০ বর্গমিটার এলাকা খনন করে এ পুরাকীর্তিগুলো আবিষ্কার করেন।
ইনস্টিটিউট অব কালচারাল হেরিটেজের একজন প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ নিও ইয়িংবিনের মতে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুই বছরব্যাপী এ খননের মাধ্যমে তাঙ্গ রাজবংশ (৬১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৯০৭ খ্রিস্টাব্দ) এবং কোয়িং রাজবংশের (১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ-১৯১১ খ্রিস্টাব্দ) পর্যন্ত সময়কার ৫০টিরও বেশি স্থাপনা, সমাধি এবং খোদাই করা শিলালিপি পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, প্রাচীন চীনের স্থানীয় ইতিহাস এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে নতুন করে আবিষ্কৃত এ পুরার্কীতিগুলোর দারুন বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক এবং শৈল্পিক মূল্য যোগ করবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বিরল কোন প্রাণীর ছবি তুলতে হলে আপনার প্রয়োজন হবে দক্ষতা এবং সৌভাগ্য।
রুশ ফটোগ্রাফার সার্গেই গর্শকফের যে দুটোই রয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া গেল তার তোলা ছবিতে।
রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় অরণ্যে তার তোলা একটি সাইবেরিয়ান বাঘ (আমুর টাইগার)-এর ছবি এ বছরের সেরা বন্যপ্রাণীর ছবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এই মাদি মাঘকে দেখা যাচ্ছে ল্যান্ড অফ লেপার্ড ন্যাশনাল পার্কের একটি গাছকে জড়িয়ে ধরে আছে।
গাছের গায়ে ঘষা দিয়ে এবং প্রস্রাব করে এক বাঘ অন্য বাঘকে তার নিজের বিচরণ ক্ষেত্রের কথা জানিয়ে দেয়।
“ছবিটির আলো, রং এবং টেক্সচার ইত্যাদি দেখে মনেই হয় না এটি একটি ছবি। মনে হয় এটি একটি অয়েল পেইন্টিং,” বলছেন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতার একজন বিচারক রজ কিডম্যান।
“দেখে মনে হয় বাঘটি অরণ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমনকি বাঘের লেজটি পর্যন্ত মিশে আছে গাছের গুঁড়ির সাথে, বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।
এই ছবির আরও চমকপ্রদ দিক হলো যেভাবে ছবিটা তোলা হয়েছে।
এই ক্যামেরা-ট্র্যাপ যন্ত্র জঙ্গলের মধ্যে বাসিয়ে রাখা হয়। কোন বন্য প্রাণী এর আওতার মধ্যে এলেই ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ছবি তুলে রাখে।
সে জন্য সার্গেইকে জানতে হয়েছে কোথায় ক্যামেরা বসাতে হবে, কোন্ অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুলতে হবে ইত্যাদি। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার হিসেবে সেখানেই প্রয়োজন হয় দক্ষতা ও একাগ্রতা।
পূর্ব রাশিয়ায় অবৈধ শিকারের জেরে বাঘের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এসব বাঘের সংখ্যা এখন কয়েকশোতে ঠেকেছে বলে ধারণা করা হয়।
হরিণ, বুনো শুয়োর — আমুর টাইগারের প্রধান খাদ্য — তাদের সংখ্যাও কমেছে ব্যাপক হারে শিকারের ফলে।
আমুর টাইগার বিরল হয়ে পড়ায় তার ছবি তোলার কাজও বেশ কঠিন। সার্গেই যে সেরা ছবি তুলেছেন, তার জন্য তার ক্যামেরা-ট্র্যাপ যন্ত্রকে বসিয়ে রাখতে হয়েছিল ১০ মাস।
লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম প্রতি বছর বন্য প্রাণীদের সেরা ছবি পুরষ্কার দিয়ে থাকে। এটা দেয়া হচ্ছে গত ৫৫ বছর ধরে।
একটি বাচ্চা শেয়াল যেভাবে একটি বুনো হাঁসকে কামড়ে খাচ্ছে — এই ছবিটি তুলেছেন ফিনল্যান্ডের টিনএজ ফটোগ্রাফার লিনা হেকিনেন। ১৫-১৭ বছর বয়সী ফটোগ্রাফারদের ক্যাটেগরিতে এটি সেরা ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়।
শেয়ালটি তার খাবারকে অন্য শেয়ালের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একটি পাথরের খাঁজে ঢুকে পড়েছিল।
এটি একটি প্রবোসিস জাতের পুরুষ বাঁদরের ছবি। এটি অ্যানিমাল পোর্ট্রেট বিভাগে এবার সেরা ছবি হিসেবে বাছাই হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও দ্বীপে একটি অভয়ারণ্যে এই ছবিটি তোলা হয়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাঁদরটির নাকের দৈর্ঘ্যও বাড়তে থাকবে। বড় নাকের সাহায্যে তার ডাকও বেশি শোনা যাবে। এবং বাঁদরের দলের মধ্যে তার অবস্থানকেও পরিষ্কার করবে।
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতায় শুধু বন্য প্রাণীর ছবি তোলা হয় না।
ইউরোপের জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ইতালির মাউন্ট এট্নার এই ছবিটি আর্থস এনভায়রনমেন্ট ক্যাটেগরিতে সেরা ছবি নির্বাচিত হয়েছে।
এই ছবি তোলার জন্য লুচিয়ানো গুয়াডেনজিওকে প্রচণ্ড তাপ এবং আগ্নেয়গিরির বিষাক্ত ভাপ সহ্য করতে হয়েছে।
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতার সরিসৃপ বিভাগের এটি সেরা ছবি। এই গ্লাস ফ্রগ জাতের ব্যাঙটির মুখে মাকড়শা। হাইম এই ছবিটি তুলেছেন একুয়েডরের ম্যানডুরিয়াকু অরণ্যে। তখন প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। এর মধ্যেই তিনি এক হাতে ছাতা এবং ফ্ল্যাশ লাইট ধরে অন্য হাত দিয়ে ক্যামেরা পরিচালনা করেন।
উত্তর ফ্রান্সের নরমান্ডিতে এই ছবিটি তোলা হয়েছে। এর জন্য ক্যামেরায় বিশেষ ধরনের দ্রুত গতির শাটার ব্যবহার করা হয়েছে যাতে বোলতা দুটির পাখার ছবিকে ফ্রেমবন্দি করা যায়।
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতার আন্ডার ওয়াটার বিভাগের সেরা ছবি। এটা একটা ডায়মন্ড-ব্যাকড স্কুইড। ফিলিপিন্সের আনিলাও উপকূলে জলের তলে রাতের বেলা সোংডা এই ছবিটি তোলেন। স্কুইডটি প্রায় ৬-৭ সেন্টিমিটার দীর্ঘ।
এই বন বিড়ালের বাচ্চাগুলিকে দেখা যায় উত্তর-পশ্চিম চীনের চিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে। ছয় বছর ধরে অনুসরণের পর শানুয়ান এই ছবিটি তুলতে সমর্থ হন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন