আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বাংলাদেশ

উন্নয়ন সাংবাদিকতা ও টেলিভিশন (পর্ব: ১)

উন্নয়ন সাংবাদিকতা 

ঠিক কখন উন্নয়ন সাংবাদিকতা শুরু হয় কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় তা বলা মুশকিল। তবে একটা সময় পৃথিবীতে খাদ্য নিরাপত্তা খুব দুর্বল ছিল, সেই সময়েই বিকাশ ঘটে উন্নয়ন সাংবাদিকতার। পরবর্তী সময়ে এর শাখা-প্রশাখা বিস্তার লাভ করে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চিন্তাভাবনা চলে আসছে মূলত ৫০-৬০ বছর আগে থেকে। পৃথিবীর জনসংখ্যা যখন ৩০০-৩৫০ কোটি ছিল, তখন সবার মনে ভয় ছিলো যে পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষ আসবে। এই দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচতেই বিশ্বব্যাপী সবুজ বিপ্লবের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। যদিও এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে। তবে এই বিপ্লবের মূল কথা ছিল মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে কৃষির সমন্বয় ঘটাতে হবে।

ষাটের দশকে প্রথম এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। এই সংক্রান্ত গবেষণার পুরোপুরি ফলটা আসতে শুরু করে ঠিক তারপর থেকেই। নরম্যান বরলগ প্রথম এ সম্পর্কে ধারণা দেন। পৃথিবীর একেক দেশে মানুষের প্রধান খাদ্য একেক রকম। যেমন এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় প্রধান খাবার ভাত, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আলু, কোথাও আছে গম-যব, কোথাও বিন ইত্যাদি। যার যেই প্রধান খাদ্য সেটা ষাটের দশকের আগ পর্যন্ত সেখানে উৎপাদন কম হতো কারণ জাতটি ছিলো স্থানীয়।

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ছে ক্রমাগত কিন্তু ফসলের উৎপাদন বাড়ছে না। দেশীয় বীজে ফসলের পরিমাণ খুবই কম; যেমন বিঘায় ১০ মণ বা আরো কম। কিন্তু ফসল দরকার বিঘায় ৩০-৪০ মণ। ম্যালথাসের তত্ত্বমতে, জনসংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে, অর্থাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে। আর খাদ্যে উৎপাদন বাড়ছে গাণিতিক হারে। এটা থেকে পরিত্রাণের জন্য নরম্যান বরলগ প্রথম কৃত্রিম পরাগায়ন বা ন্যাচারাল ব্রিডিং করে গমের দেশীয় জাতকে উচ্চ ফলনশীল করার কাজটি করেন। ১০ মণের জায়গায় উৎপাদন বেড়ে যায় ৩০/৪০ মণে। এই প্রযুক্তি দিয়ে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ভিক্ষ কিছুটা প্রতিহত করা হয়েছিলো।

যে দেশে গম প্রধান সে দেশে গমের, যেখানে ধান প্রধান সেখানে ধানের কৃত্রিম পরাগায়ন ঘটিয়ে উৎপাদন বাড়ানো হলো। আমাদের দেশেও এযাবতকাল ব্রির ৫৮টা জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। একে বলা হয় এইচওয়াইভি (হাই ইলডিং ভ্যারাইটি)। দেশীয় জাত চাষ করলে বিঘায় ৮-১০ মণ ধান হয় আর উন্নত জাত করলে ২৫/৩০ মণ হয়। আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষ খেয়ে পরে আছে, এটা শুধুমাত্র গ্রিন রেভলিউশন এর জন্য। এভাবে নরম্যান বরলগ বিশ্বব্যাপী আশু দুর্ভিক্ষ ঠেকিয়েছিলেন। 

বিশ্বব্যাপী একদিনে এই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়েনি। আগে পুরো চাষ ব্যবস্থা ছিলো প্রকৃতিনির্ভর। বর্ষার সময় বীজ ফেললে মানুষ এক সময় গিয়ে ধান পেত। এখন সারাবছরই পাচ্ছে কারণ, কৃত্রিম সেচ, রাসায়নিক সারের ব্যবহার, উন্নতমানের বীজ ও প্রযুক্তিগুলো দেশে দেশে ছড়িয়ে গেছে। স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকের মাঝে এই প্রযুক্তিগুলো জনপ্রিয় করতে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে সেই ৭০/৮০’র দশকে। এভাবেই প্রথম দিকে উন্নয়ন সাংবাদিকতার ধারণা চলে আসে।

আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থার এক আফ্রিকান ডিরেক্টর জেনারেল এখ বেবো প্রথম বলেন, এমন একটা সাংবাদিকতার উদ্ভাবন করতে হবে যারা যার যার দেশে স্থানীয় পর্যায়ে এই প্রযুক্তিগুলোর সম্প্রসারণ করবে। এই পর্যায়ে সাংবাদিক বা মিডিয়া সম্প্রসারকের ভূমিকা পালন করবে। দরিদ্র দেশগুলোকে আমেরিকান এইডের মাধ্যমে পিএলফোরএইটি দিয়ে পুরো জাতিকে টিকিয়ে রাখা যায় না। এভাবে প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করে তার উৎপাদন তাকেই করতে হবে। এরপর পিএলফোরএইটির এইসব চুক্তি তুলে দিতে হবে। তা না হলে সবাই সবসময় দরিদ্র থাকবে। উনিই প্রথম এই উন্নয়ন সাংবাদিকতার কথা বলেছিলেন। আবার অনেকে বলেন, ফিলিপাইনে প্রথম উন্নয়ন সাংবাদিকতার উদয়।

এখন আমরা উন্নয়ন সাংবাদিকতার একটা পর্যায় পেরিয়ে এসেছি। তথ্য প্রযুক্তির যুগে উন্নয়ন সাংবাদিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসার কথা। থাইল্যান্ডে পণ্যের মূল্য জানার জন্য অ্যাপস রয়েছে। সেদিক থেকে এশিয়ায় কৃষি নিয়ে খুব বেশি কাজ হয় নি। তবে আমেরিকায় সান টিভি নামে একটি চ্যানেল রয়েছে। এখানে কৃষি নিয়ে যাবতীয় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। ফিলিপাইনের রেডিওগুলোতে কৃষি ভিত্তিক অনুষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন সকালে কৃষি নিয়ে ভাষণ দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বেশ উৎসাহী।

এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কৃষি নিয়ে কিছু নির্দলীয় নিরপেক্ষ সংগঠন রয়েছে। যেমন জাপানে রয়েছে জেএ (জাপান এগ্রিকালচারাল এসোসিয়েশন)। আমাদের দেশে এরকম একটি সংগঠন প্রয়োজন। দেশে যেগুলো রয়েছে সেগুলো মূলত রাজনৈতিক ভাবাদর্শে চালিত। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সংগঠন থাকলে কৃষক অধিকার তুলে ধরতে পারতো।

এশিয়াতে কৃষি নিয়ে কাজ বিচ্ছিন্নভাবে হয়, বাংলাদেশেও হয়েছে। তবে চ্যানেল আইয়ের মতো কোনো চ্যানেলই এভাবে কাজ করতে পারেনি। মূলধারার সংবাদে কৃষিকে এভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি আর কোনো চ্যানেলে।

বাংলাদেশে উন্নয়ন সাংবাদিকতা ও টেলিভিশন

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়গুলোতে বাংলাদেশ দরিদ্র ও অনুন্নত ছিলো, ছিলো খাদ্য ঘাটতি। এরপরেই ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ। সেই সময় আমাদের খাদ্য আমদানি করতে হতো, প্রযুক্তির প্রসার ছিল না, ফসলে বৈচিত্র্য ছিল না। তখনকার ফসল বলতে ছিল শুধু ধান আর পাট। নতুন দেশ তাই মানুষের মনোনিবেশ ছিল বিভিন্ন দিকে। সেই সময়টাতেই আমি টেলিভিশনে কাজ শুরু করলাম। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০’র আগ পর্যন্ত আমি বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক বা খেলাধুলা বিষয়ক অনুষ্ঠানে কাজ করতাম। এক সময় এসে আমি ভাবলাম, টেলিভিশন শুধু একটা বিনোদনের বাক্স নয়। এটা একটা সম্প্রসারক বা তথ্য আদান-প্রদানের জন্য জাদুর বাক্স হতে পারে, এটা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার বাক্স হতে পারে। এটাকে আমি এন্টারটেইনমেন্ট টুলস হিসেবে ব্যবহার না করে শিক্ষার জন্য ব্যবহার করতে পারি। এরকম একটা চিন্তা ভাবনা থেকেই ১৯৮০ সালে এসে আমি কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান নিয়ে চিন্তা করা শুরু করলাম।

১৯৮০’র দশকে আমার মতো একজন তরুণ কৃষি নিয়ে কাজ করবে এটা অনেকে ভাবতেই পারতো না। অনেকেই আমাকে ধিক্কার দিয়েছে, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, কাছের মানুষ সবাই। কারণ তখনকার টেলিভিশনের মূল কাজ ছিল বিনোদন-কেন্দ্রিক। কিন্তু আমি মাথায় নিয়েছিলাম এইজন্য আমার দেশের যেসব উদ্ভাবিত প্রযুক্তি আছে কৃষিক্ষেত্রে, এই তথ্য যদি আমি এই টিভির মাধ্যমে আদান-প্রদান করতে পারি তাহলে আমি একজন সম্প্রসারকের ভূমিকা রাখতে পারি যেমন রেখেছিল আমাদের গবেষকরা, মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা কিংবা কৃষি সম্প্রসারকরা। 

আমার মনে হয়েছিল এই টেলিভিশনের মাধ্যমে একটি কথা বললে একসাথে সারা বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ শুনছে-দেখছে। অন্য যেকোনো মাধ্যমের তুলনায় টেলিভিশন এক্ষেত্রে অনেকটা শক্তিশালী। ভিজ্যুয়াল মাধ্যম হওয়ায় প্রাযুক্তিক ব্যবহার, সাফল্য ও উদ্ভাবনীগুলো সবাইকে দেখিয়ে দেয়া যায় টেলিভিশনে। আমি সাংবাদিকতার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে সম্প্রসারক হিসেবে ভূমিকা রাখছি। সেরকম একটা ব্রত নিয়ে ‘মাটি ও মানুষ’ শুরু করলাম। 

মাটি ও মানুষ: শুরুর কথা

মাটি ও মানুষ শুরু করতে গিয়ে স্বচক্ষে দেখলাম, তখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা, কৃষির সংজ্ঞা, কৃষকের সংজ্ঞা গোটাটাই খুব ক্ষীণ একটা জায়গায় আবদ্ধ ছিল। কৃষি বলতে ছিল কেবল ধান আর পাট চাষ করা। কৃষক বলতে বোঝা যেত শুধু গ্রামের সাধারণ মানুষ যারা খেটে খায়, গ্রামে থাকে। আমি যেদিন থেকে কাজ শুরু করলাম সেদিন থেকে আমার মাথায় আসলো এই সংজ্ঞাটাকে আমাদের ভাঙতে হবে, ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে। না ভাঙলে কৃষি বা কৃষকের উন্নয়ন হবে না। সেই সংজ্ঞা ভাঙতে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম কৃষি মানেই ধান আর পাট চাষ নয়। শুধু ধান আর পাট চাষ করলেই কৃষকের পেটে ভাত হয় না, পরনের কাপড় হয় না, বাচ্চা স্কুলে যেতে পারে না। কারণ কৃষকের সেই বাড়তি সক্ষমতা নেই।

তাহলে সমাধান কী? তাদের নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচয় ঘটাতে হবে। নতুন কৃষি ধারণার সাথে আসতে হবে। বাড়ির সামনে উঠোন আছে, সেখানে সবজির চাষ করতে হবে। সেই সময়ে সবজির চাষ বলতে ছিল বড়জোর একটা লাউয়ের মাচা যা ঘরের কোণা দিয়ে বেয়ে উঠছে। বাড়ির সামনের পুকুর, সেটার পানি খাওয়া হচ্ছে, কারণ সে সময় টিউবওয়েল ছিল না। সেই পুকুরে যে মাছ চাষ করা যায়, এ সম্পর্কেও ধারণা ছিল না। কারণ সবাই ভাবতো চাষতো হয় ধান আর পাটের, মাছের আবার চাষবাষ কী? মাছ তো আসে বর্ষাকালে, পুকুরে।

কিন্তু বলা শুরু হলো, শুধু মাছ নয়, ফলের চাষ করতে হবে। পোলট্রির খামার করতে হবে। আগে পোলট্রি ছিল না, পলোর নিচে কয়েকটি মুরগি বা হাঁস ছিল তাদের। খামার করার আইডিয়া ছিল না তাদের। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করার চিন্তা-ভাবনাও ছিল না। বললাম, গরুর গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করতে হবে। এই সবগুলো মিলে সমন্বিত কৃষির চর্চা করতে হবে। 

এতগুলো কৃষি সেক্টর নিয়ে কাজ করতে গেলে প্রতিটি সেক্টর থেকেই কিছু না কিছু আয় হবে। গরুর গোবর শুধুমাত্র জমিতে ব্যবহার না করে, বায়োগ্যাস করে জ্বালানির কাজ করতে পারে। ওই গ্যাস দিয়ে একই সাথে রান্না ও ঘরের বাতি জ্বালানোর কাজও করা যায়। এই আলো দিয়ে বাচ্চা পড়াশোনা করতে পারে। এভাবে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।

শুধুমাত্র গ্রামের মানুষ নয়, একজন শহুরে যুবকও কৃষক হতে পারে। এমনকি স্বল্পায়ী চাকরিজীবী কিংবা গৃহিণীও কৃষক হতে পারে। বাড়ির ছাদে বা আঙিনায় একটা কেইস কালচার পোল্ট্রি বা রুফটপ গার্ডেনিং এর মাধ্যমে আয় করা যায়। এভাবে কাজী পেয়ারা, পোল্ট্রি ফার্ম আসলো। যেই তরুণ বেকার ছিল তাকে মোটিভেট করে মুরগির খামার বা মাছের খামারে কাজে লাগানো যায়। এই শিক্ষিত তরুণগুলোর শিক্ষাকে যদি কৃষিখাতে বিনিয়োগ করা যায় তাহলে অনেক বেশি রিটার্ন আসবে চাকরির চাইতে। যে কারণে এখন বাংলাদেশে ৩০ হাজার কোটি টাকার পোল্ট্রি ফার্ম, ২৬ হাজার কোটি টাকার মাছের খামার করা সম্ভব হয়েছে। হাজার হাজার তরুণের এর সাথে সংযুক্তি ঘটেছে। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে কৃষকের সংজ্ঞাটাও ভেঙে গেল।

এরকম ধারণা মাথায় রেখে ৮০ সালে মাটি ও মানুষ শুরু করি। এরকম একটি অনুষ্ঠান নির্মাণের জন্য ১৯৮০’র দশকে কী ধরণের লজিস্টিক সাপোর্ট লাগে, তার পুরোটা অনুমান করাও সম্ভব নয় এখন। ন্যূনতম দুই দিন লাগতো শুটিং করতে। ভারী ভারী সব যন্ত্রপাতি ছিল তখন, একটা ভিসিআর তিনজন মিলে তুলতে হতো, ক্যামেরা দুজন মিলে ধরতো। এরকম জিনিসপত্র নিয়ে গ্রামে গেলে মানুষ স্বভাবতই ভয় পেত, দৌড়ে পালিয়ে যেত। কারণ এগুলো তারা আগে দেখেনি। (চলবে…)

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

টি ব্যাগের ব্যবসা করে আয় করুন প্রচুর অর্থ

চা পানীয়টি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। প্রিয়জনের সাথে বৈঠক থেকে শুরু করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা সবেতেই চা (Tea) আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে এখন মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশী স্বাস্থ্য সচেতন। সাধারণ চায়ের জায়গায় এসেছে, গ্রীণ টি, হার্বাল টি, লেমনগ্র্যাস টি, ব্লু টি ইত্যাদি। আর প্রকারভেদের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে টি ব্যাগের গুরুত্ব। কারণ এটি খুব অল্প সময়ে তৈরি করা যায় এবং যে কোন স্থানে এর থেকে চা বানানো যায়। অফিস ও হোটেলগুলিতে এর যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। তাই টি ব্যাগ তৈরীর ব্যবসাটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জন্য লাভদায়ক।

চা উৎপাদনকারী দেশ গুলির মধ্যে অংশ নেয় চীন, ভারত , কেনিয়া , শ্রীলঙ্কা , জাপান , ইন্দোনেশিয়া , ভিয়েতনাম, তানজেনিয়া , মালয়, বাংলাদেশ, তার্কী এবং চা পানকারী দেশ গুলির মধ্যে ইংল্যান্ড, জর্মানী, কানাডা ও আমেরিকার বেশ নাম রয়েছে।

এ কারণে বেশিরভাগ সংস্থা টি ব্যাগ বিক্রি শুরু করেছে। আপনি যদি নতুন ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনি টি ব্যাগ মেকিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটির মাধ্যমে আপনি খুব ভাল অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যিনি তৈরী করেন, তার থেকে নিয়ে এসে আপনি বাইরে বিক্রি করতে পারেন, এতে আপনার বিনিয়োগের দরকার পড়বে না। কিন্তু যদি বেশী লাভ করতে চান, তবে বিনিয়োগ করে নিজের ব্যবসা শুরু করুন।

টি ব্যাগ ব্যবসা শুরু করার জন্য জায়গা (How to start) –

এটি শুরু করার জন্য আপনি কোনও জায়গা ভাড়া নিতে পারেন। আপনার নিজের জমি থাকলে ব্যবসার জন্য সুবিধা হবে। এমন জায়গা চয়ন করুন, যেখানে মানুষের সমাগম রয়েছে। টি ব্যাগ তৈরীর জন্য আপনাকে মেশিন ইনস্টল করতে হবে।

চা ব্যাগ ব্যবসায় বিনিয়োগ –

আপনি যদি বড় আকারে ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে আপনাকে বেশী অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এর মেশিনটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল, সুতরাং বেশী পরিমাণ রাশি বিনিয়োগের দরকার রয়েছে এই ব্যবসায়, তবে আপনি যদি ব্যাংক থেকে লোণ নেন, তবে আপনি ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

চা ব্যাগ তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল –

ফিল্টার পেপার –

এর ভিতরে চায়ের পাতা স্টোর করতে হবে। এই কাগজটি সুক্ষ ছিদ্রযুক্ত এবং পাতলা, পাশাপাশি সহজে ভিজে যায় না, তাই এই কাগজটি চা ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

চা পাতা –

আপনি যেমন প্রকারের ব্যাগ বিক্রি করতে চান, তেমন চা পাতা কিনতে হবে।

বিভিন্ন প্রকারের চা –

সাধারণ চা, গ্রীণ টি, উলং টি, ব্ল্যাক টি, হার্বাল টি

চা ব্যাগগুলিতে চা পাতা পূরণ করার প্রক্রিয়া –

চা ব্যাগ তৈরীর মেশিনের সাহায্যে প্রস্তুত চা পাতাগুলি ফিল্টার পেপারে পূরণ করতে হয়। সাধারণত প্রায় ২-৪ আউন্স চা পাতা একটি টি ব্যাগে ভরা হয়। এর পরে, একটি প্যাকিং মেশিনের সাহায্যে ব্যাগটি সিল করা হয়। টি ব্যাগের সাথে একটি সুতো সংযুক্ত থাকে।

চা ব্যাগ ব্যবসায় থেকে লাভ –

আপনি চায়ের পাতার গুণমান অনুযায়ী ব্যাগের দাম নির্ধারণ করতে পারেন। এই ব্যবসা থেকে খুব ভাল লাভ করা যায়। এর আরও বিক্রয়ের জন্য, আপনি বাজারে পাইকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এগুলি ছাড়াও আপনি হোটেল বা অফিসের লোকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই ব্যবসা আপনাকে মাসে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন দিতে পারে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com