আখ অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম। আখ থেকে চিনি, গুড় এবং রস পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মোট আবাদকৃত জমির ২.০৫% আখের আবাদ হয় যার পরিমাণ ১.৭০ লাখ হেক্টর। মিলজোনে ০.৮৬ লাখ হেক্টর এবং ননমিলজোনে ০.৮৪ লাখ হেক্টর। আসুন আখ চাষের পদ্ধতি জেনে নেই-
ক্ষতির ধরন
আখের পাতা বা কাণ্ডের ভেতর সাকিং মুখ প্রবেশ করে আখের রস শুষে খায়। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পরবর্তীতে পাতার সাকিং ছিদ্র পথে আখের রস বের হয়ে আসে এবং রসে চিনি থাকায় পাতার উপর ছড়ানো রসে ছত্রাক জমে কালো হয়ে যায়। ফলে পাতার খাদ্য প্রস্তুত ক্ষমতা কমে যায়। আখ গাছ শুকিয়ে যায়, পরে মারা যায়।
দমন ব্যবস্থা
আখ কাটার পর পাতা, আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বীজ নির্বাচনের সময় সতর্ক হতে হবে এবং রোপণের আগেই বীজআখ শোধন করতে হবে। মুড়ি আখের চাষ করতে হলে তা সঠিক পদ্ধতিতে করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে যেকোনো সিসটেমিক কীটনাশক ০.৫% দ্রবণ স্প্রে করা যেতে পারে।
মাটিতে বসবাসকারী পোকা
উঁইপোকা
উঁইপোকা সাধারণত মাটিতে ঢিবি করে বাস করে এবং রানি একটি বিশেষ প্রকোষ্ঠে অবস্থান করে। রানি উঁই লক্ষাধিক ডিম পাড়ে। বাচ্চাগুলো পূর্ণবয়স্ক উঁইয়ের মতো দেখতে এবং ছোট। এরা বীজখণ্ডের চোখ এবং ভেতরের অংশ খেয়ে ফেলে। ফলে আখের চারা গজায় না বা গজালেও মারা যায়। বড় আখের গোড়া খেয়ে ফেলে এবং আখ শুকিয়ে মারা যায় এবং জমিতে ফাঁকা জায়গা দেখা যায়।
দমন ব্যবস্থা
রানি উঁই খুঁজে মারতে হবে। উঁইয়ের ঢিবি ধ্বংস করে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আখ রোপণের আগে নালায় বীজখণ্ড রেখে তার ওপর বাজারে প্রচলিত কীটনাশকের যেকোনো একটি সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে। গভীর চাষ ও গভীর নালায় আখ রোপণ, আঁকাবাঁকা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
সাদা গ্রাব
বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে বেলে ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে এর উপদ্রব বেশি হয়। এর ক্ষতি মারাত্মক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০% ভাগ আখঝাড়ই আক্রান্ত হতে পারে। এদের জীবনচক্র ১ বছর। পূর্ণাঙ্গ বিটল রাতের বেলায় ক্ষেতের আশেপাশের আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা ইত্যাদি গাছে আশ্রয় নেয় এবং গাছের পাতা খায়। দিনের বেলায় আখের ঝাড়ের গোড়ায় মাটির নিচে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ৩-৭ মাস পর্যন্ত আখের শেকড় খায়। আখের গাছ মরা লক্ষণ দেখা যায়। প্রজাতি ভেদে বিটলগুলো হালকা বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি বা লালচে বাদামি এবং আকারে ছোট বড় হয়।
দমন ব্যবস্থা
মুড়ি আখচাষ এড়িয়ে চলতে হবে। বিটল ধরে ধ্বংস করতে হবে। আখের ক্ষেতের পাশের আম, কাঁঠাল, লিচু গাছে স্প্রে করে বিটল মারতে হবে। অনুমোদিত কীটনাশক ২-৩ বার প্রয়োগ করতে হবে।
আখের পোকা দমন
আখের পোকা দমনের জন্য কৃষিতাত্ত্বিক, যান্ত্রিক ও জৈবিক পদ্ধতি প্রয়োগের পর সর্বশেষ পদ্ধতি হিসেবে বিশেষ সতর্কতার সাথে রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পোকা দমনে উপযুক্ত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
আখের প্রধান রোগ
লাল পচা রোগ
আখের কাণ্ড পচে যায়। পাতাও রোগাক্রান্ত হতে পারে। পাতার মধ্যশিরায় লালদাগ এবং পত্রফলকে ছোপছোপ লাল দাগ দেখা যায়। পাতা হলদে হয়ে শুকিয়ে যায়। আখের কাণ্ড শুকিয়ে মাঝখানে ফাপা হয় এবং আখ মারা যায়। আক্রান্ত আখ চিড়লে ভেতরের কোষ পচে লাল হয়ে যায়। লাল রঙের ভেতর আড়াআড়ি সাদা ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত আখ থেকে মদ বা তাড়ির মতো দুর্গন্ধ বের হয়। কচি কুশি হলে কুশির মড়ক দেখা যায়।
উইল্ট রোগ
আক্রান্ত আখের বাহ্যিক লক্ষণ লাল পচা রোগের মতো। আক্রান্ত গাছের পাতাগুলো আস্তে আস্তে হলুদ হয়ে শেষ পর্যন্ত শুকিয়ে মারা যায়। আক্রান্ত আখ চিড়লে ভেতরে ইটের মতো গাঢ় লাল রঙ দেখা যায় কিন্তু কোনো সাদা দাগ থাকে না। ভেতরের মজ্জার কোষ শুকিয়ে ফাঁকা খোলের মতো হয়। এ রোগ বয়স্ক আখ গাছেই হয়ে থাকে।
কালোশীষ
কালোশীষ রোগে আক্রান্ত ঝাড়ের বৃদ্ধি কমে যায়। আক্রান্ত কুশিগুলো লম্বা লিকলিকে হয়, পাতাগুলো খাটো ও খাড়াভাবে থাকে, কুশির গিরা লম্বা হয়। অনেক বেশি কুশি বের হয়। কুশিগুলোকে ঘাসের মতো মনে হয়। পত্রগুচ্ছে মধ্য থেকে চাবুকের মতো একটা করে শীষ বের হয়। যার অগ্রভাগ বাকানো হয়। এ শীষটি প্রথমদিকে পাতলা রুপালি ঝিল্লি বা পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে। পর্দার মধ্যে কালো ঝুল কালির মতো বস্তুগুলো এ রোগের জীবাণু। সাধারণত মুড়ি আখে এ রোগ বেশি হয়।
পোড়া ক্ষত
পাতার মধ্যশিরা বরাবর বা তার আশপাশে খুব চিকন ঝলসানো দাগ পত্রফলকের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। পাতার আগা থেকে গোড়ার দিকে পোড়া ক্ষতের সৃষ্টি হয়। বয়স্ক আখের চোখগুলো ফুটে পার্শ্বকুশি বের হয় এবং কুশিতেও ওই লক্ষণ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছ আড়াআড়িভাবে কাটলে তাতে লালচে বা খয়েরি রঙের ছোট ছোট দাগ দেখা যায়। অনেক সময় বাহ্যিক লক্ষণ প্রকাশ না করেও আক্রান্ত আখ হঠাৎ শুকিয়ে মারা যায়।
সাদা পাতা
রোগাক্রান্ত বীজখণ্ডের অঙ্কুরিত চারার সব পাতাই সাদা হয়ে যায়। শিরা বরাবর এক বা একাধিক লম্বা সাদা দাগ দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেতে হলুদ ও ফ্যাকাসে সবুজ রং দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং গোড়া থেকে অসংখ্য কুশি বের হয়।
আগা পচা
পাতার শিরা বরাবর লম্বালম্বিভাবে লাল লাল দাগ দেখা যায়। পাশাপাশি লাল দাগ একত্র হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। বর্ষার শুরুতে আগা পচা শুরু হয়। রোগের আক্রমণে আখের টপ বা মাথা মারা যায়। মরা আখের পাতা ধরে টান দিলে ডগা থেকে খুলে আসে ও উৎকট গন্ধ বের হয়।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’
সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।
কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।
সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় ফল কাঁঠালের জ্যাম, চাটনি ও চিপস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহের প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। তাঁরা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মোট ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
গত শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।
কর্মশালায় ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠাল স্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশ কাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।’
কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মুখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।
ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন